শেষ কথা
সুদীপ্তর ভালোবাসার মানুষটি আজ অনেক বছর পর এসেছিল হঠাৎ একটা প্রয়োজনে সুদীপ্তর টেবিলে। প্রথমে চোখকে বিশ্বাস করতে পারেনি। নীচু হয়ে কাজ করছিল।পরে খুব চেনা একটা পারফিউমের গন্ধে চোখ তুলে তাকায়এতো সত্যি – তার প্রেমিকা ভালোবাসার মানুষ ঝিনুক। কিছুক্ষণ সুদীপ্ত কথা বলতে পারেনি। এতগুলো বছর পরে দেখা। যে মেয়েটিকে এক মুহূর্ত না দেখলে বুকের ভিতর উথাল পাতাল হত, তাকে ছেড়ে থাকতে হয়। আর কোনদিন সে সুদীপ্তর হবে নাভাবলেই বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে ওঠে। ঝিনুক প্রথমে কথা শুরু করল। ওর ছেলের ব্যাপারে এসেছে। ছেলে এই কলেজে ভর্তি হয়েছে। একটা সাবজেক্ট পরিবর্তনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে এসেছে। তুমি কেমন আছো সুদীপ্তঝিনুক জিজ্ঞাসা করে। উত্তরটা দিতে হবে সুদীপ্তর মনে ছিল না। তাই একটু থতমত আর বলতে লাগলো হ্যাঁ ভালো আছি ভালো আছি। সত্যি তুমি ভালো আছো সুদীপ্ত? আজও তুমি সংসার করলে না। আমাকে দেখে কি মনে হচ্ছে খারাপ আছি? পৃথিবীতে সব পাওয়া যায় না। ভালোবাসা আর ভালোলাগা দুটো তফাৎ। আমার কথা ভাববে এমন ভাগ্য আমার নয়। তাই আজও ভালোবাসার মানুষ খুঁজে পাইনি।তারপর বলো শ্বশুরবাড়ি কেমন লাগছে? তোমার একটা সুন্দর সংসার হয়েছে এতেই আমি খুশি। তোমার ছেলে কত বড় হয়ে গেল।- সুদীপ্ত একটা কথা বিশ্বাস করবে?
– কী কথা?
– আমি আজও তোমায় ভালোবাসি।
– বোকা বোকা কথা বলোনা। তুমি একজন সংসারী মানুষ। তোমার ছেলে বড় হয়েছে। সুখের সংসার।
– সুদীপ্ত মনেপ্রাণে তোমায় ভালোবাসি। সেদিন আমার করনীয় কিছু ছিল না। তোমার একটা ফোন পর্যন্ত আমি পাইনি। কয়েকটা মাস আমারও খুব খারাপ কেটেছে। তুমি সেই যে ব্যাঙ্গালোর গেলে, কোন ফোন ছিলনা। আমি কী ভয়ংকর দিনগুলো কাটিয়েছি তুমি বুঝবে না। যদিও পরে শুনলাম তোমার অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল কিছুদিন স্মৃতিশক্তি ছিল না।
– এখন আমি সম্পূর্ণ সুস্থ। তাই বুঝতে পারি তুমি খুব ভালো আছো। আমার মা কিন্তু আমার জন্য অপেক্ষা করেছিল। অনেক খোঁজ খবর করেছিল। কিন্তু তোমার বিয়ে তাড়া ছিল বেশি। ভালো থেকো।
– সুদীপ্ত, ছেলেদের একটা খারাপ জিনিস হলবাইরে থেকে চাকচিক্য দেখে ভাবে মেয়েটা খুব সুখী। তার মনটা দেখার চেষ্টা করে না। সে কী চাইছে একবারও তাকে জিজ্ঞাসা করে না। মেয়েটির যন্ত্রণা অনেক সময় সে প্রকাশ করতে চায় না। তাকে একবার কেউ জিজ্ঞাসা করলে সে কিছুটা বলে হালকা হতে পারত। কিন্তু ভালোবাসার মানুষেরা বাইরের আবরণ টুকু দেখে। ভিতরে যে ভালোবাসার ফল্গুধারা বয়ে যাচ্ছে তার খোঁজ রাখেনা।
– হয়তো তাই। তবে ঝিনুক আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি। তোমরা একবারও আমাদের মনের দিকটা দেখো না। অভিযোগ কে প্রাধান্য দাও। আমরা প্রতিবাদ করিনা। নিজেরা দগ্ধ হই।
– যাইহোক বলো। কেন তোমার এরকম মনে হচ্ছে। আমিতো ভেবেছি তুমি খুব ভালো আছ।
– স্বামী বাইরে থাকে। কিন্তু মনের মিল সেভাবে হয়নি। এখানে শুধু কর্তব্যের আদান-প্রদান হয়। আমি ছেলেকে নিয়ে ভালো আছি। ওকে উপযুক্ত মানুষ করতে হবে এটাই আমার স্বপ্ন। তাই এখন বাপের বাড়িতে থাকি।
– সমস্যাগুলো মিটিয়ে নাও। একটা মানুষ পরবর্তী বিবাহিত জীবনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সুখী হয় না। ছেলে মেয়েরা খুব কষ্ট পায়। ওরা বাবা-মাকে এক জায়গায় দেখতে চায়। এই কারণে আজও মেয়েরা সব সহ্য করে। সমস্যাগুলো সমাধান করে নেওয়ার চেষ্টা কর। ভালো থেকো।
– ঝিনুক একটু বিমর্ষ হয়ে পড়ল। একসময় যার সাথে কত মনের কথা বলতো, আজ এতদিন পরে তার মধ্যে কত দূরত্ব তৈরি হয়েছে। ছেলে বেরিয়েছে একটা প্রয়োজনে। ধীরে ধীরে ঝিনুক ওখান থেকে বেরিয়ে গেল।