Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » শংকর ব্রহ্মর একশত লতিফা || Sankar Brahma

শংকর ব্রহ্মর একশত লতিফা || Sankar Brahma

আমরা ধীরে ধীরে সংক্ষিপ্ত কবিতার দিকে এগোচ্ছি, কেননা মানুষ এখন ভীষণ ব্যস্ততার মধ্যে থাকে , বড় ধরণের কাব্য রচনা করা বা পড়ার সময় সুযোগ আর তেমন পায় না আজকাল, তাই তাদের আগ্রহ দোঁহা, হাইকু, রুবাইত, চৌপদী, পঞ্চপদী, ষষ্ঠপদী, লিমেরিক, তানকা ও লতিফার প্রতি আজকাল বেশী দেখা যাচ্ছে। ‘লতিফা’ শব্দটি আরবি। এর উৎপত্তি লুৎফুন শব্দ থেকে। লুৎফুন শব্দের অর্থ – প্রেম, প্রীতি, দয়া, মায়া, ভালবাসা।

এইসব বিষয়কে কেন্দ্র করে ছয় পংক্তির কবিতাকে বলে ‘লতিফা’ কবিতা। ‘লতিফা’ লেখার উদ্দেশ্য হলো এইসব (প্রেম, প্রীতি, দয়া, মায়া, ভালবাসা) গুণগুলি সকলের মধ্যে সঞ্চারিত করা।

বারো-তেরো’শ খ্রীষ্টাব্দে, আরব দেশে কোন রকম গান বা কবিতার প্রচলন ছিল না। কারণ ওই দেশের কঠোর ও রুক্ষ প্রকৃতি এবং জনগণের ছন্দহীন জীবন যাপনে কবিতার কোন স্থান ছিল না। গদ্য জাতীয় কিছু লেখা হতো অবশ্য সে সময়।

এমন অবস্থায়, আরবের বিভিন্ন স্থানে ঈশ্বর প্রেম, মানব কল্যাণ, নানা রকম সামাজিক ও গার্হস্থ শিক্ষার বিষয় যাতে সহজেই মানুষের মনের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, সেই উদ্দেশ্য নিয়ে ‘সাবা ইবনে করিম’ নামক জনৈক মহান ব্যক্তি সচেষ্ট হন। তিনি বুঝেছিলেন ছোট ছোট গান বা গীতিকাব্য সহজেই সকলে মনে রাখতে পারবে। তাই তিনি ছয়-পদ বিশিষ্ট গীতিকাব্য রচনা করেন। এই গীতিকাব্যগুলিকেই পরবর্তী কালে ‘লতিফা’ নামে আখ্যায়িত করা হয়। আর তা ধীরে ধীরে আরবদেশ ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ভারত তার ব্যতিক্রম নয়।

‘বাংলা লতিফা’-র মহান উদ্যোক্তা শ্রদ্ধেয় কবি অনুপ দত্ত মহাশয়ের কাছে আমার ঋণ অশেষ। তিনি আমাকে ‘লতিফা’ লেখায় অনুপ্রাণীত করেছেন। আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই তাকে।
এখানে দেওয়া হলো শংকর ব্রহ্মর একশত লতিফা’।
——————————————————————

১).

(দেশমাতৃকার প্রতি)

তোমাকে দেবার মতো আর কিছু নাই
তবু কিছু দিতে চাই মনে প্রাণে
আমার এই প্রাণ এখনও রয়েছে তাজা
মরে নাই, যদি চাও দিতে পারি তাও
মন তো দিয়েছি আগেই
মনে করো এটা শুধু ফাও।

২).

(শপথ)

যদি বেঁচে থাকি একটি কবিতা লিখব
যদি বেঁচে থাকি একটি সকাল – লিখব
যদি বেঁচে থাকি একটি দিবস – লিখব
যদি বেঁচে থাকি আরও কিছুদিন – লিখব
যদি বেঁচে থাকি একটি জীবন – লিখব
যদি বেঁচে থাকি অনন্ত কাল – লিখব।

৩).

(প্রেম)

মন নিয়ে প্রেম করি মন নিয়ে বাঁচি,
এই মন আছে তাই, তুমি আমি আছি,
ভালবেসে যদি নিজে দূরে থাকা যায়
ভালবাসা বেঁচে থাকে তবে নির্দিধায়,
মনটাই সোজা রাখা হয় বড় দায়,
সোজা কথা মনে ঢুকে সব বেঁকে যায়।

৪).

(একাকিত্ব)

মাঝে মাঝে খুব একা হয়ে যাই
মনে হয় আমি নয় কারও কেউ আমার নয়,
বুকের ভিতর ফাঁকা লাগে আরও নিঃস্ব মনে হয়।

সমস্ত বিশ্বটা যেন গ্রাস করে,গিলে খেতে আসে
শুধু রাত্রি আমাকে ভালবেসে গভীর আশ্বাসে,
বুকের ভিতরে টেনে নেয়, কিন্ত তা আর কতটা সময়?

৫).

(রঙীন ফুল)

প্রেমের পরশ পেলে
অনেকেই কবি হয়ে ওঠে,
তারপর আকর্ষণে তার
দিক বিদিক ছোটে,
লেখনীর ছোঁয়ায় তার
কত যে রঙীন ফুল ফোটে।

৬).

(আগ্রাসী)

শক্ত পাহাড় চায় না আহার,
নদীর কী রূপ,দেখতে বাহার!
তবু নরম নদী আগ্রাসী সে
গিলতে চায় সে একটি গ্রাসে
অকস্মাৎই সবকিছুকে
তাই সে ছোটে দিক বিদিকে।

৭).
.
(জীবন)

কেউ কি জানে জীবন মানে
সুস্থ প্রাণের অসুস্থ মন,
হাসতে পারে যখন তখন
কাঁদতে পারে আবার ভীষণ
ভালবাসার কুন্ড জ্বেলে
নিজেই পুড়ে মরতে পারে।

৮).

(ইচ্ছে পাখি)

লোভের কত রকম সকম ইচ্ছেরা সব ঘোরে
তাদের ধরে খাঁচায় পুরে ফেলতে পারলে পরে
বুকের ভিতর নিবিড় সুখের আলোড়ণে ভরে।
আর ধরতে গিয়ে ব্যর্থ হলে পরে,
আর পাখি দূরে উড়ে গেলে পরে-
দুঃখ ব্যথায়, কেন হৃদয় এত মুষড়ে পড়ে?

৯).

(ভাল মন্দ)

বুঝি না তো অনেক কিছুই তবুও জীবন চলে
সময়ের আঁকা বাঁকা স্রোতে প্রবাহিত নদীর মতোই
বোঝা ও না বোঝার ভিতর দিয়েই

সময়ের কাছে কোন ভাল মন্দ নেই
যে যার মতোন করে আমরা সবাই
নিজেদের ভাল মন্দ ঠিক করে নিই।

১০).

(নেই ভাবতে নেই)

নেই ভাবতে নেই
নেই ভাবলে ফাঁকা ফাঁকা লাগে
মনেকর আছে ধারে কাছে
কয়েকটি নক্ষত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে
আকাশের বুকে ভেসে আছে চাঁদ কিংবা ভাবো
সেও আছে ধারে কাছে যাকে তুমি মনে প্রাণে চাও।

১১).

(কুহেলিকা)

গাছ ভাঙে ঝড়ে
অকস্মাৎ বাড়ি ভেঙে পড়ে,
মানুষের আশা ভেঙে চুরমার হয়
সম্পর্কও ভেঙে যায় ‘কুহেলিকা’ময়
দুঃখ ভেঙে ছুটে যায় নদী
বাস্তবিক স্বপ্ন ভাঙেনি অদ্যাবধি।

১২).

(কবিতা লেখা)

মাথার ভিতর শব্দ নাচে
বুকের ভিতর ছবি
এ সব নিয়েই ছন্দে মাতেন
দেশ বিদেশের কবি,
তাই তো কবিতা লেখা
মহান লোকের হবি।

১৩).

(কল্পনা বিবাগী)

জেগে জেগেই স্বপ্ন দেখি
আকাশ পাতাল ভাবি
বাস্তবতার কাছে এলেই
নিত্য যে খাই খাবি
আমায় তবে বলবে নাকি
কল্পনা বিবাগী?

১৪).

(কলঙ্ক)

চাঁদের আলোয় হৃদয় যখন পোড়ে
মন টেকে না ঘরে,
বুঝবে তখন
কারও জন্য, হৃদয় কেমন করে,
হয় তো জেনে জাগতে পারে পুলক
শুনে তোমায় দুষবে কিছু কু-লোক।

১৫).

(বন্দি)

অন্যায়কে
দিয়েছি সাথ
ন্যায়
রেখেছি মাচায়।

এখন আমি বন্দি পাখি
সোনার একটা খাঁচায় ।

১৬).

(চাঁদ)

আকাশের বুকে একফালি চাঁদ
ওৎ পেতে থাকে
পেতে রাখে ফাঁদ
যদি কেউ তার
প্রেমে পড়ে যায়,
দিয়ে ফেলে তাকে আকূল হৃদয়।


১৭).

(কবিতারা আসে)

ভালবাসাহীন হলে
দিনে কিংবা রাতে
কবিতারা চলে আসে
মিতালী পাতাতে,
কিছু দুঃখ কিছু সুখ
নিয়ে আসে সাথে।

১৮).

(মন)

মন করে আনচান
স্নান করে যায় না,
খিদে, খিদে ভরা পেটে
ভাত খেতে পায় না।
মানুষের ভিতরেই
খুঁজে পাবে হায়না।

১৯).

(যদিও মনে)

তোমায় যখন বেসে ছিলাম ভাল
তুমি ছিলে রোগা পাতলা কালো,
এখন তুমি যে পাকা গমের মতো
আশেপাশে তাই ভ্রমর ঘোরে কত।
বলো, আমার তা’তে কি?
আমি তো আর তোমার কাছে কিছু চাইতে আসিনি।

২০).

(কবি)

আমি কবি
বেশি কিছু
বুঝি না
শুধু মনে মনে
জীবনের ছবি আঁকি
মানে তার খুঁজি না।

২১).

(প্রকৃতই)

তোমার সৌন্দর্য দেখে অভিভূত চাঁদ, গোপনে লজ্জায়,
পুকুরের জলে এসে ডুব দিতে চায় –
এমন এক অকৃত্রিম, নিবিড় সন্ধ্যায়।

অথচ প্রকৃতই, ডুবতে পারে না জলে
একা ভেসে থাকে
তোমাকে লুকিয়ে দেখে, মুগ্ধ হবে বলে।

২২).

(জানা অজানা)

আমরা জীবনে কি চাই
জানি না যখন অনেকেই
তখন আমাদের জীবন
বয়ে চলা নদীর মতোন,
আর যারা জেনে যায়
তারা পর্বতের মত দৃঢ় রয়।

২৩).

(ভাল মানুষ)

মুখোশ পরা মানুষগুলো চিনতে পারি না
নামী দামী লোকের আমি ধার তো ধারি না
ভাল মানুষ চাই
কোথায় গেলে পাই?
সেটাই আমি কিছুতেই যে বুঝতে পারি না
মুখোশআটা মানুষগুলো চিনতে পারি না।

২৪).

(বোঝা)

আসলে যেটুকু বুঝি,
তা নিয়েই কেবল খাচ্ছি হিমসিম,
না বোঝার পেছনে আর ছুটি না।
ভাবি যতটুকু বুঝি ,
ভাবতে লাগে যে ঝিম,
তার সবটুকুই সত্যি বুঝি কিনা।

২৫).

(চাহিদা)

বাবা তুর পায়ে পড়ি রে
মেলা থেকে বউ লয় রে
ঝি এনে দে,
রান্না কাঁচা সেবা যত্ন সবই করবে সে
শুধু খাবে পরবে, টাকা লিবে নে,
ওমা তোর পায়ে পড়ি রে।

২৬).

(অমৃত)

ভাবনা ভিতরে রাখলেই বিষ,
কুরে কুরে খায় ভাবুকে,
বের করে দিন, বের করে দিন
শব্দ কথার চাবুকে।
দেখবেন কথাগুলো সব
অমৃত হয়ে থাকবে অহর্নিশ।

২৭).

(কালের ধ্বনি)

কালের নীরব ধ্বনি শুনিতে যে পাই,
কাছে কেউ নাই উড়ে যায় ছাই,
কি যে আমি চাই?
চিতা কাছে ডাকে,
মিতা ডাকে আয়
আমি থাকি দোটানায়।

২৮).

(কবির দুঃখ)

কবিরা লিখছে কতো
পড়ে কেউ কেউ,
কবিরা কাঁদছে তাই
ভেউ ভেউ ভেউ !
কি আছে উপায় এর
জানে নাকি কেউ?

২৯).
.
(নিন্দুক)

কাউকেই ছোট করে
বড় হওয়া যায় না,
পরনিন্দা , পরচর্চা
অনেকেই চায় না
নিন্দুক কখনই
ভালবাসা পায় না।

৩০).

(সত্যকথা)

সবার যখন মনের কথা
বুকের ভিতর চাপা রয়
বুক উঁচিয়ে সত্যকথা
বলা মোটেই সহজ নয়,
জানি না সবাই সত্যকথা
বলতে কেন পায় যে ভয় !

৩১).

(ভালবাসা পিছু নেয়)

মন ভেঙে যায়
অকারণ হায়,
লিখব না ভাবি কিছু
ভাবব না আগু পিছু,
চাই না তো আর কিছু
তবু ভালবাসা নেয় পিছু।

৩২).

(ওড়া চাই)

ভাল যদি বাসে কেউ বাসুক না,
খুশি যদি আসে মনে আসুক না
কিবা তাতে আসে যায়
কেউ যদি কাছে চায়?
জীবন তো একটাই
ডানা মেলে ওড়া চাই।

৩৩).

(সমস্যা)

অনেকে বলেন জীবনের কাছ থেকে শেখো
জীবন বলে বাস্তবতা থেকে শেখো
বাস্তবতা বলে পরিস্থিতি থেকে শেখো
পরিস্থিতি বলে সময়ের কাছ থেকে শেখো
সময় কিছুই বলে না . . . . . . . . ছাই
এখন আমি কি করি, কার কাছে যাই?


৩৪).

(নাজেহাল)

ঢেউয়ে ঢেউয়ে সমুদ্র উত্তাল
তোমার অস্থির প্রশ্নজাল
করে নাজেহাল বারবার ,
উত্তরে মৌন থাকি আমি
যেন এক বধির পাহাড়
তবু তুমি ছাড় না যে হাল।

৩৫).

(অবস্থান)

মনে আমাদের থাকে অনেক কামরা ,
কেউ খাস কামরার বাসিন্দা আমরা
কেউ আবার বারান্দার
কেউবা চিলে কোঠার।
তোমার অবস্থান
বুঝে নিতে হবে নিজেকে তোমার।

৩৬).

(কুহর)

মেলা যদি ভেলা হয় ভেসে পড় তাতে
শুধু এক অনুরোধ ফিরে এসো রাতে।

না হলে প্রাণের পাখি ছটফট করে
বদ্ধ এই হৃদয়ের খাঁচার ভিতরে।

দিন যায় কোন মতে রাতে শুধু চাই
আর কিছু নয় প্রিয় শুধু তোমাকেই।

৩৭).

(মন নিয়ে)

কি যে হলো?
কেন যে আবার হলো এসব?
মন নিয়ে বুঝি খুব টানাটানি
এ’সব তো হতে পারে জানি
কিন্তু মন কি গার্ডার নাকি
রঙ যার গাঢ় আশমানি?

৩৮).

(কবির ভঙ্গি)

শব্দ যখন জব্দ করে সকাল, দুপুর, রাতে
কবি তখন মগ্ন হয়ে পড়েন কবিতাতে,
শব্দ তবেই কথা বলে কবির কবিতাতে।

চোখ যদি কথা বলে তা যে হয় ইঙ্গিত ;
মন যদি কথা বলে হয়ে যায় সঙ্গীত।
ইঙ্গিতে আর সঙ্গীতে কবি নানা ভঙ্গিতে।

৩৯).

(পারস্পরিক)

আলো চাইলে অন্ধকারকে মানতে হবে
ভাল চাইলে মন্দকে জানতে হবে
সুখ চাইলে দুঃখকেও বইতে হবে,
আনন্দ থাকলে কষ্টকেও সইতে হবে,
তুমি থাকলে আমাকেও, থাকতে হবে,
আমি বাঁচলে তোমাকেও বাঁচতে হবে।

৪০).

(ভালবাসা)

বিয়ের পর আর ভালোবাসা থাকে না,
স্বামী স্ত্রী যেন দুটো যন্ত্র হয়ে যায়
তারপর সবকিছু চলে নিয়ম মাফিক।
ভালোবাসা হচ্ছে ঘোর অনিয়ম হায়,
অযথা সেখানে নিয়ম চলে এলে
ভালোবাসা স্বভাবতই বিদায় নেয়।

৪১).

(রূপান্তর)

দুরাচারী থেকে থেকে একদিন রত্নাকরের
ইচ্ছে হলো খুব, সদাচারী হতে হবে –
কামনা বাসনা তার খেয়ে নিল
দেহে আঁকুপাঁকু প্রাণে সঞ্চার হলো
জ্ঞানের উন্মেষ হলো
বাল্মিকী হয়ে উঠলো শেষে।

৪২).

(যদি ভাব)

যদি ভাব,কাউকেই কিছু না বলে
চুপ করে থাকাটাই শ্রেয়
তবু, প্রাণের আনন্দে তুমি
মন খুলে গান গেয়ে যেয়ো।
তাতেই দুঃখ ক্ষোভ হয়ে যাবে দূর
সামনে বাধা হয়ে যতই না দাঁড়াক অসুর।

৪৩).

(অমর প্রেম)

একদিন শরীরের খিদে মরে যায়
ভালবাসা তবুও মরে না যে হায়
কারণ শরীর অনৃত্য হয়ে রয়
ভালবাসা আমৃত্যু রয়ে যায়
যদি কেউ সত্যিই তাকে
মনে-প্রাণে ভালবেসে থাকে।

৪৪).

(দেশ)

জালিয়াতে ভরে গেছে দেশ
এই নিয়ে আছি মোরা বেশ
নেই কোন প্রতিবাদ তার
কে করবে প্রতিবাদ কার?
সকলেই হলে জালিয়াত
দেশটাই হয়ে পড়ে কাৎ।

৪৫).

(স্বর্গ নরক)

সকলেই যদি স্বর্গে যায়
তবে তো স্বর্গ অবিলম্বে
নরক হয়ে উঠবে হায় !
তাই স্বর্গে যেতে চাই না আমি
নরকে গিয়ে দেখতে চাই,
সেখানে সত্যি অবস্থাটা কি?

৪৬).

(বিস্ময়)

একদিন যেতে হবে চলে
সকলেই তা জানি বলে,
হু হু করে কেঁদে ওঠে মন
জমানো সম্পত্তি আর ধন
পাহাড় হয়ে চাপা দিতে চায়,
তবুও মানুষ অন্যকে ঠকায়, কী বিস্ময়!

৪৭).

(স্বপ্ন)

সুখ চাইলেই আসে না তো সুখ
দুঃখ এসে জড়ো হয়
তবুও স্বপ্ন দেখতে করি না ভয়
সেটাই বাঁচার প্রেরণা মনেহয়।
যে’সব পাতা শূন্য থাকে জীবন খাতায়
স্বপ্ন এঁকে রাখি আমি সে’সব পাতায়।

৪৮).

(মন খারাপের ঠিকানা)

মন খারাপের কারণ
জানানো তাকে বারণ,
সে আমাকে দিতে চায়
যদি একগুচ্ছ ফুল,
আমি তাকে দিতে পারি
ঠিকানা নির্ভুল।

৪৯).

(অরূপ রতন)

রূপ নয় তার অরূপ রতন
করে যতন মনের মতন
খুঁজে বেড়াই সারা জীবন
পাব কোথায় এমন ধন?
অরূপ, তবু রূপের যতন
না করে যে মানে না মন।

৫০).

(সময়ের স্রোতে)

বুঝি না তো অনেক কিছুই তবুও জীবন চলে
সময়ের আঁকা বাঁকা স্রোতে প্রবাহিত নদীর মতোই
বোঝা ও না বোঝার ভিতর দিয়েই
সময়ের কাছে কোন ভাল মন্দ নেই,
যে যার মতোন করে আমরা সবাই
নিজেদের ভাল মন্দ ঠিক করে নিই।

৫১).

(অন্বেষণ)

দুপুর যদি উপুর হয়ে
বাজায় নূপুর মনে,
বুঝতে তখন ভাবছে তোমায়
কোন আপন জনে।
জান কি তুমি এখন আমি
তোমার অন্বেষণে?

৫২).

(অঙ্গীকার)

মৃত্যুর পরে হয়তো সব অন্ধকার
তবু তোমার আমার দেখা হবে একবার,
তারপর কিছু নেই আর সবটা আঁধার।

অথচ তোমার আমার প্রেম
চিরস্থায়ী করে রাখবে বলে,
করে ছিলে দৃঢ় অঙ্গীকার।

৫৩).

(কি হবে উপায়)

কবিতা কবিতা করে প্রাণ যদি যায়
বল না কবিতা সখি কি দেবে তোমায়?
হয় তো দেবে না কিছু,
তবু যদি তার ছাড়ি পিছু যাব যে কোথায়?

আর কবিতা আমাকে যদি ছেড়ে চলে যায়,
বল, তবে কি যে হবে আমার উপায়?

৫৪).

(বড়দিন)

সান্তা বলল,ভাল থেকো আমি বললাম,বেশ
দু’জনের পথ হলো ভিন্ন , সম্পর্ক হলো শেষ।
শেষ বললেই হয় না তো শেষ, নতুন করে শুরু,
বুকের ভিতর ডাকছে কেমন গুরু গুরু গুরু।
সান্তা ছিল সান্তার বাড়ি,আমি আমার ঘরে,
আবার আমাদের দেখা হলো পঁচিশে ডিসেম্বরে।

(৫৫).

(মুগ্ধ সরোবর)

শৈশবে যে প্রেম ছিল
শুধু অবান্তর
যৌবনে যে প্রেম হল
দেবতার বর,
বার্ধক্যে সে প্রেম আজ
মুগ্ধ সরোবর।

৫৬).

