Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সন্ধ্যা || Sandhya (Chitra) by Rabindranath Tagore

সন্ধ্যা || Sandhya (Chitra) by Rabindranath Tagore

ক্ষান্ত হও , ধীরে কও কথা । ওরে মন ,
নত করো শির । দিবা হল সমাপন ,
সন্ধ্যা আসে শান্তিময়ী । তিমিরের তীরে
অসংখ্য-প্রদীপ-জ্বালা এ বিশ্বমন্দিরে
এল আরতির বেলা । ওই শুন বাজে
নিঃশব্দ গম্ভীর মন্দ্রে অনন্তের মাঝে
শঙ্খঘণ্টাধ্বনি । ধীরে নামাইয়া আনো
বিদ্রোহের উচ্চ কণ্ঠ পূরবীর ম্লান-
মন্দ স্বরে । রাখো রাখো অভিযোগ তব ,
মৌন করো বাসনার নিত্য নব নব
নিষ্ফল বিলাপ । হেরো মৌন নভস্তল ,
ছায়াচ্ছন্ন মৌন বন , মৌন জলস্থল
স্তম্ভিত বিষাদে নম্র । নির্বাক্‌ নীরব
দাঁড়াইয়া সন্ধ্যাসতী — নয়নপল্লব
নত হয়ে ঢাকে তার নয়নযুগল ,
অনন্ত আকাশপূর্ণ অশ্রু-ছলছল
করিয়া গোপন । বিষাদের মহাশান্তি
ক্লান্ত ভুবনের ভালে করিছে একান্তে
সান্ত্বনা-পরশ । আজি এই শুভক্ষণে ,
শান্ত মনে , সন্ধি করো অনন্তের সনে
সন্ধ্যার আলোকে । বিন্দু দুই অশ্রুজলে
দাও উপহার — অসীমের পদতলে
জীবনের স্মৃতি । অন্তরের যত কথা
শান্ত হয়ে গিয়ে , মর্মান্তিক নীরবতা
করুক বিস্তার ।


হেরো ক্ষুদ্র নদীতীরে
সুপ্তপ্রায় গ্রাম । পক্ষীরা গিয়েছে নীড়ে ,
শিশুরা খেলে না ; শূন্য মাঠ জনহীন ;
ঘরে-ফেরা শ্রান্ত গাভী গুটি দুই-তিন
কুটির-অঙ্গনে বাঁধা , ছবির মতন
স্তব্ধপ্রায় । গৃহকার্য হল সমাপন —
কে ওই গ্রামের বধূ ধরি বেড়াখানি
সম্মুখে দেখিছে চাহি , ভাবিছে কী জানি
ধূসর সন্ধ্যায় ।


অমনি নিস্তব্ধপ্রাণে
বসুন্ধরা , দিবসের কর্ম-অবসানে ,
দিনান্তের বেড়াটি ধরিয়া আছে চাহি
দিগন্তের পানে । ধীরে যেতেছে প্রবাহি
সম্মুখে আলোকস্রোত অনন্ত অম্বরে
নিঃশব্দ চরণে ; আকাশের দূরান্তরে
একে একে অন্ধকারে হতেছে বাহির
একেকটি দীপ্ত তারা , সুদূর পল্লীর
প্রদীপের মতো । ধীরে যেন উঠে ভেসে
ম্লানচ্ছবি ধরণীর নয়ননিমেষে
কত যুগ-যুগান্তের অতীত আভাস ,
কত জীবজীবনের জীর্ণ ইতিহাস ।
যেন মনে পড়ে সেই বাল্যনীহারিকা ;
তার পরে প্রজ্বলন্ত যৌবনের শিখা ;
তার পরে স্নিগ্ধশ্যাম অন্নপূর্ণালয়ে
জীবধাত্রী জননীর কাজ বক্ষে লয়ে
লক্ষ কোটি জীব — কত দুঃখ , কত ক্লেশ ,
কত যুদ্ধ , কত মৃত্যু , নাহি তার শেষ ।


ক্রমে ঘনতর হয়ে নামে অন্ধকার ,
গাঢ়তর নীরবতা — বিশ্বপরিবার
সুপ্ত নিশ্চেতন । নিঃসঙ্গিনী ধরণীর
বিশাল অন্তর হতে উঠে সুগম্ভীর
একটি ব্যথিত প্রশ্ন , ক্লিষ্ট ক্লান্ত সুর ,
শূন্যপানে — “ আরো কোথা ? আরো কত দূর ?”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress