সমকামি – একত্রিশতম পর্ব
তখন প্রায় অনেক রাত অন্যন্যার সেদিন কিছুতেই ঘুম আসছে না অদ্ভুত অজানা এক আতঙ্ক যেনো ওকে শান্ত হতে দিচ্ছে না। কৃষ্ণেন্দুর উপরে ও খুব রাগ হচ্ছে ওর অফিস থেকে ফিরে আর একবার ও যোগাযোগ করেনি ওর সাথে। কৃষ্ণেন্দু অবশ্য টেক্সট করেছিল কিন্তু অন্যন্যা কোনো রিপ্লাই করেনি। রাত তখন প্রায় দুটো বাজে মোবাইলটা হঠাৎ ভাইব্রেট করায় অন্যন্যা দেখলো কৃষ্ণেন্দু টেক্সট করেছে আবার: আমি জানি তুমি আমার উপর রাগ করেছো। পাখি আমি জাস্ট ফিরলাম বিশ্বাস করো। অন্যন্যা প্লিজ রাগ করে থেকো না। কালকে আমি সময় মতো পৌঁছে যাবো একসাথেই অফিস যাবো। আমি অনেক চেষ্টা করেছিলাম এটলিস্ট বেরিয়ে যদি তোমাকে অন্তত বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া যায়। কিন্তু বেরোতে পারিনি। অন্যন্যা কোনো রিপ্লাই করে না।
অন্যন্যা সকালে উঠে তৈরী হয় অফিসে বেরোনোর জন্য। বেরোনোর সময় বিকাশ বাবুকে বলে বাবা আজকে ফিরতে একটু দেরী হতে পারে। আজকে কমিশনারের সাথে দেখা করতে যেতে হতে পারে। ফর আওয়ার সেফটি বাবা। তুমি একটু মাকে বোলো রাগারাগি যেনো না করে। এর মধ্যে কৃষ্ণেন্দু ফোন করলে ফোনটা রিসিভ করে না অন্যন্যা। বিকাশ বাবু দেখতে পেয়ে বলে: কৃষ্ণেন্দু বাবু মনে হয় তোকে ফোন করছে। গম্ভীর হয়ে অন্যন্যা বলে হুম। বিকাশ বাবু মেয়েকে জিজ্ঞাসা করে: কি হয়েছে রে মা, কাল থেকে তোকে মনে হচ্ছে কিছু নিয়ে খুব চিন্তায় আছিস। কিছু নিয়ে কি তোদের কোনো সমস্যা হয়েছে। অন্যন্যা আলতো হাঁসি দিয়ে বলে না না বাবা আসলে সবকিছু নিয়েই একটু টেনশনে আছি। মার দুশ্চিন্তার কারণ আমিও বুঝতে পারি বাবা। আচ্ছা বাবা আমি এখন আসি। আচ্ছা সাবধানে যাস মা। অন্যন্যা বেরিয়ে দেখে কৃষ্ণেন্দু ওদের বাড়ির দিকেই যাচ্ছিল। অন্যন্যাকে দেখে প্রশ্ন করে কি হলো ফোনটা কেনো ধরছিলে না ? কাল থেকে একটা টেক্সটের ও উত্তর দাওনি। অন্যন্যা এবার ও কোনো উত্তর না দিয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। কৃষ্ণেন্দু গাড়ির দরজা খুলে দিলে অন্যন্যা চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসে। কিছু দূর গিয়ে কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যার হাত ধরে বলে: আমি সত্যি সরি অন্যন্যা। বিশ্বাস করো কালকে ইচ্ছে করে কিছু করিনি আমি। অন্যন্যা সে কথার কোনো উত্তর না দিয়ে কৃষ্ণেন্দুকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করে সেদিন বলেছিলে কমিশনারের কাছে নিয়ে যাবে সেটা কি আজকে সম্ভব? কৃষ্ণেন্দু প্রশ্ন করে আবার কি কিছু হয়েছে? অন্যন্যা পাল্টা প্রশ্ন করে কেনো কিছু হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাইছো? কৃষ্ণেন্দু বলে: এমা না না আমি সে কথা একবার ও বলতে চাইনি তুমি বিশ্বাস করো। আচ্ছা দাঁড়াও একটা ফোন করি। কৃষ্ণেন্দু ফোন করে কথা বলে। তারপর হঠাৎ গাড়িটা উটার্ন করায়। অন্যন্যা বিস্ময়ে বলে ওঠে আরে কি হলো গাড়ি কেনো