(প্রেমিকা বদল)

প্রেমিকা বদলায় কবি তার
বছরে দুইবার
একবার শীত ঋতু এলে
লেপের সান্নিধ্যে যায়,
গ্রীষ্মকাল এলে পুনরায়
বসে এসে গাছের ছায়ায়।

৫৭).

(যৌবন)

আড়ালে রাখতেই হবে
না হলে যে সবটাই
হয়ে যাবে পঁচা ডিম নষ্ট ,
যৌবন ফুটছে তুমুল
হাব ভাবে তার,
কিছুটা তো স্পষ্ট।

৫৮).

(অদ্ভুত)

ছোট্ট শিশু আমায় দেখে,
বলল সেদিন ভুত –
আমিও নিজেকে যে
তাই ভাবি,
ছোট্টশিশু সেটাও জানে
সত্যি কী অদ্ভুত ।

৫৯).

(আত্মসুখ)

আমরা সবাই, বল কিনা ভাই
আত্মসুখে মগ্ন হয়ে থাকি
সারাটা জীবন জুড়ে
এখানে সেখানে ঘুরে।
পরার্থে মরণ চায়
বল না, ক’জনা হায়?

৬০).

(জাগা)

রাত্রি যখন আপন মনে
চুল খুলে তার রাত জাগছে ,
দিনকে বল আজ ঘুমাতে।
হিসেব করে সময় মতো
জাগিয়ে দেব,দেখবে কেমন
রাক্ষসী এক চুমাতে।

৬১).

(গুণ)

আগুনের কাছে এলে
ঘি গলে কেন
কি যে তার গুণ?
ঘিয়ের সংস্পর্শে
আগুনও বুঝি সে গুণেই
জ্বলে যে দ্বিগুণ।

৬২).

(তবু চাই)

তোমার ভিতর আমি তোমাকেই ফিরে পেতে চাই
আজও পার্কে রেস্তোরায় আগের মতো ছুটে যাই।
যখন লুপ্ত-প্রেম স্মৃতি নিবিড় অনুভূতি হয়ে ওঠে
সে নিবিড় সুখ আর ক’জনের ভাগ্যে বল জোটে?
আমি এক অন্ধ প্রেমিক আজ বুকে নিয়ে শোক
জানি প্রেমে মুক্তি নেই তবু চাই কিছু একটা হোক।

৬৩).

(প্রশ্রয়)

স্বপ্ন যদি ঢেউ তোলে বুকে
আত্ম সুখে শুধু সর্বক্ষণ
তবে তাকে দিই না প্রশ্রয়
দিই না তো মন
হৃদয়ে ছড়ায় ভয়
কি জানি, কখন কি হয়।

৬৪).

(পরমায়ু)

পরলোকে কি আছে বা নেই,
তা নিয়ে পরমায়ু ক্ষয়ের থেকে ;
ইহলোকে কি করে
পরমায়ু অবক্ষয়ের হাত থেকে
রক্ষা পাওয়া যায়,
সে ভাবনা বেশী ফলপ্রসূ হয়।

৬৫).

(ধরা সরা)

একদা পেতে পেতে
এমন অবস্থায় পৌঁছে ছিলাম
যে ধরাকে সরা জ্ঞান করতাম
আর আজ হারাতে হারাতে
এমন অবস্থায় পৌঁছেছি যে
সরাকে ধরা জ্ঞান করি।

৬৬).

(গোপনে)

মন্দ কিংবা ভাল
যে ভাবেই হোক, তুমি আছ
শুধু এইটুকু জানলেই
স্বস্থি পাই মনে।
অবশ্য সে কথা রাখি
একান্ত গোপনে।

৬৭).

(অপলাপ)

জীবনের দুঃখের মূলটা
বুকের মধ্যে চেপে রেখে
আনন্দের রঙীন দিনের
এক অসহায় বিবর্ণ প্রলাপ :
দুঃখকে ভুলে থাকার চেষ্টা
দারুণ দুঃখজনক অপলাপ।

৬৮).

(জন্মদিনে)

জন্ম আর মৃত্যুর মাঝে ফাঁকটুকু,
সেটাই জীবন করছি যাপন,
থাকবো না যখন
তখনও থেকে যাবে এই মন,
তোমাদের আসে-পাশে,
শুধু যারা ভালবাসে।

৬৯).

(বুদ্ধি)

বুদ্ধি যেন
এক তেজি ঘোড়া,
যাকে ছোটালে
বিদ্যুৎ গতি
আর না ছোটালে
বাতে পঙ্গু অতি।

৭০).

(মানুষ)

আমরা অনেকে মানুষই নই
মানুষ হওয়ার ভান কর
ভিতরটা খুব নোংরা বলে
গঙ্গা জলে চান করি
জন-দরদী মানুষ সাজতে
ধন ও সম্পদ দান করি।

৭১).

(কথা)

যদি কথা ব্যথা দেয়
সেই কথা কথা নয়
সেই কথা আলপিন
বুক করে চিন চিন
সেই কথা আসে কাজে
যদি কথা বুকে বাজে।

৭২).

(কবি)

কবি হলে অনেক কথা
মিথ্যে বলা যায় না
সত্য কথা বলুক কবি
অনেকে তা চায় না
সত্য কথা বলার আদত
তবু কবির যায় না।

৭৩).

(তুমি নেই)

শূন্যতা ভরে না কিছুতেই
পৃথিবীতে কত প্রাণ
তুমি শুধু নেই,
পূর্ণতা আসে না মনেতেই
কত লোক বেঁচে আছে
শুধু তুমি নেই।

৭৪).

(বিশ্বকবিতা দিবসে)

বিশ্ব-কবিতা দিবসে,
আজ কবিতাকে নিয়ে
মাতামাতি হবে কিছুটা,
তারপরে সব ভুলে যাবে
কথা তার, এটাই দুঃখ,
জানি আমি কবিতার।

৭৫).

(ঈশ্বর)

ঈশ্বর আছে কি নেই
তা ভেবে আমার কি লাভ
বল তো এই ভবে?
কিন্তু আমি আছি কি নেই
তা ভেবে ঈশ্বর-পূজারীদের
লাভ হতে পারে তবে।

৭৬).

(ভালবাসা)

ভালবাসা ছাড়া আর
কিছু নাই এই ভবে
এইবেলা পুড়ে পুড়ে যদি
ছাই হতে চাও তবে?
যাকে যাকে ভাললাগে
ভালবেসে নাও সবে।

৭৭).

(বিদ্যা-মান)

বিদ্যা যথাযথ পরিপাক না হলে
যে দুষ্পাচ্য উদগীরণ হয়
তার নাম বিদ্যা নয়।
আর মানকে ঠিকমতো যারা
মানিয়ে নিতে পারে না
তা অভিমানে রূপান্তরিত হয়।

৭৮).

(প্রেম করা)

শরীরের বয়স বাড়ে
মনের বয়স বাড়ে না
ফুল ফুটে ঝরে যায়
তবুও গাছ মরে না,
এই কথা বোঝে যারা
প্রেম করা ছাড়ে না।

৭৯).

(স্মৃতি)

পুরনো স্মৃতিরা ফিরে ফিরে ডাকে আয়
আমিও সেখানে ফিরে যেতে যদি চাই,
আর কি সেখানে ফিরে যাওয়া বল যায়?
আমি মন খারাপের পসরা সাজিয়ে তাই।
জানি একদিন ধূসর সব স্মুতি হবে ম্লান
সেদিনই যে জীবন ফেলবে পাশার দান।

৮০).

(চিন্তা)

চিন্তা ভাষা ছাড়া সম্ভব নয়,
ভাষা ভাব ছাড়া সম্ভব নয়
ভাব অনুভব ছাড়া সম্ভব নয়,
অনুভব যার স্পষ্ট এবং তীক্ষ্ণ
তার চিন্তা ও প্রকাশ
তত বলিষ্ঠ ও স্বচ্ছ।

৮১).

(সাজাত্যবোধ)

সাজাত্যবোধ বিকর্ষণধর্মী
তাই নারী পুরুষকে ভালবাসে
সে নারী নয় বলেই
শুধু পুরুষ বলে নয়
আর পুরুষের বেলায়
ঠিক একই ব্যাপার ঘটে যায়।

৮২).

(রাধা ভাবে)

যখন হঠাৎ বাজল বাঁশি
ফুটলো রাধার মুখে হাসি
কলসী কাঁখে রাধা যমুনায়
কদমগাছে বসে সেথায়
কৃষ্ণ কেন বাসী বাজায়?
ভেবে রাধা কূল নাহি পায়।

৮৩).

(দূরবর্তী প্রেম)

মনে মনে বেসে ভাল
মৌনতা রয় না
মন থেকে বেসে ভাল
কাছে যেতে হয় না
দূরে দূরে থাকা ভাল
যৌনতা হয় না।

৮৪).

(জ্যোৎস্না)

আকাশ ডাকে আয় কাছে আয়
বাতাস বলে যাস না,
আমি ভাবি করব যে কি?
ভাবতে বসে হঠাৎ দেখি
আকাশ জুড়ে উঠেছে চাঁদ
হাসছে কেমন জ্যোৎস্না।

৮৫).

(খোঁজা)

বনলতা সেন কে
আজ আর
খোঁজে না কবিরা
শান্তি পেতে মনে
খোঁজে গৌরী সেনে
আর্থ-সুখের সন্ধানে।

৮৬).

(জুড়ে থাকা)

রোজ ঘুম ভেঙে
তোমার কথা ভেবে
দিন শুরু হয়
শেষও হয় তাই
তুমি আমার সবটা জুড়ে
থাক সর্বদাই।

৮৭).

(চিনচিনে ব্যথা)

খিটখিটে বুড়ি এক বুড়োটাকে বকে
তা এড়াতে বুড়ো তাই বসে এসে রকে,
তাকে ঘিরে আরও কিছু বুড়ো জড়ো হয়
চার পাঁচ জন মোটে তার বেশী নয়,
যৌবনে ফেরে তারা উদ্দাম দিন
বুকের ভিতরে ব্যথা করে চিনচিন।

৮৮).

(লেখার প্রেম)

প্রেম করতে গেলে সময় মেপে
প্রেম করা যায় না
লেখাও তেমনি একটা প্রেম
সে সময় দাবী করে
না দিতে পারলে লেখাও তাকে
যথার্থ মান দেয় না।

৮৯).

(রবীন্দ্রভক্ত)

আমরা আজ সবাই
রবীন্দ্র ভক্ত
তারপর সারাবছর
তাঁর কথা ভুলে
অতিযত্নে তাঁকে
মাথায় রাখি তুলে।

৯০).

(প্রাপ্তি)

কে কি পেল, পেল না
ভাবলে এলোমেলো লাগে না?
ভাবুন একবার
কেউ পাবে একাডেমী
কেউ পাবে পদ্মশ্রী
তাতে আপনার আমার কি?

৯১).

(কথা)

অনেক কথা
যাও যে বলে
কোন কথা না বলে,
আবার অনেক তোমার
না বলা কথা
হৃদয় শোনে আড়ালে।

৯২).

(সত্তা)

মানুষের দুটি সত্তা
শরীরের প্রকৃতি আর
মনের আকাশ,
দু’টি সত্তা না ছুঁলে তার
ভালবাসার হয় না যে
সম্পূর্ণ বিকাশ।

৯৩).

(প্রশ্রয়)

প্রেমের কথা আজ তারে বলা যায়
ঝিরি ঝিরি এই বর্ষায়
বুকের ভিতর উথলানো সব
ভালবাসার কথাগুলো ভিজবে জলে
তারপরে বীজ অঙ্কুরিত হতেই পারে
প্রকৃতির নির্ভেজাল প্রশ্রয়ের ফলে।

৯৪).

(ছলনায়)

একটা কবিতা আসি আসি করেও
ধরা দিচ্ছে না কিছুতেই , বিচ্ছু বড়।
আমিও টিকটিকির মতো ওৎ পেতে আছি
খপ করে ধরব বলে হায়!
কবিতাটা প্রজাপতির মতো উড়ছে,
অস্থির মনে নানা ছলনায়।

৯৫).

(কবিতারা আসে)

ভালবাসাহীন হলে
দিনে কিংবা রাতে
কবিতারা চলে আসে
মিতালী পাতাতে,
কিছু দুঃখ কিছু সুখ
নিয়ে আসে সাথে।

৯৬).

(মন)

মনটা যদি কেমন করে
একলা থেকে নিজের ঘরে,
তবে মনে লাগাও সুর
ছুটবে সে মন অনেক দূর,
তখন মনে পরাতে লাগাম
সেটা রেখো সঙ্গে আগাম।

৯৭).

(কবিতাকে রাখি)

তুমি কাছে নেই
মনে হলে সেই
কথাটাই বুকে বাজে,
কবিতাকে মনে রাখি
ব্যস্ত হয়ে থাকি
জীবনের গূঢ় কাজে।

৯৮).

(সৃষ্টিশীল লোকেরা)

সৃষ্টিশীল লোকেরা
একটু সৃষ্টিছাড়া হয়,
তাদের কাছে যেতে তাই
লাগে যে ভীষণ ভয়,
কি বলতে কি বলবে
মনে জাগে কত সংশয়।

৯৯).

(চেতনা)

তোমার আবেশে
কেটে যায় দিন
সন্ধ্যাও আসে ফিরে,
চেতনারা সব
বুঝি আমি আজ
তোমাকেই রাখে ঘিরে।

১০০).

(দিন)

দিন আসে দিন যায়
আমাদের থাকে দায়
দিনগুলি সাজাবার যত্নে
হৃদয়ের মণিহার রত্নে।
জীবনের কাছে দিন খুবই মূল্যবান
আমাদের কাছে যা প্রকৃতির বড় দান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress