Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » শালগাছ || Humayun Azad

শালগাছ || Humayun Azad

তখন ছিলাম ছোটো,
চোখেমুখে এসে পড়তো অন্যান্য গাছের বুড়ো ডালপালা।
স্বপ্নে-শিরে খসে পড়তো মরা পাতা, শুকনো বীজ,
হাড়ের মতোন শক্ত পোক-খাওয়া শাখা।
শিশিরঅবাক চোখে চাইতাম, চারপাশে বিছানো বিস্ময়!
সামনে দাঁড়ানো ছিলো, বেশ উঁচু, একটা হিজল;
ক্ষণেক্ষণে ভাবতাম ওর মতো হতে পারি যদি!
একটা বামন তরু–কী রকম রগড় করতো–যেনো সমকালে
পৃথিবীর কোনো বনে ওর মতো আর কেউ নেই।
একদিন দেখলাম : কী-একটা গাছের চুড়োয় ঢেউ খেলছে
লাল-নীল-সবুজ-হলুদ; কিন্তু সেই রঙিন উজান
ভাটায় গড়ালো আস্তে দু-দিন যেতেই।
সামনে আঁধার, পেছনে আঁধার, বাঁয়ে অন্ধকার,
ডানে অন্ধকার; চারপাশে গাছের আঁধার।
কখনো চোখের মণিতে ঢুকতো আঁধারের বিপরীত
সোনার পানিতে গলছে তরল আঁধার, গলে গলে রুপো হচ্ছে
আবার গলানো লাল মাণিক্য হয়ে রাত্রি নামছে।
সোনা-জল-ঢালা সেই অদেখা সোনাকে মনে মনে ডাকলাম–সূর্য!
তারপর অন্ধকার নিজের মুখের রূপে ধুয়ে ফেললো এক নারী;
স্বপ্নে ডাকলাম–চাঁদ!
তরুণ শালের কোঁড়া গাছের আঁধার ভেদ করে হিজল-বামন ছেড়ে
সোনা ও নারীর দিকে বাড়তে লাগলাম।
পাগল বাতাস এলো–আর সে-বাতাসে ভেসে এলো স্বপ্ন
কে যেনো বসলো ডালে–কেঁপে উঠলাম আশিরশেকড়
সে আমার আদিশিহরণ!
কে এসে বসেছিলো?–জানি না। তাকে ডাকলাম : পাখি!
সে উড়ে যাওয়ার কালে যে-জল ছড়িয়ে গেলো,
তাকে আমি আজো বলি–সুর!
বামন গাছটা এর মাঝে হাঁটুর তলায় পড়ে গেছে,
মাঝেমাঝে কুড়োয় সে আমার একটি-কী দুটো ঝরাপাতা।
হিজল তাকায় কেমন করুণ দু-চোখে।
এক মোহিনী–ডেকেছিলাম সঞ্চারিণী লতা
গোপনে রক্তের মধ্যে ঘুমভরা ছোঁয়া ঢেলে
বেয়ে উঠতে লাগলো আমার হৃৎপিণ্ডের দিকে;
হৃৎপিণ্ডের কাছাকাছি এসেই মোহিনী লীলায় ফুটিয়ে দিলো
রঙ–সে-রঙিন লাস্যকে আমি বলি–ফুল!
মোহিনীর রূপ থেকে চোখ তুলে ওপরে তাকিয়ে দেখি নীল!
আন্দোলিত নীলের ভেতর থেকে ভেসে ওঠে একখণ্ড রক্তমাণিক্য
মধ্যমায় পরে নিই,
দিনান্তে ধোয়ার জন্যে ছুড়ে দিই নীলেজলে;
পুনরায় পরিশুদ্ধ ভোরে এসে বসে সে আমার আংটিতে।
টের পেয়েছিলাম অনেক আগে মূল-শেকড়টি বেড়ে বেড়ে
গিয়ে পড়েছে এক মধুঝর্নার বক্ষস্থলে।
যতোই গভীরে যাই, মধু;
যতোই ওপরে যাই, নীল!
শিকড় চালাই, মাটির গভীর থেকে মধুর গভীরে;
শিখর বাড়াই, মেঘের ওপর থেকে নীলের ওপরে।
আমার সঙ্গী সেই বুড়ো ও বামন গাছগুলো আজকাল
ঝরে যাচ্ছে
মরে যাচ্ছে
আমি শুধু মধু থেকে নীলে নীল থেকে মধুর ভেতরে
ছড়াচ্ছি নিজেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *