আমার যখন বয়স পাঁচ-ছয়
তখন থেকেই মা’র সাথে মামা বাড়ি যেতাম,
সুদূর আসামে।
ব্রহ্মপুত্র পার হতাম পাল তোলা
দাঁড় টানা নৌকোতে
যতদূর মনে পড়ে ,দশ পয়সা গুদারা ভাড়ায় সারারাত
নৌকোতে কেটে যেত, মুগ্ধ বালক
কালো জলের ঢেউ গুনে গুনে একসময়
ঘুমিয়ে পড়ত ! ভোরে ট্রেন ধরতাম।
ছেলেবেলার এসব গল্প আজও চোখে ভাসে ;
মামা বাড়ির পাশে ছিল বিশাল এক মাঠ,
মাঠের চারধারে অসংখ্য কৃষ্ণচূড়া
গ্রীষ্মের ছুটিতে লাল হয়ে থাকত ।
এসব বাল্যকাল এখনো মধ্যরাতে
জেগে ওঠে , নীলকন্ঠ পাখিরা কৃষ্ণচূড়ার
ডাল ছেড়ে দূরে পালায় ,
মাঠ পেরিয়ে অদূরে ছিল এক খেজুর গাছ
মনে পড়ে খেজুর পারতে গিয়ে একবার
লাল পিঁপড়ে পড়েছিল চোখে, আজও
খেজুর খেতে গেলে সে কথা মনে পড়ে ,
আরো মনে পড়ে সালেহাকে —
সালেহা তার নরম হাতের স্পর্শে
পিঁপড়ে সরিয়ে চোখ ধুইয়ে দিয়েছিল,
চোখ ফু’লে তখন লাল জবা ।
আকাশে যখন পূর্ণিমার চাঁদ উঠত,তখন
মাছ ধরার আনন্দে ছুটতাম নদীর চরে, ভূতের ভয়
জড়িয়ে আসত সমস্ত শরীরে ,
তবুও সাহস করে জ্যোৎস্নার নিস্তব্ধতায়
আকাশটাকে দেখতাম ,
দেখতাম চাঁদের বুড়ির সেই সুতোকাটা,
কবে শেষ হবে সুতোকাটার দৃশ্যপাট ,
ঘুচবে কতকাল জানা নেই !
মামা বাড়ির উৎকন্ঠা ছাড়িয়ে সালেহার
কৈশোর এসে উঁকি মারত , সে বড়
সহজ সরল এক রোদবালিকার গল্প ,
তার নরম হাতের স্পর্শকাতর শিহরণ
সে এক না বলা কোন পল্লী কাহিনী,
ধানী জমিনের আল বেয়ে সে চলে নির্বিকার ,
কোথাও থামার তাড়া নেই , যাওয়ারও নেই,
এ বয়সে এমনি শুধু চলতে হয় , চলতে হয় নদীতীর,
দূর নীল পাহাড় ,বন-জঙ্গল,চলতে হয়
মেঘের ওপারে , সে কোন মেঘবালিকার
কথা নয় , সহজ সরল সালেহার জীবনের
এক নির্বোধ গল্প কথা ।
তেরো বছরে যার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল
প্রথম সন্তান জন্ম দিতে যে মারা যায়
তার কথা কারো মনে নেই , থাকারও কথা নয় ,
সেই শিশুটিও বাঁচেনি আর ;
অথচ সালেহা সাঁতরে পদ্মপুকুর থেকে শাপলা
তুলে আনত , মালা বানাত
অনায়াসে কৃষ্ণচূড়ার শাখায় চড়ে
ফুল পেরে আনত, ঘুড়ি ওড়াত আপন খেয়ালে
ওর বানভাসি মন উদাসী হাওয়ার সাথে
মেঘেদের সাথে যেন সাবলীল খেলা করত,
তবে মেঘবালিকা হতে চায়নি সে
সে ফুল কুড়তো ,দূর্বা তুলত
অথচ কখনো প্রজাপতির পেছন পেছন ছোটেনি,
আমি তখনও কবিতা কী ঠিক বুঝিনি ,কবিতার
ফুল পাখি হাওয়া কী করে ডানা মেলে
দেখিনি কখনো , তবে সেই যে কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো
যখন লাল হয়ে থাকত ,তখন নীলকন্ঠদের উড়ে
যাওয়া দেখতে দেখতে , মেঘ দেখতে পেতাম
মেঘের ওপারেও মেঘ ,
মেঘবালিকা হতে চায়নি সে।
তবুও রাত্রি নিঝুম হলে এখনো ভেসে ওঠে
সালেহার নিষ্পাপ মুখখানা —
আমি সালেহাকে স্পর্শ করিনি,
ওর হলুদ শরীরের ওপর কয়েকটা লাল কৃষ্ণচূড়া
দূর থেক ছুঁড়ে দিয়েছিলাম
সে ফিরেও তাকায়নি,
সালেহার নির্লিপ্ত ঠোঁটে কেউ চুম্বন এঁকে দেয়নি
কেউ সাজিয়ে দেয়নি মলিন ফুলের সৌরভে
সালেহা হতে চায়নি মেঘবালিকা,
সে স্বপ্ন দেখতেও চায়নি, তবু তার
ঝরতে হল, ঝরা ফুলের মত।
তার শরীর ছুঁয়েছিল নির্লিপ্ত মাঠের ঘ্রাণ
পদ্মপুকুরের শাপলারা আজ দুহাত বাড়িয়ে
খোঁজে,-আয় রোদবালিকা আয় ,
রোদবালিকা ছোটে সূর্যাস্ত দেখার
লোভে নীল পাহাড়ের চুড়োয়,
কী সুন্দর ! সাধ মেটে না
জেগে থাকে নির্লিপ্ত কৈশোর
জেগে থাকে বাঁধন হারা উচ্ছাস ।
আজ নিস্তব্ধতার আড়ালে
পাখি ডাকে -‘আয় ‘ , কৃষ্ণচূড়ার ডালে
বসে নীলকন্ঠ পাখিরা সব ডাকে-‘আয়’
সালেহা নির্বিকার ,
সে কোনো মেঘবালিকার গল্প নয়
সে কোনো রূপকথা নয়
আকাশ জোড়া মেঘ ,সাবলীল বৃষ্টি হাওয়া
সইয়ের বাড়ির ঝিঙে ,শাক, ফুল পৌঁছে দেওয়া
সে এক রোদবালিকার গল্প ।
বৃষ্টির পর রোদের আকাশ
দেখেনি সে বহুকাল !
সালেহা আজ হলুদ শরীর ছেড়ে
বেরিয়ে এস তুমি,
আকাশে যখন ধ্রুবতারা ওঠে, সাতটি
তারা যখন অস্ত যায়,তখনো
তুমি থাক নিশ্চুপ , ধানী জমিনের
আলগুলো সব ক্ষয়ে গেছে ,
কোন কিশোরীর পায়ের স্পর্শে ঘাসগুলো
জাগেনি বহুকাল
সালেহা, এমন সময় তুমি থেক না ঘুমিয়ে ,
জাগো, রোদ ঝরাও আকাশে বাতাসে,
রোদের ছোঁয়ায় ,সোঁদা মাটির ঘ্রাণে
বিভোর করো আজ আকাশ বাতাস
আবার জেগে ওঠ কৃষ্ণচূড়ার মাঠের ‘পরে
আবার জেগে ওঠ ধানী জমির আলের ধারে
আবার জেগে ওঠ পাহাড়ের চুড়োয়,
সূর্য দেখার লোভে
আবার জেগে ওঠ শাপলা ফুলের দীঘির
বুকে
আবার জেগে ওঠ
সজীবতার স্পর্শ মেখে হারানো স্বপ্ন আলোকে
আবার জেগে ওঠ
শরতের শিশির ভেজা শিউলি
কুড়তে,
আবার জেগে ওঠ চঞ্চলা প্রাণে
দিশারি পথে আপন চলার ছন্দে
আগের মতই, হে অনন্যা
হারিয়ে যাওয়া
ঝরে যাওয়া কৈশোরের
প্রিয় রোদবালিকা ।
Very impressive poem
অপূর্ব, খুব সুন্দর কবিতা।
Excellent poem,touched it
Khub sundor
khub bhalo hoyeche
It was amazing. Worth Reading!
Vison Sundor kobita ta
Heart touching poem.
ভীষণ সুন্দর কবিতা
Nice one sir,it’s realy heart touching
খুব ভাল লাগলো।
Excellent
Excellent poem , really it is heart touching
খুব ভালো লাগলো।
খুব সুন্দর
কবিতার মাধ্যমে একটা চিত্রনাট্য ফুটে ওঠেছে
আরও কবিতার অপেক্ষায় রইলাম
Very nice poem.
অসাধারণ লাগল। আপনার জন্য রইল আমার শুভেচ্ছা।
খুব সুন্দর হয়েছে “রোদবালিকা” র সৃষ্টি।
অসাধারণ ভাবনা।
Beautiful writing……spellbound really……
প্ৰিয় কবির কলমে বাল্যপ্রেমের স্মৃতিমাখা এক অনুপম কবিতা।
হৃদয় ছুঁয়ে গেলো।
অপূর্ব !!
EXCELLENT POEM
EXCELLENT POEM, IT’S REALY HEART TOUCHING
খুব ভালো লাগলো। পুরো কবিতা যেন ছবির মত মনে ভেসে উঠল।
অসাধারণ কাব্যিক পরিবেশন।মন ছুঁয়ে গেল।
স্যার খুব ভালো লাগলো।
ভাব ও ভাষায় এক অপূর্ব সংমিশ্রন ।মন ছুঁয়ে গেলো।ইচ্ছে হচ্ছে সেই রোদবালিকাকে মনের খাঁচায় ভরে রাখি।
Khub sundar kabita
ভাব ও ভাষার সমন্নয়ে “রোদ বালিকা” কবিতাটি অতি উৎকৃষ্ট মানদণ্ডে উপস্থিত। অতীত সুখকে কাছে পেতে সকলের একান্ত ইচ্ছে।রোদ বালিকা কবিতাটি মনের গভীরে সুপ্ত আনন্দকে স্পর্শ করতে সক্ষম হয়েছে।
Asadharon lglo
অসাধারণ কবিতা, খুব ভালো লাগলো
Beautiful poem
খুব ভালো লাগল রোদবালিকা কবিতাটি। পড়তে পড়তে নিজের ছোটবেলার কথা মনে পড়ল।
Very nice poem
Good
অপূর্ব সুন্দর 👌সেই ছেলেবেলার দিনগুলো মনের কোন গোপন পাতা থেকে বেরিয়ে আসছে, কোথায় যেন শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্ত ও অন্নদার সাথে মিল পেলাম। 👍
খুব সুন্দর।পড়ে ভালো লাগলো।
Beautiful writing… Excellent poem..
Khud sundor lekha,bhalo laglo.
Mind blowing . It really touched my heart.
Mind blowing! Really it touched my heart.
Excellent poem.
Osadharon…mon chuye gelo…
Asadharon kobita..mon chuyegelo.
Excellent writing vai
Beautiful poem Real pic of childhood life
Beautiful. Real heart touching poem
রোদবালিকা ❤️
Excellent poem, touched my heart.
Khub bhalo laglo
Thank you all for giving comments and inspiring me and loving my poems