রামায়ণ : লঙ্কাকাণ্ড – কটক চর্চ্চিতে শার্দ্দূলের গমন
পরসৈন্য চর্চ্চিতে পাঠাইলাম তোরে।
পরের বড়াই করিস্ আমার গোচরে।।
যাহার প্রসাদে বাড়ে হেন রাজা নিন্দে।
মারিতে আইসে বৈরী তার গুণ বন্দে।।
পূর্ব্বে উপকার যে করিলি স্থানে স্থানে।
আজি কোপে এড়াইলি সেই সে কারণে।।
দূর হ রে বেটা চর না কর বাখান।
আপনার দোষে পাছে হারাইস্ প্রাণ।।
এত যদি দশানন বলিলেক রোষে।
প্রাণ লইয়া পলায় সারণ শুক ত্রাসে।।
যোড় হাত করি বলে বীর মহোদর।
যে না জানে কিছুই পাঠাও হেন চর।।
কহিতে না জানে কথা সভা বিদ্যমানে।
হেন চর আপনি পাঠাও কি কারণে।।
রাবণ ডাকিয়া আনে শার্দ্দূল রাক্ষসে।
পঞ্চজন সঙ্গে সে আইসে তার পাশে।।
পঞ্চজন মধ্যে তার শার্দ্দূল প্রধান।
দশানন দিল তার হাতে গুয়া পান।।
কোন্ খানে রাম সৈন্য পোহায় রজনী।
কোন্ বাটে কপিগণ করিল উঠানি।।
চরের প্রসাদে রাজা সর্ব্ব বার্ত্তা জানে।
চরের প্রসাদে রাজা পরচক্র জিনে।।
লক্ষ্মণ সুগ্রীব রামে জান ভালমতে।
পরচক্র জানিয়া যে আইস ত্বরিতে।।
রাজার আদেশ চর বন্দিলেক মাথে।
গতমাত্র ঠেকিলেক বিভীষণ-হাতে।।
বিভীষণ বলে কোথা গেলি রে বানর।
হেথা আসিয়াছে দেখ রাবণের চর।।
সেই বাক্যে বানর চরের চুল ধরে।
চারিদিকে বেড়িয়া তাহারে কীল মারে।।
ঘরের সেবক বলি না করিল খুন।
বানর হাতাইয়া দিল কষ্ট পুনঃ পুনঃ।।
আপন প্রত্যয় রামে জানাবার তরে।
পঞ্চ চর লয়ে গেল রামের গোচরে।।
দাণ্ডাইতে নারে চর নাহি নাড়ে পাশ।
ঊর্দ্ধমুখে বার্ত্তা কহে ঘন ঊর্দ্ধশ্বাস।।
চর্চ্চিতে তোমার সৈন্য পাঠায় রাবণে।
বিভীষণ ধরে প্রভু কাটিবার মনে।।
শ্রীরাম বলেন, আমি চর নাহি মারি।
রাবণে বলিও মোর কথা দুই চারি।।
সর্ব্বদা পাঠাও চর কোন্ প্রয়োজনে।
তোমায় আমায় দেখা হইবেক রণে।।
আপনি দেখিবে এই কটক দুর্ব্বার।
কি মতে রাবণ তুমি পাইবে নিস্তার।।
মারিব রাবণ তোরে করি খণ্ড খণ্ড।
বিভীষণ উপরে ধরাব ছত্রদণ্ড।।
আমার বিক্রম ঘুষিবেক ত্রিভুবনে।
রাবণে মারিয়া রাজা করি বিভীষণে।।
প্রসাদ পাইয়া চর বিদায় হইল।
লঙ্কার মধ্যেতে গিয়া রাবণে ভেটিল।।
দাণ্ডাইতে নারে চর পড়ে আশ পাশ।
ঊর্দ্ধমুখে বার্ত্তা কহে ঘন বহে শ্বাস।।
তোমার আজ্ঞায় গেনু সৈন্য চর্চ্চিবারে।
যাবামাত্র বিভীষণ চিনিল আমারে।।
রক্তে রাঙ্গা হয়ে গেনু রামের গোচরে।
রঘুনাথ প্রাণদান দিলেন আমারে।।
কহিল সারণ শুক সৈন্য যতোধিক।
দেখিলাম কটক নয়নে ততোধিক।।
কি কব রামের রূপ, অতি সে সুঠাম।
জ্ঞান হয় দেখিলে মানুষ নহে রাম।।
প্রকাণ্ড পুরুষ রাম সুদৃশ্য শরীর।
আজানুলম্বিত বাহু নাভি সুগভীর।।
সুদীর্ঘ নাসিকা তাঁর শ্রীখণ্ড কপাল।
ফল মূল খান তবু বিক্রমে বিশাল।।
দূর্ব্বাদল-শ্যাম তনু অতি মনোহর।
কন্দর্প জিনিয়া রূপ দেখিতে সুন্দর।।
আকার প্রকার তাঁর হেরি হয় জ্ঞান।
ত্রিভুবনে বীর নাই রামের সমান।।
ধর্ম্মেতে ধার্ম্মিক রাম গুণের সদন।
বিপক্ষ নাশিতে রাম প্রলয় জ্বলন।।
না মারেন রাম তারে যায় নম্র বানী।
যে বড়াই করে তার উপরে উঠানি।।
আছুক অন্যের কাজ দেবে যারে নারে।
রাক্ষস হাজার দশ একা রাম মারে।।
পাত্র মিত্র বুঝায় না লয় তব চিতে।
বিধির নির্ব্বন্ধ বুঝি হৈল বিপরীতে।।
পাঁচালী প্রবন্ধে গীত কৃত্তিবাস গায়।
সীতা লাগি রাবণ মজিল হায় হায়।।