রামায়ণ : লঙ্কাকাণ্ড – রাম-সীতা কর্ত্তৃক বানরগণকে পুরস্কার প্রদান
ফেলিয়া দিলেন ব্রহ্মা স্বর্ণ-পদ্মমালা।
অলক্ষ্যে করিল শোভা শ্রীরামের গলা।।
স্বর্ণ মণি মাণিক্যে নির্ম্মিত দিব্য-হার।
ইন্দ্র পাঠাইয়া দিলা আরো অলঙ্কার।।
নানাবিধ মণিমুক্তা পরশ পাথর।
কুবেরের হার শোভে কণ্ঠের উপর।।
দেবের ভূষণেতে হইয়া বিভূষিত।
রাম রাজা হইলেন জগতে পূজিত।।
শ্রীরামের অভিষেক শুনে যেই নরে।
ঐহিক সম্পদ বাড়ে পরলোকে তরে।।
কোটি কোটি দ্বিজ যায় শ্রীরামের স্থান।
যাঁহার যে অভিলাষ তাহা পায় দান।।
গ্রাম ভূমি স্বর্ণদান করেন শ্রীরাম।
বিমুখ না হয় কেহ সবে পূর্ণকাম।।
পূর্ণ চৈত্রমাস পুনর্ব্বসু যে নক্ষত্র।
শুভক্ষণে শ্রীরাম ধরেন দণ্ডছত্র।।
স্বর্ণ-পদ্মমালা গলে সূর্য্য হেন জ্বলে।
সে মালা দিলেন রাম সুগ্রীবের গলে।।
অঙ্গদের কাছে রাম ছিলেন লজ্জিত।
অপূর্ব্ব ভূষণে তারে করেন ভূষিত।।
ছত্রিশ কোটি সেনা পায় শ্রীরামের দান।
অভিমানে নীরব রহিল হনুমান।।
শ্রীরামের দানেতে সকলে হয় সুখী।
হনুমান কেবল মুদিল দুই আঁখি।।
অপরাধ কি করিনু প্রভুর চরণে।
সবারে তোষেন, মোরে না তোষেন কেনে।।
বাহির করেন সীতা আপনার হার।
কি কব তাহার মূল্য ভুবনের সার।।
সে হার দেখিয়া সবে চাহে পরস্পর।
নানা রত্ন মণি মাণিক্য পরশ পাথর।।
বড় বড় সেনাপতি করে অনুমান।
না জানি সীতার হার কোন্ জন পান।।
হাতে হার করি সীতা রাম পানে চান।
অভিপ্রায় মনে এই কারে করি দান।।
বুঝিয়া শ্রীরাম তার করেন বিধান।
যারে তব ইচ্ছা যায় তারে কর দান।।
যারে তব ইচ্ছা যায় তারে কর দান।।
অনুদ্দেশ সময়েতে উদ্দেশ যে করে।
মরিয়াছিলাম প্রাণ দিল বারে বারে।।
এমত বুঝিয়া সীতা হার কর দান।
কোনজন না করিবে এতে অভিমান।।
জানকী হনুর পানে চান বারে বারে।
ধেয়ে গিয়া হনুমান গলে হার পরে।।
মারুতির গলে শোভে জানকীর হার।
হনুমান প্রণমিল চরণে সীতার।।
সীতা বলে যতকাল থাকিবে পৃথিবী।
রোগ পীড়া হীন বাপু হও চিরজীবী।।
যাবৎ থাকিবে চন্দ্র সূর্য্যের প্রচার।
যাবৎ রামের নাম ঘুষিবে সংসার।।
ততকাল হও তুমি অক্ষয় অমর।
হনুমান অমর পাইলা এই বর।।
রাম-নাম প্রসঙ্গ হইবে যেই স্থানে।
যথা তথা থাক তুমি আসিবে সেখানে।।
হনুমান আশীর্ব্বাদ শুনিতে মধুর।
কৃত্তিবাস ভণে সুখ পাইবে প্রচুর।।