রামায়ণ : লঙ্কাকাণ্ড – শ্রীরামচন্দ্রের সীতা গ্রহণ
কান্দিয়া শ্রীরামচন্দ্র হন অচেতন।
ধাইয়া আইলা ব্রহ্মা আদি দেবগণ।।
কুবের বরুণ যম আইল পুরন্দর।
যতেক দেবতা সব আইল সত্বর।।
হস্ত তুলি কন ব্রহ্মা শ্রীরামের ডাকি।
কার বাক্যে অগ্নিমধ্যে রাখিলা জানকী।।
সীতাদেবী না মরেন অগ্নিতে পুড়িয়া।
এখনি পাইবে সীতা কান্দ কি লাগিয়া।।
দেবের ঠাকুর তুমি সাংসারের সার।
সামান্য মানুষ হেন কর ব্যবহার।।
তোমার গায়ের লোমাবলী দেবগণ।
সীতাদেবী লক্ষ্মী, তুমি স্বয়ং নারায়ণ।।
শ্রীরাম বলেন মম মানুষেতে জন্ম।
মানুষ হইয়া করি মানুষের কর্ম্ম।।
বিরিঞ্চি বলেন, রাম বলি সারোদ্ধার।
তব অবতারে প্রভু কৌতুক অপার।।
মৎস্য-অবতারে কৈলে বেদের উদ্ধার।
কূর্ম্ম-অবতারে তুমি স্থাপিলে সংসার।।
তৃতীয় অবতারে বরাহ-রূপ ধরি।
বসুন্ধরা ধরিলে হে দশন উপরি।।
হিরণ্যকশিপু নামে দৈত্য মহাবল।
স্বর্গ আদি ত্রিভুবন জিনিল সকল।।
স্বর্গ মর্ত্ত্য পাতাল তাহার ভয়ে কাঁপে।
তারে সংহারিলা তুমি নরসিংহরূপে।।
হইলে বামন বেশ পঞ্চমাবতারে।
বলিকে ছলিয়া দ্বারী হইলে তার দ্বারে।।
ষষ্ঠেতে পরশুরাম হৈলা ভৃগুপতি।
একবিংশবার নিঃক্ষত্র কলৈ বসুমতী।।
সপ্তমেতে রামরূপ হৈয়া নারায়ণ।
বধিয়া রাবণে রক্ষা কৈলে ত্রিভুবন।।
ধনুর্দ্ধারী রূপে রাম ধনু ধরি হাতে।
দলিলা রাক্ষসগণে তাহার আঘাতে।।
যত যত অবতার অংশরূপ ধরি।
রাম-অবতারে তুমি আপনি শ্রীহরি।।
আপনি শ্রীরাম তুমি পূর্ণ অবতার।
সবংমে রাবণে তুমি করিলে সংহার।।
যত যত ক্ষত্রিয় আছিল ভূমণ্ডল।
সবার অধিক রাম তুমি ধর বল।।
না মরিত দশানন অন্য কারো বাণে।
বৈকুণ্ঠ ছাড়িলা রাম এই সে কারণে।।
তুমি ব্রহ্মা তুমি শিব তুমি নারায়ণ।
সৃষ্টি স্থিতি প্রলয়ের তুমি সে কারণ।।
যেই জন শুনে প্রভু তব অবতার।
ইহ পরলোকে তার হইবে উদ্ধার।।
কে বুঝে তোমার মায়া তুমি লোকপতি।
তুমি নারায়ণ, সীতা লক্ষ্মী মূর্ত্তিমতী।।
হেন লক্ষ্মী অগ্নিমধ্যে রাখ কি কারণ।
মানুষের কর্ম্ম কর কেন নারায়ণ।।
না শুনেন ব্রহ্মার সে প্রবোধ বচন।
সীতা সীতা বলি রাম করেন ক্রন্দন।।
ব্রহ্মা বলিলেন অগ্নি উঠহ সত্বর।
সমর্পণ কর সীতা রামের গোচর।।
ব্রহ্মার আজ্ঞায় অগ্নি উঠিয়া সত্বর।
আপনি প্রবেশে অগ্নিকুণ্ডের ভিতর।।
আকাশ পাতাল যুড়ি অগ্নিশিখা জ্বলে।
আপনি উঠিলা অগ্নি সীতা লয়ে কোলে।।
অগ্নি হৈতে উঠিলেন সীতা ঠাকুরাণী।
যেমন তেমনি আছে গাত্রবস্ত্রখানি।।
মস্তকেতে পঞ্চফুল সেহ না আওরে।
যোড়হাতে রহিলেন রামের গোচরে।।
অগ্নি বলিলেন আমি পাপ পুণ্য সাক্ষী।
লুকাইয়া পাপ করে তাহা আমি দেখি।।
ভাণ্ডাইতে আমারে না পারে কোন জন।
না দেখি সীতার কোন পাপের কারণ।।
আজি হতে রাম মোর সফল জীবন।
করিলাম আজি আমি সীতা পরশন।।
বলি রাম, সীতারে না দিও মনস্তাপ।
রাজ্য দগ্ধ হইবে জানকী দিলে শাপ।।
যেই স্ত্রী শুনিবেক সীতার চরিত্র।
সর্ব্ব পাপ খণ্ডিয়া সে হইবে পবিত্র।।
শ্রীরামের হাতে সীতা করি সমর্পণ।
স্বস্থানে প্রস্থান অগ্নি করিলা তখন।।