ল্যাটিন সাহিত্যে নিকানোর পাররার কবিতা -1
এক).
‘নিকানোর পাররা’ কবি হিসাবে আমাদের অনেকের কাছেই তেমন পরিচিত নাম নয়। অনেকেই তার কবিতা পড়েননি। যারা পড়েননি তাদের কথা ভেবেই, তাঁর প্রসঙ্গে এই আলোচনার অবতারণা ।
পাবলো নেরুদার পর চিলির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আশ্চর্য শক্তিশালী কবি নিকানোর পাররা। প্রচলিত লোকগীতির ধারাকেই কথ্য ভাষার সাথে মিশিয়ে শ্লেষাত্মক দুর্লভ কাব্য রচনা করেছেন। তাঁর “কবিতা ও বিরুদ্ধ কবিতা” একটি উল্লেখ্য কাব্যসংকলন।
নিকানোর পাররা লাতিন আমেরিকার চিলির কবি।
১৯১৪ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর নিকানোর পাররার জন্ম দক্ষিণ চিলির সান ফাবিয়ন শহরে, এক দরিদ্র পরিবারে ।
তাঁর বাবা ছিলে একজন স্কুল শিক্ষক। তাঁর বোন ভিওলেতা পাররা ও ভাইপো আনহেল পাররা লাতিন আমেরিকার সেরা সঙ্গীতকারদের মধ্যে অন্যতম বলে গণ্য হন। মার্কিন মদদে সালভাদর আইয়েন্দেকে হত্যা করে সামরিক শাসক হেনেরাল পিনোশেৎ চিলেতে সামরিক একনায়কতন্ত্র কায়েম করার পর আনহেল পাররা ফ্রান্সে পালিয়ে যান, তখন ভিক্তর হারাকে সানতিয়াগোর ফুটবল মাঠে খুন করা হয়। প্রথমে তার গিটার বাজানোর হাত কেটে ফেলে, পরে গুলিতে ঝাঁঝরা করে ফেলে। ভিয়োলেতা পাররা আত্মহত্যা করেছিলেন। তখন কবি শিল্পী চলচ্চিত্রকাররাই সকলেই ছিলেন পিনোশেতের প্রত্যক্ষ সমালোচক। ‘চিলিতে গোপনে’ বলে একটা বই লিখেছিলেন গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস। সেখানে চিলির নির্বাসিত বিপ্লবী চলচ্চিত্র পরিচালক মিগুয়েল লিত্তিনসহ চিলির বিপ্লবী সংস্কৃতিকর্মীদের দুঃসাহসী অভিযানগুলো বর্ণনা করা হয়েছে।
প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার কারণে অঙ্কশাস্ত্রবিদ এবং পদার্থবিজ্ঞানী হিসাবে পরিচিতি পেলেও তিনি চিলির এবং লাতিন আমেরিকার একজন প্রধান কবি হিসাবেই স্বীকৃত। লাতিন আমেরিকায় ‘অ্যান্টিপোয়েম’ এবং ‘এমারজেন্সি পোয়েম’-এর ধারণাকে ও চর্চাকে কিছুটা সময়ের জন্য হলেও জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। এ’ছাড়া সনাতন বুর্জোয়া নন্দন-তত্ত্বের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েই তাঁর কবিতাকে তিনি তীব্র গদ্যধর্মী করে তোলায় প্রয়াসী হয়েছিলেন।
সারাজীবন হাঁপানিতে ভোগার পর, ২০১৮ সালের ২৩ই জানুয়ারী মৃত্যুবরণ করেন এই অমর কবি ১০৪ বছর বয়সে। শুধু চিলেতে নয় লাতিন আমেরিকাতেও নয়, গোটা দুনিয়ার সাহিত্য জগতে নতুন ঢেউ নিয়ে আসেন তিনি।
নিকানোর পাররা স্প্যানিশ সাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী কবি। কবিতার প্রথাগত শৈলী ও বিন্যাস ভেঙে রচনা করেন anti-poesia বা প্রতি-কবিতা। নোবেল পুরস্কারের জন্যে মনোনীত হন। ২০১১ সালে হিস্পানিক সাহিত্যের সর্বোচ্চ মর্যাদা ‘সের্ভান্তেস পুরস্কার’ লাভ করেন।
