Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রামায়ণ : লঙ্কাকাণ্ড || কৃত্তিবাস ওঝা » Page 32

রামায়ণ : লঙ্কাকাণ্ড || কৃত্তিবাস ওঝা

নাক কাণ নাহি কুম্ভকর্ণ পায় লাজ।
মনে মনে ভাবে আর জীবনে কি কাজ।।
এত বল বিক্রমে সকল হৈল মিছা।
সুগ্রীব বানরা বেটা করে গেল বোঁচা।।
নেউটিয়া রণে বীর আইল নিমেষে।
বোঁচা নাক দেখিয়া বানরগণ হাসে।।
তাহা দেখি কুম্ভকর্ণ মহাকোপে জ্বলে।
বড় বড় কপিগণে ধরে ধরে গিলে।।
নাসিকা কর্ণের পথ বিষম বিস্তার।
তাহা দিয়া কপিগণ বেরয় অপার।।
একে কুম্ভকর্ণ বীর অতি ভয়ঙ্কর।
কর্ণ নাসা গেছে আরো হয়েছে দুষ্কর।।
কোপদৃষ্টে কুম্ভকর্ণ যে দিকেতে চায়।
বড় বড় বীর সব ছুটিয়া পলায়।।
বোঁচা এলো বলে ছুটে সকল বানর।
দাণ্ডাইল সবে গিয়া লক্ষ্মণ গোচর।।
হাতে ধনু লক্ষ্মণ হইল আগুসার।
তাহা দেখি কুম্ভকর্ণ হাসে একবার।।
কুম্ভকর্ণ বলে বেটা তোরে চাহে কে।
তোর ভাই রামা বেটা তারে এনে দে।।
হাসিয়া বলেন রাম কমললোচন।
এতদিনে যম বুঝি করেছে স্মরণ।।
এই আমি আইলাম তোর বিদ্যমান।
যত শক্তি আছে বেটা তত শক্তি হান।।
তোরে মেরে কাটিব রাবণের দশমাথা।
বিভীষণের উপরে ধরাব দণ্ড-ছাতা।।
শ্রীরামের কথা শুনে কুম্ভকর্ণ হাসে।
মনে কি করেছে বেটা ফিরে যাবে দেশে।।
এত বলি কুম্ভকর্ণ হয়ে ক্রোধমতি।
রামেরে গিলিতে যায় অতি শীঘ্রগতি।।
কুম্ভকর্ণের ভয়ে লঙ্কা করে টলমল।
স্বর্গ মর্ত্ত্য কাঁপিল, কাঁপিল রসাতল।।
আকাশে দেউটি যেন দুই চক্ষু জ্বলে।
মালসাট দিয়া বীর রঘুনাথে বলে।।
খর দূষণ নাহি আমি ত্রিশিরা কবন্ধ।
মারীচ রাক্ষস নাহি মায়ার প্রবন্ধ।।
বালিরাজা নহি আমি কোমল শরীর।
বজ্র সম অঙ্গ আমি কুম্ভকর্ণ বীর।।
যেই সব বীর বধ কৈলে যেই বাণে।
সেই সব বাণ এখন তুলে রাখ তূণে।।
তোমার বাণের মধ্যে তীক্ষ্ণ যে সকল।
সেই সব বাণ মার বুঝা যাক্ বল।।
রাম বলে কুম্ভকর্ণ ত্যজ অহঙ্কার।
মোর বাণ সহে এত শক্তি আছে কার।।
তীক্ষ্ম বাণ প্রহারিলে হইবে প্রলয়।
ক্ষুদ্র এক বাণে তোরে লব যমালয়।।
রঘুনাথের কথা শুনে কুম্ভকর্ণ হাসে।
মনেতে বাসনা বুঝি যাবে যমপাশে।।
হের দেখ দেহ মোর পর্ব্বত-প্রমাণ।
দেবতা গন্ধর্ব্ব কেহ নাহি ধরে টান।।
কত অস্ত্র জান বেটা কত জান শিক্ষা।
ইন্দ্র যম জানে আমা আর জানে যক্ষা।।
যে বাণে মারিল বাল দুর্জ্জয় বানর।
সেই বাণ মারে কুম্ভকর্ণের উপর।।
রামের ঐষিক বাণ তারা হেন ছুটে।
কণ্টক সমান যেন কুম্ভকর্ণ ফুটে।।
ছি ছি বলি কুম্ভকর্ণ দিল টিটকারী।
বল বুঝি মোর ভাই আনে তোর নারী।।
লোহার মুষল বীর ঘন ঘন নাড়ে।
শ্রীরামের মত বাণ তাহে ঠেকে পড়ে।।
মুষল ফিরায়ে বীর মারিবারে আইসে।
ব্রহ্ম-অস্ত্র রঘুনাথ যুড়িলেন ত্রাসে।।
বিনা অস্ত্রে যুঝে যেন মদমত্ত হাতী।
কারে চড় কীল মারে কারে মারে লাথি।।
ভূমে পড়ে নীলবীর হইলা কাতর।
মুষলের ঘায়ে মারে অনেক বানর।।
মুষল করিয়া হাতে ছুটে উভরায়।
পলায় বানরগণ পিছু নাহি চায়।।
ডাক দিয়া কহিতেছে ঠাকুর লক্ষ্মণ।
এক উপদেশ শুন যত কপিগণ।।
পাগল হয়েছে বেটা রক্তের দুর্গন্ধে।
জন কত বানর উঠহ উহার স্কন্ধে।।
ভর না সহিবে বেটা পড়িবে চাপনে।
ভূমিতে পাড়িয়া মার পাপিষ্ঠ দুর্জ্জনে।।
লক্ষ্মণের বাক্যেতে সাহসে করি ভর।
স্কন্ধে উঠে বড় বড় অনেক বানর।।
কুম্ভকর্ণ-স্কন্ধে চড়ি বীরগণ নাচে।
বাদুড় ঝুলিছে যেন তেঁতুলের গাছে।।
শরভ গবাক্ষ গয় সে গন্ধমাদন।
মহেন্দ্র দেবেন্দ্র আদি উঠে দুই জন।।
সপ্ত জন চড়িলেক কুম্ভকর্ণ-স্কন্ধে।
কেশে ধরি টানে কেহ ঘাড়ে নখ বিন্ধে।।
সাত বীর লাফ দিয়া ঘাড়ে গিয়া চড়ে।
দুই হাতে কুম্ভকর্ণ বানরে আছাড়ে।।
আছাড়ে গবাক্ষ বীর হারায় সম্বিত।
ভূমিতে পড়িয়া মুখে উঠিল শোণিত।।
গয় গবাক্ষ শরভ সে গন্ধমাদন।
আছাড়ের ঘায়ে সবে হৈল অচেতন।।
দেখিয়া অঙ্গদ হনুমানে লাগে ডর।
উঠিতে উঠিতে ঘাড়ে উঠে দিল রড়।।
কুম্ভকর্ণে পাড়িতে নারিল কোন জনে।
আরবার রাম অস্ত্র যুড়িলেন গুণে।।
ব্রহ্ম-অস্ত্র ছাড়িলেন পূরিয়া সন্ধান।
কুম্ভকর্ণের কাটিলেন ডান হাতখান।।
হাতখান পড়ে যেন পর্ব্বত-শিখর।
হাতের চাপনে পড়ে অনেক বানর।।
বামহাতে শালগাছ উপাড়িয়া আনে।
হাতে গাছ করি গেল রামের সদনে।।
ঐষিক বাণেতে রাম পূরিয়া সন্ধান।
এক বাণে কাটিলেন বাম হাতখান।।
দুই হাত কাটা গেল, তবু নাহি টুটে।
শ্রীরামেরে গিলিবারে দ্রুতগতি ছুটে।।
ইন্দ্র-অস্ত্র রঘুনাথ করিলা সন্ধান।
এক বাণে কাটিলেন পদ দুইখান।।
হস্ত গেল পদ গেল তবু নাহি ডরে।
গড়াগড়ি দিয়া যায় রামে গিলিবারে।।
দন্তে ধরি তুলে নিল লোহার মুষল।
মুষলের ঘায়ে মারে বানর-মণ্ডল।।
মুষল কাটিতে রাম যুড়িলেন বাণ।
নয় বাণে মুষল করিলা খান খান।।
কাটা গেল মুষল শমতা নাহি তাতে।
গড়াগড়ি দিয়া যায় রামেরে গিলিতে।।
রাহু যেন আসে চন্দ্র গিলিবারে তরে।
কুম্ভকর্ণ তেমনি শ্রীরামে গিলিবারে।।
কুম্ভকর্ণের মুখেতে যে পড়িছে শোণিত।
নাক কাণ কাটা যে দেখায় বিপরীত।।
এতেক দুর্গতি হৈল তবু নাহি মরে।
আরবার ব্রহ্ম-অস্ত্র মারিলেন তারে।।
যমদণ্ড সম বাণ রত্নেতে মণ্ডিত।
দশদিক আলো করি ছুটিল ত্বরিত।।
ব্রহ্ম-অস্ত্র বাণে আর নাহিক অন্যথা।
সেই বাণে কুম্ভকর্ণের কাটিলেন মাথা।।
কাটামুণ্ড সাপটিয়া হনুমান তোলে।
টেনে ফেলে দিল লয়ে সমুদ্রের জলে।।
সাগরের জলজন্তু করে তোলপাড়।
মধ্য সাগরেতে যেন হইল পাহাড়।।
দশ লক্ষ রাক্ষসেতে কুম্ভকর্ণ পড়ে।
কানন ভাঙ্গিল যেন প্রলয়ের ঝড়ে।।
দেবগণ সুখী হৈল রামের বিক্রমে।
স্বর্গ হৈতে পুরন্দর পূজেন শ্রীরামে।।
কপিগণ বলে রাম করিলা নিস্তার।
আর যত বীর আছে মোসবার ভার।।
না দেখি এমন বীর এ তিন ভুবনে।
যুঝিবারে কাজ থাক, ভঙ্গ দরশনে।।
কুম্ভকর্ণ পড়িল গাহিল কৃত্তিবাস।
রাবণ শুনিল কুম্ভকর্ণের বিনাশ।।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108 109 110 111 112 113 114 115 116 117 118 119 120 121 122
Tags:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress