শৈল-শহর দার্জিলিংয়ে কয়েকদিন
সোমবার (১৭/১০/২০২২) যাচ্ছি দার্জিলিং। রাত্রি এগারোটা কুড়িকে মিনিটে পদাতিক এক্সপ্রেস শিয়ালদহ থেকে। বাড়ি থেকে বেরোলাম রাত ন’টায় উবে ক্যাব ভাড়া করে।
পোঁনে-দশটার মধ্যে শিয়ালদা পৌঁছে গেলাম গড়িয়া থেকে। বারো নম্বর প্যাটফর্মে দার্জিলিং মেল দাঁড়িয়ে ছিল। আমি তার টিকিট পাইনি। কেটেছি পদাতিক এক্সপ্রেসের টিকিট। সেটা এই প্লাটফর্ম থেকেই ছাড়বে দার্জিলিং মেল ছাড়ার পর। তাই প্রতীক্ষায় থাকতে হলো। উপায় নেই।
লোকের ব্যাস্ত চলাচল দেখে সময় কিছুটা পার করে দিলাম। তারপর প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে এসে একটা দোকানে দাঁড়িয়ে চা- সিগ্রেট খেলাম। তারপর আবার ফিরে এলাম। দার্জিলিং মেল ছাড়ল দশটা পঁনেরো মিনিটে। সাড়ে দশটায় ওই প্লাটফর্মে পদাতিক এক্সপ্রেস দিতেই, তাতে ওঠার জন্য হুড়েহুড়ির ভিড় লেগে গেল। আমি বসে বসে দেখলাম সবটা। তারপর ভিড়টা একটু হাল্কা হতেই ট্রেনে উঠে আমার সীট নম্বর মিলিয়ে দেখে নিয়ে সেখানে গিয়ে বসলাম। ট্রেন ছাড়ল নির্ধারিত সময়ই।
বাইরে তখন অন্ধকার, কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। তাই দক্ষিনেশ্বর স্টেশন পেরোবার পর,রাতের খাবার খেয়ে নিয়ে শুয়ে পড়লাম। শুয়ে শুয়ে কানে আসছিল। বোলপুর, রামপুর হাট। রাত তখন তিনটা। তারপর কখন ঘুমিয়ে পড়লাম। ফারাক্কা আসতে ঘুমটা ভেঙে গেল লোকের চিৎকার চেচামেচিতে । সকাল তখন পাঁচটা বাজে প্রায়। তারপর আবার কখন তন্দ্রার মতোন মতোন এসেছিল আমার।
এইভাবে ঘুম ও জগরণের মধ্যে কাটলো কিছুক্ষণ। মালদায় ট্রেন আসতে চায়ে গরম ডাকে ঘুম ভেঙে গেল। এককাপ কফি খেলাম কুড়ি টাকা দিয়ে। তাপপর বাথরুমের কাজ সেড়ে ফ্রেস হয়ে নিলাম।
মঙ্গলবার (১৮ /১০/ ২০২২) এন জি পি – তে এসে নামলাম সকাল সোয়া-ন’টায়। সেখানে গাড়ি বলা ছিল। সে আমার আগেই এসে সেখানে উপস্থিত ছিল। তাকে ফোন করায়, সে এসে আমাকে স্টেশন থেকে গাড়িতে তুলে নিল। নাম তার সুদেন তামাং। সুদেন তামাংয়ের চুলগুলি বড় বড় মাথার উপরে ঝুঁটি বাঁধা কাকাতুয়া পাখির মতো। বয়ম ছেচল্লিশ বছর,পঁচিশ বছর ধরে গাড়ি চালাচ্ছে। পাকা হাতের গাড়ি চালক। তারপর শিলিগুড়ি বাইপাশ হয়ে সেবক রোড ধরে, পাহাড়ের পাক খাওয়া চড়াই উৎড়াই পথ ঘুরে ঘুরে উঠতে লাগলাম। আকাশ তখন ঝকঝকে নীল। দু’দিন আগেও বৃষ্টি হয়েছে শুনলাম ড্রাইভার সুদেনের কাছে। সেবক রোড পেরিয়ে যত উপরে উঠতে লাগলাম তত হিমল বাতাসের ধার বাড়তে লাগল।
গাড়ি এসে পৌঁছালো ‘বেঙ্গল সাফারি’- তে। সাফারিতে টিকিট কেটে ঢুকে, খোলা জায়গায় অনেক রকমের জন্তু-জানোয়ার দেখে বিমুগ্ধ হলাম। কিছুক্ষণ সাফারি দেখে তারপর সেখান থেকে বাইরে বেরিয়ে এলাম।
এরপর সেখান থেকে যাব তিস্তা-ভ্যালি টি এস্টেট, তাকদা অর্কিড গার্ডেন দেখতে। পাহাড়ের ধার ঘেষে নেমে যাওয়া সারি সারি পাইন বনের অপূর্ব দৃশ্যাবলী দেখতে দেখতে ছবি তুলতে তুলতে এগোতে লাগলাম।
তিস্তা-ভ্যালি টি এস্টেট দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল।
তারপর দেখলাম, তাকদা অর্কিড গার্ডেন। কত রকমের যে অর্কিড এখানে সংগৃহীত আছে, দেখলে বিস্মিত হতে হয়। মাটির টবে রাখা নানা রকমের অর্কিড এখান থেকে বিক্রি করাও হয়। ষাট টাকা থেকে তিনশো টাকা দামের মধ্যে। কয়েকজন কিনলো দেখলাম। সেখানে কিছু ছবি তুললাম। তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে এলাম।
এরপর তাগদা ছাড়িয়ে আরও উপরে প্রায় সাড়ে হাজার ফিটের মতো উঁচুতে উঠে তিনচুলে হাম তুকদহ খাসমহালে এসে পৌঁছালাম আমার নির্ধারিত বুক করা ‘কৃপা-কুটি’ স্টে-হোমে (হাম তুকদহ খাসমহাল) বিকেল সাড়ে তিনটার সময়। সেখানকার মালিক রাজা রাই অমায়িক মানুষ। আমাকে সাদর আমন্ত্রণ জানল পরম আত্মীয়ের মতো। জিজ্ঞাসা করলেন , চা খাবেন তো? বললাম, দিন। তারপর সেখানে এক কাপ চা খেয়ে, গীজারের গরম জলে বাথরুমের কাজ ও স্নান সেরে, খেতে বসলাম চারটায়। খেলাম ভাত ডাল আলুভাজা পটলের তরকাড়ি আর ডিমেরকারি। খেয়ে দেয়ে টানা একঘুম দিলাম। দরজার কড়া নাড়ার শব্দে ঘুম ভাঙল ছ’টায়। দরজা খুলে দেখি চা আর গরম মো মো নিয়ে হাজির দরজায়। সেগুলি টেবিলে রাখতে বললাম।
তারপর হাত মুখ ধুয়ে, সেগুলি তৃপ্তি করে খেয়ে চায়ে চুমুক দিয়ে ঘুমের জগতা কাটল যেন অনেকটা।
ভেবে ছিলাম এরপর বাইরে থেকে একবার ঘুরে আসব। কিন্তু বাইরে এতো ঠান্ডা, বেরোবার উপায় নেই, ভীষণ ঠান্ডা, হাড়ে কাঁপুনি ধরে যায় প্রায় । আর কলকাতায় এখন ২৮/৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রা। লোকেরা গরমে ঘেমে উঠছে একজন বন্ধু ফোন করে জানালো। আর এখানে এখন ১১/১২ ডিগ্রি তাপমাত্রা। হিমশীতল পরিবেশ। তাছাড়া রাস্তা ঘাট বিপদসংকুল হওয়ায় সন্ধ্যার পর সাধারনতঃ এখানে কেউ আর তেমন শহরের মতো ঘুরতে বের হয় না। সব থাকার জায়গায়ই গরম জলের জন্য গীজার আছে আবশ্যিক ভাবে। কিন্তু এখানে কোথাও কোন ফ্যান ব্যবহার হয় না কোন কালে। এতো ঠান্ডা থাকে সারাবছর।
বাইরে বেরোনো যাবে না, তাই ঘরে মোবালই খুলে বসি। দেখি নেট কাজ করছে না, বড় স্লো। চাকা ঘুরে যাচ্ছে তো ঘুরেই যাচ্ছে। বিরক্ত হয়ে তোলা ছবিগুলি দেখতে লাগলাম। হঠাৎ লোড শেডিং হয়ে গেল। এখানেও লোডশেডিং হয় তাহলে। ধারণা ছিল না। কিছুক্ষণর মধ্যেই অবশ্য বিদ্যুৎ ফিরে এলো।
রাত ন’টা নাগাগ খাবার দিলো। রুটি আর চিকেনকষা সঙ্গে স্যালাড । খুব তৃপ্তি করে খেলাম। চমৎকার হয়েছে রান্নাকরা মাংসটা। রাতে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে ব্র্যাঙ্কেট গায়ে তুলে নিতেই উষ্ণতায় কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমে তলিয়ে গেলাম। ঘুম ভাঙল মাঝরাতে একবার। বাথরুম সেরে এসে আবার ঘুমিয়ে পগলাম। ঘুম ভাঙল এরপর সকাল সাড়ে ছ’টায়।
দরজা খুলতেই ধারালো শীতল বাতাসে শরীর কাঁটা দিয়ে উঠল। এখন এখানে দশ ডিগ্রি টেম্পারেচার। ঘরে ঢুকে আবার দরজা বন্ধ করে দিলাম। সাতটায় ঘরে এসে চা আর গরম গরম লুচি দিয়ে গেল। চা লুচি খেয়ে প্রাত্যহিক কর্ম সেরে নিলাম। তারপর আটটায় টিফিন এলো পুরি আর আলু মটরের তরকারী। খুবই সুস্বাদু রান্না। খেয়ে নিয়ে তৈরী হয়ে নিলাম। সাড়ে আটটায় আসবে সুদেন তামাং গাড়ি নিয়ে। আজ দেখতে নিয়ে যাবে – গুম্বা ডেরা, লাভার মিট পয়েন্ট আর টি-গার্ডেন। সময়মতো এসে হাজির হলো সে।
বুধবার (১৯/১০/২০২২) সকাল নটার সময় আর এককাপ চা খেয়ে, গাড়িতে উঠে বসলাম। চড়াই উৎড়াই রাস্তা দিয়ে পাহাড়কে প্রদক্ষিণ করে গাড়ি নীচে নামতে লাগল। দু’পাশে সারি সারি পাইনের বন, সেদিকটা খাদের দিক উল্টো দিকে খাড়া পাহাড় উঠে গেছে। মাঝখান থেকে পাহাড় কেটে সরু রাস্তা করা হয়েছে। এতোটা সরু যে একটা গাড়ি চলার মতো। উপর থেকে যদি কোন গাড়ি নীচে নেমে আসে ,তখন উপরে ওঠা কোন গাড়ি সেই গাড়িটাকে দেখে খাদের গা ঘেষে একপাশে সরে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়, সেই গাড়িটাকে নামার রাস্তা করে দেওয়ার জন্য। এই ভাবে অনেক সময় পাঁচ- সাতটা গাড়ির লাইনও পড়ে যায় নীচে নামার। উপরের গাড়িগুলি নীচে নেমে যাওয়ার পর নীচের গাড়িগুলি উপরে ওঠা শুরু করে সারি সারি ভাবে। আগে নীচের গাড়িগুলিকে নামার সুযোগ করে দেয়। কারণ সেই গাড়িগুলিকে নামার রাস্তা করে না দিলে, নীচের গাড়িগুলি উপরে ওঠার সুযোগ পায় না পাহাড়ের গায়ে গায়ে সুন্দর সাজানো চা- বাগান।
দেখে মনেহয় কী মনোরম দৃশ্য। একবার দেখে আশ মেটে না। বারবার দেখার জন্য অজান্তেই চোখ চলে যায় সেদিকে। আর দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় আপনা থেকেই। এইসব মনোহর দৃশ্য দেখতে দেখতে প্রায় চল্লিশ মিনিট পর এসে পৌঁছালাম গুম্বা ডেরা। দেখান থেকে তাকিয়ে দেখলাম সুদূরে সিকিম পাহাড়ের সারি।
তারপর ওপাস থেকে পাহাড়ের ধাপ নীচে নামতে নামতে এসেছে ,আর এপাশ থেকে নেমে যাওয়া ধাপ গিয়ে মিশেছে সেখানে। সারি সারি পাইন ফার গাছ ধাপে ধাপে নেমে গেছে। অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য। দেখে মন ভরে যায়। এই দৃশ্য থেকে অন্যদিকে চোখ ফেরালে দেখা যায় না। অন্যদিকে ধাপে ধাপে চা-বাগানের সাজানো সারি যেন ধাপে ধাপে ওপাশের উপর দিকে উঠে গেছে।
প্রতিদিনই এই স্পট দেখার জন্য অনেক ট্যুরিষ্ট সমাগম হয় এখানে। ফলে গড়ে উঠেছে অনেকগুলি চা-সিগ্রেট ও মনোহারী দোকান। একটা চায়ের দোকানে বসে চা নিলাম এককাপ।
অপূর্ব চায়ের স্বাদ, জিবে লেগে থাকার মতো। চা শেষ করে সিগ্রেট ধরালাম একটা। সিগ্রেট টানতে টানতে প্রকৃতির শোভা মুগ্ধ হয়ে দেখলাম আরও কিছুক্ষণ। চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করছিল না এই সব অপূর্ব দৃশ্যাবলী থেকে। কিছু ছবি তুলে নিয়ে, সেখান থেকে আবার গাড়িতে উঠে বসলাম। গাড়ি চলতে শুরু করল, কখনও ডাইনে বেঁকে কখনও বাঁয়ে বেঁকে চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে ‘লাভার্স মিট পয়েন্ট’-এর উদ্দেশ্য। সেখানে ঘটেছে তিস্তা নদীর সঙ্গে রঙ্গীত নদের মিলন, তাই নাম ‘লাভার্স মিট পয়েন্ট’। সেখানে পৌঁছাতে আধ-ঘন্টার মতো সময় লাগল। এসে নামলাম সেখানে।
আমি পাহাড়ের নীচের দিকে আছি। নীচের দিকে পাইন ফারের বন। তারও নীচে দেখা দেখলাম, রঙ্গীত নদ এসে তিস্তা নদীর সঙ্গে মিলেছে। দু’টি জলধারা দু’রঙের। একটি গভীর নীল অন্যটা হাল্কা ফিকে নীল। অপূর্ব দৃশ্য। অনকেক্ষণ তাকিয়ে দেখলাম। চোখ ফেরাতে পারলাম না অন্যদিকে। দুটির রসধারা নিবিড় ভাবে মিশে গিয়ে একটি নতুন ধারার সৃষ্টি করেছে সেটা আকাশী নীল রঙের। সেখানে দাঁড়িয়ে কিছু ছবি তুললাম সেই সব দৃশ্যের। তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে সেখানকারই একটি চায়ের দোকানে বসে এক কাপ চা খেলাম দশটাকা দিয়ে। দোকানী মহিলা। তার ব্যবহার আপনজনের মতো, যেন কত কালের চেনা পড়শী আমি তার।
সেখান থেকে বেরিয়ে এবার গন্তব্যস্থল ‘পেশক টী-এস্টেট। সেখানে পৌঁছাতেও আধঘন্টার মতো সময় লাগলো আরও। যখন পৌঁছালাম, দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল। সারি সারি চা বাগান। যেদিকে তাকাই সেদিকেই শুধু চা বাগান পাহাড়ের ধাপে ধাপে নেমে গেছে অনেক নীচে দিকে অনেক দূর পর্যন্ত। দুপাশের চা বাগান দেখতে দেখতে ধাপে ধাপে অনেকটা নীচে নেমে গেলাম। চারপাশে ও উপরে নীচে চা বাগান দিয়ে ঘেরা আমার কিছু ছবি তুললাম মনের সুখে। তারপর আবার ধাপে ধাপে আবার উপরে উঠে এলাম। এসে একটা চায়ের দোকানে বসে চা খেতে খেতে দেখলাম, কাছেই একটা চা বাগানে একদল মেয়েরা পিঠের ঝুড়িতে নিপুণ হাতে চা পাতা তুলে বোঝাই করছে । মনের ভিতরে অদ্ভুত এক খুশির আবেগ ছড়িয়ে পড়ছিল ভিতরে। দু-চোখ যেন সবুজের সজীবতায় ডুবে গেছে নিবিড় সুখে। চা শেষ করে একটা সিগ্রেট ধরালাম। সিগ্রেট টানতে টানতে নিবিড় সুখে চা বাগান দেখতে লাগলাম। সিগ্রেট টানা শেষ হলে, সেখানে দাঁড়িয়ে আরও কিছু ছবি তুললাম। তারপর গাড়িতে এসে উঠে বসলাম।গাড়ি চলতে শুরু করলো। এবার ফেরার পালা।
ফেরার সময় পাহাড়ের গায়ে দু-একট কবর দেখতে পেলাম।
তা দেখে ড্রাইভার সুদেনের কাছে জানতে চাইলাম, মারা যাবার পর তোমাদের কি কবর দেওয়া হয়? শুনে সুদেন বলল, না আমাদের দাহ করা হয়। তবে আমাদের মধ্যে অন্য সম্প্রদাযের লোকদের কবর দেওয়া হয়। যেমন আপনারা যেখানে উঠেছেন ‘কৃপা-কুটি’ হোম স্টে-র মালিক রাজা রাইদের কবর দেওয়া হয়। শুনে কিছুটা আশ্চর্য হলাম বইকি! সে যাই হোক।
গাড়ি পাহাড়ের চড়াইয়ের আঁকা বাঁকা পথ ধরে উপরে উঠতে লাগল। চলার পথ এতটাই সংকীর্ণ যে উপর থেকে কোন গাড়ি এলে আমাদের গাড়িটাকে পাহাড়ের খাদ ঘেষে দাঁড় করাতে হচ্ছে , না হলে উপরের গাড়িটা নামতে পারছে না। আর উপরের গাড়িটা না নামলে আমাদের গাড়িও উপরে ওঠার কোন পথ পাচ্ছে না, এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে বহুবার ফেরার সময়ে। ঘরে এসে পৌছাঁলাম বিকেল চারটার সময়।
পরদিন বৃহস্পতিবার (২০/১০/২০২২) সকালে আলুর পরোটা, গাজর আর বাঁধা কপির মিক্সড সুপ দিয়ে খেয়ে। তারপর চা খেয়ে ঘুরতে বের হলাম সকাল নটার পর।
আজকে দেখবো, ঘুম মসেস্ট্রি, ঘুম টয় ট্রেন স্টেশন, বাতসিয়া লুপ প্রভৃতি জায়গাগুলি। গাড়িতে যেতে যেতেই চোখে পড়ল টয় ট্রেন স্টেশন, সেখান থেকে টয়ট্রেন ছেড়ে সারা শহর পাঁক খেতে দার্জিলিং পৌছায় সময় লাগে আট ঘন্টার মতোন। তবে ভাড়াটা ভীষণ বেশী। জন প্রতি আড়াই হাজার টাকা। অনেকের পক্ষেই ইচ্ছে থাকলেও তাতে চড়া সম্ভব হয় না।
গাড়ি এসে ঘুম মনেস্টিতে পৌঁছাল। গাড়ি থামিয়ে পার্কিং স্টেশনে রেখে, মনেস্ট্রির ভিতরে ঢুকে দেখলাম। দেখে মন ভরে গেল। তবে হেঁটে অনেকটা উঁচুতে উঠতে হয় কষ্ট করে। সেখানে আধঘন্টার মতো কাটিয়ে নীচে নেমে মনেস্ট্রি থেকে বেরিয়ে এসে ড্রাইভারকে ফোন করলাম, সেখান থেকে অনেকটা দূরে পার্কিং স্টেশন রাখা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে আসার জন্য। ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে এলে তাতে উঠে পড়লাম। এবার আমার গন্তব্য বাতাসিয়া লুপ। গাড়ি চলতে শুরু করল। গাড়ি লবচু মার্কেট পেরিয়ে গেল,তার কিছুক্ষণ পরে এলো সিক্থ ম্যাল মার্কেট। লোকজনের বেশ ভিড় চোখে পড়ল মার্কেটগুলিতে। সকলেই তাদের প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র কেনা-কাটায় ব্যস্ত। তার পাশ দিয়েই চলে গেছে টয়ট্রেনের সরু লাইন। সেই লাইন দিয়ে গাড়িও যেতে দেখলাম। কু ঝিক ঝিক আওয়াজ তুলে কয়লা ইঞ্জিনের গাড়িটা এগিয়ে গেল সামনের দিকে। গাড়ির দুটো মাত্র বগি। কলকাতায় চলা ট্রামের মতো একদম। বোধহয় একশো লোকের বেশী ধরে না দুটো বগিতে। কয়লা ছাড়াও ড্রিজেল ইঞ্জিনের টয়-ট্রেন গাড়িও আছে কিছু। তবে তার সংখ্যা বেশী নয়। এসব দেখতে দেখতে এসে পৌঁছালাম বাতাসিয়া লুপে। অপূর্ব দৃশ্য। বাতাসিয়া লুপ দেখে হৃদয়ে এক অপার্থিব অনুভূতির সঞ্চার হলো। কী আশ্চর্য সুন্দর ভাবে প্রকৃতি তার পৃথিবীকে সাজিয়ে রেখেছে। দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। অনেকক্ষণ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম সেদিকে। সেখানে দাঁড়িয়ে অনেকগুলি ছবি তুললাম। তারপর ফিরে এসে আবার গাড়িতে উঠে বসলাম। এবার এখান থেকে যাব দার্জিলিংয়ের মোহিত হোটেলে। যেখানে আমার ঘর বুক করা আছে দু’দিনের জন্য। সেখানে দুদিন থাকবো। এখানে দু’দিন থেকে দার্জিলিং ঘুরে দেখে তারপর ঘরে ফেরার পালা। মোহিত হোটেলে এসে পৌঁছালাম বিকেল চারটায়।
শুক্রবার (২১/১০/২০২২) ভোর তিনটার সময় ঘুম থেকে উঠে পড়তে হলো, গাড়ি আসবে সাড়ে তিনটার সময়। টাইগার হিলে সূর্যোদয় দেখাতে নিয়ে যাবে। তার আগে বাথরুমের সকালের প্রাত্যহিক কাজ সেরে নিতে হলো। গাড়ি এলো ঠিক সাড়ে তিনটায়। কী ঠান্ডা রে বাবা। যত গরম পোষাক ছিল সব গায়ে জড়িয়ে নিলাম। তার উপরে একটা শাল জড়ালাম গায়ে। চড়ে বসলাম গাড়িতে। গাড়ি চলতে শুরু করলো পাহাড়ের গা ঘেঁষে ডাইনে বাঁয়ে আঁকা বাঁকে পথের চড়াই উৎড়াইয়ের বাঁক পেরিয়ে উপরের দিকে। গাড়ি যতো উপরে উঠছে ঠান্ডা ততো বাড়ছে।
টাইগার হিলে যখন এসে পৌঁছালাম, তখন তাপমাত্রা সাত ডিগ্রি। কনকনে ঠান্ডা হাড়ে বিঁধে যাচ্ছে যেন। হাতের আঙুলগুলি ঠান্ডায় অবশ অসার হয়ে গেছে। নাড়তে পারছি না। হাতে মোবাইল ধরে রাখতে পারছি না আমি। মনে হচ্ছে মোবাইলটা নীচে পড়ে যাবে, এমন অসার আঙুলগুলি। এত কষ্ট করে সূর্যোদয় দেখতে আসা।
আকাশটা সচ্ছ নীল। মনোরম আবওহাওয়া। একঘন্টার মধ্যে এসে পৌঁছালাম টাইগার হিলে।
একটু পরেই সূ্র্যোদয় ঘটল। যা দৃশ্য দেখলাম, তা বর্ণনার অতীত। ধীরে ধীরে সূর্যের আগমন ঘটছে। পাহাড়ের রঙ পাল্টাতে শুরু করলো। প্রথমে কালো থেকে হাল্কা নীল। ধীরে ধীরে সবজে নীল। তারপর রূপালী রঙ ধরলো। তারপর কাঞ্চনজঙ্ঘার প্রথম চূড়া দেখা গেল। সেখানে সূর্যের আলো পড়ে সোনালী হয়ে উঠল। তারপর দ্বিতীয় চূড়াটির মাথায় সোনালী রঙ ধরলো। এরপর তৃতীয় চূড়া দেখা গেল একই রঙে রঙিন হয়ে উঠল। সব চূড়াগুলিই এখন দেখে মনে হচ্ছে সোনার চূড়া। যেন সোনার চূড়া মাথায় পরে দেখা দিলো কাঞ্চনঘঙ্ঘা। অপূর্ব দৃশ্য। অসাধারণ অনুভূতি মনের ভিতর। মনের আশ মিটিয়ে সেই দৃশ্য দেখতে বিহ্বল হয়ে পড়লাম। প্রচুর ছবি তুললাম মন ভরে। তারপর রোদ এসে টাইগারে হিলে পড়তে শুরু করল। তা দেখে সেখানে আরও কিছুক্ষণ কাটিয়ে নীচে নেমে এলাম আমি।
যা দেখলাম এতক্ষণ ধরে , তা দেখে মনে হলো ভোর থেকে এতক্ষণ ধরে সব কষ্ট সহ্য করা যেন সার্থক হয়েছে। এমন মনোহর রূপ এত কষ্ট সহ্য করে এখানে না এলে বোধহয় জীবনে আর কখনও দেখা হতো না।
আকাশ মেঘলা থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘার এই রূপ দেখা হতো না মোটেও । সবই প্রকৃতির সদয় অনুকম্পা বটে।
নীচে নেমে এসে সেখানে একটা দোকানে ঢুকে গরম গরম আলুর পরটা আর কফি দিয়ে টিফিন সারলাম। তারপর এক কাপ গরম গরম চা খেয়ে, একটা সিগ্রেট ধরালাম, আয়েস করে সিগ্রেট টানতে লাগলাম । চোখ এখনও কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ মোহে বিভোর হয়ে আছে। সিগ্রেট শেষ করে খাবারের দাম মিটিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে এলাম। ততক্ষণে সূর্য অনেকটা উপরে উঠে এসেছে। আমি গাড়ি করে আবার নীচে নামতে শুরু করলাম ‘মোহিত হোটেল’-য়ে ফেরার জন্য। সাড়ে আটটায় হোটেলে ফিরে এলাম। গীজার ছেড়ে গরম জলে স্নান সেরে নিলাম। হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে আবার দেখতে বেরোতে হবে – জাপানিস টেম্পেল (পীস প্যাগোডা), দার্জিলিং জু, হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনসটিটিউট, দার্জিলিং জু মিউজিয়াম, HMI মিউজিয়াম, তেনজিং রক আর চিত্রা টি এস্টেট।
এগারোটা খাওয়া- দাওয়া সেরে আবার গাড়ি নিয়ে আবার বের হলাম। প্রথমে গেলাম জাপানিস টেম্পেল (পীস প্যাগোডা) দেখতে। অনেকটা সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠতে হয়। সেখানে দেখে কয়েকটা ছবি তুলে আবার নীচে নেমে এলাম সিঁড়ি ভেঙে। এরপর যাব দার্জিলিং জু। জু-তে এসে পৌঁছালাম
আধ-ঘন্টার মধ্যেই। এখানে ও সিঁড়ি বেয়ে অনেকটা উপরে উঠতে হলো। এন্ট্রি ফি ষাট টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ভিতরে ঢুকলাম। সেখানে জু-তে দেখলাম লেপার্ড (চিতা-বাঘ), বিয়ার (ভালুক), ব্ল্যাক প্যান্থার ( কালো চিতা-বাঘ) ছাড়াও অনেক রকমের পাখি দেখলাম। তারপর সেখান থেকে দেখতে গেলাম – ‘হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনসটিটিউট’ যেখানে পাহাড়ে ওঠার নানা রকম সামগ্রী। পোষাক আর মাক্স থেকে নানা ধরনের জুতো, লোহার কুঠার যা দিয়ে বরফে গেঁথে সেটা চেপে ধরে পাহাড়ের গা বেয়ে উপরে একধাপ ওঠে,আবার অন্য হাতের কুঠার বরফে গেঁথে দ্বিতীয় ধাপ ওঠে। এই ভাবে বরফের পাহাড়ে ওঠে আরোহীরা। নাম স্নো এক্স।
সেখান থেকে বেরিয়ে দেখলাম HMI মিউজিয়াম।
এই সব দেখে সেখানে প্রায় দেড় ঘন্টা কেটে গেলে। এরপর আবার সিঁড়ি ভেঙে নীচে নেমে এসে গাড়িতে চড়লাম। এবার দেখতে যাব তেনজিং রক। যেখানে প্রথম তেনজিং নোরকে পা রেখেছিল এভারেষ্ট জয় করার পূর্বে। সেখানে দড়ি ঝোলানো আছে। কেউ আগ্রহী হতে চাইলে দড়ি ধরে ঝুলে ঝুলে সেই রকের চূড়ায় উঠতে পারে। অবশ্য তার জন্য তাকে একশো টাকার টিকিট কাটতে হবে। আমি যখন গেলাম, তখন অবশ্য কাউকে দড়ি ধরে ঝুলে ঝুলে উপরে উঠতে দেখিনি। সেখানে কিছু ছবি তুললাম। আধ ঘন্টার মতো কাটলো সেখানে।
এবার আমার গন্তব্যস্থল ‘চিত্রা টি এস্টেট’। দেখতে যাব চা বাগান । সেখানে রওনা দিলাম। রাস্তা জ্যাম থাকায আধ ঘন্টা লাগল পৌঁছাতে। সেখানে পৌঁছে চোখ জুড়িয়ে গেল। নীচের দিকে পাহাড়ের ধাপে ধাপে সারি সারি চা বাগান। ধার দিয়ে আঁকা বাঁকা সর্পিল গতিতে রাস্তা নেমে গেছে নীচে নেমে যাবার। নেমে যেতে যেতে চা বাগানগুলি দেখবার জন্য। অনেক দর্শনার্থীরাই নীচে নেমে যাচ্ছে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে যাচ্ছে বাগানগুলি দেখবার জন্য। আমিও তাদের দেখা-দেখি খানিকটা নীচে নেমে গেলাম। আহা অপূর্ব লাগছে দেখতে। আমি দাঁড়িয়ে আছি নীচে , আমার চারপাশ ঘিরে ধাপে ধাপে চা বাগানগুলি উঠে গেছে উপরের দিকে।
সেখানে দাঁড়িয়ে অনেকগুলি ছবি তুলে নিলাম।
তারপর ধীরে ধীরে আবার উপরে উঠে এলাম।
রাস্তায় এসে দেখলাম চা বাগানের দিকে সারি সারি চায়ের দোকানের গুমটি কুড়ি-পঁচিশটি। এখানে বিক্রি হয় এইসব বাগানের চা। এখানে ওদের বানানো চা পান করে তার স্বাদ গ্রহণ করেও চা-পাতা কিনতে পারা যায। ৬০০ টাকা কেজি থেকে ১২০০ টাকা কেজি দামের চা কিনতে পাওয়া যায় এখানে। আমি ওদের বানানো ১২০০ টাকা কেজি দামের চা পান করে তার স্বাদ ভাল লাগায়, ৫০০ গ্রাম কিনে নিলাম ৬০০ টাকা দিয়ে। একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে আরও একবার মন ভরে চা বাগানগুলি দেখে , গাড়িতে এসে উঠে বসলাম, এবার যাব রোপ-ওয়ে চড়তে।
আজকের মতো আমার শেষ গন্তব্যস্থল।
চাপপাশের পাহাড়ী মনোরম দৃশ্যাবলী দেখতে দেখতে কিছুক্ষণ পর এসে পৌঁছালাম রোপ-ওয়ের কাছে।
রোপ-ওয়েতে চড়ার জন্য বহুলোক লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমিও দাঁড়ালাম লাইনে। বেশ কিছুক্ষণ পর টিকিট কাউন্টারের কাছে এসে পৌঁছালাম। তিনশো টাকা করে টিকিট। কাটলাম আমার টিকিট। তারপর চড়ে বসলাম রোপ-ওয়েতে। পাহাড়ের একটা টিলা থেকে আর একটা টিলায় নিয়ে গিয়ে পৌঁছে দেয় । নীচের দিকে তাকালে দেখা যায় ভয়াল আতঙ্ক সৃষ্টিকারী পাহাড়ী খাদ আর চোখ জুড়ানো পাইন গাছের সারি। তা দেখতে দেখতে কখন পৌঁছে গেলাম ওপারের টিলায়। রোপ-ওয়েতে একবারে চারজন করে বসা যায়। একটা রোপ-ওয়ে যখন যায় ওপারে, তখন আর একটা আসে এপারে।
চড়ে বসলে রোমহর্ষক এক আবেগ তৈরী হয় মনের ভিতরে । অসাধারণ রোমাঞ্চকর এক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে মনে এক মুগ্ধকর আবেশ নিয়ে এসে গাড়িতে উঠে বসলাম। এবার ফেরার পালা। রওনা দিলাম মোহিত হোটেলে ফেরার জন্য। বিকেল পাঁচটা নাগাদ এসে হোটেলে পৌঁছালাম।
শনিবার (২২/১০/২০২২) সকালে ঘুম ভাঙল আটটার সময়। ফোন করে চায়ের অর্ডার দিলাম।
দশ মিনিটের মধ্যে চা এসে গেল রুমে। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে চা খেতে খেতে দূরের পাহাড় দেখছিলাম। দেখতে দেখতে মনটা খারাপ হয়ে গেলে, এই ভেবে যে আজ আমার এই উদাস পাহাড়কে বিদায় জানাতে হবে কিছুক্ষণের মধ্যেই। ফেরার জন্য ‘উত্তরবঙ্গএক্সপ্রেস’ – ট্রেনে আমার টিকিট কাটা। সন্ধ্যা ৫-৪৫ মিনিটে ‘উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস’ ট্রেন ছাড়বে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে। সেখানে তার আগে আমাকে পৌঁছাতে হবে । বিদায় জানাতে হবে এই পাহাড়-সুন্দরী দার্জিলিং শহরকে। মনে শুধু তার সৌন্দর্যের মুগ্ধতার স্মৃতি নিয়ে ফিরতে হবে স্বার্থপরের মতো।
সকালের প্রাত্যহিক কাজ কর্ম সেরে লাগেজ গুছিয়ে তৈরী হয়ে নিলাম। বেলা এগারোটার মধ্যে হোটেলের সমস্ত হিসেব-নিকেশ মিটিয়ে দিয়ে, ফর্মালিটির ফর্মে সই সাবুদ করে, দুপরের খাবার খেয়ে হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে পড়লাম গাড়ি নিয়ে বেলা এগারোটায়।
ফেরার পথে কার্শিয়াং হয়ে শিলিগুড়ি নামবে গাড়ি। তার মধ্যে রাস্তায় যা যা দেখবার আছে সব দেখে নেবো ভাবলাম মনে মনে।
গাড়ি নীচে নামতে শুরু করলো দার্জিলিং হয়ে, ঘুম টয়-ট্রেন স্ট্যাশন ছুঁয়ে, জল বাংলা রোড হয়ে (তার উপরে মিলিটারী ক্যাম্প), সেখানে দেখলাম হিন্দি সিনেমার অভিনেতা গোবিন্দার বাড়ি। তার বাড়ির বিপরীত দিকেই বাতসিয়া লুপ। তার বাড়ির ছাদ থেকে দেখা যায়।
জল বাংলা রোড শেষ করে ‘সোনাদা’ হয়ে, হিলকার্ট রোড় ধরলো গাড়ি। হিলকার্ট রোড ধরে এসে গাড়ি পৌঁছালো কার্সিয়াং বাজারে। সেখানে নেমে পছন্দসই কিছু গরম পোষাক কেনা-কাটা করলাম। তারপর কার্শিয়াং টয়ট্রেন স্টেশন, কার্শিয়াং রেডিও স্টেশন দেখলাম খানিকক্ষণ ঘুরে। একটা দোকানে বসে চা খেলাম এক কাপ।
চায়ের দোকান থেকে বেরিয়ে ছবি তুললাম কিছু।
তারপর একটা সিগ্রেট ধরিয়ে গাড়িতে এসে বসলাম।
এরপর গাড়ি বালাসোম নদী পেরিয়ে, তিনবাতি মোড় হয়ে নীচে নামতে শুরু করলো। তারপর এন জি পি রোড হয়ে গাড়ি শিলিগুড়ির সমতল ভূমিতে এসে পৌঁছালো। সেখান থেকে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই বেলা পৌঁনে চারটার সময় এসে পৌঁছালাম নিউ জলপাইগুড়ি ষ্ট্যাশনে। আমাকে স্ট্যাশনে পৌঁছে দিয়ে,দেওয়ালীর শুভেচ্ছা জানিয়ে ড্রাইভার বিদায় নিল। আলবিদা।
তাপপর একটা হোটেলে ঢুকে, লাগেজ রেখে, হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে নিয়ে চা টোষ্ট খেলাম। দাম মিটিয়ে দিয়ে, হোটেলের বাইরে এসে একটা সিগ্রেট ধরালাম। ঘড়িতে দেখলাম ৪-৪৫ মিনিট। তার মানে ট্রেন ছাড়তে আরও একঘন্টা বাকী।
ধীরে সুস্থে এক্সেলেটারে উঠে, হেঁটে ওভার ব্রীজ পেরোতে আরও পাঁচ- ছয় মিনিট লাগল। ওভার ব্রীজ থেকে নীচে নেমে খবর নিয়ে জানলাম, ‘উত্তরবঙ্গএক্সপ্রেস’ দুই নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়বে। লাগেজ সামনে রেখে সেখানে একটা বসার সীট পেয়ে বসলাম তাতে।
৫-২০ মিনিটে দুই নম্বর প্ল্যাটফর্মে ‘উত্তরবঙ্গএক্সপ্রেস’ ট্রেন দিলো। হুড়োহুড়ি করে কিছু লোক উঠে যাবার পর, একটু ফাঁকা হলে ধীরে সুস্থে গিয়ে আমি ট্রেনে উঠলাম। আমার সীট নম্বর খুঁজে, গিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ পর ঠিক ৫-৪৫ মিনিটে ট্রেন ছেড়ে দিলো। ধীরে ধীরে ট্রেনের গতি বাড়তে লাগল।
পিছনে পড়ে রইলো শৈল্য শহর দার্জিলিং।
রাত সাড়ে আটটার সময় ট্রেনে ভেন্ডার এসে খাবারের অর্ডার নিয়ে গেল। রাত ন’টার মধ্যে খাবার দিয়ে গেল। খাবার খেয়ে সীটে চাদর পেতে শুয়ে পড়লাম। ঘুম ও জাগড়ণের মধ্যে কেটে গেল সারারাত। ভোর ৪-৪৫ মিনিটে এসে পৌঁছালাম জনাকাীর্ণ শিয়ালদা স্টেশনে। সেখান থেকে গাড়ি বুক করে ছ’টার মধ্যে এসে বাড়ি (গড়িয়া) পৌঁছে গেলাম।