রূপজগতের পাহাড়াদার
আজ আমি এক পুরোন পরিচারকের কথা বলি।
আসলে আমরা তখন ত ছোট্টটি ছিলাম।
তখনকার দিনে ছোটদের শাসন প্রায় সকলেই করতেন, বাড়ির নিকটাত্মীয় থেকে দূরের আপনজন, পাড়া প্রতিবেশী আর বাড়ির পরিচারক পরিচারিকারাও, সেসব ত বর্তমান যুগে অকল্পনীয়।
সেই মতো এক পরিচারকের নাম ছিল দাশু, আমরা বলতাম “দাশুদা”……… ছোটনাগপুরের লোক, একটু আধটু লেখাপড়াও জানতেন।
মাঝে মাঝে বোধ হয় তার দেশের বাড়ি ও আপনলোকদের কথা মনে পড়ত, উদাস হয়ে
কাজকর্ম ও মুখ বন্ধ করে বসে থাকতেন।
তারপর , আমি দুবার করে যেই বলতাম, “দাশুদা, কুয়ো থেকে আমায় জল তুলে দেবে না, স্নান করব, গরম লাগছে যে”……..আমার কচি মুখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎই যেন তার কাজের ব্যাপার মনে হতো, উৎসাহের সাথে আবার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তেন।
সে ছিল একনিষ্ঠ এক পরিচারক,তবে তার মনের খবর কিছু আছে বা থাকতে পারে, তা যেন সকলের কাছে—– অভাবনীয়। কিন্তু ,আর কারোর কথা জানি না, আমার মন ভার হলে যাকে বলে অফ্ মুড, ঐ দাশুদাই ছলছুতোয় নানা গল্পদাওয়াই দিতে থাকতেন।
গায়ের রঙ কালো, বিশাল লম্বা, মাথায় ঘন চুল তেল চপচপে ঠাসা টেরি কাটা, যেন আঠা দিয়ে লেপটে রাখা। সত্যিই দাশুদাকে মনে হতো ঠিক রূপকথার একজন লেঠেল।
তা হোক,আর , হাসলে মনে হতো দাঁতগুলো সব সাদা পাথরের। না চাইলেও ভূতের গল্প, বিশেষ ছমছমে ডাকিনী
যোগিনীর ভয়ঙ্কর কাহিনী শুরু করতেন যা রাতের বেলা অন্ধকারে হলে, হাত পা অসাঢ় হয়ে পড়ত, তখন দাশুদাই আবার মনে সাহসও যোগাতেন। ছোটখাটো অনেক শিক্ষা দিতেন।
কথার অবাধ্য হবার প্রশ্নই নেই, ভয় ত ঐ একটাই —“ছমছম ডাইনি” গল্প আবার যদি হয়। মাথায় লাল ডোরাকাটা গামছা বাঁধা, কালো লম্বা বলিষ্ঠ শরীর , যত্ন সহকারে খুর চাঁছা মোছা পোছা দাঁড়ি — কাঁচি প্রসাধনে নিপুণ গোঁফের বাহার— দাশুদা ছিল আমার ছোট্ট মনের রূপজগতের মস্ত এক পাহাড়াদার।
সত্যিই, তাই!!!
দিন গড়িয়ে আজকের দিনেও বড্ড মনে পড়ে যায় তাকে যে বারবার।