নিকানোর পাররার কবিতা পড়ে প্রতিক্রিয়া না দেখানো প্রায় অসম্ভব। এখানেই হয়ত তাঁর কবিতার শক্তিমত্তা। কবিতা পড়তে পড়তে হয়ত মনে হতে পারে এ আদৌ কবিতাই নয়। এতদিন ধরে গড়ে ওঠা কবিতার ধারণাকে ভেঙে ফেলার জন্যই বুঝি এই কবিতা। নিকানোর পাররার কবিতাগুলো যদি কবিতা হয়– প্রশ্ন জাগা অস্বাভাবিক নয় যে তাহলে আগে আমরা কবিতা নামে যা পড়েছি তা কী? তিনি তাঁর এই কবিতাসমূহের নাম দিয়েছিলেন ‘Anti-Poetry’ (‘প্রতি-কবিতা’)। নিকানোর পাররার কবিতার বই প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে সত্যিকার অর্থে বিশ্বকবিতায় সূচিত হয়েছিল নতুন এক কবিতার যাত্রা। প্রতি-কবিতা। বলা হয়ে থাকে যে কবিতা এখন কোথায় সেটা জানতে গেলে প্রতি-কবিতা পড়তে হবে। এটি কবিতার ইতিহাসের ধারাবাহিকতা। তিনি নিজেই তার একটা কবিতায় বলেন –
” পৃথিবীতে কোনোকিছুই আপনাআপনি আলপটকা ঘটনা
দাদইজম
কিউবিজম
সুররিয়ালিজম
অথবা আত্মার আত্মপরাজয়
যা হয়/তা আগে যা ঘটেছে তারই যুক্তিসিদ্ধ ফলাফল।
[হলোকস্ট; শ্রেষ্ট কবিতা ও প্রতিকবিতা, অনুবাদ: মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়]
সবক্ষেত্রেই এই ধারাবাহিকতা, রাজনীতি সমাজনীতি সাহিত্য চলচ্চিত্র কবিতা সবখানেই। কার্ল সাগান বলেছিলেন, ‘মানুষ দুনিয়াতে নাই বা মানুষের অভিজ্ঞতায় নাই সেরকম কিছু কল্পনা করতে পারে না।’ আবার শিল্পে সাহিত্যে আগে ঘটে নাই বা ভূঁইফোড় কিছু হতে পারে না। যা হচ্ছে তা আগেরই ধারাবাহিকতা। কিন্তু অনেক সময় পুরাতন থেকে নতুন বেরিয়ে আসার সময় একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। নতুনকে আমরা মেনে নিতে পারি না সহজে। বাদ প্রতিবাদ হয়। যারা বুদ্ধিমান, ইতিহাসের যথেষ্ট পরিমাণ সাক্ষীসাবুদ যাদের কাছে মজুদ তাঁরা শুরুতেই বুঝে যায় এ নতুন মোড়ক।
নিকানোর পাররার এই প্রতিকবিতা যখন প্রথম প্রকাশিত হয় বইটা হাতে নিয়ে অনেকেই নাক সিঁটকেছিল। চিলির আরেক কবি নেরুদার সাথে একলাইনে যার নাম উচ্চারণ করা হয় সেই পাবলো দে রোকা এই বইটি হাতে নিয়ে লেখেন ‘এই সব স্থূল, বদখৎ, গোঁয়ার, অলস ওড়গুলো, মৈথুনের পূর্বকল্পনা আর সচেতনভাবেই যাদের জীববিদ্যা আর উদ্ভিদবিদ্যা থেকে টেনে আনা হয়েছে। প্রতিকবিতাগুলো এই বিষম করুণাযোগ্য আর বমিজাগানো ভাঁড়ামোরই দ্বিতীয় সংস্করণ।’
গীর্জের অধ্যক্ষ ফাদার সালভাতিয়েররা বলেছিলেন, ‘নিকানোর পাররার ‘কবিতা ও প্রতিকবিতা’ এতই অনৈতিক ও নোংরা যে ময়লা ফেলার ডাস্টবিনেও এটা ফেলা যাবে না কারণ গারবেজ ক্যান অবৈধ সন্তানকে জায়গা দিলেও এত অনৈতিক নয়।’
অন্যদিকে পাবলো নেরুদা বলেছিলেন, ‘নিকানর পাররা আমাদের ভাষার মহত্তম নামগুলির অন্যতম।’
‘কবিতা ও প্রতিকবিতা’ বের হবার পর হুলুস্থল পড়ে গিয়েছিল। একদিকে যেমন তুমুল আক্রমণ অন্যদিকে বিপুল সমর্থন। নিকানোর পাররার চাকরি নিয়ে টানাটানি শুরু হয়েছিল। কিন্তু তিনি তো বিশ্বকবিতার রোলারকোস্টার।
” আধ শতাব্দী ধরে
কবিতা ছিলো বেহেস্ত
গরুগম্ভীর সব বেকুবদের জন্যে
যতক্ষণ-না আমি এসে হাজির হলাম
আর তৈরি করলাম আমার রোলারকোস্টার।”
” ওঠো,চলো, যদি তোমার ইচ্ছে হয়।
এতো আর আমার দোষ নয় যে তুমি হুমড়ি খেয়ে পড়েছো
আর তোমার নাকমুখ দিয়ে দরদর ক’রে রক্ত বেরুচ্ছে।
[রোলারকোস্টার; শ্রেষ্ট কবিতা ও প্রতিকবিতা]”
নিকানোর পাররার প্রায় সব কবিতাই খাপখোলা তলোয়ারের মত। কবিতা, ভাষা, সাহিত্য, ধর্ম, দর্শন মনোবিজ্ঞান, রাজনীতি, সবকিছুকেই তিনি সেই তলোয়ার দিয়ে আঘাত করেন, খোঁচান। কিন্তু সেই আঘাত যেন মধুময়, রসসিক্ত। এ যেন বার্ণাড শ’র সেই উক্তির মতই, ‘চূড়ান্ত অপমান করার সময়ও চূড়ান্ত রসিক হতে হবে।’ নিকানোর পাররার এই কবিতাগুলো আঘাত আর রসবোধ পরস্পরের জায়গা তৈরি করে। তিনি অবলীলায় শ্ল্যাং শব্দও ব্যবহার করেন অসায়াসে যা কিন্তু মোটেও যেন শ্ল্যাং নয়।
” কোনো প্রার্থনা চলবে না, হাঁচিও না।
থুতু ফেলা নয়, বাহবা দেয়া নয়, হাঁটু গেড়ে বসা নয়,
পুজো না, চীৎকার না, ডুকরানি না,
কেশে কেশে কফ তোলা না।
এ তল্লাটে ঘুমোবার অনুমতি নেই।
কোনো টিকে দেয়া না, কথাবার্তা না, দল থেকে তাড়িয়ে দেয়া না।
চো-চো দৌড় না, পাকড়ে ফেলা না।
ছোটা একেবারেই মানা
ধুমপান নিষেধ। সঙ্গম বারণ।
[হুঁশিয়ারি; শ্রেষ্ট কবিতা ও প্রতিকবিতা]”
তার কবিতাকে আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে উদ্ভট খাপছাড়া সেই মানুষের মত যে লম্বা লম্বা পা ফেলে হাটে। মেদহীন ঝরঝরে আপাত রসিক কবিতাগুলো একেবারেই অব্যর্থ তীর। প্রচুর জাম্পকাট ব্যবহার করেন তিনি কবিতায়।
গত শতকে গল্পে কবিতায় বেশ ক’জন নিরীক্ষধর্মী লেখক জন্ম নিয়েছেন, নিকানোর পাররা, মিরোস্লাভ হোলুব, তাদেউশ রোজেভিচ, কার্লোস ড্রুমন্ড ডি আনরান্ডি, অরহান ভেলি কানিক, রোজা আইসল্যান্ডার, ফের্নান্দ পেসোয়া, বোর্হেস, ইতালো কালভিনো, পিটার বিকসেল, মিলান কুন্দেরা প্রমুখ। আরও অনেকেই আছেন। এরা বিভিন্ন দেশে বা ভিন্ন ভিন্ন শহরে বসে কবিতা গল্প লিখেছেন কিন্তু তাদের সম-মানসিক সাহিত্যচর্চা বা চিন্তার কারণে বেশ সিমিলারিটি চোখে পড়ে। যেমন জার্মান ভাষার গল্পকার পিটার বিকসেলের একটা গল্প পড়েছিলাম তার ‘শিশুগল্পিকা’ বইয়ে। গল্পে একজন নায়ক জাগতিক সব ট্রাডিশনের উপর বিরক্ত হয়ে সবকিছুর নাম বদলে দিতে থাকে। এটার নাম ওটা ওটার নাম এটা এইরকম করতে করতে সে নতুন এক ভাষা তৈরি করে ফেলে। একসময় সেই ভাষা আর কেউ বোঝে না। সে ভাবে আজ সে সফল। সে সম্পূর্ণ নতুন এক ভাষা তৈরি করেছে যে ভাষা সে ছাড়া আর কেউ বোঝে না। নিকানোর পাররার একটা কবিতা আছে ‘নামবদল’ নামে যেখানে তিনিও সবকিছুর নামবদল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন –
” কোন কারণে সূর্যকে
চিরকাল সূর্য বলে ডাকা হয়?
আমি বলি তাকে ডাকা হোক
চল্লিশ-লিগ জুতোর বিল্লি বলে।
আমার জুতোগুলোকে কফিনের মতো দেখাচ্ছে বুঝি?
জেনে রাখুন আজ থেকে
জুতোকে বলা হবে কফিন।
[নামবদল: শ্রেষ্ট কবিতা ও প্রতিকবিতা।]”
আপাত নিরীহ এইসব কবিতা আসলে নিরীহ নয় তবে তার আক্রমণের স্টাইল ভিন্ন। সাম্রাজ্যবাদের সমালোচনাহীন হয় না লাতিন আমেরিকার কোনো সচেতন শিল্প। কারণ সেখানে শতকজুড়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ গেড়ে বসেছে। লাতিন আমেরিকার প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রে। হয় সরাসরি না হয় তাদের তাবেদার সরকার ক্ষমতায় বসিয়ে। চিলিতে তো আরও ভয়াবহ অবস্থা হয়েছিল।
তাই তিনি লিখেন – ” ইউ এস এ/ যেখানে স্বাধীনতা একটা মূর্তি/ ফিদেল যদি এ বিষয়ে নিরপেক্ষ হত/ সে আমাকে বিশ্বাস করতো/ ঠিক যেমন আমি তাকে বিশ্বাস করি। [হাতের কাজ]”
দুর্দান্ত সাহসী এই কবির মানুষের ব্যাক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাস ছিল প্রখর । ১৯৭৩ সালে চিলির গণমানুষের মহান নেতা সালভাদর আলেন্দেকে এক রক্তক্ষয়ী অভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে উৎখাত করে স্বৈরাচারী পিনোশে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ইঙ্গিতে চিলির রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নেয়। চিলির গনতন্ত্রমনা বুদ্ধিজীবিরা তারপর স্বৈরাচারী পিনোশের রোষানলে পড়ে-তাদের ওপর নেমে আসে কঠিন খাঁড়া। কিন্তু, পাররা ছিলেন নির্ভীক-তিনি সান্তিয়াগোর প্রধান গীর্জার প্রবেশমুখে টুপি পেতে বসে যান। কেন?
কারণ তিনি কবিতা পড়ে নির্যাতিত বুদ্ধিজীবীদের জন্য অর্থ সাহায্য করবেন। এমনই মানুষ ছিলেন পাররা।
নিকানোর পাররা ব্যক্তিজীবনে একজন বিজ্ঞানী। তিনি সুদীর্ঘকাল গণিত আর পদার্থবিদ্যার শিক্ষক ছিলেন। তিনি মার্কিন দেশের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান ও অক্সফোর্ডে কসমোলজির উপরে উচ্চতর ডিগ্রি নেন। সানতিয়াগোর চিলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান পড়িয়েছেন, সেখানে তাকে এমারিটাস প্রফেসর নিযুক্ত করা হয়।
গনিতশাস্ত্র ,পদার্থবিদ্যা, কসমোলজি,তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা প্রভৃতি বিষয়ে তিনি পন্ডিতব্যক্তি ছিলেন। মার্কিন বিরোধী মনোভাব লালন পালন করলেও তিনি পদার্থবিদ্যায় পড়াশুনা করেছিলেন মার্কিন দেশে, ব্রাউন ইউনিভার্সিটিতে। প্রতিকবিতা সম্পর্কে বলতে গেলে বই থেকেই একটি লাইন কপি পেস্ট করা যায়,- “প্রভাব ফেলতে হলে কোনকিছুকে একলক্ষ শ্লোকের মহাভারত হতে হয় না”।
পাররা কিংবা চেখকবি মিরোস্লাভ হোলুব – এনারা খুব একটা নন্দনতত্ত্বের ধার ধারেন না। কবিতা যেন ঢাল তলোয়ার, রূপের চর্চার চেয়ে শান দেওয়াটাই মূখ্য বিষয়।
শ্লেষ,ব্যঙ্গ, চাঁছাছোলা ভাষায় শৈল্পিক গালিগালাজও বলতে পারেন। পড়তে অবশ্য বেশ লাগে।
কিন্তু আমরা দূর দেশে থেকেও কেন তাঁকে পড়ব?
কবিতা যেখানে প্রতিনিয়ত নতুন দুনিয়ার ভাষা (আমেরিকা, ওশিয়ানিয়া মহাদেশ) ও পুরনো দুনিয়ার ভাষার মধ্যে বিভাজিত হয়ে যাচ্ছে বারবার, আমরা প্রাচীন দুনিয়ার কাব্যদর্শনে এতটাই অভ্যস্ত যে বেশিরভাগ সময় নতুন দুনিয়ার সঙ্গে নিজেদের মিলিয়ে নিতে পারি না। মার্কিন সমসাময়িক কবিতার সঙ্গে একেবারেই সংযুক্ত হতে পারি না। অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কে কোনও আগ্রহই দেখাই না।
এখানেই মনে আসে নেরুদার কথা, যিনি ইস্পানো আমেরিকার কাব্যভাষার পিতা। তাঁর হুইটম্যানীয় উচ্চতায় তিনি আমাদের কাছের লোক হয়ে গিয়েছিলেন সহজে। কিন্তু নিকানোর? তাঁর কবিতা তো চিলির, একান্ত, বড়জোর দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের। যে মহাদেশ তার নতুন ভাষা, পুরনো দুনিয়া থেকে আলাদা হবার ভাষা খুঁজে পেয়েছে বিশ শতকে। এবং নিকানোর পাররা সেই ভাষার এক উজ্জ্বল স্থপতি।
নিকানোর পাররাকে স্পেনীয় ভাষার সর্বোচ্চ সম্মান ‘সেরবান্তেস’ পুরস্কার দেবার সময় কমিটি জানায় তাঁকে পুরস্কৃত করা হল, ‘মৌলিক কবিতা লেখা জন্য।’ এখানেই আমাদের প্রশ্ন জাগে মৌলিক কবিতা কী? বিশ শতকেও মৌলিকতা আসে কোথা থেকে? যেখানে নিকানোর নিজেই স্বীকার করেছেন তাঁর শিকড় সপ্তদশ শতকের স্পেনের কবি ফ্রান্সিস্কো দে কেবেদো?
আমাদের ঘুরে দেখার প্রয়োজন সেই ইতিহাস, কীভাবে এক মৌলিক কবি, তাঁর পুরনো দুনিয়ার শিকড় ও ঐতিহ্য সমেত নতুন দুনিয়ার কাব্যভাষা ও দর্শন নির্মাণ করলেন এবং তা উভয় দুনিয়ার কাব্যপাঠকের কাছে পৌঁছে গেল।
কেবেদো তাঁর এক বিখ্যাত কবিতায় লিখছেন:
” কাব্যদেবী শিষ দেয় দেয় না প্রেরণা
সে চেনে আসল প্রতারক
নিজের পকেটে হাত রাখা উদ্দীপক
তাঁর বীণার চাইতে হবে মহৎ এষণা
সে তো অ্যাপোলোর নয়, তারচেয়ে বড় কিছু অনৃত হয় না”।
এইখানেই ঢুকে পড়েন নিকানোর। তাঁর ঘোষিত রোলার কোস্টার কবিতা নিয়ে, এক ছদ্ম মধ্যবিত্তশ্রেণীর পকেটে হাত দিয়ে চলার, পয়সা গুণে চলার পরিমিত সকাল ও বিকেল আসলে বিরাট ট্রেন যা এক স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে স্থির। নিকানোর লেখেন এক ভালো চোরের ভাষণ।
“আমার কথা মনে করো যখন তুমি তোমার রাজত্বে থাকবে
আমাকে সেনেটের প্রেসিডেন্ট মনোনীত করো
আমাকে বাজেটের ডিরেক্টার করে দিও
আমাকে প্রজাতন্ত্রের নিয়ন্ত্রা করে দিও”
নিকানোর লেখেন –
” কুড়ি মিলিয়ন লোক হাওয়া হয়ে যাবার পরেও
স্তালিনকে ঈশ্বর বানানোর বিজ্ঞাপনে
কত খরচা হয়েছিল বলে আপনার মনে হয়
যে টাকা গোনা যায় ও শব্দ করে
কারণ মনুমেন্ট বানাতে খরচ হয়।
আরও লেখেন –
” পোপ ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না।
কী? ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না!
পোপ কোনও কিছুকেই বিশ্বাস করেন না।”
আবারও লেখেন –
” আমি স্পষ্ট বলে দি আমাদের আসলটা কী
বা আমরা তো আগে থেকেই জানি সব
বা আমরা আসলে কিছুই জানি না।
একটাই জিনিস আমাদের জন্য পড়ে থাকে
ঠিক করে কথা বলতে শেখা।”
একই কবিতার ৪ নং অংশে লিখছেন একটিই লাইন:
‘আমিই সেই লোক যে সমস্ত রাজরথকে সেলাম করি।’
লেখেন কিছু টেলিগ্রাম:
‘টুরিস্ট হিসেবে আমি একেবারেই ফেল মেরে গেছি
বিজয় তোরণ নিয়ে ভাবতে বসে
আমার গায়ে কাঁটা দেয়।
আমি আসছি মিশরের পিরামিড থেকে।
সত্যি বলছি সত্যি করে বলছি
সমস্ত ক্যাথেড্রাল আমার বিচিতে সুড়সুড়ি দেয়।’
এই সমস্ত উদাহরণ থেকে স্পষ্ট হয় নিকানোর পাররা এমন এমন এক অঙ্গীকারের নাম যিনি আমাদের সামনে আমাদের নগ্ন করে দেখান। আমাদের গোপনতম চাহিদাগুলো আমাদের সামনে মেলে ধরেন আমাদেরই রাস্তার ভাষায়, আমাদের খিস্তি-খেউড়ে।
নিকানোর পাররার একমাত্র সম্পাদক নিয়াল বিনস বলেছিলেন নিকানোর পাররার বিশ্বজনিনতা নিয়ে। তিনি বলেছিলেন নিকানোর-এর মূল প্রবণতা অন্তরতম ঈশ্বরহীনতাকে ফুটিয়ে তোলা। এ’ছাড়াও একটি ঐতিহাসিক ঘটনা ও সমাপতন নিকানোর এর “অবান্তরতা”- কে স্বীকৃতি দেয়। তা হল চিলেতে পিনোচেতের শাসন। যখন প্রায় সমস্ত বুদ্ধিজীবি দেশ ছেড়েছেন, নিকানোর থেকে গিয়েছিলেন। অদ্ভুতভাবে তাঁকে সাধারণ ঝামেলা ছাড়া তেমন কিছু কষ্ট পেতে হয়নি। যেমনটা বা ঘটেছিল সহস্র সাধারণ চিলেনোর জীবনে, যেমনটা বা ঘটে থাকে আমাদের দেশেও বা প্রতিটা দেশে। আমরা চুপ করে দেখে যাই, শুনে যাই যতক্ষণ পর্যন্ত না নিজেদের বাড়িতে ঢুকে পড়ে হিংসা। নিকানোরের ক্ষেত্রে কিন্তু হিংসা তাঁর বাড়িতে ঢুকেছিল। তাঁর বোন বিওলেতা পাররা আত্মহত্যা করেন রাষ্ট্রযন্ত্রের চাপে। যেমনটা ঘটেছিল প্রায় প্রতিটি ঘরে, চিলিতে। প্রায় প্রতিটা পরিবার থেকে কেউ না কেউ “হারিয়ে গিয়েছেন”, যাঁদের দেহাবশেষ খুঁজতে দেখা যায় শত শত মানুষকে, আতাকামা মরুভূমিতে। নিকানোর কীভাবে থেকে গিয়েছিলেন সেই দেশে। কেনই বা তাঁকে মেরে ফেলেনি রাষ্ট্রযন্ত্র? যেমনটা বা দেখা যায় কুবাতে, ফিদেল কাস্ত্রো সবাইকে দেশ থেকে তাড়ালেও বুর্জোয়া কুবার প্রতীক দুলসে মারিয়া লোইনাস-কে ছাড় দেন।
এর উত্তর আমরা পাই ২০১২ সালে। যখন নিকানোর-এর উপর দীর্ঘ এগারো বছর ধরে নির্মিত তথ্যচিত্র “প্রতিকবির প্রতিকৃতি” (পরিচালনা: বিক্তোর খিমেনেস আতকিন) দেখি। যেখানে নিকানোর বলছেন “এক অর্থে তিনি এক ত্রাতা, কারণ পিনোচেত না এলে আমদের অবস্থা কুবার মতো হত। কিন্তু একই সঙ্গে আমরা ভুলে যেতে পারি না তাঁর হত্যাকাণ্ডের কথা”।
কেন চিলেতে সালবাদোর আইয়েন্দে সফল হননি, কেন পিনোচেত ক্ষমতায় এসেছিলেন তার পিছনে আছে এক বুর্জোয়াতন্ত্রের ইতিহাস। চিলের মানুষ ভয় পেয়েছিলেন যে তাঁদের দেশ কুবা হতে চলেছে। নিকানোর পাররা এই বুর্জোয়তন্ত্রেরই কবি, যিনি ভিয়েতনামের সময়ে নিকসনের স্ত্রীর সঙ্গে চা খেয়েছিলেন। নিয়াল বিনস এইসব ঘটনাক্রমকে বলেন সত্যের কাছে যাওয়ার চাবিকাঠি। হ্যাঁ। আমরা প্রতিনিয়ত যে অবান্তরতার মধ্যে ঢুকে পড়ি, ক্ষমতার সামনে এলে আমাদের বুক শুকিয়ে যায়, আমরা দল বদলে ফেলি চকিতে, এবং পরমুহূর্তেই নিজেদের ঘনিষ্ঠ মহলে ছড়া কাটি, নিকানোর পাররা সেই আমাদের প্রতিনিধি। তফাৎ শুধু একটাই তিনি কবিতায় ধরেছেন সেই দ্বন্দ্ব। শুধু বন্ধুদের মধ্যে নয়, সর্বজনে ছড়িয়ে দিয়েছেন সেই অবান্তর দুনিয়ার ভাষ্য। আর এখানেই তিনি হয়ে উঠেছেন আমাদের কবি। আমাদের সকলের কবি।
পাররা পরবর্তী চিলের গুরুত্বপূর্ণতম কবি
রাউল সুরিতার মতে উঠে এসেছিল ভাষার উপরে নিকানোর পাররার অত্যাচারের কথা, বিপ্লবের কথা। নিকানোর তুলে এনেছিলেন প্রাত্যহিক মানুষের মুখের কথা। তাঁর কবিতা ছিল সেই বিপ্লবের মুখ যা চিলির মানুষ প্রতিদিন তাঁদের বেঁচে থাকা দিয়ে পিনোচেত-এর অত্যাচারের সময়ের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন।
আর এখানেই আসে ভাষার প্রসঙ্গ। যেভাবে ফ্রান্সিসকো দে কেবেদো স্পেনীয় ভাষার কবিতার লিরিকটানকে অগ্রাহ্য করে ভাষার শরীরে চালান করে দিয়েছিলেন মাদ্রিদের রাস্তার কথা সেভাবেই নিকানোর পাররা আমাদের সুপ্ত অভিপ্রায়কে তুলে ধরে ফেলেছেন আমাদেরই ভাষায়, যে ভাষা কোনও কবিই লিখতে সাহস পাবেন না। আর এখানেই তিনি হয়ে ওঠেন মৌলিক। আমাদের দ্বন্দ্ব, আমাদের ভয় ও আচরণ তিনি লিখে গেছেন এক দক্ষ বিজ্ঞানীর মতো। কোনও কথা বলতেই ভয় পাননি। ব্যবহার করেছেন প্রাচীন ও নতুন শব্দ। ঢুকে গেছেন আমাদের শিরায়, যে শিরা বহন করেন ধনতান্ত্রিক সমাজের প্রতিটা মানুষ। তিনি হয়ে উঠেছেন সেই সময়ের আয়না যখন গোটা চিলি ভেবেছিল পিনোচেত দেশটাকে শুধরে দেবেন। হয়ে উঠেছেন সেই সময়ের বিবেক যখন মানুষ তার ভুল বুঝে সংগ্রাম করেছে। এবং এই সবকিছু তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন এক কবিতার ভাষায় যা অশ্রুতপূর্ব আর তাই তাঁর কোনও উত্তরসূরি নেই। শুধু আছে ভাষায় তার ছাপ যা সমসাময়িক চিলির কবিকে আর তাঁকে কাব্যিক ভাষা ও বিষয় খুঁজতে দেয় না। সে সবসময় কিছু নিয়েই কবিতা লিখতে পারে
” আমি প্রস্তাব করছি সভা মুলতবি থাক সেনিওর এবং সেনিওরাগণ আমার শুধু একটাই প্রশ্ন: আমরা কি সুর্যের সন্তান না কি মাটি পৃথিবীর? কেননা যদি আমরা শুধু মাটিই হই আমি কোন কারণ দেখি না এই ছবিটার শুটিং চালিয়ে যাবার! আমি প্রস্তাব করছি সভা মুলতবি থাক।
কোন কারণে ফ্রয়েড সাহেবের উপর বেজায় ক্ষাপ্পা ছিলেন তিনি।
তিনি জানান, জিগমুন্ট ফ্রয়েড মুখভর্তি পালক নিয়ে পাখি মনোচিকিৎসকদের আর সহ্য করবে কে? তারা সবকিছুই জড়িয়ে নেয় যৌনতার সঙ্গে।
সবচেয়ে তাজ্জব সব দাবী পাওয়া যায় ফ্রয়েডের রচনায়।
এই সেনিওরের মতে সমস্ত উত্তল(convex) জিনিশই – ঝরণা-কলম, পিস্তল, মুগুর, পেনসিল, গড়গড়া, ডাম্বেল- পুংলিঙ্গের প্রতীক; আর সমস্ত অবতল( concave) স্ত্রী-যোনির প্রতীক।
কিন্তু মনোচিকিৎসা এগিয়ে যায় আরও অনেকদূর শুধু যে উত্তল আর অবতল তাই নয় প্রায় সব জ্যামিতিক বস্তই প্রতীক হয়ে ওঠে যৌন কারখানা যেমন মিশরের পিরামিড যার নজির কিন্তু তাই সব নয় আমাদের নায়ক কিন্তু আরো এগোন: যখন আমরা কোন হাতের কাজ দেখি যখন দেখি ধরা যাক বাতি কিংবা টেবিল যা মনোচিকিৎসক দ্যাখেন পুরুষাঙ্গ আর যোনি …………………………………………………… ……………………………………………………. আমরা দেখতে পাই এক মোটরগাড়ি মোটরগাড়ি পুরুষাঙ্গের প্রতীক আমরা দেখতে পাই একটা বাড়ি উঠছে বাড়ি আসলে পুরুষাঙ্গের প্রতীক আমাদের নেমতন্ন করেছে সাইকেল করে বেড়াতে যেতে বাইসাইকেল পুরুষাঙ্গের প্রতীক ……………………………………………………. ……………………………………………………. আমরা খাই রুটি মাখন মাখন পুরুষাঙ্গের প্রতীক এক বাগানে আমরা খানিক জিরিয়ে নিই প্রজাপতি পুরুষাঙ্গের প্রতীক টেলিস্কোপ পুরুষাঙ্গের প্রতীক বাচ্চা যে বোতল থেকে দুধ খায় তা ও পুরুষাঙ্গের প্রতীক ……………………………………………………. ……………………………………………………. কাজেই দেখছেন তো আমি চটে যাই নি মোটেই আপনাকে আমি চাঁদটাই দিয়ে দিচ্ছি সত্যি সত্যি ভাববেন না আপনাকে নিয়ে আমি কোন ইয়ার্কি করছি: অগভীর ভালোবাসার সঙ্গে সেটা আপনাকে উপহার দিচ্ছি আমি আমি কোন ঠ্যাং ধরে টানবার চেষ্টা করছি না মোটেই যান নিজেই গিয়ে সেটাকে আপনি তুলে আনতে পারেন আপনার খুড়ো যিনি আপনাকে ভালোবাসেন আপনার রঙ বেরঙের প্রজাপতি আপনাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে আসছেন পবিত্র বেদী থেকে
কতবার একথা বলবো আপনারা নিয়ে আসুন কিছু কীটনাশক ছাদ থেকে সাফ করে দিন মাকড়শার জাল জানলাগুলো ধুয়ে দিন মাছির গুয়ে ভরা সব কাচ ধুলো ঝাড়ুন আসবাবগুলো থেকে আর সবচেয়ে যেটা বেশি জরুরী এই পায়রা গুলোকে তাড়িয়ে দিন তো ওগুলো সবসময়েই আমার গাড়ির উপর হাগছে কোথায় রাখলেন বলুনতো দেশলাইগুলো( কবিতাটিতে কোন বিরতি চিহ্ন নেই)।
আটটি ছোট সাইজের একসাথে করে নাম দেয়া হয়েছে তারবার্তাগুলি। তারবার্তাগুলি ১. ঢের হয়েছে ক্যাবলামি এখানে ফরাশগুলোর তলায় কিছুই ঝাঁট দেয়া হয় নি। ঈশ্বর জগৎটা সৃষ্টি করেছেন সপ্তাহজুড়ে আমি সেটা একমুহূর্তে ধ্বংস করে দিই।
আমি বামপন্হীও নই দক্ষিণপন্হীও নই আমি শুধু সব ছাঁচ ভেঙে ফেলি। ……………………………..আমি এসেছি মিশরের পিরামিডগুলো থেকে সত্যি সত্যি ক্যাথিড্রালগুলো আসলে আমার বিচি ধরে টান দেয়। আরও সতেরোটি একসাথে করে : চেয়ারে বসে ঘুম লাগায় এমন এক কবির কাছ থেকে পনেরো নম্বর চিঠিটা শুনে দেখুন।
আপাদমস্তক এ্যান্টিপোয়েটিক হয়ে যাবেন!
১৫ নম্বর চিঠি) .
” শেষবারের মতো আমি বলে যাচ্ছি কথাটা শূককীটেরা হলো দেবতা প্রজাপতিরা সব অনিবার ছোটা ফুল খাওয়া, খঁওয়া দাঁত সহজেই ভেঙে যায় আমি হচ্ছি নির্বাক চলচ্চিত্রের যুগের লোক। যৌনতা এক সাহিত্যকর্ম। হুঁশিয়ারি কোনো প্রার্থনা চলবে না , হাঁচিও না। থুতু ফেলা নয়,বাহবা দেয়া নয়, হাঁটু গেড়ে বসা নয় পূজো না, চীৎকার না, ডুকরানি না, কেশে কেশে কফ তোলা না। এ তল্লাটে ঘুমোবার অনুমতি নেই।
কোনো টিকে দেয়া না , কথাবার্তা না, দল থেকে তাড়িয়ে দেয়া না। চোঁ চোঁ দৌড় না,পাকড়ে ফেলা না। ছোটা একেবারেই নিষেধ। ধূমপান নিষেধ । সঙ্গম বারণ।”
“আধুনিক মানুষ একটা ফাঁদে পড়ে গিয়েছি মাত্র সাতটা রাস্তাই খোলা আছে তার কাছে আর তাদের কোনো টাই রোম অব্দি নিয়ে যায় না। এইসব পড়তে পড়তে প্রায় একটা কথা মাথায় ঘুরপাক খায়– কাকে বলে কবিতা যদি তা না-বাঁচায় দেশ কিংবা মানুষ?” – চেশোয়াভ মিউশ।
আইয়েন্দের হত্যার পর তাঁকে বেশ কিছুদিন নির্বাসনে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছিল। ২৩ই জানুয়ারী মৃত্যুবরণ করেন সারাজীবন হাঁপানিতে ভোগা–শুধু চিলিতে নয় লাতিন আমেরিকাতেও নয় গোটা দুনিয়ার সাহিত্য জগতে নতুন ঢেউ নিয়ে আসা–এই অমর কবি। ভবিষ্যত কবিতার মুভমেন্টগুলোরও বাঁকে বাঁকে দেখা যাবে তাকে।
নোবেল প্রাপ্তির তালিকায় চারবার শর্ট লিস্টেট হযেছিলেন তিনি। কিন্তু, কী এক অজ্ঞাত কারণে শেষপর্যন্ত নোবেল পুরস্কার পাননি তিনি। ২০১১ সালে স্প্যানিশ ভাষার সেরা সাহিত্য সম্মান ‘Premio Cervantes’ পান। ১৯৮৯ সালে ‘বিশ্ব কবিতা উৎসবে’ যোগ দিতে ভারতে এসেছিলেন নিকানোর পাররা।
নেরুদার প্রয়াণের পরে তাঁর তুল্য জনপ্রিয় কবি আর কেউ ছিলেন না সে দেশে।