যারা আমার সাঁঝ – সকালের গানের দীপে জ্বালিয়ে দিলে আলো
আপন হিয়ার পরশ দিয়ে ; এই জীবনের সকল সাদা কালো
যাদের আলোক-ছায়ার লীলা ; মনের মানুষ বাইরে বেড়ায় যারা
তাদের প্রাণের ঝর্ না-স্রোতে আমার পরান হয়ে হাজার ধারা
চলছে বয়ে চতুর্দিকে । নয় তো কেবল কালের যোগে আয়ু ,
নয় সে কেবল দিনরজনীর সাতনলি হার , নয় সে নিশাস-বায়ু ।
নানান প্রাণের প্রীতির মিলন নিবিড় হয়ে স্বজন – বন্ধুজনে
পরমায়ুর পাত্রখানি জীবন – সুধায় ভরছে ক্ষণে ক্ষণে ।
একের বাঁচন সবার বাঁচার বন্যাবেগে আপন সীমা হারায়
বহু দূরে ; নিমেষগুলির ফলের গুচ্ছ ভরে রসের ধারায় ।
অতীত হয়ে তবুও তারা বর্তমানের বৃন্তদোলায় দোলে —
গর্ভ-বাঁধন কাটিয়ে শিশু তবু যেমন মায়ের বক্ষে কোলে
বন্দী থাকে নিবিড় প্রেমের গ্র ন্থি দিয়ে । তাই তো যখন শেষে
একে একে আপন জনে সূর্য-আলোর অন্তরালের দেশে
আঁখির নাগাল এড়িয়ে পালায় , তখন রিক্ত শুষ্ক জীবন মম
শীর্ণ রেখায় মিলিয়ে আসে বর্ষাশেষের নির্ঝরিণী – সম
শূন্য বালুর একটি প্রান্তে ক্লান্ত সলিল স্রস্ত অবহেলায় ।
তাই যারা আজ রইল পাশে এই জীবনের সূর্য-ডোবার বেলায়
তাদের হাতে হাত দিয়ে তুই গান গেয়ে নে থাকতে দিনের আলো —
ব ‘ লে নে ভাই , এই যে দেখা এই যে ছোঁওয়া , এই ভালো এই ভালো ।
এই ভালো আজ এ সংগমে কান্নাহাসির গঙ্গাযমুনায়
ঢেউ খেয়েছি , ডুব দিয়েছি , ঘট ভরেছি , নিয়েছি বিদায় ।
এই ভালো রে ফুলের সঙ্গে আলোয় জাগা , গান গাওয়া এই ভাষায় ;
তারার সাথে নিশীথ – রাতে ঘুমিয়ে পড়া নূতন প্রাণের আশায় ।