Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রামায়ণ : লঙ্কাকাণ্ড || কৃত্তিবাস ওঝা » Page 39

রামায়ণ : লঙ্কাকাণ্ড || কৃত্তিবাস ওঝা

রাজ-আভরণ দেবের পরে বাঞ্ছিত।
সংগ্রামেতে সাজিল কুমার ইন্দ্রজিত।।
ঘন ঘন সারথিরে করিছে মেলানি।
শীঘ্র কর রথসজ্জা ডাকিছে আপনি।।
সারথি আনিল রথ সংগ্রাম কারণ।
মনোহর বেশে রথ করিল সাজন।।
করিলেক রথসজ্জা রথের সারথি।
মাণিক্য প্রবাল কত বসাইল তথি।।
কনক রচিত রথ মুক্তার সঞ্চারে।
চারিদিকে স্বর্ণবৃক্ষ ফল ফুল ধরে।।
চন্দ্র-সূর্য্য তেজ জিনি রথের কিরণ।
প্রবাল মুকুতা কত রথের সাজন।।
পার্ব্বতীয় ঘোড়া গলে রত্নের বিম্বকি।
তেইশ অক্ষৌহিণী ঠাট যুদ্ধের ধানুকি।।
কটকের পদভরে কাঁপিছে মেদিনী।
ইন্দ্রজিতের নিজ বাদ্য তিন অক্ষৌহিণী।।
কাড়া পড়া ঢাক ঢোল তবোল টিকারা।
তুরী ভেরী জগঝম্প বীণা সপ্তস্বরা।।
কাঁশি বাঁশী রাক্ষসী ঢাকের পরিপাটী।
দামামা দগড়ে পড়ে লক্ষ লক্ষ কাটি।।
ঢেমড়া খেমচা বাজে, বাজে করতাল।
ঠমক খমক তাসা শুনিতে রসাল।।
বাজে শিঙ্কা ডমরু তাম্বুরা জয়ঢাক।
ঝাঁঝরি মোচঙ্গ বাজে মধুর পিনাক।।
শঙ্খ বাজে, ঘণ্টা বাজে, মন্দিরা মৃদঙ্গ।
রণশিক্ষা খঞ্জনী আর গভীর ভোরঙ্গ।।
কোটি কোটি জয়ঢাক ঘোররবে বাজে।
কোটি কোটি জগঝম্প মহাশব্দে গাজে।।
বেহালা মন্দিরা আর বীণা আদি কত।
কহিতে না পারা যায় তার সঙ্খ্যা যত।।
অসংখ্য সেতার বাজে কোটি কোটি ডম্ফ।
বাদ্যভাণ্ড-ঘোর-শব্দে ত্রিভুবন কম্প।।
তিন কোটি রাক্ষসেতে বাজায় মাদল।
গর্জ্জিয়া পবন যেন যুড়িল বাদল।।
কটক সাজায়ে বীর যুঝিবারে নড়ে।
মন্দোদরী জননীরে তখন মনে পড়ে।।
মায়ে না কহিয়া যদি যুদ্ধে যাত্রা করি।
অন্ন জল ত্যজিবেন মাতা মন্দোদরী।।
ভক্তিভাবে জননীকে প্রণাম করিয়ে।
তবে যাব রণস্থলে মাতৃ-আজ্ঞা লয়ে।।
এত ভাবি ইন্দ্রজিৎ সভক্তি অন্তরে।
মাতার নিকটে বীর চলিল সত্বরে।।
সৈন্য সেনাপতি যতি দ্বারেতে রাখিয়া।
জননীর অন্তঃপুরে প্রবেশিল গিয়া।।
সুবর্ণের খাটপাট স্বর্ণময়ী পুরী।
সে পুরীর তুল্য শোভা ভুবনে না হেরি।।
দশ হাজার সতিনী বেষ্টিতা মন্দোদরী।
তাহার সুখের সীমা কহিতে না পারি।।
নারায়ণ-তৈলে জ্বলে তিন লক্ষ বাতি।
মন্দোদরী পূজা করে মহেশ-পার্ব্বতী।।
ঝিউড়ী বহুড়ী আর কত শত নারী।
দশ হাজার সতিনী সহিত মন্দোদরী।।
দশ হাজার নারী মেঘনাদের গৃহিণী।
দুই লক্ষ আর যত পুত্রের রমণী।।
আর যত রমণী লঙ্কার একত্তর।
শিবদুর্গা পূজি মাগে রণজয়ী বর।।
হেনকালে ইন্দ্রজিৎ হলে উপনীত।
পূর্ব্বাচল হৈতে হেন আদিত্য উদিত।।
কিরণে অরুণ জিনি রূপে চন্দ্রকলা।
তাহারে দেখিতে যত স্ত্রীলোকের মেলা।।
প্রণমিল মেঘনাদ মায়ের চরণে।
মন্দোদরী পুলকিত চেয়ে পুত্রপানে।।
আস্তে ব্যস্তে উঠে রাণী ধরে দুই হাতে।
লক্ষ লক্ষ চুম্ব দিল মেঘনাদের মাথে।।
মন্দোদরী বলে আমি পূজি গঙ্গাধরে।
সেই পুণ্যফলে পুত্র পেয়েছি তোমারে।।
তোমা পুত্র গর্ভে ধরে হই পাটরাণী।
চেড়ী হয়ে খাটে দশ হাজার সতিনী।।
শ্রীরাম মনুষ্য না বুঝি অভিপ্রায়।
ফিরে না আইসে রণে যেই বীর যায়।।
পরদার মহাপাপ করে তোর বাপ।
সেই অপরাধে এত পাই মনস্তাপ।।
রামের সীতা রামে দেহ, করহ পীরিতি।
মজিল কনক-লঙ্কা নাহি অব্যাহতি।।
বানরে পোড়ায়ে লঙ্কা কৈল ছারখার।
শ্রীরাম মনুষ্য নহে বিষ্ণু-অবতার।।
বিভীষণ খুড়া তব গুণের সাগর।
তারে লাথি মারে রাজা সভার ভিতর।।
আনিল রামের সীতা করিয়া হরণ।
অন্যকে রণেতে কেন পাঠায় এখন।।
তোমারে কপাট দিয়া রাখিব গৃহেতে।
নর-বানরের যুদ্ধে না দিব যাইতে।।
সীতা ফিরে দিন রাজা, শুনুন মন্ত্রণা।
আজি হৈতে যুদ্ধ নাই, করহ ঘোষণা।।
মন্দোদরীর কথা শুনে মেঘনাদ হাসে।
মায়েরে প্রবোধ দেয় অশেষ বিশেষে।।
জগতের কর্ত্তা মাতা হয় মোর বাপ।
অষ্ট লোকপালে জিনি দুর্জ্জয় প্রতাপ।।
এতেক বৈভব ভোগ কর কার তেজে।
হেন জনে নিন্দা কর স্ত্রীগণ-সমাজে।।
বামা জাতি হও ‍তুমি তেমতি বচন।
স্বামী নিন্দা মহাপাপ কর কি কারণ।।
অতুল ঐশ্বর্য্য ভোগ করেন ইন্দ্রাণী।
শচী জিনে শতগুণে তুমি ঠাকুরাণী।।
স্বর্গ মর্ত্ত্য পাতালেতে যত দেবগণ।
পরদার নাহি করে কোন্ মহাজন।।
ইন্দ্র-সুরপতি দেখ দেবতার সার।
গুরু-পত্নী হরণে কি হৈল দেখ তার।।
গৌতমের শিষ্য হয়ে ইন্দ্র দেবরাজ।
করিল কুৎসিত কর্ম্ম না ভাবিল লাজ।।
সবে বলে দেবরাজ দেবের উত্তম।
যাহার কারণে নারী ত্যজিলা গৌতম।।
ব্রাহ্মনের রাজা চন্দ্র জগতে বাখানি।
চন্দ্র হেন হরিলেন গুরুর রমণী।।
পড়িবারে গেল বৃহস্পতির আলয়।
তথা হরে গুরুপত্নী, মিথ্যা তাহা নয়।।
তবু চন্দ্র রূপেতে জগৎ আলো করে।
পুরুষে এমন পাপ কেবা নাহি করে।।
জগতের প্রধান এক দেবতা পবন।
সেই করেছিল দেখ বানরী-গমন।।
কোন্ জন নাহি করে হেন কদাচার।
মিছে কেন দেহ দোষ পিতাকে আমার।।
রাম যে মনুষ্য-জাতি নহেন গর্ব্বিত।
আনিল তাহার নারী কোন অনুচিত।।
খর দূষণ মারিয়া হয়েছে রাম বৈরী।
ভাল করিলেন পিতা আনি আর নারী।।
এত কথা মায়ে যদি দিল পাতিয়ান।
দুই লক্ষ রাণ্ডী তবে দিলেক যোগান।।
কহিছে সকল রাণ্ডী করি যোড়হাত।
নিবেদন করি শুন রাক্ষসের নাথ।।
যুদ্ধ করে মৈল আমাদের স্বামীগণ।
শোকেতে আকুল তাহা সবার কারণ।।
গগনে যখন হয় দুই প্রহর বেলা।
