Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » শৈব্যা || Narayan Gangopadhyay

শৈব্যা || Narayan Gangopadhyay

শেষপর্যন্ত ট্রেনটা যখন রাজঘাটে গঙ্গার পুলের ওপরে এসে উঠল, তখন নীরদা আর চোখের জল রোধ করতে পারল না। তার গাল দুটি অশ্রুতে প্লাবিত হয়ে গেল।

চারিদিক মুখরিত করে জনতার জয়ধ্বনি উঠেছে। হর হর মহাদেব, জয় বাবা বিশ্বনাথ। যাত্রীরা মুঠো মুঠো করে পয়সা ছুড়ে দিচ্ছে গঙ্গার জলে। বেণীমাধবের উদ্ধত ধ্বজা দুটো সকালের আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে, চিতার নীলাভ ধোঁয়া কুন্ডলী পাকিয়ে উঠছে দুর্নিরীক্ষা মণিকর্ণিকার ঘাট থেকে। অর্ধচন্দ্রাকার গঙ্গার তীরে হিন্দুর তীর্থশ্রেষ্ঠ বারাণসী সবে ঘুম ভেঙে জেগে উঠেছে।

রাধাকান্ত বিব্রত বোধ করছিলেন। চাপা গলায় বললেন, চুপ কর, সবাই দেখতে পাচ্ছে যে।

আকুল কণ্ঠে নীরদা বললে, দেখুক গে।

আঃ, থাম থাম। কোনো ভয় নেই তোর, আমি বলছি সব ঠিক হয়ে যাবে।

সব ঠিক হয়ে যাবে। একথা আগেও অনেক বার বলেছেন রাধাকান্ত। কিন্তু কিছুই ঠিক হয়নি। জটিলতা ক্রমেই বেড়ে উঠেছে এবং শেষপর্যন্ত গ্রন্থিমোচন করবার জন্যে রাধাকান্ত নীরদাকে সর্বংসহ পুণ্যভূমি কাশীধামে এনে হাজির করেছেন। তাঁরই বাড়িতে আশ্রিত বালবিধবা জ্ঞাতির মেয়ের কাছ থেকে বংশধর তিনি কামনা করেন না। ধার্মিক এবং চরিত্রবান বলে তাঁর খ্যাতি আছে এবং পত্নী-পুত্র-কন্যা পরিবৃত সংসার আছে, সর্বোপরি সমাজ তো আছেই। আর যা-ই হোক তিনি সাধারণ মানুষ—দেবতা নন!

ক্যান্টনমেন্টে এসে ট্রেন থামল। চেনা পাণ্ডাকে আগেই চিঠি দেওয়া ছিল, টাঙা করে সে-ই নিয়ে গেল কচুরিগলির বাসায়। তারপর যথানিয়মে পুলিশ চৌষট্টি যোগিনীর ঘাটে কুড়িয়ে পেল আর একটি নামগোত্রহীন নবজাতকের মৃতদেহ।

ততদিনে রাধাকান্ত দেশে ফিরে গিয়েছেন। বৈঠকখানায় হুঁকো নিয়ে বসে আলোচনা করছেন নারীজাতির পাপপ্রবণতা সম্পর্কে। বাচস্পতির দিকে হুঁকোটা বাড়িয়ে দিয়ে তিনি বললেন, সেই যে হিতোপদেশে আছে-না গাভী যেরূপ নিত্য নব নব তৃণভক্ষণের আকাঙ্ক্ষা করে, সেইরূপ স্ত্রীলোকও…

কদর্য একটা সংস্কৃত শ্লোক উদ্ধৃত করে বাচস্পতি রাধাকান্তের বক্তব্যটাকে আরও প্রাঞ্জল করে দিলেন।

এদিকে পাণ্ডা মহাদেব তেওয়ারির আর ধৈর্য থাকল না।

একদিন অগ্নিমূর্তি হয়ে এসে বললে, এবার বেরোও আমার বাড়ি থেকে।

মড়ার চোখের মতো দুটো ঘোলাটে চোখের দৃষ্টি মহাদেবের মুখের ওপরে ফেলে নীরদা কথা বললে। এত আস্তে আস্তে বললে যে বহু যত্নে কান খাড়া করে কথাটা শুনতে হল মহাদেবকে।

গাঁজার নেশায় চড়া মেজাজ মুহূর্তের জন্যে নেমে এল মহাদেবের। ওই অদ্ভুত চোখ দুটো, ওই শবের মতো বিচিত্র শীতল দৃষ্টি তার কেমন অমানুষিক বলে মনে হয়; কেমন একটা অস্বস্তি বোধ হয় তার। যেন পাথরের ওপরে ঘা দিচ্ছে; পাথরের কিছুই হবে না, প্রতিঘাতটা ফিরে আসবে তারই দিকে। ভয়, উৎকণ্ঠা, অপমান ও অপরাধ সব কিছু জড়িয়ে কোন একটা নির্বেদলোকে পৌঁছে গেছে নীরদা।

মহাদেব কুঁকড়ে গিয়ে বললে, আজ চার মাহিনা হয়ে গেল টাকাপয়সা কিছু পাইনি। আমি তো আর দানছত্র খুলে বসিনি।

নীরদা তেমনি অস্পষ্ট গলায় বললে, আমি কী করব?

আবার জ্বলে উঠল মহাদেব, বিশ্রী একটা অঙ্গভঙ্গি করে বললে, ডালমণ্ডি থেকে রোজগার করে আনো। তোমার যৌবন আছে, কাশীতে রেইস আদমিরও অভাব নেই।

কিন্তু কথাটা বলেই মহাদেব আবার লজ্জা পেল। নীরদার দিক থেকে দৃষ্টিটা ফিরিয়ে নিয়ে চলে যেতে যেতে বললে, নইলে পথ দ্যাখো।

পথই দেখতে হবে নীরদাকে। যে পঙ্ককুন্ড আর গ্লানির ভেতরে তাকে নামিয়ে রেখে রাধাকান্ত সরে পড়েছে, তারপরে পথ ছাড়া কিছু আর দেখবার নেই। যাওয়ার আগে রাধাকান্ত তাঁর অভ্যস্ত রীতিতে সান্ত্বনা দিয়ে গিয়েছিলেন, কোনো ভাবনা নেই, মাসে মাসে আমি খরচা পাঠাব। কিন্তু দু-মাস পরেই সংসারী রাধাকান্ত, চরিত্রবান ভদ্র রাধাকান্ত এই চরিত্রহীনা সম্পর্কে তাঁর প্রতিশ্রুতিটা অবলীলাক্রমে ভুলে যেতে পেরেছেন। ভুলে না যাওয়াটাই আশ্চর্য ছিল।

হিন্দুর পরমতম পুণ্যতীর্থ। ভিখারি বিশ্বনাথের ক্ষুধার্ত করপুটে অমৃত ঢেলে দিচ্ছেন অন্নপূর্ণা। কিন্তু যুগের অভিশাপে অন্নপূর্ণাও ভিখারিনি। বিশ্বনাথের গলিতে, গঙ্গার ঘাটে ঘাটে, দেবালয়ের আশেপাশে সহস্র অন্নপূর্ণার কান্না শোনা যায়, একটা পয়সা দিয়ে যা বাবা, বিশ্বেশ্বর তোর ভালো করবেন।

বাবা বিশ্বনাথের কাশীতে কেউ উপবাসী থাকে না!

কেউ হয়তো থাকে না, কিন্তু দু-দিন ধরে নীরদার খাওয়া জোটেনি। বোধ হয় বিশ্বনাথের আশ্রয় সে পায়নি, বোধ হয় নীরদার পাপে তিনি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

ক্লান্ত দুর্বল পায়ে বেরিয়ে এল নীরদা। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। মন্দিরে আলো জ্বলেছে, আরতি দেখবার আশায় যাত্রীরা রওনা হয়েছে বিশ্বনাথের বাড়ির উদ্দেশৌ। কর্মব্যস্ত শহরের দোকানপাটে বিকিকিনি চলেছে, চায়ের দোকানে উঠছে হুল্লোড়, পথ দিয়ে সমানে চলেছে টাঙা-এক্কা-মোটর আর রিকশার স্রোত। বাঙালিটোলা ছাড়িয়ে নীরদা এগিয়ে চলল।

খানিক এগিয়ে যেখানে আলো আর কোলাহল কিছুটা ক্ষীণ হয়ে এসেছে, সেখানে বাঁ দিকে একটা বাঁক নিলে নীরদা। পথ প্রায় নির্জন। খোয়া-ওঠা নোংরা রাস্তা সোজা গিয়ে নেমেছে হরিশ্চন্দ্র ঘাটে। সমস্ত কাশীতে এই ঘাটটাই নীরদার ভালো লাগে, এখানে এসেই যেন মুক্তির নিশ্বাস ফেলতে পারে।

আগে দু-চার দিন দশাশ্বমেধ ঘাটে, অহল্যাবাই ঘাটে গিয়ে সে বসেছে। কিন্তু কেমন যেন অস্বস্তি বোধ হয় তার, কেমন যেন মনে হয় ওসব জায়গাতে সে অনধিকারী। ঘাটের চত্বরে চত্বরে যেখানে কীর্তন শোনবার জন্যে পুণ্যকামী নরনারীরা ভিড় জমিয়েছে, ছত্রের নীচে নীচে যেখানে বেদপাঠ আর কথকতা চলছে, সামনে গঙ্গার জলে ভাসছে আনন্দতরণি আর ঘাটের ওপরে পাথরের ভিত-গাঁথা প্রাসাদগুলো বিদ্যুতের আলোয় ইন্দ্রপুরীর মতো জ্বলছে— ওখানকার ওই পরিবেশ নীরদার জন্যে নয়। ওখানে যারা আসে ওরা সবাই শুদ্ধ, সবাই পবিত্র। তাদের জীবনে কখনো মলিনতার একটুকু আঁচড় পর্যন্ত লাগেনি। ওরা সহজভাবে হাসে, সহজভাবে কথা বলে, নির্মল নিষ্কলঙ্ক মুখে গলায় আঁচল দিয়ে কথকতা শোনে। কীর্তনের আসরে ওদের চোখ দিয়ে দরদর করে জল নেমে আসে। আর নীরদার চারপাশে কলঙ্কের কালো ছায়া, অশুচিতার স্পর্শ একটা বৃত্তের মতো বেষ্টন করে আছে। মনে হয় সকলের শান্ত পবিত্র দৃষ্টি মুহূর্তে ঘৃণায় কুটিল কুৎসিত হয়ে ওর অপরাধী মুখের ওপরে এসে পড়বে।

অদ্ভুতভাবে নির্জন, আশ্চর্যভাবে পরিত্যক্ত। পাশেই কেদারেশ্বর শিবের মন্দির থেকে নেমেছে ঝকঝকে চওড়া সিঁড়ির রাশি। ওখানে ভিড় জমিয়েছে দন্ডীরা, কথকেরা, তীর্থকামীরা, স্বাস্থ্যলোভীরা এবং ভিক্ষুকেরা। ঢং ঢং করে ঘণ্টা বাজছে কেদারের মন্দিরে। ঘাটের ওপরে জ্বলছে জোরালো বিদ্যুতের আলো। কিন্তু তার থেকে দু-পা সরে এলেই তরল অন্ধকারের মধ্যে হরিশ্চন্দ্র ঘাট নির্জনতায় তলিয়ে আছে।

দু-তিন বছর আগে জোর বান ডেকেছিল গঙ্গায়। কেঁপে উঠেছিল, ফুলে উঠেছিল জল। পাহাড়প্রমাণ সিঁড়ির ধাপ ডিঙিয়ে সে-জল ঢুকেছিল শহরের ভেতরে। তারই ফলে পুঞ্জিত বালি হরিশ্চন্দ্র ঘাটের ভাঙা সিঁড়িগুলোকে প্রায় ঢেকে ফেলেছে। সে-বালি কেউ পরিষ্কার করেনি, করবার দরকারই হয়তো বোধ করেনি কেউ। শুধু যারা মড়া নিয়ে আসে তারাই বালির স্তূপ ভেঙে নীচে নেমে যায়, দু-একজন দন্ডী স্নান করে যায় সকালে-সন্ধ্যায়। বুড়িরা কচিৎ কখনো হয়তো এসে বসে, তারপর সন্ধ্যা হলেই চলে যায় কেদারঘাটের দিকে। দু একটা চিতার রাঙা আলোতে হরিশ্চন্দ্রের ছোটো মন্দিরটা আলো হয়ে ওঠে, সেই রক্তশিখায় গঙ্গার জলে একটা দীর্ঘ ছায়া ফেলে মাথায় পাগড়িবাঁধা চন্ডাল লম্বা বাঁশ দিয়ে চিতা ঝাড়তে থাকে।

এইখানে এসে বসল নীরদা।

ঘাটে জনপ্রাণী নেই, শুধু গঙ্গার ধারে সদ্য-নিভে-যাওয়া একটা চিতায় যেন রাশি রাশি। আগুনের ফুল ফুটে আছে। ওপারের অন্ধকার দিগন্তে চোখে পড়ছে রামনগরের দু-একটা আলো। পেছনে ছিপিটোলার দিক থেকে আসছে উৎকট গানের হুল্লোর—মদ খেয়েছে ওরা।

নীরদা স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে রইল নিভন্ত চিতাটার দিকে। বাবা বিশ্বনাথের কাশীতে তার স্থান হল না। এই জনবিরল ঘাটে নিঃসঙ্গ শ্মশানে বসে মনে হচ্ছিল একটা পথ ওর খোলা আছে এখনও। বিশ্বনাথ কৃপা করলেন না, কিন্তু শ্মশানে শ্মশানে জেগে আছেন ত্রিশূলপাণি ভয়ালমূর্তি কালভৈরব। চোখের ওপর থেকে যখন পৃথিবীর আলো নিভে যাবে, যখন এই দেহের অসহ্য বোঝাটা টানবার দায় থেকে মুক্তি পাবে সে, তখন চিতার ধোঁয়ার মতো বিশাল জটাজুট এলিয়ে দিয়ে মহাকায় কালভৈরব সামনে এসে দাঁড়াবেন, কানে দেবেন তারকব্রহ্ম নাম।

হঠাৎ মাথার ভেতরটা ঘুরে উঠল নীরদার। মরে-যাওয়া স্বামীর মুখ, রাধাকান্তের মুখ আর মহাদেব তেওয়ারির কদর্য বিকৃত মুখগুলো একসঙ্গে তালগোল পাকিয়ে একটা নতুন মুখের সৃষ্টি করল—কালভৈরবের মুখ। সময় হয়েছে, কালভৈরব এসে দাঁড়িয়েছেন। সামনের অগ্নিময় চিতাশয্যা থেকে আগুনের পিন্ডগুলো যেন ছিটকে লাফিয়ে উঠল, তারপর শ্মশানপ্রেতের লক্ষ চোখের মতো সেগুলো ছড়িয়ে পড়ল সমস্ত ঘাটে, রাশি রাশি বালির ওপর, গঙ্গার কালো জলের উচ্ছল তরঙ্গে তরঙ্গে।

সেই সময় হরিশ্চন্দ্র মন্দিরের চাতালে বসে এক পয়সা দামের একটা সিগারেট খাচ্ছিল জিউরাম।

জিউৎরাম চাঁড়ালের ছেলে। বংশানুক্রমিকভাবে এই ঘাটে তারা মড়া পুড়িয়ে আসছে। কিন্তু জিউল্লামের যৌবনকাল এবং অল্প অল্প শখও আছে। মাঝে মাঝে রুমাল বেঁধে বিলিতি নেটের মিহি পাঞ্জাবি পরে পান চিবুতে চিবুতে সে বেরিয়ে পড়ে, একটুকরো তুলোয় সস্তা আতর মেখে গুঁজে দেয় কানের পাশে, চোখের পাতায় হালকা করে আঁকে সুর্মার রেখা। এই হরিশ্চন্দ্র ঘাটে মড়া পোড়ানোর চাইতেও আর একটা বৃহত্তর জীবনের দাবি যে আছে সেইটেকেই সে অনুভব করতে চায় মাঝে মাঝে, ভুলে যেতে চায় নিজের ব্রাত্য পরিচয়।

আজ একটু রঙের মুখে ছিল জিউৎরাম। মুসম্মার রস দিয়ে বেশ কড়া করে লোটা খানেক সিদ্ধি টেনেছে, তারপর একটা সিগারেট ধরিয়ে কোনো অজানা-অচেনা প্যারের উদ্দেশে হৃদয়ের আকুতি নিবেদন করছে। এমন সময় দেখতে পেল সিঁড়ির মাথার ওপরে সাদামতো কী-একটা পড়ে রয়েছে।

প্রথম দু-এক বার দেখেও দেখেনি, তারপর কেমন সন্দেহ হল। জিউল্লাম আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল। হঠাৎ ছ্যাঁৎ করে উঠল বুকের ভেতরটা—মড়া নয় তো?

একটা ঝাঁকড়া গাছের ছায়ায় পড়ে ছিল নীরদা। পাশের কেদারঘাট থেকে একফালি বিদ্যুতের আলো পাতার ফাঁক দিয়ে মাঝে মাঝে দুলে যাচ্ছিল নীরদার মুখের ওপর। সেই আলোয় জিউৎ দেখল নিশ্বাস পড়ছে—অজ্ঞান হয়ে গেছে মেয়েটা। কাশীর ঘাটে এমন দৃশ্য বিরল নয়।

কয়েক মুহূর্ত স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। একটা-কিছু এখনই করা দরকার। কিন্তু কী করতে পারা যায়?

আজ মাথার মধ্যে নেশা রনরন করছিল জিউঞ্জামের, নইলে এমন সে কিছুতেই করতে পারত না। কিছুতেই ভুলতে পারত না সে চন্ডাল, তার ছোঁয়া লাগলে বাঙালি ঘরের মেয়েকে চান করতে হয়। কিন্তু আজ সে নেশা করেছিল, খেয়েছিল একমুখ জর্দা-দেওয়া মিঠে পান, কানে খুঁজে নিয়েছিল গুলাবি আতর। মনটা অনেকখানি উড়ে গিয়েছিল তার নিজের সীমানার বাইরে, তার সহজ স্বাভাবিক বুদ্ধি খানিকটা বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিল, নিজেকে ভেবে নিয়েছিল ভদ্রলোকদের সগোত্র বলে।

জিউৎরাম ঝুঁকে পড়ল, পাঁজাকোলা করে তুলে নিলে নীরদাকে। চন্ডালের কঠিন বুকের ভেতর মিশে গেল নীরদার দুর্বল কোমল দেহ। বুকের রক্তে কলধ্বনি বাজতে লাগল জিউত্রামের, রোমকূপগুলো যেন ঝিঝি করতে লাগল।

নীরদাকে এনে সে নামালে গঙ্গার ধারে। আঁজলা আঁজলা জল দিলে চোখে-মুখে। গঙ্গার হাওয়ায় নীরদার জ্ঞান ফিরে এল ক্রমশ, বিহ্বলের মতো সে উঠে বসল।

আমি কোথায়?

হরিশ্চন্দ্র ঘাটে, গঙ্গাজির ধারে। কী হয়েছে তোমার? মু

হূর্তে বর্তমানটা নীরদার ঝাপসা সাদা চেতনার ওপরে একটা কালো ছায়ার মতো এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল। জিউস্রাম আবার জিজ্ঞাসা করলে, তোমার কী হয়েছে?

হঠাৎ নীরদা কেঁদে ফেলল। বাবা বিশ্বনাথের কাশীতে সে এই প্রথম শুনল বিশ্বনাথের এই কণ্ঠ, শুনল স্নেহের স্বর। দু-হাতে মুখ ঢেকে উচ্ছ্বসিতভাবে কেঁদে উঠল সে।

আমার কেউ নেই, আমার কিছু নেই…

জিউৎ আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। কী করা উচিত, কী বলা সঙ্গত কিছু বুঝতে পারছে না। নিভন্ত চিতাটার রাঙা আলোর আভায় নীরদার বিবর্ণ পান্ডুর মুখোনা দেখে একটা-কিছু সে অনুমান করে নিলে।

তোমার আজ খাওয়া হয়নি, না?

নীরদার আর সংশয় রইল না। সত্যি, কোনো ভুল নেই। শ্মশানচারী বিশ্বেশ্বর ছদ্মবেশে তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন। অশ্রুপ্লাবিত মুখে তেমনি করেই চেয়ে রইল সে।

জিৎ বললে, তুমি বোসো, আমি আসছি।

দু-পা এগিয়েই কেদারের বাজার। জিউৎ পকেটে হাত দিয়ে দেখলে একটা টাকা আর কয়েক আনা খুচরো রয়েছে। কিছু দই-মিষ্টি আর তরিতরকারি কিনে জিউৎ ফিরে এল।

নীরদা তখনও সেখানে স্তব্ধ একটা মূর্তির মতো বসে ছিল। গঙ্গার দিকে তাকিয়ে কী ভাবছিল সে-ই জানে। নীরদার সামনে এসে জিৎ বললে, এই নাও।

মুখ দিয়ে কথা জোগাচ্ছে না নীরদার। সীমাহীন কৃতজ্ঞতায় যেন আচ্ছন্ন অভিভূত হয়ে গেছে সে। ক্ষণিকের জন্যে মনে হল কোনো বদ মতলব নেই তো লোকটার, কিন্তু চিন্তাটা অস্পষ্টভাবে ভেসে উঠেই আবার তলিয়ে গেল। তরল অন্ধকারে ঘেরা হরিশ্চন্দ্র ঘাট, সামনে গঙ্গার কলোগ্লাস, বাতাসে চিতার অস্ফুট গন্ধ আর চারদিকের একটা থমথমে নিঃসঙ্গতা নীরদার বাস্তব বুদ্ধিকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে, বুকের ভেতর থেকে আকস্মিক একটা আবেগের জোয়ার ঠেলে ঠেলে উঠছে— বাবা বিশ্বনাথের কাশীতে কেউ উপবাসী থাকে না।

আর ভাঙের নেশাটা তখনও থিতিয়ে আছে জিউতের মগজে। সে যে কী করছে নিজেই জানে না। এত বড়ো দুঃসাহস তার কোনোদিন যে হতে পারে এটা সে কল্পনাও করতে পারেনি। অনুকম্পা নয়, দয়া নয়, পুরুষের চিরন্তন প্রেরণা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তার চেতনায়। কেমন যেন মনে হচ্ছে এই সন্ধ্যার শ্মশানের এই পরিবেশে এই মেয়েটি একান্ত তারই কাছে চলে এসেছে, তারই প্রতীক্ষার মধ্যে ধরা দেবার জন্যে।

হাত বাড়িয়ে ঠোঙাটা নিয়ে নীরদা বললে, বিশ্বনাথ তোমার ভালো করবেন। তুমি কে?

এক মুহূর্তে গলার ভেতরে কী-একটা আটকে গেল জিউতের। একবার চেষ্টা করলে মিথ্যা কথা বলবার, চেষ্টা করলে নিজের তুচ্ছ কদর্য পরিচয় গোপন করবার। কিন্তু পরম সত্যাশ্রয়ী মহারাজ হরিশ্চন্দ্র একদিন যে-শ্মশানে দাঁড়িয়ে নিজের ব্রত পালন করে গিয়েছিলেন, শিবচতুর্দশীর রাত্রে যে আদি মণিকর্ণিকার ঘাটে স্বয়ং বিশ্বনাথ স্নান করতে আসেন, সেই পুণ্যতীর্থে মিথ্যা কথা সে মুখ দিয়ে উচ্চারণ করতে পারল না।

অস্পষ্ট স্বরে জিউ বললে, আমি জিউৎরাম।

তুমি পান্ডা? ব্রাহ্মণ? দন্ডবৎ?

যেন সাপে ছোবল মেরেছে এমনিভাবে জিউৎ পিছিয়ে গেল। চমকে উঠেছে চেতনা, তর্জন করে উঠেছে বংশানুক্রমিক ক্ষুদ্রতাবোধের সংস্কার। জিভ কেটে জিউ বলে ফেলল, না, আমি চন্ডাল।

চন্ডাল!

জিউতের যেন নিশ্বাস বন্ধ হয়ে এল, কোনোক্রমে উচ্চারণ করতে পারল, হ্যাঁ, আমি চন্ডাল।

চন্ডাল! বিদ্যুদবেগে দাঁড়িয়ে উঠল নীরদা। কেদারঘাট থেকে পিছলে-পড়া আলোর ফালিতে দেখা গেল অপরিসীম ঘৃণায় নীরদার সমস্ত মুখ কালো হয়ে গেছে। একটা নিষ্ঠুর আঘাতে মুছে গেছে বিশ্বেশ্বরের অলৌকিক মহিমার প্রভাব, সরে গেছে অভিভূত আচ্ছন্নতার জাল।

বিষাক্ত তীক্ষ্ণ গলায় নীরদা চেঁচিয়ে উঠল, চাঁড়াল হয়ে বামুনের বিধবাকে ছুঁলি তুই? মুখে জল দিলি?

সভয়ে তিন-পা পিছিয়ে গেল জিউৎ।

নীরদা তেমনি চ্যাঁচাতে লাগল, তোর প্রাণে ভয় নেই? এত বড়ো সাহস, আমাকে খাবার দিতে আসিস? তোর মতলব কী বল দেখি?

জিউতের পায়ের তলায় মাটি সরতে লাগল।

এক লাথি দিয়ে খাবারগুলো ছড়িয়ে দিলে নীরদা, উলটে দিলে দইয়ের ভাঁড়। তারপর সোজা উঠে হনহন করে হাঁটতে শুরু করলে মদনপুরার রাস্তার দিকে। আর লজ্জায় অপমানে জিউ মাটির দিকে তাকিয়ে স্থির দাঁড়িয়ে রইল। তার নেশা ছুটেছে এতক্ষণে। ভাঙা সিঁড়ির ওপর দিয়ে দইয়ের একটা শুভ্র রেখা গড়িয়ে গড়িয়ে বালির মধ্যে গিয়ে পড়তে লাগল।

খানিক দূরে এগিয়ে গিয়ে নীরদার খেয়াল হল, চাঁড়ালে ছুঁয়েছে, গঙ্গাস্নান করে নেওয়া দরকার। কিন্তু খিদেয় আর তেষ্টায় সমস্ত শরীরটা তার টলছে। বাড়িতে গিয়ে কলেই স্নান করবে একেবারে, এখন আর ঘাটের অতগুলো সিঁড়ি ভাঙা সম্ভব নয়।

পথ চলতে চলতে ক্রমাগত মনে হচ্ছিল আজ ভারি রক্ষা পেয়েছে সে। লোকটার মনে কী ছিল কে জানে। নির্জন ঘাটে যা খুশি তাই করতে পারত, টেনে নিয়ে যেতে পারত যেখানে সেখানে। অন্নপূর্ণা রক্ষা করেছেন। উত্তেজনায় রক্ত জ্বলজ্বল করতে লাগল, হরিশ্চন্দ্র ঘাটের সঙ্গে দূরত্বটা বজায় রাখবার জন্যে যথাসম্ভব দ্রুতবেগে সে চলতে শুরু করে দিলে।

বাড়িতে এসে যখন ঢুকল, সব নির্জন। শুধু তেতলার ঘরে একটা আলো জ্বলছে, আর সমস্ত অন্ধকার। বিশ্বনাথের আরতি দেখতে গেছে সকলে। কলতলায় স্নান সেরে ঘরে ঢুকতে গিয়েই মনে হল দরজায় শিকল নেই কেন! ঘর খুললে কে!

কিন্তু অত কথা ভাববার আর সময় ছিল না। আর দাঁড়াতে পারছে না সে, সমস্ত শরীরটা অস্থির করছে, বোঁ বোঁ করে ঘুরছে মাথাটা। এক ঘটি জল খেয়ে আজ কোনোমতে গড়িয়ে পড়বে, তারপর উপায়ান্তর না দেখলে কাল থেকে নাহয় বিশ্বনাথের গলিতেই বসবে হাত পেতে। কাশীতে ভিক্ষে করে খেলেও সুখ।

দরজা খুলে অন্ধকার ঘরে পা দিতেই অস্ফুট আর্তনাদ করে উঠল নীরদা।

যেমন করে জিউল্লাম তাকে বুকে তুলে নিয়েছিল, তার চাইতে অনেক কঠিন নিষ্ঠুর পেষণে কে তাকে সাপটে ধরেছে। তার মুখে মদের গন্ধ, অন্ধকারে তার চোখ সাপের চোখের মতো জ্বলছে।

ফিসফিস করে সে বললে, ডরো মত প্যারে, রুপেয়া মিল যায়েগা।

নীরদার দুর্বল হতচেতন দেহ বিনা প্রতিবাদে আত্মসমর্পণ করলে, আর অন্ধকারের ভেতর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাবধানে টাকাগুলো মুঠো করে ধরলে মহাদেব তেওয়ারি। রেইস আদমির প্রাণটা দরাজ আছে, আর পাওনা টাকাটাও তাকে উশুল করতেই হবে। বিশ্বনাথের কাশীতে নীরদাকে ঋণী রেখে সে পাপের ভাগী হতে পারবে না, তা সে-টাকা নীরদা ইচ্ছায় নিক আর অনিচ্ছায়ই নিক।

ঠিক সেই সময় বৈঠকখানার আসরে বসে জিতেন্দ্রিয়ের লক্ষণগুলো বাচস্পতিকে বোঝাচ্ছিলেন রাধাকান্ত। সামনে মহাভারতের পাতা খোলা। ব্যাসদেব বলছেন, হে ভীষ্ম, যে পুরুষ ইন্দ্রিয়জয়ে সক্ষম…

কেমন অন্যমনস্ক হয়ে গেছে জিউরাম।

ফর্সা জামা পরে না, কানে আতরমাখা তুলো গোঁজে না, একমুখ পান চিবিয়ে ভদ্রলোক। হবার চেষ্টা করে না। কোথা থেকে এক কঠিন রূঢ় আঘাত এসে আকস্মিকভাবে তাকে নিজের সম্বন্ধে অত্যন্ত সচেতন ও সজাগ করে দিয়েছে।

জিউৎরাম মড়া পোড়ায়। একটা লম্বা বাঁশ দিয়ে মড়ার মাথা ফটাস করে ফাটিয়ে দেয়, চিতার কয়লাগুলো ছড়িয়ে ছড়িয়ে ফেলে দেয় গঙ্গার জলে। কেমন একটা অন্ধ আক্রোশ বোধ করে, বোধ করে একটা অশোভন উন্মাদনা। জীবন্তে যাদের তার স্পর্শ করবার অধিকার পর্যন্ত নেই, চিতার ওপরে তাদের আধপোড়া মৃতদেহগুলোর ওপরে যেন সে প্রতিশোধ নিতে চায়, তাদের অপমান করতে চায়, লাঞ্ছিত করতে চায়।

মাঝে মাঝে যখন অন্যমনস্ক হয়ে বসে থাকে, মনে পড়ে যায় নীরদাকে। ঘৃণ্য-বীভৎস মুখে বলছে, চন্ডাল! তার পায়ের ধাক্কায় সিঁড়ির ওপরে উলটে পড়েছে দইয়ের ভাঁড়, পরম অবহেলায় গড়িয়ে চলে যাচ্ছে তার শ্রেষ্ঠ অর্ঘ্য তার প্রথম নিবেদন।

হঠাৎ জিউতের শরীরের পেশিগুলো শক্ত হয়ে উঠতে চায়, হাতের মুঠিগুলো থাবার মতো কঠিন হয়ে ওঠে। কী হত যদি সেদিন সে তুলে আনত নীরদাকে, যদি জবরদস্তি করত তার ওপরে? কে জানতে পারত, কে কী করতে পারত তার? সেই ভালো হত, তাই করাই উচিত ছিল তার। ভুল হয়ে গেছে, অন্যায় হয়ে গেছে সেদিন।

লাফিয়ে উঠে পড়ে জিউৎ, হাতের বাঁশটা তুলে নিয়ে প্রচন্ড বেগে খোঁচা দেয় চিতার মড়াটাকে। কালো রবারের পুতুলের মতো শিরা-সংকুচিত দেহটা পোড়া কাঠের ভেতর থেকে খানিকটা লাফিয়ে ওঠে। একরাশ আগুন ঝুরঝুর করে ছড়িয়ে যায় আশেপাশে। তারপর নির্মমভাবে বাঁশ দিয়ে পিটতে শুরু করে, সাদা হাড়ের ওপর থেকে থেতলে থেঁতলে পোড়া মাংস খসে পড়তে থাকে, দুর্গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে যায়।

কিছুদিন পরে টের পেল জিউতের বন্ধুবান্ধবেরা।

একটা আসরে তারা জিউৎকে ঘিরে ধরল।

কী হয়েছে তোর?

কুছ নেহি।

দিল খারাপ?

হ্যাঁ।

তবে চল আজ মৌজ করে আসি।

না।

কিন্তু বন্ধুরা ছাড়লে, সেদিন সন্ধ্যার পরেই সাজগোজ করিয়ে তাকে টেনে নিয়ে গেল। দেশি মদের দোকানে এক-এক পাঁইট করে টেনে সকলে যখন রাস্তায় বেরুল, তখন বহুদিন পরে জিউতের রক্তে আগুন ধরেছে আবার। জোরগলায় একটা অশ্রাব্য গান জুড়ে দিল সে।

ডালমণ্ডিতে ঘরে ঘরে তখন উৎসব চলছে। হার্মোনিয়ামের শব্দ, ঘুঙুরের আওয়াজ, বেতালা গান, বেসুরো চিৎকার। মাঝে মাঝে সব কিছু ছাপিয়ে জেগে উঠছে তবলার উদ্দাম চাঁটির নির্ঘোষ। দরজায় দরজায় রাত্রির অপ্সরি। শিকার ধরবার জন্যে ওত পেতে দাঁড়িয়ে।

টলতে টলতে যাচ্ছিল, হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে গেল জিউৎ। কেদারঘাটের একফালি আলোতে দেখেছিল, এখানে বিদ্যুতের আলোতেও সে চিনতে পারল। আশ্চর্য, নেশায় রাঙা চোখ নিয়েও চিনতে পারল জিউৎ।

মেয়েটার চোখেও নেশার ঘোর। জিউৎকে থেমে দাঁড়াতে দেখে সে এগিয়ে এল। জিউতের একখানা হাত চেপে ধরে বললে, চলে এসো।

ঠাণ্ডা একটা সাপ হঠাৎ শরীরে জড়িয়ে গেলে যে-অনুভূতি জাগে, তেমনি একটা ন্যক্কারজনক ভয়ার্ত শিহরণে জিউৎ শিউরে উঠল। হাত ছাড়াবার চেষ্টা করে বললে, আমি চাঁড়াল।

উচ্চৈঃস্বরে মাতালের হাসি হেসে মেয়েটা বললে, আমি চাঁড়ালনি। ভয় কী? চলে এসো।

প্রকান্ড একটা ঝাঁকানি দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলে জিউৎরাম, ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে শুরু করে দিলে। পেছন থেকে মেয়েটার হাসি কানে আসছে, একটা ধারালো অস্ত্র দিয়ে যেন পিতলের বাসনের গায়ে সশব্দে আঁচড় কাটছে কেউ।

শ্মশানে শ্মশানচন্ডাল পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে।

সামনে চিতার ওপর লকলকে আগুন, গঙ্গার জলে নাচছে তার প্রেতচ্ছায়া। শ্মশানচন্ডালের কালো শরীরে আগুনের আভা পিছলে যাচ্ছে।

আর রাগ নেই, অভিযোগ নেই, গ্লানি নেই। ব্যথা আর করুণায় মনের ভেতরটা টলমল করছে। চেতনার ভেতর থেকে কে যেন বলছে, একদিন এই ঘাটেই আসবে নীরদা, এইখানে গঙ্গার জলে জীবনের সমস্ত জ্বালা তার জুড়িয়ে যাবে। সেদিন তার অহংকার থাকবে না, থাকবে না আজকের এই অপমানের কালো কলঙ্কের ছাপ। সেদিন জিউ তাকে নিজের মতো করে পাবে, পাবে তাকে স্পর্শ করবার অধিকার। চন্ডালের ছোঁয়ায় সেদিন তার কাশীপ্রাপ্তির সার্থক মর্যাদা ফিরে আসবে। সেই দিনের প্রতীক্ষা করবে জিউৎ, অপেক্ষা করে থাকবে সেই দিনের জন্যে।

রাধাকান্তের বাড়িতে তখন কথকতা হচ্ছিল। শ্মশানে চন্ডাল মহারাজা হরিশ্চন্দ্রের সঙ্গে রাজরানি শৈব্যার মিলন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *