শুধু কবিতার জন্য
ফ্যাকাশে সাদা মুখ। উঁচু চোয়াল। চিমসানো গাল। হঠাৎ দেখে মনে হয়, যেন তার দু’পাশ দিয়ে, অনেকটা নীচু পর্যন্ত চেঁছে ফেলা হয়েছে। তবু চেহারায় বেশ ধার আছে। মাথাটা বিড়ালের মতো ছোট । চোখ দু’টি ধূসর। চশমার ফাঁক দিয়ে বিষণ্ণ দেখায় সেই চোখ।
ইনি হচ্ছেন সেই কবি, যিনি লিখেছেন,
“ঈশ্বরের আর্তনাদ”, ” চাঁদের আনবিক জীবাশ্ম”,
“কীট-পতঙ্গের দিনলিপি”, “চারপেয়ে কাব্য”, “কবিতার সঙ্গে সহবাস” ইত্যাদি কাব্যগন্থ।
আর তাছাড়া তার দশ বছর আগের লেখা, “বিশ্বাসের অপমৃত্য” যা সে সময় খুব আলোড়ন তুলেছিলেন।
আমি ভাবলাম কী আপসোসের কথা, এমন একটা গর্তের মধ্যে সেই কবিকে বাস করতে হচ্ছে। আজকের দিনে এমন হওয়ার তো কথা ছিল না। যেখানে দেখা যায় তরুণ স্মার্ট কবিরা সরকারী বেসরকারীর গ্রান্ট পেয়ে, পুরস্কার পেয়ে, সুন্দর সুদৃশ্য বাড়িতে, নরম গদীতে শুয়ে দিন কাটাচ্ছেন, শৌখিন পোষাক পরে দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন, আর এই কবি বাস করছেন কিনা, বাস অযোগ্য এক ইঁদুরের বিবরে।
কবি মরচে পড়া দরজার কড়া নাড়ার শব্দে, নীচু ছাদে মাথা ঠুকে যায় বলে মাথা নীচু করে, পিঠ কুঁজো করে নিয়ে লম্বা পা ফেলে এক চিলতে জানলার সামনে এসে দাঁড়ালেন। তারপর আমায় দেখে বলল, কি চাই?
আমি বললাম, আপনার একটা সাক্ষাৎকার নিতে এসেছি ।
– আমি কাউকে সাক্ষাৎকার দিই না।
– কেন?
– আমার খুশি।
বলেই তিনি জানলা বন্ধ করে দিয়ে, জানলার কাছ থেকে সরে যাচ্ছিলেন।
আমি বললাম, শুনুন স্যার। বেশ সাক্ষাৎকার দিতে হবে না। আমি আপনার অনুরাগী একজন ভক্ত পাঠক হিসাবে, “বিশ্বাসের অপমৃত্য” – নিয়ে কিছু কথা জানতে চাই।
বইটির নাম শুনে, তিনি চোখ তুলে, গভীর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকলেন। তারপর আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত তীক্ষ্ণ চোখে জরিপ করে নিলেন। শেষে নড়বড়ে পলকা কাঠের দরজাটা খুলে দিয়ে বললেন, ভিতরে আসুন।
ঘরে ঢুকতে গিয়ে, আর একটু হলে মাথাটা ঠুকে যাচ্ছিল ছাদের সঙ্গে, সামলে নিলাম।
ঘরে ঢুকে দেখলাম। দশ বাই দশ ফুটের একটা ঘর, চার দেওয়ালে ঠাসা বই। একটা পুরনো খাট। আর লজঝড়ে একটা পুরনো জরাজীর্ণ সোফা।
আগেই দেখেছিলাম, বাইরে দেওয়ালের সঙ্গে ঠেস দিয়ে দাঁড় করানো আছে একটা সাইকেল। জলকাদা ডিঙোবার মর্চে-পড়া যন্ত্র, দু’চাকার বাহনটির কতদিন কোন যত্ন নেওয়া হয়নি।
আমাকে সোফায় বসতে বলে, তিনি খাটে ধুপ করে বসে পড়লেন। তার এই করুণ অবস্থা দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল । ভাবলাম, একজন কবির পক্ষে এভাবে বাস করা সত্যিই দুঃসহ।
তিনি হঠাৎ চিমসে মুখটা খুলে বললেন, তাড়াতাড়ি বলুন কি জানতে চান? আমার কাজ আছে অনেক।
চর্মসার ওই পাজর ভেদ করে কথাগুলি বেরিয়ে এলো যে রকম গম্ভীর স্বরে, তা দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম।
আমি বিনীত সুরে বললাম, কিছু মনে করবেন না। আমি শুনেছিলাম আপনার “বিশ্বাসের অপমৃত্য” – কাব্যগ্রন্থটি ‘বাঙলা সাহিত্য সংসদ’ কতৃক পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল। তারপর কি এক অজ্ঞাত কারণে সেটি সঞ্জীবন হাজরাকে দেওয়া হয়।
শুনে তিনি হো হো করে এমন হেসে উঠলেন যেন সারা ঘরটা কেঁপে উঠলো।
তারপর হাসি থামিয়ে বললেন। সে এক মজার ব্যাপার। শুনুন তবে –
আমি খবরের কাগজ থেকে খবরটা জানতে পারি প্রথম (তারা আগে থেকে আমাকে কিছু জানায়নি)। তাতে আমার মনে ক্ষোভ জমে ছিল।
তার দু’দিন পরে একজন কর্মকর্তা এলেন আমার সঙ্গে দেখা করতে । এখানে তো তাকে বসানো যায় না। তাই তাকে নিয়ে পাড়া ছাড়িয়ে একটু দূরের, পাঁচমাথার মোড়ের নামী চায়ের দোকানটাতে গিয়ে বসলাম। দু কাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে তাকে বললাম, বলুন, কি বলতে চান?
তিনি কোন রাখঢাক না রেখেই বললেন, আমরা আপনাকে পুরস্কার দিতে চাই , এক শর্তে।
– কি রকম? জানতে চাই আমি।
– দেখুন আপনি পুরস্কার মূল্য যে পঞ্চাশ হাজার টাকা পাবেন, তার থেকে কুড়ি হাজার টাকা আমাদের সংস্থার উন্নতিকল্পে দান করতে হবে। তবেই আপনাকে পুরস্কারটি আমরা দিতে পারব।
শুনে আমার পিত্তি জ্বলে উঠল।
আমি তাকে বললাম, আপনারা পুরস্কারটি আপনাদের কোন পেটোয়া নপুংসক কবিকে ধরে নিয়ে গিয়ে দিন, যে আপনাদের এমন ঘৃণ্য শর্তে রাজী থাকবে। এ ধরণের পুরস্কার গ্রহণ করতে আমি ঘৃণা বোধ করি। বলে লোকটিকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলাম।
পরে শুনেছি, সঞ্জীবন হাজরা পঁচিশ হাজার টাকা দিয়েছিল ওদের ওই সংস্থাকে , হা হা হা….
যেন এটাও একটা হাসির ব্যাপার। আমি তাকে বললাম, তারপরও তো আপনার আরও পাঁচটা বই বেরিয়েছে
– তো?
– সেগুলি সরাকারী পুরস্কার কমিটিতে পাঠাননি?
– আমার কি দায় পড়েছে? দরকার হলে তারা খুঁজে নেবে।
আপনি পুরস্কার পেতে চান না?
– কবিকে পুরস্কার দেবেন কারা? এই রকম সব ভন্ড কুলাঙ্গার ঘৃণ্য ধান্দাবাজেরা? সে পুরস্কারের কী মূল্য আছে? হয় তো কিছু টাকা পাওয়া যাবে, তাতে কি? আমি তো টাকার জন্য লিখি না। কবিতাকে আমি পণ্য ভাবি না।
এরপর আমি তাকে কি প্রশ্ন করব? ভেবে বিভ্রান্ত বোধ করি। তিনিই আবার বলতে শুরু করেন, এই বেশ আছি। নিজের খেয়াল খুশি মতোন লিখি। কারও কোন ধার ধারি না। অভাব থাকলেও আমি ভিখিরি কবির মতো কারও কাছে হাত পাততে যাই না। স্বাধীনসত্তা নিয়ে বেঁচে আছি, পরম আনন্দে।
– তবে আপনার চলে কি করে? আপনার বই তো বিক্রি হয় না শুনেছি। আপনি কোন দলের নন, কোন পত্রিকার সম্পাদক আপনাকে লোক-চক্ষুর সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেন না, আপনার বইয়ের প্রকাশক আপনার বইয়ের বিজ্ঞাপনে দিতে তেমন আগ্রহ প্রকাশ করেন না , যারা পুরস্কার দিয়ে থাকেন, আপনার প্রথম বইয়ের কথা বাদ দিলে, তারা আপনার নাম পর্যন্ত জানেন না।
– তো? আমি তেত্রিশ হাজার দেব-দেবী পাঠক নিয়ে বাঁচতে চাই না। আমার তেত্রিশজন বোদ্ধা পাঠক থাকলেই যথেষ্ট। এরপর আর কি প্রশ্ন করা যায় ভেবে, আমি বিমূঢ় বোধ করি।
তিনি আবার বলতে শুরু করেন, লেখেন তো অনেকে, সত্যিকারের কবি ক’জন বলুন তো?
রবীন্দ্রনাথের পর জীবনানন্দ দাশ ছাড়া আর ক’জন খাঁটি কবি পেয়েছি আমরা বলতে পারেন?
জীবদ্দশায় তাঁর ক-খানা বই বেরিয়েছে? ক’টা পুরুস্কার পেয়েছেন তিনি? দারিদ্রে কেটেছে তার সারা জীবন, তবু তিনি মুচলেখা দিয়ে লেখেননি কোথাও। আপন মনে কবিতা লিখে গেছেন কোন প্রত্যাশা ছাড়াই প্রাণের তাগিদে। কবিতা ছিল তার কাছে প্রাণ-বায়ুর জন্য সংগ্রাম।
সঞ্জয় ভট্টাচার্যের কাছে মাত্র কুড়িটা টাকা ধার চেয়েছিলেন একবার, পূর্বাশায় লেখা দিয়ে শোধ করে দেবেন বলেছিলেন। কী অসহায় করুণ অবস্থায় কেটেছে তাঁর। আমি তো তার চেয়ে অনেক ভাল আছি, দু’তিনটে ছাত্র পড়াই সাইকেলে চড়ে তাদের বাড়িতে গিয়ে, তাতে যা পাই, তা দিয়েই আমার চলে যায়।
সজনীকান্ত দাস তো জীবনানন্দকে শনিবারের পাতায় ধুয়ে দিতেন। হা হা হা। তা’তে জীবনানন্দের ছেঁড়া গেছে।
এবার আমি কিছুটা সংকোচ নিয়ে তাকে বললাম, সমালোচকরা বলেন, আপনার কবিতা নাকি অশ্লীলতা দোষে দুষ্ট।
দু’পায় ভর দিয়ে আচমকা তিনি উঠে দাঁড়ালেন। পুরো কাচ ভেদ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন এমন ভাবে যেন কোন প্রাণীতত্ববিদ চেয়ে আছেন মাইক্রোস্কোপে। তার চশমা পরা বিড়ালের মতো মাথাটা এগিয়ে এলো।
‘বেরিয়ে যান’ – গর্জন করে উঠলেন তিনি, তার মুখ কুঁচকে গেল, পাথরের মতো কঠিন হয়ে উঠল চোখদু’টি। তারপর অনেকটা জল নির্গত হওয়া নলের মতো তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো –
-‘সমালোচক’? নিজেদের কিছু করার মুরোদ নেই যাদের। নপুংসক। খাসি কোথাকার। তারা যখন সকালের খাবার খেতে বসে তখন নিয়ে নেয় একটা কবিতা, সেটা দুধ মেশানো চায়ে ডোবাতে থাকে, যতক্ষণ না সেটা তাদের দাঁতহীন মাড়ির পক্ষে যথেষ্ট নরম হয়ে ওঠে। এবং যে মানুষটি শতবর্ষ আগে আমাদের ভাষা ও সাহিত্যের জন্য ক্রীতদাসের মতো খেটে গেল, যখন তার অস্থি-মজ্জা অনেক আগেই হজম করে ফেলেছে মাটি, তখন তার হাড় খুঁজে বের করে এরা চ্যাচাতে থাকে, ইউরেকা ইউরেকা। হাড়ের ভিতর তিনটে ঘুণপোকা পাওয়া গেছে।
” বরং নিজেই তুমি লেখোনাকো একটি কবিতা
বলিলাম ম্লান হেসে, ছায়াপিন্ড দিলো না উত্তর
বুঝিলাম সে তো কবি নয় – সে যে আরূঢ় ভনিতা
পান্ডুলিপি, ভাষ্য, টিকা,কালি আর কলমের পর
বসে আছে সিংহাসনে- কবি নয় – অজর, অক্ষর
অধ্যাপক, দাঁত নেই – চোখে তার অক্ষম পিঁচুটি,
বেতন হাজার টাকা মাসে – আর হাজার দেড়েক
পাওয়া যায় মৃত সব কবিদের মাংস কৃমি খুঁটি
যদিও সে সব কবি ক্ষুধা প্রেম আগুনের সেঁক
চেয়েছিল – হাঙরের ঢেউয়ে খেয়েছিলো লুটোপুটি।”
তিনি আবার বলতে শুরু করেন, যারা জীবনকে
কৃত্রিম ভাবে যাপন করে, তারাই আসলে অশ্লীল।
যৌনতা জীবনের অঙ্গ। যৌনতা বাদ দিয়ে জীবন চলে না। কবিতাও চলে না। প্রেম বরং কৃত্রিম, আমাদের নিজেদের সৃষ্টি। প্রাণের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক খুব বেশী নেই। ওটা জীবনে না হলেও চলে, অন্যান্য প্রাণীদের জীবন যাপন লক্ষ্য করলেই সেটা আপনি বুঝতে পারবেন। প্রেম থেকে তাদের বংশ বিস্তার হয় না।
– শিল্প সাহিত্যে যৌনতা কি অপরিহার্য?
– জীবনে যদি অপরিহার্য হয়, তবে শিল্প সাহিত্যে তা ব্রাত্য থাকবে কেন?
জানেন ‘ক্যাম্পে’ কবিতাটা লেখার পর, অশ্লীলতার অভিযোগ তুলে, জীবনানন্দকে কলেজের চাকরী থেকে বরখাস্ত করা হয়।
যত সব গাড়লের দল। ও রকম একটা কবিতা
কোন দিনও লিখতে পারবে তারা?
জীবনানন্দর কবিতার ভাব ভাষার আধুনিকতা রবীন্দ্রনাথও ঠিক মতো বুঝতে পেরেছেন বলে মনে হয় না আমার। তাঁর কবিতাকে ‘চিত্রকাব্য’ – আখ্যা দিয়েই তিনি দায় মুক্ত হয়েছেন।
‘ছাতকুড়ার মতো রোদ লেগে আছে ডুমুর পাতায়’
কিংবা-
‘ করুণ শঙ্খের মতো স্তন তার’
এমন নিবিড় অনুধাবন জীবনানন্দ ছাড়া আর কারও মধ্যে পাবেন বলুন?
কবি এবার তার চোখের চশমা খুললেন, পুরো কাঁচদুটি ঘষে ঘষে মুছলেন, চোখ মিটমিট করলেন,তারপর চশমা আবার চোখে পড়লেন।
– আমি জানতে চাই, কি ভাবে আপনি দশ বছরে ছ’খানা বই লিখলেন?
কবি কিছু উত্তর না দিয়ে, ঢালু ঘরে পায়চারী করতে লাগলেন, বিড়ালের মতো আলগোছে হাঁটতে লাগলেন কোন কিছুতে না হোঁচট খেয়ে।
– কী ভাবে আমি এসব কাজ করেছি?
তিনি তার বাঁ কাঁধটি ঝাঁকি দিয়ে খানিকটা উঁচুতে
তুললেন। তারপর বললেন, আমি নিঁখুত ভাবে সময়কে মেপে মেপে ভাগ করে নিয়েছি। যাকে কাজ বলি, সেই লেখার কাজের জন্য দশ থেকে বারো ঘন্টা, সেটা অবশ্য নির্ভর করে, কবে কতক্ষণ দমে কুলোচ্ছে। আর কিছুটা সময় সাহিত্য পাঠ করা আমার অভ্যাস। বাকী যা সময় পড়ে রইলো, তার ছ’ঘন্টা ঘুমের জন্য, দু-এক ঘন্টা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার জন্য কিংবা বাইরে গিয়ে সেই সব মেঘকন্যা রূপবতীদের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য , তারপর আছে শারীরিক ক্রিয়াদি গ্রহণ- বর্জন, প্রাতরাশ, সাজ-পোষাক পরা। তবে একটা কথা ভুললে চলবে না, কিছুটা সময় রাখতেই হয়, মনকে নিয়ে একটু খেলা করার জন্য, সে খেলা দ্রুতলয়ে হতে পারে আবার শিথিল ভাবেও হতে পারে।
কিন্তু এসব সত্ত্বেও প্রতিটি শব্দ থাকা চাই যথাস্থানে। কঠিন হোক, আলগা হোক, যেমন হওয়া সম্ভব তা হতে পারে, কিন্তু কুয়াশা ঘেরা অস্পষ্ট যেন না হয় এতটুকু। একটি লাইনও যেন পাঠকের মনে অযথা কুহেলিকা সৃষ্টি না করে।
– আপনার দম এখনও ফুরোয়নি। মরুভূমিকে আপনি স্বর্গভূমি করে তুলতে পারেন, শয়তানকে করে তুলতে পারেন ভগবান , ডাষ্টবিনকে করে তুলতে পারেন পৃথিবীর পুষ্প-উদ্যান, কিন্তু আপনার লেখার দম যদি একদিন ফুরিয়ে যায় তখন কি করবেন?
কবি হাসতে চেষ্টা করলেন,পারলেন না।
বললেন – আমদানী রপ্তানীর কাজ।
– মানে?
– অনুবাদের কাজ।
– বেশ সম্মানের কাজ।
– আমার লেখা সেদিন থেকে ছেঁড়া কাগজের ঝুড়িতে ফেলে দিতে শুরু করব।
তারপর স্বগত স্বরে মৃদু অস্ফুট উচ্চারণে নিজের সঙ্গে কথা বলার মতোন করে বলতে লাগলেন, নিজের কথা না লিখতে পারলে বোধহয় আমি বিনয় মজুমদারের মতো পাগল হয়ে যাব।
তারপর স্পষ্ট স্বরে আমাকে শুনিয়ে বললেন,
আমারও সুনীল গাঙ্গুলীর মতো করে বলতে ইচ্ছে করে জানেন ,
” শুধু কবিতার জন্য এই জন্ম, শুধু কবিতার
জন্য কিছু খেলা, শুধু কবিতার জন্য একা হিম সন্ধেবেলা
ভুবন পেরিয়ে আসা, শুধু কবিতার জন্য
অপলক মুখশ্রী, শান্তি এক ঝলক ;
শুধু কবিতার জন্য তুমি নারী, শুধু
কবিতার জন্য এত রক্তপাত, মেঘে গাঙেয় প্রভাত
শুধু কবিতার জন্য, আরো দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকতে লোভ হয়।
মানুষের মতো ক্ষোভময় বেঁচে থাকা,শুধু কবিতার জন্য
আমি অমরত্ব তাচ্ছিল্য করেছি।”