পড়ে যায় রাণ্ডীদের হবিষ্যের মেলা।।
লঙ্কাপুরের ঘরে ঘরে জ্বলয়ে তিয়ড়ি।
কহিতে বিদরে বুক নিত্য ফেলি হাঁড়ি।।
নয় হাজার নারী তোমার পরমাসুন্দরী।
করুক তোমার সেবা যত বহুয়ারী।।
সকলেরে তুষ্ট রেখে যাহ রণস্থলে।
নর ও বানরে জিনে এস পরম-কুশলে।।
শুভযোগে যাত্রা কৈলে নাহি পরাজয়।
সংসারেতে কেহ যেন রাণ্ডী নাহি হয়।।
রাণ্ডীর অসাধ্য কর্ম্ম নাহি ত্রিভুবনে।
আকাশে পাতয়ে ফাঁদ স্বভাবের গুণে।।
বুঝিয়া দেখহ মনে রাক্ষসের পতি।
এক রাঁড়ে মজাইল লঙ্কার বসতি।।
সূর্পণখা রাণ্ডী দেখ হয় তব পিসি।
রাক্ষসী হইয়া সে মানুষে অভিলাষী।।
বয়সের সংখ্যা নাই পাকাইল কেশ।
রামেরে ভুলাতে ধরে মনোহর বেশ।।
রাণ্ডীর অসাধ্য কর্ম্ম নাহিক সংসারে।
সংগ্রামেতে যাহ বাছা শুভযাত্রা করে।।
পড়িল রামের যুদ্ধে বড় বড় বীর।
বন্ধু বান্ধবের শোকে দহিছে শরীর।।
হর-পার্ব্বতীর প্রিয়ভক্ত দশানন।
কেন এসে রক্ষা নাহি করে দুইজন।।
উপকার কি করিল শঙ্কর পার্ব্বতী।
সূর্পণখা মজাইল লঙ্কার বসতি।।
বিলাপ করিয়া কান্দে লক্ষ লক্ষ নারী।
শ্রাবণের ধারা যেন চক্ষে বহে বারি।।
রাণ্ডীর রোদনে ইন্দ্রজিতের বিষাদ।
সবারে প্রবোধ-বাক্যে কহে মেঘনাদ।।
না কান্দ না কান্দ সবে পরিহর শোক।
স্বর্গেতে গিয়াছে তোমাদের পতি-লোক।।
শ্রীরাম লক্ষ্মণে রণে মারিয়ে এখনি।
নিবাবই সকলের মনের আগুনি।।
এত বলি সকলেরে দিল পাতিয়ান।
মন্দোদরী কহে তবে পুত্র বিদ্যমান।।
রূপে গুণে বীর তুমি পরম সুন্দর।
দেব দানবের কন্যা বিবাহ বিস্তর।।
নয় হাজার নারী তব পরমাসুন্দরী।
আজি সেবা করুক যতেক বহুয়ারী।।
রাখহ মায়ের বাক্য হইয়া সুমতি।
অন্তঃপুরে থাক বাছা আজিকার রাতি।।
মন্দোদরী কথা কহে সকরুণ ভাষে।
বদনে ঝাঁপিয়া বস্ত্র ইন্দ্রজিৎ হাসে।।
যুঝিবারে পিতা মোরে দিলেন আরতি।
কেমনে থাকিব গৃহে না হয় যুকতি।।
সসৈন্যেতে আসিয়াছি যুঝিবারে মনে।
কোন্ লাজে গৃহমাঝে থাকিব এক্ষণে।।
করিব কঠিন যজ্ঞ নামে নিকুম্ভিলা।
ইষ্টদেব অর্চ্চনে হইল এত বেলা।।
যজ্ঞেতে আহুতি গিয়া দিব যে এখনি।
ছোঁবার থাকুক কাজ না হেরি রমণী।।
যাত্রাকালে ছুঁলে নারী পড়িবে প্রমাদ।
এত বলি বিদায় হইল মেঘনাদ।।
ভক্তিভাবে জননীর চরণ বন্দিয়া।
যজ্ঞতরে ইন্দ্রজিৎ চলিল সাজিয়া।।
কৃত্তিবাস পণ্ডিতের মধুর বচন।
লঙ্কাকাণ্ডে গাহিলেন গীত রামায়ণ।।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108 109 110 111 112 113 114 115 116 117 118 119 120 121 122
Tags:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress