শ্রমিক আন্দোলন রাজনৈতিক না নিরপেক্ষ হওয়া উচিত
কোন মানুষ তখন তাঁর যোগ্যতার দ্বারা কাজের উপযোগী হয়ে কর্মে নিযুক্ত হয় তখন সেই মানুষকে শ্রমিক বলা হয়। শ্রমিকদের শ্রম ও মেধার বিনিময়ে যা উৎপাদন হয় তার দ্বারা পুঁজি বিকশিত হয়,সমাজ বিকশিত হয় এবং মালিকপক্ষ লাভবান হয়। তবে মালিকপক্ষ যতটা লাভবান হয় শ্রমিকরা ততটা লাভবান হয় না। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উদয়াস্ত খাটুনী কেটেও লাভের ঘর ফাঁকা তো বটেই উপরন্তু ন্যায্য শ্রমের মূল্য টুকু থেকেও শ্রমিকশ্রেণী চিরকালই বঞ্চিত থেকে এসেছে,থাকছে এবং থেকেই যাবে যতোদিন না শ্রমিকপক্ষ ফের জোরালোতম আওয়াজে মুখরিত না হবে।
শ্রমিকদের শ্রমে উৎপাদিত অর্থে মালিকপক্ষ যে পরিমাণ লাভবান হয় তার থেকে ন্যূনতম অংশ শ্রমিকদের দেওয়া হয়। অনেকক্ষেত্রে নিরুপায় হয়েই শ্রমিকেরা তাদের ন্যায্য দাবী আদায়ের জন্য মালিকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। অবশ্য এই ব্যাপারে শ্রমিকদের সহায়তা করতে পাশে দাঁড়ায় শ্রমিক সংগঠন । কারণ কারো একার প্রতিবাদ কখনোই কাজে আসে না। সম্মিলিত হয়ে সংঘবদ্ধভাবে প্রতিবাদ জানালে তবে সমস্যার কিছুটা সুরাহা হতে পারে। এই সকল শ্রমিক সংগঠন তারা পরিচালনা করেন তাদেরকে বিচক্ষণতার সাথে সমস্যার সমাধানের নিমিত্তেই নিরপেক্ষ থাকতে হয়, তাহলে শ্রমিকরা উপকৃত হয়। তাছাড়া, শ্রমিকের উপর মালিকপক্ষ সর্বদাই কাজের চাপ দিয়ে থাকে। মালিকপক্ষ অসন্তুষ্ট হলে যেকোন সময় শ্রমিককে ছাঁটাই করে দিতে পারেন তাতে সমিতির প্রতিবাদ গণ্য হয়না।
১৮৭৯ সালে শ্রমিকরা ১২ ঘন্টা কাজের বদলে ৮ ঘন্টা কাজের দাবিতে,ন্যায্য পাওনার দাবীতে রাস্তায় আন্দোলনে নেমে পড়ে।১৮৮৬ সালে,পয়লা মে,শ্রমিকদের সমাবেশে যে আন্দোলন চলে সেই আন্দোলন সারা বিশ্বব্যাপী সংঘটিত হয়েছিল, এবং পরিশেষে ৮ ঘন্টা শ্রম মালিকপক্ষ মেনে নেয়ার ঘোষণা জারি করে। এই কারনেই সারাবিশ্বে শ্রমজীবী মানুষের কাছে এই দিনটি মে দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
শ্রমিকদের শ্রমের ফলে উৎপাদন তেমন বাড়ছে তেমনি রপ্তানি আয় বাড়ছে,বাড়ছে জিডিপি। কিন্তু তাহলেই বা? শ্রমিকদের ভাগ্য তো রে তিমিরে সেই তিমিরেই।আজো ঠিকমতো ন্যায্য মজুরি তারা পাচ্ছে না। আবার ,শ্রমিক যদি ট্রেড ইউনিয়ন করে তাহলে বিপদের খাড়া তার ঘাড়ে পড়বেই। তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দেওয়া হবে। চুক্তি অনুযায়ী ১২০ দিনের কাজের শর্তাবলীর জন্য। শ্রমিক ও মালিক এর মধ্যে চিরকালই বিস্তর ফারাক, শ্রমিক চিরকালই শোষিত বঞ্চিত।
তাই,শ্রমিকদের কাছে একটাই পথ খোলা আছে ,যে অবস্থায় জীবিকা নির্বাহ করছে সেখানকার যন্ত্রণামুখর ক্লান্তিকর পরিস্থিতি থেকে বেড়িয়ে এসে ঐক্যবদ্ধভাবে একটি শক্তিশালী শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলা। বর্তমানে সমাজের পরিকাঠামো এমন যে যেকোন আন্দোলনই তেমন মূল্য পায় না যদি না তার পেছনে কোন শক্তিশালী ব্যক্তির হাত থাকে। আর,এইসকল কারনেই আন্দোলন দানা বাঁধতে পারে না। আর এমনটাই হয়ে চলতে থাকবে যদি না শ্রমিকদল ঐক্যজোটে দাবী আদায়ের দৃঢ়তা নিয়ে একজোট হতে পারে।