সমকামি – তৃতীয় পর্ব
অয়ন আর ওর মা সেই সময়ের মতো ঘর থেকে বেরিয়ে আসে এবং এটাই ভাবতে থাকে কি ভাবে তারা অন্যন্যাকে আটকাতে পারে। বিয়ের মাত্র দুমাসের মধ্যে যদি ঘরের বউ ডিভোর্স চেয়ে আইনের দ্বারস্থ হয় তাহলে সমাজে তাদের সন্মান ক্ষুণ্ণ হবে তাছাড়া আত্মীয়স্বজন সবাই প্রশ্ন করবে কি জবাব দেবে তারা? অয়নের মা ওকে বলে যে ভাবে হোক অন্যন্যাকে অয়নকেই আটকাতে হবে তাঁকে বার বার সাবধান করা সত্ত্বেও সে কোনো কথা শোনেনি।
রাতটা কোনো মতে সবারই কাটলো পরের দিন খুব ভোর ভোর অন্যন্যা নিজের সব গুছিয়ে নিচ্ছিল সেখান থেকে বেরিয়ে যাবার উদ্দেশ্যে। হঠাৎ দরজায় নক করার শব্দ হওয়ায় সে গিয়ে দরজা খোলে এবং দেখে অয়নের বাবা দাঁড়ানো পিছনে অয়নের মা আর অয়ন। অয়নের বাবা বলে অন্যন্যার সাথে তার কিছু কথা আছে যদি ও পারমিসন দেয় তাহলে ঘরে এসে উনি কথাগুলো বলতে পারে। অন্যন্যা বুঝতে পারে যে উনি কেনো আর কি নিয়ে কথা বলতে চায়। কারণ বিয়ের পর এই প্রথম অন্যন্যা তার শ্বশুর মশাইকে দেখছে। কারণ রাতে ওনার ফেরার কোনো ঠিক থাকে না আর বেশীর ভাগ দিন উনি ফেরেও না। আর সকাল ওনাকে বিয়ের পর মাত্র কয়েকবার মাত্র অন্যন্যা দেখেছে তবে অন্যন্যার কখনো কোনো কথা ওনার হয়নি। তাই অন্যন্যার বুঝতে অসুবিধা হয় না, যে মানুষটা এতো দিনে ঠিক মতো কথাই কখনো বলেনি আজ কেনো সে ঘরে এসে অন্যন্যার সাথে কথা বলতে চাইছে। অন্যন্যা ওনাকে বলে এটা আপনাদের বাড়ি আপনাদের ঘর সুতরাং আপনারা আসবেন এর জন্য তার অনুমতির প্রয়োজন নেই ওনারা আসতে পারে।
অয়নের বাবা জানতে চায়, অন্যন্যা লাগেজ গোছাচ্ছে তার কি কোথাও যাবার আছে? উত্তরে অন্যন্যা জানায় সে এই বাড়ি ছেড়ে সব সময়ের জন্য চলে যাচ্ছে আর কেনো যাচ্ছে সেটা প্রত্যেকের জানা তাই কারণ জিজ্ঞাসা করে তাকে বিব্রত না করলেই ভালো হয়। অয়নের বাবা অন্যন্যাকে বলে সে তাঁকে আর কোনো প্রশ্ন না শুধু কয়েকটা কথা বলতে চায় যেগুলো অন্যন্যার জানা খুব দরকার। অন্যন্যা সেগুলো চিন্তা না করেই সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে। তার মধ্যে প্রথম হলো অন্যন্যা যে অন্যায় ভাবে তাদের ছেলেকে ফাঁসাতে চাইছে এবং অন্যন্যার স্বভাব যে ঠিক না এটা প্রমাণ করতে ওনার খুব বেশি সময় লাগবে না। এরপর অন্যন্যা ও তাঁর পরিবারের কি হবে সেটা ও যেনো সে ভেবে নেয়। তার বোন বড় হয়েছে কিছুদিন পর তাঁর ও বিয়ের কথা হবে কিন্তু এমন পরিবারে কেউ কি ছেলের বিয়ে দিতে চাইবে যে পরিবারের বড় মেয়ের স্বভাব ভালো না। তাই কোনো সিদ্ধান্ত নেবার আগে সে যেনো সব দিক ভালো করে ভেবে নেয়।
তাতে অন্যন্যা উত্তর দেয় যাতে কেউ তাকে কিছু বলতে না পারে তার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ তার কাছে ও আছে তাই এসব ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ হবে না তাঁদের। তাঁদের ছেলে সমকামিতা তা নিয়ে অন্যন্যার কোনো সমস্যা নেই যদি অয়ন বা পরিবারের অন্য কেউ সব সত্যিটা বলে দিতো তাহলে ও হয়তো অন্যন্যা বুঝতো কিন্তু তা না করে তাঁরা তাদের ঠুনকো আভিজাত্য আর অহংকারকে বজায় রাখতে তাদের প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত শুধু মিথ্যে বলে ঠকিয়েছে। ভালোলাগা বা ভালোবাসা কোনো অপরাধ নয় সেটা সম্পূর্ণই মানুষের স্বাধীন আর ব্যাক্তিগত মতামত কিন্তু সেটাকে মান্যতা না দিয়ে তাঁরা অন্যন্যাকে অন্ধকারে রেখে শুধু তাকে না তার পরিবারকে ও ঠকিয়েছে। কি অধিকার ছিল তাঁদের এমনটা করবার? অন্যন্যা একজন আলাদা মানুষ তার আলাদা পছন্দ আলাদা ভালো লাগা সেটা থাকতেই পারে। তাঁরা কোনো কিছু চিন্তা না করে শুধু নিজেদের অহংকার বজায় রাখতে কতগুলো মানুষকে ঠকিয়েছে। তাই অন্যন্যার কাছে ও অন্য কোনো রাস্তা খোলা নেই এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসা ছাড়া। সে এমন সম্পর্ককে খারাপ মনে করে না তার অর্থ এই নয় যে তার স্বামী একজন অন্য পুরুষে আসক্ত এবং তাঁকেই ভালোবাসে এটা জানার পর ও অন্যন্যা এই সম্পর্ক বজায় রাখবে শুধু মাত্র তাঁদের আভিজাত্য বজায় রাখতে। ওটা অয়নের জীবন তাঁর সঙ্গী খুঁজে নেবার অধিকার যেমন তাঁর আছে তেমনি অন্যন্যার ও অধিকার আছে তার নিজের জীবন তার মতো করে বেছে নেবার। তাই যেনো তাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা ও ভুল তাঁরা না করে। তাকে আটকানোর চেষ্টা যদি তারা করে বিপদ তাদের ও কম হবে না তাই সেই সব চেষ্টাও যেনো না করে।
অন্যন্যার কথায় তার শ্বশুর বাড়ির করো মুখে কোনো কথা আর ছিল না এই কথাগুলোর উত্তর দেবার মতো।
কিন্তু তাঁরা কিছু মেনে ও হয়তো নিল না।