ঘোরালে? অফিস যাবে না? কৃষ্ণেন্দু বললো: এখনই গিয়ে দেখা করতে হবে। বিকেলে ওর অন্য জায়গায় কাজ আছে আগে ওর সাথে দেখা করি তারপর অফিসের দিকে যাবো। ওরা কমিশনারের অফিসে পৌছায়। অন্যন্যা কালকের সমস্ত ঘটনা খুলে বলে। সব শুনে উনি নিজে লোকাল থানায় ফোন করে এবং ডায়েরি করায়। তারপর অন্যন্যাকে বলে অফিসের পর অবশ্যই যেনো একবার থানায় দেখা করে। তারপর অন্যন্যাকে বলে: আচ্ছা আপনাকে যে গতবার বলেছিলাম আননোন নম্বর দেখলে অবশ্যই কলটা রেকর্ড করতে আপনি করেছিলেন? দেখুন ওটা ও কিন্তু একটা এভিডেন্স ইম্পর্ট্যান্ট এভিডেন্স। অন্যন্যা জানায় যে ওর কল রেকর্ডিং টা অন করা তাই যে কোনো কলই রেকর্ড হয়। ও নিজেও সেটা ভুলে গেছিলো। কমিশনার সাহেব উত্তর দেন: গের্ট। চিন্তা নেই অন্যন্যা আপনার কোনো ক্ষতি হতে দেবো না। প্রশাসন আপনার পাশে আছে। আপনি শুধু লোকাল থানায় দেখাটা অবশ্যই করবেন। তারপর ওরা সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। গাড়িতে উঠে কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যাকে বলে: এতো রেগে আছো যে এই কথাগুলি আমাকে একবার ও জানালে না অনু? অন্যন্যা তখনও চুপ। কৃষ্ণেন্দু আর ধৈর্য রাখতে না পেরে জোড়ে ব্রেক কসে গাড়িটা দাঁড় করায়। তারপর অন্যন্যার কাঁধে হাত দিয়ে ওকে ঝাঁকিয়ে বলে: কি হলো কি এতক্ষন ধরে এতো কথা বলে যাচ্ছি একটা কথার ও উত্তর দেবার দরকার মনে করছো না? অন্যন্যা কৃষ্ণেন্দুর হাতটা কাঁধের উপর ঝটকা মেরে সরিয়ে দিয়ে চিৎকার করে বলে: না, করছি না। কারণ কালকে তুমি কাজে ছিলে সব কথা অফিসে বসে তোমাকে বলা সম্ভব ছিলো না। আমি তাও তোমাকে বার বার বলেছিলাম তুমি নিজের কাজ নিয়ে ব্যাস্ত ছিলে। কৃষ্ণেন্দু প্লিজ আমি জানি তুমি আমাকে অনেক হেল্প করেছো আমি সত্যি থ্যাংফুল তোমার কাছে। তোমাকে সত্যি আমি একটু বেশি ডিস্টার্ব করে ফেলছি। আসলে কালকে আমার সত্যি তোমাকে খুব প্রয়োজন ছিল। আমার খুব হেল্পলেস লাগছিল। তাই জন্য হয়তো একটু বেশি রিয়্যাট করে ফেলেছি। তোমাকে আর ডিস্টার্ব করতে চাই না আমি। ওকে কৃষ্ণেন্দু থ্যাংস!!! বলে অন্যন্যা গাড়ি থেকে নামতে যায়। কৃষ্ণেন্দু হাত টেনে ধরে অন্যন্যার। অনু প্লিজ প্লিজ। আমি বুঝতে পারছি আমাকে তোমার সত্যি খুব দরকার ছিল। সরি সরি প্লিজ অনু। আমরা অফিসের পর শান্ত ভাবে কথা বলি? এভাবে গাড়িতে থেকে নেমে যেও না। এমনি অনেকটাই দেরী হয়ে গেছে। তোমাকে বাস স্ট্যান্ডে নামিয়ে দিয়ে তারপর কিছুটা সময় কাটিয়ে অফিসে ঢুকতে হবে আমাকে। এখন আর রাগারাগি না করে চলো। বিকেলে সব অভিযোগ শুনবো তোমার।
অন্যন্যা সেদিন অনেকটাই দেরীতে অফিসে ঢোকে। ঢোকার সাথে সাথে পিয়ন এসে খবর দেয় সেন সাহেব ডাকছে। অন্যন্যা সেন সাহেবের কেবিনে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে আসবো স্যার? সেন সাহেব গম্ভীর সুরে বলে: হ্যাঁ, আসুন কথা আছে আপনার সাথে। বসুন। অন্যন্যা চেয়ার টেনে বসলে সেন সাহেব বলে: অন্যন্যা এটা একটা অফিস আমি আপনাকে আগে ও বলেছি এখানে একটা নিয়ম আছে আর সেটা সবার জন্যই এক। আপনি যখন ইচ্ছে আসছেন যখন ইচ্ছে বেরিয়ে যাচ্ছেন আপনি কি ভাবছেন এটা কেউ নোটিশ করছে না? অন্যন্যা শান্ত ভাবে উত্তর দেয়: আসলে আমি সেদিন বলেছিলাম আমার রিলেটিভ এর কথা। স্যার প্লিজ দু একটা দিন একটু কনসিডার করুন। অনেকটাই ভালো আছে এখন প্লিজ স্যার। সেন সাহেব বলে: অনেকগুলো ইমপরটেন্ট ফাইল আছে আপনার কাছে। আপনার বাড়ির সমস্যা অফিস কেনো শুনবে? আপনি তাহলে ছুটি নিয়ে নিন। অন্যন্যা বলে না স্যার ছুটির দরকার পড়বে না। আমি একটু সময় চাইছি। আপনি তো কৃষ্ণেন্দুর আন্ডারে ওই তো আপনার রিপোর্টিং বস তাহলে ওকে একবার ডাকি। বেল বাজিয়ে পিয়নকে ডেকে সেন সাহেব বলে: কৃষ্ণেন্দু সাব কো বুলাকে লাও। কিছুক্ষন পর পিয়ন এসে বলে: স্যার কৃষ্ণেন্দু স্যার এখনও আসেননি। সেন সাহেব অন্যন্যাকে বলে আপনি ওনার সাথে একবার কথা বলে নিন। আপনার কাছে ওই ফাইল গুলি রাখা সম্ভব না অফিসের কাজের ক্ষতি হচ্ছে তাতে। আপনি এখন যান কৃষ্ণেন্দু আসুক তারপর দেখছি। অন্যন্যা আর কথা না বাড়িয়ে বেড়িয়ে আসে সেখান থেকে। ডেস্কের সামনে এসে দাঁড়াতেই শিলা বলে একজন অন্যন্যার কাছে এসে বলে: অন্যন্যা তোমার সাথে কথা বলা যাবে ? ব্যাস্ত আছো কি? অন্যন্যা উত্তর দেয়: না তুমি বলো। আসলে সেন সাহেব আমাকে পাঠালো বললো কসবার যে কেসটা নিয়ে লেখালিখি হচ্ছে তার পুরো ফাইলটা তোমার কাছে দেওয়া আছে। ওটা আমাকে দিতে। কাজটা উনি আমাকেই করতে বললেন। অন্যন্যা কথা না বাড়িয়ে ড্রায়ার থেকে ফাইলটা বের করে দিয়ে দেয় শিলাকে। ফাইলটা নিয়ে চলে যেতে গিয়ে ও শিলা অন্যন্যার দিকে ঘুরে গিয়ে বলে: তোমাকে একটা কথা বলবো অন্যন্যা? অন্যন্যা উত্তর দেয়: হ্যাঁ বলো না। অন্যন্যা তুমি একটু অফিস টাইমটা মেইনটেইন করার চেষ্টা করো। নাহলে তোমার জবের ক্ষতি হতে পারে। সেন সাহেব সেই রকমই বলছিলো পিয়ালিকে। আমরা সবাই জানি পিয়ালি সেন সাহেবের কাছের হওয়ার কারণে অফিসে টিকে আছে আর ওর তোমার উপর অনেক রাগ আছে। অন্যন্যা একটু হেঁসে মাথা নাড়ায়। শিলা চলে গেলে ও চেয়ারে বসে পড়ে ধপ করে। আজকে আবার ভীষণ মাথা ব্যাথা করছে ওর। কিছু ভালো লাগছে না। ফোন করে একটা কফি দিতে বলে অন্যন্যা।তারপর কফি খেতে খেতে কাজে মন দেয়। হঠাৎ পিয়ন এসে আবার অন্যন্যাকে বলে ম্যাডাম সেন সাহেব ডাকছে আপনাকে। অন্যন্যা নিজে নিজে বলে ওঠে আবার? উফ্ সত্যি এতো টেনশন আর যেনো নিতে পারছি না। অন্যন্যা আবার যায় সেন সাহেবের কেবিনে গিয়ে দেখে কৃষ্ণেন্দু ও রয়েছে সেখানে। সেন সাহেব কৃষ্ণেন্দুর সামনেই অন্যন্যাকে জিজ্ঞাসা করে: এবার বলুন ম্যাডাম আপনি কতোদিন সময় পেলে কাজগুলো ঠিকঠাক করে শেষ করতে পারবেন? সেন সাহেবের কথার মাঝখানে কৃষ্ণেন্দু বলে: অন্যন্যা আপনার কোনো সমস্যা থাকলে আপনি সেটা খুলে বলতে পারেন। মানে আজকালের মধ্যে যদি আপনার সমস্যা মিটে যায় তাহলে তো ভালোই না হলে সেন বাবু যা বলছেন মানে ওই ফাইলগুলো আমরা অন্য কাউকে দিয়ে করিয়ে নিচ্ছি। অন্যন্যা বলে: স্যার প্লিজ আজকের দিনটা কাল থেকে কোনো কমপ্লেইন করতে দেবো না। আমি কথা দিচ্ছি। কৃষ্ণেন্দু সেন সাহেবের দিকে তাঁকিয়ে বলে: সেন বাবু আপনি কি বলছেন? আজকের দিনটা সময় তো দেওয়াই যায়। সেন সাহেবের ইচ্ছে না থাকলে ও কিছুটা বাধ্য হয়েই মেনে নিতে হয়। অন্যন্যা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে: তাহলে আমি যাই স্যার? কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যার দিকে তাঁকিয়ে বলে: অন্যন্যা আপনি পনেরো মিনিট বাদে নবগ্রামে যে নিউজ কভারেজটা হয়েছিল সেই ফাইলটা নিয়ে একবার আসবেন আমার কাছে। আপনি এখন যেতে পারেন।
সেদিন কাজ সারতে সারতে তখন প্রায় রাত আটটা বাজে। কৃষ্ণেন্দু টেক্সট করে বলে: পাখি এবার তুমি বেরিয়ে যাও আমাদের একবার থানাতে ও যেতে হবে। তুমি বেরিয়ে গিয়ে দাঁড়াও আমি আসছি আর দেরী করো না। অন্যন্যা কৃষ্ণেন্দুর কথা মতো বেরিয়ে গিয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু সেখানে যেতেই অন্যন্যা খেয়াল করে আগের দিনের লোকটা আবার ওকে ফলো করছে। ভয় পেয়ে যায় অন্যন্যা। ফোন করে কৃষ্ণেন্দুকে। কৃষ্ণেন্দু ফোন ধরে বলে: আমি গাড়ি বার করছি অনু দু মিনিট সময় দাও আমি আসছি। অন্যন্যা চিৎকার করে বলে: আমার কাছে আর এক মিনিট সময় ও নেই প্লিজ। কৃষ্ণেন্দু বলে: আচ্ছা আচ্ছা আমি এখুনি আসছি। কিছুক্ষণের মধ্যে কৃষ্ণেন্দু এসে দাঁড়ায় তারপর গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে বলে: উঠে এসো। অন্যন্যা গাড়িতে ঢুকে হাঁপাতে থাকে। কৃষ্ণেন্দু ওখান থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে জলের বোতলটা অন্যন্যার হাতে দিয়ে বলে: জলটা খাও। এতো হাঁপাচ্ছো কেনো তুমি? কি হয়েছে তোমার? কি জন্য এতো ভয় পেয়ে গেলে? অন্যন্যা কৃষ্ণেন্দুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে: আবার, আবার সেই লোকটা আমাকে ফলো করছিল। আমাকে ফোন করতে দেখে!!!আমার খুব ভয় করছে কৃষ্ণেন্দু। কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যাকে দুহাত দিয়ে সোজা করে বলে: আমরা তো যাচ্ছি থানায় তুমি এতো কেনো ভয় পাচ্ছো? আমি বলছি তো কিছু হবে না। আমি তো আছি তোমার সাথে। অন্যন্যা ভয়ার্ত গলায় বলে: তুমি আমার সাথে আছো কিন্তু তিয়াসা? তিয়াসার সাথে তো কেউ থাকে না ওকে ও রাস্তাঘাটে বেরোতে হয়। অন্যন্যা উদভ্রান্তের বলে তিয়াসা তিয়াসা ভালো আছে তো? ও বাড়ি ফিরেছে কিনা একবার দেখা দরকার। ফোন বের করে বাড়িতে ফোন করে অন্যন্যা। বিকাশ বাবু ফোন ধরে। অন্যন্যা বাবার গলার আওয়াজ শুনে জিজ্ঞাসা করে বাবা তিয়াসা কেমন আছে? ও ঘরে ঢুকেছে তো? অন্যন্যা ফোন করে হঠাৎ এমন প্রশ্ন করায় বিকাশ বাবু জিজ্ঞাসা করে: হ্যাঁ ও তো বিকেলেই ঘরে ঢুকে গেছে। কেনো কি হয়েছে? তুই বা এতো ভয় পেয়ে আছিস কেনো? অন্যন্যা নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বলে: না না বাবা ভয় পেয়ে নেই। আমি এসে তোমাকে সব বলছি আমি কমিশনারের সাথে দেখা করেছিলাম। উনি আমার হয়ে থানায় একটা ডায়রি করে দিয়েছেন আর আমাকে বলেছিলেন আমি যেনো একবার থানায় দেখা করে যাই। সেই জন্য আমাকে একবার থানায় যেতে হচ্ছে একটু দেরী হবে তোমরা চিন্তা করো না। আমি ফোন রাখছি। অন্যন্যা ফোন কেটে দেয়। কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যাকে বলে: তিয়াসা ঠিক আছে? বাড়িতে ঢুকেছে? অন্যন্যা উত্তর দেয়: হ্যাঁ। তারপর কৃষ্ণেন্দু বলে: অন্যন্যা তোমাকে একটা কথা বলি শোনো তুমি একটা লড়াইয়ে নেমেছো এতো ভয় পেলে লড়াই করবে কি করে? তুমি যতো ভয় পাবে ওরা ততো তোমাকে বেশী করে ভয় দেখাবে। অন্যন্যা উত্তর দেয়: আমি শুধু নিজের জন্য ভয় পাচ্ছি না। আমার তিয়াসাকে নিয়ে ও ভয় করছে কৃষ্ণেন্দু। মা এমনি এগুলো নিয়ে সারাক্ষণ দুশ্চিন্তা করছে আর এখন তো আমার সাথে কথা বলা পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে খুব কম কথা বলে। এরপর কিছু যদি হয় আমি কি মুখ নিয়ে দাঁড়াবো বাবা, মার সামনে? আচ্ছা ঠিক আছে আমরা যাই আগে থানায়। তারপর দেখি কি হয়? আর আমার মনে হয় ওরা তিয়াসার কোনো ক্ষতি করতে চাইবে না। কারণ ওদের তোমাকে নিয়ে মতলব তিয়াসাকে নিয়ে নয়। ওরা তোমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে ওদের পরিবারের মানসন্মান বাঁচানোর জন্য। কিন্তু তবু তোমার ভয়কে আমি একদম অমূলক বলছি না। এখন একটু শান্ত হও। আগে চলো থানায় যাই। এরপর ওরা থানায় যায় এবং সেখানে সব কথা জানায়। থানা থেকে পরামর্শ দেয় যে অন্যন্যা আর তিয়াসা দুজনেই যেনো নিজেদের মোবাইল লোকেশনটা অন করে রাখে আর কল রেকর্ডিং। তিয়াসা যেনো কটাদিন খুব দরকার ছাড়া বাইরে না যায়। একটু সাবধান হয়ে চলা এই আর কি। আর সন্দেহ ভাজন তেমন কাউকে যদি দেখে তাহলে থানায় সাথে সাথে একটা ইনফরমেশন দিতে। থানার কাজ মিটিয়ে কৃষ্ণেন্দু বলে: তুমি এতো চিন্তা কোরো না। আমি দেখছি তিয়াসার জন্য যদি একটা গাড়ির ব্যাবস্থা করে দেওয়া যায় কটাদিনের জন্য। চলো এবার তোমাকে বাড়ি ছেড়ে আসি। সারাদিন অনেক ঝক্কি গেছে তোমার। অন্যন্যা প্লিজ আমি আছি তোমার সাথে একটু ভরসা রাখো আমার উপর।
বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে সেদিনের মতো সেখান থেকে বেরিয়ে যায় কৃষ্ণেন্দু। কিন্তু ঘরে ঢুকে অন্যন্যা বাবাকে বলে বাবা তোমার সাথে আমার কিছু দরকারি কথা আছে দশ মিনিট বাদে তুমি একটু আসতে পারবে আমার ঘরে? আমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসছি। অন্যন্যা ফ্রেশ হয়ে এসে হাতে ফোনটা নেয় কৃষ্ণেন্দু পৌঁছেছে কিনা সেটা জানতে। হঠাৎ একটা অচেনা নম্বর থেকে একটা এসএমএস আসে – “তুমি যতোই পুলিশের কাছে যাও আর কমিশনারের কাছে যাও। তোমার ডেস্টিনেশন চৌধুরী বাড়ি তোমাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না অন্যন্যা। তোমার বস ও না”।