সত্তর দশকের স্মৃতি
‘সত্তর দশক মুক্তির দশক’ – স্লোগানে দেয়ালগুলি ভরে উঠছিল। দাবানলের মতো নকশাল আন্দোলন দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়েছিল শহরের অলি-গলিতে। গড়িয়া খাল দিয়ে তখন কত তরুণের লাশ ভেসে যেতে দেখে শিহরিত হয়েছি, হিসেব নেই। চারিদিকে থমথমে আতঙ্কের জটিল পরিবেশ,পরিস্থিতি।
দলের অধিকাংশ সক্রিয় নকশাল কর্মীরা বেহালা ও যাদবপুর অঞ্চলের, বাকীরা ছিল কলকাতার আশেপাশের মধ্যবিত্ত বা নিয়মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণ তরুণী।
আন্দোলনের মূল স্লোগান ছিল – ‘গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরা।’ এই তত্ত্ব দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল তরুণ-তরুণীদের মধ্যে। এই কৌশলই আর. সি. পি. আই. দল গ্রহণ করলো। অনস্তবাবু বললেন, গ্রাম দখলের জন্য রসদ ও সৈন্যের জন্য, চীনের সাংহাই অভ্যুত্থানের মত কলকাতায় অভ্যুত্থান করে গ্রামে গিয়ে ঘাঁটি গাড়তে হবে। অভ্যুত্থান করতে হবে ছেষট্টি সালের খাদ্য আন্দোলনের মতো জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতায়। সেসময় পর্যস্ত অপেক্ষা করে নিজেদের প্রস্তুত রাখতে হবে। এই প্রস্তুতির জন্য চাই টাকা,অস্ত্র-শস্ত্র আর চাই গভীর রাজনৈতিক সম্পর্ক কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের ইউনিয়ন ও ফ্রন্টের সমস্ত ন্যাচারাল নেতাদের সঙ্গে, যাদের ডাকে শয়ে-শয়ে কর্মী প্রয়োজন হলে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে।
বড় বড় পার্টিগুলোর নেতাদের চালাকি ও পলায়নী মনোবৃত্তিকে তুচ্ছ করে তারুণ-তরুণীরা যেন বিপ্লবের আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। ন্যাচারাল নেতাদের অধীনে অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীরাই হবে মুক্তি ফৌজ। সেই মুক্তি ফৌজকে নিয়ে গ্রামের পর গ্রাম মুক্ত করে এগিয়ে গিয়ে, শহরগুলোকে ঘিরে ফেলতে হবে, এইভাবে মুক্ত করতে হবে সারা দেশ।
অনস্তবাবুর এই চমকপ্রদ থিওরি দলের সদস্যরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করত। সেই পথে এগিয়ে যেতে প্রথম প্রস্ততি হিসেবে টাকার প্রয়োজন এবং সেইজন্যই ডাকাতি। কিন্তু ডাকাতির প্রস্তুতির জন্যও চাই টাকা। ন্যুনতম অস্ত্র ও একটা গাড়ির তো প্রয়োজন আছে। তাছাড়া আছে দৈনন্দিন খরচ। অনস্তবাবু সেই উপায়ও বের করলেন। দলের ছেলেরা প্রাথমিক খররের জন্য শুরু করল ছোটখাট চুরি। সাইকেল, রেডিও, টেপ রেকর্ডার নিজের ও বন্ধুবান্ধবদের বাড়ির থেকে চুরি করে আনত তারা। কেউ কেউ বাড়ির নগদ টাকা ও সোনাদানাও চুরি করে দলের তহবিলে দিল। অধিকাংশই ভদ্র শিক্ষিত পরিবারের, তবু শুধুমাত্র বিপ্লবের তাগিদে তারা চুরি করে দলের প্রাথমিক তহবিল গড়ে তুলেছিল।
ইতিমধ্যে ঠিক করা হলো পার্ক স্ট্রীটে পোস্ট অফিসের গলির ভেতর প্রোস্টাল ভ্যানে ডাকাতি করা হবে। সেই অনুযায়ী তারা তৈরি হতে লাগল। ডাকাতি হবে মাসের প্রথম দিন। কারণ পয়লা তারিখ ভ্যানে করে বেতনের টাকা জি পি ও থেকে আসে। বি. বা. দী বাগ থেকে ভ্যান প্রথম পার্ক স্ট্রীট পোস্ট অফিসে আসে, তারপর যায় অন্যান্য পোস্ট অফিসগুলিতে। পুরো টাকাটা পেতে হলে পার্ক ক্লিট পোস্ট অফিসে ভ্যান এলে, সেখানেই ডাকাতি করতে হবে। করাও হলো তাই।
পার্ক স্ট্রীট পোস্ট অফিসে ডাকাতির পর দলকে ঢেলে সাজানো হলো। পাঁচজন ছোট ছোট ভাগ করা হল, একজন থাকল নেটওয়ার্ক লিডার যারা কেবল মাত্র নেটওয়ার্ক কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ রাখবে। তার মাধ্যমেই অনস্ত বাবুর নির্দেশ আসত। দলের সদস্যরা প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে নিজেদের দলের কাজকর্ম পর্যালোচনা করার জন্য তারা কলকাতার বিভিন্ন পার্কে, ময়দানে নিজেরা মিলিত হতো। তাছাড়া কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট অফিস-ঘর ভাড়া করে, চেয়ার টেবিল সাজিয়ে পার্টির মিটিং বসতো।
পার্ক স্ট্রিটের ডাকাতি পরপর সদস্যদের গুরুত্ব অনুযায়ী রাহা খরচ দেওয়া হতো তিনশো, পাঁচশো, সাতশো এবং বিবাহিতদের একহাজার টাকা করে । যাদের বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তারা শুধু ছোট-ছোট ঘর এবং ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে আত্মগোপন করে থাকতো। বেশির ভাগই ছিল দক্ষিণ ও মধ্য কলকাতায় লোকজন। এইসব সদস্যদের নিষ্টা, একাগ্রতা, সততা, আদর্শ, শিক্ষা এবং চরিত্র ছিল প্রশংসনীয়।
উনসত্তরের পয়লা মে শহীদ মিনার ময়দানে কানু সান্যাল ঘোষণা করলেন তারা সি. পি. আই (এম. এল) পার্টি তৈরি করেছেন। কয়েকজন নকশাল নেতা মিলে গোপনে ওই পার্টি তৈরি করে ফেলেছিলেন।
সত্তর দশকেই শুরুতেই চারু মজুমদারের ‘খতমের লাইন’ তরুণদের মনে রোমান্টিক বিপ্লবী আবেগে সৃষ্টি করেছিল। সুশীতল রায়চৌধুরীর মতো কিছু নকশাল নেতা এর বিরোধীতা করলেও তা গুরুত্ব পায়নি দলে। চারু মজুমদারের ব্যক্তিপূজা তখন কায়েম হয়েগেছিল দলে। এরপরই চারু মজুমদার ঘোষণা করলেন, দেশের গোটা শিক্ষা ব্যবস্থা ‘বুর্জোয়া শিক্ষা ব্যবস্থা’। তারপরই ‘সাংস্কৃতিক বিপ্লবের’ নামে নকশালরা শুরু করল, স্কুল কলেজ পোড়ানো, মনীষীদের মূর্তি ও সরকারী অফিসে ভাঙচূর। এসব করলে তবেই দলে জায়গা মিলতো।
কত উজ্জ্বল তরুণ তরুণীরা ‘সমাজের খোল নলচে পালটে দেবা’র আকাঙ্খায় পড়াশুনা ত্যাগ করে বিপ্লবের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মাহুতি দিয়ে ছিল তার কোন হিসেব নেই।
তখন সি. পি. আই.(এম)-য়ের সদস্যরা প্রকাশ্যে নকশালদের বিরোধিতা করল।
এভাবেই সত্তর দশকের শুরুটা হল, উৎকন্ঠার মধ্য দিয়ে। দিন যাপন ছিল উদ্বেগের ভিতর আর শঙ্কায় নিশি যাপন। এই ছিল তখনকার পরিস্থিতি। কাল কি আবার নতুন কোন লাশ ভেসে যাবে গড়িয়া খাল দিয়ে, কোন স্বজন বন্ধুর লাশ নয়তো? জীবনের কোন নিরাপত্তা ছিল না তখন আমাদের কারও।
আমার বন্ধুদের মধ্যে সেসময় দু’জন নকশাল আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিল। তাদের মধ্য একজন নিতাই সরকার (আমাদের সঙ্গে কবিতা লিখত)। রামগড়ে থাকত। দশ বছর আগে মারা গেছে, খবর পেয়েছি। অন্যজন স্বপন লাহিড়ি ( মার্কসবাদী ফরযার্ড ব্লকের তাত্ত্বিক নেতা তারাপদ লাহিড়ির সেজ ছেলে), নাকতলায় থাকত। ওকে আমরা সঁপা বলে ডাকতাম। নকশালদের কাছে সঁপা নামেই সুপরিচিত ছিল। তার প্রমাণ পেয়েছি একবার মহাবিপদের পড়ে।
কসবার রথতলায় এক আত্মীয়র বাড়ি গেছি। ফিরতে সন্ধ্যা হয়েগেছিল। একা-একা হাঁটছি আমি, রাস্তাটা সুনসান। হঠাৎ কোথা থেকে ভুঁইফোঁড়ের মতো পাঁচজন ছেলে এসে আমাকে ঘিরে ধরে, নিয়ে গেল জংলা আগাছায় ভর্তি একটা মাঠের ভিতর। একজনের হাতে দেখলাম একটা রিভলবার। দেখে ভয়ে শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল।
একজন বলল, কি নাম তোর? বললাম।
আর একজন জানতে চাইল, কোথায় গেছিলি? বললাম।
কি করিস? আর একজন জানতে চাইল। বললাম বেকার।
নাকি পুলিশের চর? প্রশ্ন করল সে। আমি বললাম, না না।
গলা কেঁপে যাচ্ছিল আমার।
রিভলবার হাতে যার সে এবার জিজ্ঞাসা করল, কোথায় থাকিস? বললাম, বিদ্যাসাগর কলোনী। কাকে চিনিস ওখানকার? দু-এক জনের নাম বলতো?
প্রথমেই নিতাই সরকারের নাম মনে এলো। বললাম তার নাম। সে মনেহয় ওদের কাছে নিতাই নামে পরিচিত নয়, নিতু বা অন্য কোন নামে পরিচিত। চিনতে পারল না।
সে বলল, আর কেউ?
তখন বললাম, সঁপার নাম। বললাম, সে নাকতলায় থাকে।
ওদের মধ্যে একজন বলে উঠল, ও সঁপা তোর পরিচিত।
বললাম, হ্যাঁ আমার বন্ধু। তখন রিভলবার হাতে ধরা ছেলেটি বলল, সেম সাইড। খোঁচর নয়। ছেড়ে দে ওকে।
ওদের একজন তখন বলল, যা, নিশ্চিন্তে চলে যা এবার।
আমদের কথা ভুলেও কাউকে বলিস না।
মাথা নেড়ে বললাম, না না, কাউকে বলবো না।
বড় রাস্তায় এসে, ধড়ে প্রাণ এলো। মারাত্মক বিপদের হাত থেকে সেবারের মতো মুক্তি পেলাম, সঁপার নাম বলে।
কয়েকদিন আগেই পুলিশের চর সন্দেহে কালীঘাটের এক ভিখিরিকে খুন করছে নকশালরা। প্রাণের ভয়ে তখন কলকাতা ছেড়ে লোকেরা পালাচ্ছে।
আমাদেরই মতো সাধারণ জনগণ পড়লো উভয় সংকটে। যেমন জলে কুমির ডাঙায় বাঘ। নকশালরা ভাবে আমরা পুলিশের চর, আবার পুলিশেরা ভাবে, আমরা সব নকশাল। কী করবো আমরা? বুঝতে পারিনা। দিশেহারা বোধ করি অসহায়ভাবে।
আর একবার কাঁকুলিয়া রোড়ে সুশীল রায়ের (সুলেখক ও একসময় বিশ্বভারতী পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন) বাড়ি থেকে আমাদের পত্রিকার জন্য লেখা নিয়ে ফেরার সময় পুলিশের এনকাউন্টারের মধ্যে পড়ে গেছিলাম। লাফ দিয়ে পাঁচিল টপকে গিয়ে পড়লাম রেললাইনের ধারে একটা শুকনো নর্দমার মধ্যে। জায়গাটা গুল্মলতা ও ঝোপঝাড়ে ঢাকা ছিল। নিজেকে তার মধ্যে সংকুচিত করে লুকোলাম। পুলিশের সার্চ লাইটের আলো কয়েকবার ঘুরে গেল ঝোঁপের উপর দিয়ে, আমি নিঃশ্বাস বন্ধ করে মরার মতো পড়ে রইলাম। কতক্ষণ সেভাবে সেখানে পড়েছিলাম জানি না। ধীরে ধীরে গুলির আওয়াজ বন্ধ হলো। কিছুক্ষণ পরে ভারী বুটের শব্দ দূরে মিলিয়ে গেলো, তারও কিছুক্ষণ পর পুলিশের ভ্যান ছাড়ার শব্দ শুনতে পেলাম। তারপর আমি ঝোঁপ থেকে বেরিয়ে এলাম। উপস্থিত বুদ্ধির জোরে এবং লুকোবার মতো অনুকুল জায়গা পেয়ে সেবারও বেঁচে ঘরে ফিরতে পেরেছিলাম। না হলে হয়তো পুলিশের গুলি খেয়ে মরে পড়ে থাকতাম সেখানে।
সত্তর দশকেই সতেরো জনের বেশি পুলিশ খুন হয়েছিল। ফলে নীচুতলকর পুলিশ কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল।
মানতে পারতাম না, সাধারণ ঘরের ছেলে পুলিশে কাজ করে বলে, তাকে খুন করে, বিপ্লব হবে এ দেশে। প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি, সে সময় আমার এক মেসোমশাই রেল-পুলিশে চাকরী করত। একদিন যাদবপুর স্টেশনে ডিউটি করার সময় নকশালদের হাতে খুন হয় সে। কখনও সে কোন পার্টি পলিটিক্সের মধ্যে থাকত না। আমার কাছে সেটা ছিল একটা মর্মান্তিক ও নিদারুণ ঘটনা। মাসির পাঁচ ছেলে-মেয়ে অনাথ হয়ে পড়েছিল। মেসোমশাই একমাত্র আয়ের উৎস ছিল। ছেলে মেয়েদের কারও তখন চাকরী করার মতো বয়স হয়নি বলে ‘ডাই ইন হারনেস’ গ্রাউন্ডে তারা কেউ চাকরীও পায়নি। তখন মাসি নিজের চাকরীর জন্য অনেক চেষ্টা তদবির করেছিল। কিন্তু মাসিকেও চাকরী দেওয়া হয়নি, কী এক অজ্ঞাত কারণে, জানি না। মাসিকে তখন বাধ্য হয়ে কয়েক বাড়ি রান্নার কাজ করে সন্তানদের মুখে অন্ন জোগাতে হয়েছিল।
ওদের কাছে শুনতাম তাদের মতাদর্শের কথা। সমবয়সী বলে নকশাল আন্দোলনের রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে ওদের সাথে তর্ক করতাম। মেসোমশাই ওদের হাতে খুন হয়েছে আমার কাছে জানার পর, ওদের যুক্তি ছিল, শ্রেণীশত্রু খতম। ওরা তখন আরও বলেছিল মনে আছে, ‘বিপ্লব কোন সূচীশিল্প কর্ম নয় যে রক্তপাত ছাড়া বিপ্লব হবে।’ আমি ওদের সঙ্গে একমত হতে পারিনি।
পয়লা এপ্রিল সাইত্রিশ বছরের তরুণ, অমৃতবাজার পত্রিকার ডিরেক্টর সুচারুকাস্তি ঘোষ ভোর ছটা নাগাদ নিজের গাড়িতে উত্তর কলকাতা থেকে পঞ্চাননতলা ফিরছিলেন। জানতো না দিনটা জীবনের শেষ এপ্রিল ফুল ! যখন জানলো, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে, নকশালরা গাড়ি ঘিরে ধরে ওঁকে টেনে নামিয়ে বুকে, পেটে, পিঠে ছুরি বসিয়ে দিলো। আর. জি. করে নিয়ে যাওয়ার মধ্যেই তার দেহটা নিষ্প্রাণ হয়েগেছিল।
ছয়ই এপ্রিল সকাল সকালটা পনের মিনিটে কলকাতা হাইকোর্টের মাননীয় বিচারক কিরণ রায়কে অভয় মিত্র লেনে তার বাড়ির সামনে পাইপগান দিয়ে আক্রমণ নকশালরা । পরদিন রাত এগারোটায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
আঠেরোই মে শ্যামপুকুর বিধানসভা কেন্দ্রের উপ নির্বাচনের প্রার্থী ফরয়ার্ড ব্লকের নেতা অজিত বিশ্বাস যখন রাত সাড়ে আটটায় সময়, মিটিং সেরে বাড়ি ফিরছিলেন, ঠিক তখনই তাকে গুলি নকশালরা। মেডিকেল কলেজে নেওয়ার সময় তিনি মারা যান।
মধ্য কলকাতার যুব কংগ্রেস সভাপতি নারায়ণ করের বেলেঘাটা মেন রোডে তার বাড়িতে ঢুকে নকশালরা রিভলবার দিয়ে তাকে খুন করে । উত্তর কলকাতার বিখ্যাত ফুটবলার জ্যোতিষ মিত্রকে নৃশংসভাবে খুন করে নকশালরা।
দশই আগস্ট মঙ্গলবার পাঁচটাগাদ সেন্ট্রাল এক্সেজের প্রশাসক এন.কে.পালকে ক্লাইভ রোডে তার পাঁচতলার অফিস ঘরে ঢুকে বীভৎস ভাবে তার গলা ও পেটে চুরি ঢুকিয়ে দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। অফিসে তার কাটা মৃতদেহ পাওয়া যায়। ওই অফিসের কর্মচারীদের ড্রয়ার তল্লাশি তরে পাওয়া যায় “দেশব্রতী” পত্রিকা।
একাত্তর সালের বিশে ফেব্রুয়ারি, সকাল এগারটায় বিধান সরণি ও শ্যামপুকুর স্ট্রীটের মোড়ে হেমস্ত বসুকে নকশালরা খুন করল।
সন্ত্রাসবাদী হত্যা নীতির পরিণামে নকশালদের হাতে শুধু কলকাতা নয়, পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র বহু সাধারণ মানুষ,পুলিশ,গার্ড নির্বিচার খুন হতে লাগল। খুন হলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালযের উপাচার্য গোপাল সেন সহ আরও অনেক নামকরা ব্যক্তি। এই একাত্তর সালেই শুধুমাত্র কলকাতা শহরে নকশালরা খুন করেছিল কংগ্রেসের সতের জন, সি. পি. আই (এম)-এর পঁচিশ জন, সি. পি. আইয়ের একজন, পি. এস. পি-র একজন, হোমগার্ড সাতজন, ব্যবসায়ী ছ’জন, পুলিশ যোলজন, অন্যান্য মানুষ সাইত্রিশ জন, সব মিলিয়ে একশ আঠের জনকে।
রক্ত লোলুপ নেশা নকশালদের রক্তে মিশে গেছিল। ওদের দৃঢ়মূল ধারণা হয়েছিল, যে যত বেশি খুন করতে পারবে, সে তত বড় নকশাল নেতা। আর খুন করতে না পারলে সে পাতি নেতা।
ফলে সেসময় নকশাল দমনের নামে, পুলিশি জুলুম নিপীড়ণ শুরু হলো, নকশাল সন্দেহে সাধারণ অসহায় জনগণের উপর। সেসময় পুলিশ কমিশনার ছিলেন, রঞ্জিৎ গুপ্ত। গোয়েন্দা বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর ছিলেন দেবী রায়। তারই নির্দেশে লালবাজারর গোয়েন্দা বিভাগের রুনু গুহ নিয়োগীর নেতৃত্বে সারা কলকাতা জুড়ে প্রবল ধর-পাকড় শুরু হয়ে গেল।
দেখতে দেখতে বয়স আমার তেইশ পেরিয়ে চব্বিশে পড়ল। চোখের স্বপ্নগুলো ঝাপসা হয়ে আসছিল ক্রমশই।
এর মধ্যে হুড়মুড়িয়ে এসে গেল ১৯৭৫ সাল। সারা দেশে ‘জরুরী অবস্থা’ জারী হলো। সে এক অস্বাভাকি অরাজক অবস্থার সৃষ্টি হলো।
মোটেও ঘরে থাকা যায় না নিশ্চিন্তে। থাকলে, আচমকা সি. আর.পি.এফ ( সেন্ট্রাল পুলিশ) ঘরে ঢুকে এসে, যাকে পায় তাকে ধরে মারতে মারতে নিয়ে গিয়ে ভ্যানে তোলে।
ওরা আমাদের ভাষা বোঝে না। আমরাও বুঝি না ওদের ভাষা। আমরা বুঝি, মার দেওয়া ছাড়া ওদের আর কোন ভাষা জানা নেই।
শিশু বৃদ্ধ যুবক যুবতী সকলেই ওদের চোখে বিপজ্জনক, তাই ওদের কাছে কারোই রেহাই ছিল না সেই সময়। ফলে দিনের বেলা আমাদের কাটতে হতো মাঠে ঘাটে, বনে বাদারে ঘুরে। সন্ধ্যায় অন্ধকার নেমে এলে তখন ঘরে ফিরতাম। কারণ রাতে সি. আর.পি.এফের লোকেরা পাড়ায় ঢুকতে ভয় পেত অন্ধকারে। মহিলা আর বৃদ্ধারাই কেবল সারাদিন ঘর আগলে রাখতেন।
সেসময় বড় রাস্তায় বের হওয়া যেত না। টহলদারী ভ্যান থামিয়ে রাস্তা থেকে ধরে, নিয়ে গিয়ে ভ্যানে তুলতো পুলিশের লোকেরা, যে কোন তরুণ বা যুবককে রাস্তায় দেখতে পেলেই।
বোকার মত প্রতিবাদ করলে, বাড়তি পাওনা হিসাবে জুটত লাথি চড় কিল ঘুষি, বন্দুকের বাট দিয়ে মাথায় বা ঘাড়ে আঘাত।
সেই পরিস্থিতির আগে থেকেই, বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধ চলেছিল। তখন রেডিয়োতে দেবদুলার বন্দোপাধ্যায়ের উদাত্ত কন্ঠে মুক্তি-যুদ্ধের খবর শুনে আলোড়িত হতাম।
অন্যদিকে নকশাল আন্দোলনের হটকারী লাল সন্ত্রাস আর সন্ত্রাস দমনের নামে সাধারণ মানুষের উপর পুলিশের অমানবিক নির্যাতন দেখে হতাম হতাশ, বিভ্রান্ত।
সি.আর.পি.এফের (কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনী) তাড়া খেয়ে দিনে দুপুরে পালিয়ে বেড়ানো ছাড়া আর কোন বিকল্প উপায় আমাদের জানা ছিল না । পাড়ায় ‘সি.আর.পি.এফ’ ঢুকলে বাড়ির মেয়েরা শাঁখ বাজতে শুরু করতো। আমরা শাঁখের আওয়াজ শুনে সচেতন হয়ে যে যখন যেখানে যে অবস্থাতেই তখন থাকতাম, সেই অবস্থায় বাড়ি ছেড়ে বনে বাদারে কিংবা দূরে কোথায়ও পালাতাম। আমার মতো অন্য তরুণ ও যুবকেরাও যে যেদিকে পারতো পালাত । আমাদের অনেকের পকেটে তখন একটা হুইসেল বাঁশি থাকত। বিপদের আশঙ্কা টের পেলে, বাঁশি বাজিয়ে অন্যদের সতর্ক করে দিতাম।
সেসময় একদিনের কথা ভাবলে, আজও ভয়ে আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।
সকাল এগারোটা বাজে। মা আমাকে দু’হাতা গরম ভাত আর ডাল থালায় দিয়েছে খেতে। আমিও খেতে বসে, ডাল দিয়ে ভাত মেখে, মাকে বললাম, মা একটা কাঁচা লঙ্কা হবে?
-আছে বলে, মা লঙ্কার বাটি থেকে একটা কাঁচা লঙ্কা তুলে, আমার থালায় দিয়েছে সবেমাত্র। এমন সময় পাশের বাড়ির পাঁচিল টপকে পাঁচ-ছয় জন ‘সি.আর.পি.এফ’ আমাদের বাড়িতে ঢুকে পড়ল, তারপর দু’জন আমাদের ঘরে ঢুকে গেল। একজন এসে রান্না ঘরে ঢুকল। মা তৎক্ষণাৎ আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে, শাড়ির আঁচলটা আমার গায়ের উপর ফেলে দিয়ে, আমাকে আড়াল করে ফেললো। ‘সি.আর.পি.এফ’ লোকটি আমায় দেখতে পায়নি। মাকে ঘরে একা দেখে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে, তার সঙ্গী সাথীদের নিয়ে পাশের বাড়িতে হানা দিল। সেবারে মায়ের উপস্থিত বুদ্ধির জোরে আমি বেঁচে গেছিলাম।
সেদিনই দুপুরের দিকে বাঘাযতীন আই ব্লকে বাপী সিনহা ও তার ভাইকে বাড়ি থেকে টেনে রাস্তায় বের করে এনে গুলি করে হত্যা করেছিল ওরা। বিকেলের দিকে আমরা সে খবর পেয়েছিলাম। ‘সি.আর.পি.এফ’-য়ের কাছে আমিও সেদিন ধরা পড়লে, আমাকেও ওদের মতো গুলিতে ঝাঁজরা করে দিত না, কে বলতে পারে? সেসময় কত অসহায় মায়ের কোল যে খালি হয়ে গেছে কে আর তার হিসেব রেখেছে?
এরকম ঘোর অন্ধকার কালো সময়ে, মানসিক উদ্বেগে দিন কাটানো, শঙ্কায় রাত পোহানো ছিল আমাদের একমাত্র বেঁচে থাকার তাড়না। পাড়ায় রাতে যদি হঠাৎ করে কখনও ‘সি.আর.পি.এফ’ ঢোকে সেজন্য পালা করে রাত পাহারার ব্যবস্থা করেছিলাম আমরা।
আমরা কয়েকজন কবি-গল্পকার তখন, বাঘাযতীনের ‘সাগরিকা’ – চায়ের দোকানে সময় সুয়োগ মতোন আড্ডা দিতাম। তাদের মধ্যে গল্পকার অসীম চক্রবর্তী, শচীন দাস, অতনু চ্যাটার্জী, কবি সুনির্মল ঘোষ,শৌভিক চক্রবর্তী, আমি, নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও আরও অনেকে থাকতো।
একদিন সন্ধ্যায় ‘বেদব্যাস’ (আমাদের পত্রিকা) প্রকাশ উপলক্ষে আমি, সুনির্মল ঘোষ আর শৌভিক চক্রবর্তী বসে চা পান করছি আর পত্রিকা নিয়ে আলোচনা চলছে, এমন সময় কয়েকজন ‘সি.আর.পি.এফ’ এসে ঢুকল সেখানে। পিছন থেকে শক্ত মুঠোয় আমাদের কলার চেপে ধরে, টেনে ছিঁচড়ে দোকান থেকে বড় রাস্তায় (রাজা এস সি মল্লিক রোড) বের করে আনলো প্রথমে। তারপরে আমাদের চড়- চাপড়, কিল-ঘুষি, লাথি মারতে মারতে নিয়ে গিয়ে ভ্যানে তুলল।
বাঘাযতীনের মিলিটারী রোডের মুখে ভ্যানটা দাঁড়িয়ে ছিল। তারপর এখান- সেখান থেকে আরও কয়েকজনকে ধরে এনে, ভ্যান ভরে ফেলল, ভ্যান ভরে যাওয়ার পর বাঙালী অফিসারটি ড্রাইভারকে বলল, চলো এবার।
ড্রাইভার ভ্যানের পাশে দাঁড়িয়ে সিগ্রেট টানছিল এতক্ষণ। তার কথায় ড্রাইভার সিগ্রেট ফেলে দিয়ে ভ্যানে উঠে গিয়ে বসে, ভ্যানটা চালিয়ে এনে, এসে থামল, গাঙ্গুলীবাগানে শক্তি সোমের “বিল্ডার্সের দোকানের” সামনে। বাঙালী অফিসরাটি, আমার হাতে ‘বেদব্যাস’ পত্রিকাটি দেখে, এক-ঝটকায় হ্যাচকা টানে আমার হাত থেকে কেড়ে নিলেন সেটা। আগাপাশতলা চোখ বুলিয়ে পত্রিকাটি দেখলেন। কি বুঝলেন কে জানে?
পরে আমাদের, প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে যেতে লাগলেন। আমরা কে কোথায় থাকি, কি করি? নকশাল করি কীনা? বোম বাঁধতে পারি কীনা? এই ধরণের সব বিপদজনক প্রশ্ন।
আমি তাকে বিনীতভাবে জানালাম, না স্যার, আমরা এসব কিছু করি না, আমরা এই পত্রিকাটি বের করি।
– পত্রিকাটা কেন বের করিস? এটা কোন রাজনৈতিক দলের মুখপত্র, বল শালা?
আমি জানালান, আমরা কবিতা লিখি অর্থাৎ কবি। এখানে আমাদের কবিতা ছাপা হয়।
বাঙালী অফিসারটি আপাদমস্তক চোখ বুলিয়ে আমাকে জরিপ করলেন নিখুঁত ধারালো চোখে। তারপর বললেন, শক্তি চ্যাটার্জীকে চিনিস?
আমি বললাম, হ্যাঁ চিনি মানে তার কবিতা পড়েছি।
– তবে বল তো তার কবিতা একটা।
শক্তি চ্যাটার্জী এই কবিতাটি বহুবার পড়েছি, তাই মুখস্ত ছিল, বলে দিলাম সেটা।
” অবনী বাড়ি আছো
দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে পাড়া
কেবল শুনি রাতের কড়ানাড়া
‘অবনী বাড়ি আছো?’
বৃষ্টি পড়ে এখানে বারোমাস
এখানে মেঘ গাভীর মতো চরে
পরাঙ্মুখ সবুজ নালিঘাস
দুয়ার চেপে ধরে–
‘অবনী বাড়ি আছো?’
আধেকলীন হৃদয়ে দূরগামী
ব্যথার মাঝে ঘুমিয় পড়ি আমি
সহসা শুনি রাতের কড়ানাড়া
‘অবনী বাড়ি আছো?’
অফিসারের মুখটি গম্ভীর দেখে কিছুই বোঝা গেল না, তিনি প্রভাবিত (impresed) হলেন কীনা।
তারপর তিনি কী ভেবে কে জানে, আমাকে বললেন, তুইও কবিতা লিখিস নাকি?
আমি ভয়ে ভয়ে নিঃশব্দে ঘাড় কাৎ করে সম্মতি জানলাম।
তখন কি জানি এমনটা হবে? উনি আমার কাছে আমারই কবিতা শুনতে চাইবেন। জানলে না লিখি না, বলে ‘না’-সূচক মাথা নাড়তাম।
আমাকে প্রায় ধমকের সুরে বললেন, এবার বল তোর একটা কবিতা।
তখন কি আর কোন কবিতা মনে আসে ছাই ! গলা শুকিয়ে কাঠ, ঠিক ভয়ে নয়, দুশ্চিন্তায়। মা বাবা ভাই বোন আমার চিন্তায় অনাহারে ছটফঠ করে বিনিদ্র রাত কাটাবে।
– সে কি রে শালা, বল।
অফিসার ধমকালেন। তার মুখ থেকে ঝাঁঝালো মদের গন্ধ নাকে এসে ঝাঁপটা মারল।
কোন স্বরচিত কবিতাই মনে আসছে না দেখে, বেদব্যাসের সেই সংখ্যায় প্রকাশিত আমার কবিতাটি পড়ে শোনালাম তাকে। কবিতাটির নাম ছিল – ” জরুরী অবস্থা”, সেই সময়ের পরিপেক্ষিতে লেখা।
কবিতার নাম বাদ দিয়ে, আমি তাকে কবিতাটা পড়ে শোনালাম।
( আক্ষেপের কথা কবিতাটির কোন কপি আজ আর আমার কাছে নেই ), থাকলে পুরো কবিতাটা এখানে তুলে দিতে পারতাম। কিছু কিছু পংক্তি এখনও মনে আছে, শুনুন –
” ….. অবস্থাটার জরুরী তাই (এই অংশটুকু পড়িনি)
এখন বেহাল সবার হাল
জানি না আর এমন করে কাটবে কত কাল?
ওরা বলে ধৈর্য ধরুন আর কিছুটা কাল
জমিতে সবে সার পড়েছে, পড়েছে সবে হাল,
দুঃখ কষ্ট সব ভুলে থাকো এখন দেশকে ভালবেসে
ফলবে ফসল ঠিক অবিকল সোনার মত হেসে।
আমাদের এই দেশে
ফুল ফুটবে, ফল ধরবে শেষে
অবস্থাটা জরুরী তাই (পড়িনি)
তাই কাজ করে যাও হেসে
ব্যথার কথা বললে এখন একলা যাবে ফেঁসে।”
অফিসারটি কবিতাটা শোনার জন্যই বোধহয় শুনেছিলেন। কিংবা নিরেট নির্বোধ মাথা তার। অথবা মদের ঘোরও হতে পারে। কবিতাটার মানে যে কিছুই বোঝেনি তা বোঝা গেল, ভ্যান থেকে আমাদের নামিয়ে ছেড়ে দেওয়াতে।
বোঝেনি ভালই হয়েছে আমাদের পক্ষে। ভাগ্য ভাল ছিল বলতে হবে আমাদের, বুঝলে দেশদ্রোহীতার অপরাধে আমাদের হাজত বাস ঠেকাবার কারও সাধ্য ছিল না সেসময়?
সে’বারের মত আমরা বন্ধুরা সকলেই মুক্তি পেলাম। তারপরেও অবশ্য আরও কয়েকবার ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিষ-পত্র কিনতে রাস্তায় বেরিয়ে, রাস্তা থেকে ধরা পড়ে আমাকে থানা পরি-দর্শনে যেতে হয়েছিল।
জরুরী অবস্থা, আমাদের জীবন নাজেহাল করে ছেড়েছিল। অস্তিত্বের সংকট তৈরী হয়েছিল আমাদের মধ্যে।
বেধরক ধর-পাকড়ের ফলে, সেসময় বড় বড় রাজনৈতিক নেতারা আত্মগোপন করলেন। লেখায় সেনসরশিপ চালু হল।
বে-ফাঁস কিছু লেখা প্রকাশ পেলে লেখক ও সম্পাদক দুজনেরই হাল,বেহাল হতো সেসময়।
তারই প্রতিবাদে ১৯৭৫ সালে জরুরী অবস্থার সময় গৌরকিশোর ঘোষ নিজের গলায় কুকুরের বকলেস বেঁধে সব জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন, ইন্দিরা সরকারের, জরুরী অবস্থায়, কন্ঠ রোধের প্রতিবাদে। হতবাক হয়ে আমরা তাঁর নীরব প্রতিবাদের অভিনব ধরণ দেখে বিস্ময়ে বিমূঢ় দেখতাম তাকে।
জরুরী অবস্থার সময় দেশের আপামর জনগণের উপর যে নির্মম অমানুষিক অত্যাচার নিপীড়নের দুর্ভোগ নেমে এসেছিল তার সমুচিৎ জবাব দিয়েছিল তারা, পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে। ফল স্বরূপ, সেবার নির্বাচনে ইন্দিরা সরকারের পতন ঘটেছিল।
পঞ্চাশ বছর আগেকার কথা এসব। অথচ এখনও মনেহয় এই তো সেদিনের কথা। স্মৃতির পাতায় জ্বলজ্বল করে জ্বলছে । যা আজও অমূল্য স্মৃতি হয়ে হৃদয়ের মণিকোঠায় সযত্নে রক্ষিত আছে।
—————————————————————
[ তথ্যঋণ স্বীকার – রুণু গুহনিয়োগী (সাদা আমি কালো আমি) – প্রথম খন্ড ]