রামায়ণ : লঙ্কাকাণ্ড – সুগ্রীব কর্ত্তৃক কুম্ভকর্ণের নাসা-কর্ণচ্ছেদন
বড় বড় বানর ধরিয়া সব গিলে।
আপনি সুগ্রীব গেল সংগ্রামের স্থলে।।
শালগাছ উপাড়িল পবনের বেগে।
গাছ হাতে দাণ্ডাইল কুম্ভকর্ণ আগে।।
বড় বড় বানর মারিলি বাছের বাছ।
মোর ঘা সহ রে বেটা মারি শালগাছ।।
কুম্ভকর্ণ বলে আমি বিধাতার নাতি।
এড় দেখি শালবৃক্ষ বুঝিরে শকতি।।
এড়িলেক শালবৃক্ষ পর্ব্বত প্রমাণ।
কুম্ভকর্ণের গায়ে ঠেকে হৈল খান খান।।
ছি ছি বলি কুম্ভকর্ণ দিল টিটকারী।
এই মুখে খাও বেটা কিষ্কিন্ধ্যা-নগরী।।
ভাল ছিল বালিরাজ বীর মধ্যে গণি।
কোন্ মুখে রাখিবে তাহার রাজধানী।।
দুই লক্ষ রাক্ষসে যে জ্যাঠা গাছ বয়।
হেন জাঠা কুম্ভকর্ণ হাতে তুলে লয়।।
আশী কোটি মণ লৌহে জাঠার গঠন।
দশ হাজার হাত জাঠা দৈর্ঘ্যে নিরূপণ।।
কুম্ভকর্ণ এড়ে জাঠা দিয়া হুহুঙ্কার।
স্বর্গ মর্ত্ত্য পাতালে লাগিল চমৎকার।।
দেখিয়া সুগ্রীব বীর না ভাবে মনেতে।
সিংহনাদ করি জাঠা ধরে বামহাতে।।
ভাঙ্গিলেক জাঠা যেন পড়িল ঝঞ্ঝনা।
ত্রিভুবনে যত লোক পাসরে আপনা।।
কুম্ভকর্ণ কোপেতে পর্ব্বতে দিল টান।
এক টানে আনিল পর্ব্বত একখান।।
এড়িল পর্ব্বত গোটা বিপরীত কোপে।
পড়িল সুগ্রীব রাজা পর্ব্বতের চাপে।।
ঘেরেছিল মেঘ যেন উড়াইল ঝড়ে।
সুগ্রীবে লইয়া বীর প্রবেশিল গড়ে।।
লঙ্কার ভিতরে শীঘ্র যায় মহাবলী।
সুগ্রীবকে লয়ে দশাননে দিতে ডালি।।
প্রথম বৃহন্দে যায় করে ঠেলাঠেলি।
দ্বিতীয় বৃহন্দে যায় পড়ে হুলাহুলি।।
তৃতীয় বৃহন্দে যায় পরম হরিষে।
সুগ্রীব রাজারে দেখে নারীগণ হাসে।।
কুম্ভকর্ণ সুগ্রীবের লয়ে যায় বেন্ধে।
সকল বানরগণ মাথে হাত কান্দে।।
হনুমান মহাবীর কটকের সার।
মনে মনে ভাবিছে রাজার প্রতিকার।।
কুম্ভকর্ণে সংহারিব আজিকার রণে।
রাজা উদ্ধারিলে তবে প্রীতি পাই মনে।।
এতেক বলিয়া বীর যুঝিবারে যান।
বাহড় বাহড় বলি ডাকে জাম্ববান।।
যত দিন জীবে রাজা কোপ রবে মনে।
ভাল যাবে মন্দ রবে কি কাজ এ রণে।।
সেবক হইতে রাজা পাবে অব্যাহতি।
চিরকাল সুগ্রীবের ঘুষিবে অখ্যাতি।।
রাজবুদ্ধি ধরে রাজা বলে বিপরীত।
কুম্ভকর্ণের হাত হতে আসিবে নিশ্চিত।।
জাম্ববান বাক্যে বীর নাহি দিল হানা।
উলটিয়া রাখে গিয়া আপনার থানা।।
কুম্ভকর্ণের কোলে রাজা পাইল সম্বিত।
চারিদিকে দেখিছে লঙ্কার নৃত্য গীত।।
চারিদিকে নিশাচর, না দেখে বানর।
বিচিত্র নির্ম্মাণ দেখে সুবর্ণের ঘর।।
মহাবল সুগ্রীব বুদ্ধিতে বৃহস্পতি।
মনে মনে চিন্তেন আপন অব্যাহতি।।
কর্ণ টানে দুহাতে কামড়ে ছিঁড়ে নাক।
ভয়ে কুম্ভকর্ণ ডাকে পরিত্রাহি ডাক।।
দুই পার্শ্ব চিরে তোলে দু-পায়ের ভরে।
পঞ্চ অঙ্গে কুম্ভকর্ণের রক্ত পড়ে ধারে।।
মর্ম্মব্যথা পেয়ে বীর ছাড়ে সুগ্রীবের।
আছাড়িয়া ফেলে দিল ধরণী উপরে।।
দশনে নাসিকা নিল কর্ন দুই করে।
লাভ দিয়া বীর গিয়া উঠিল প্রাচীরে।।
পুনঃ লাফ দিলেক বিক্রমে করি ভর।
প্রবেশ করিল গিয়া কটক ভিতর।।
কটকেতে পশিয়া সুগ্রীব মহাবলী।
কুম্ভকর্ণের নাক কাণ রামে দিল ডালি।।
সেই নাক কাণের কি কহিব বাখান।
পঁচিশের বন্দ যেন ঘর একখান।।