Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রীপণ উৎসব – ভারতের নিদ্রাভঙ্গ || Hemchandra Bandyopadhyay

রীপণ উৎসব – ভারতের নিদ্রাভঙ্গ || Hemchandra Bandyopadhyay

ভাঙ্গিল কি তবে— এতদিন পরে—
ভাঙ্গিল কি ঘুম ভারতমাতা ?
জরাজীর্ণ শীর্ণ শরীরে তোমার
ফিরে কি জীবন দিল বিধাতা ?
উঠ — উঠ মাতঃ ডাকিছে তোমায়
তোমার সন্তান যে যেথা আজ,
কিবা বৃদ্ধ শিশু কিবা গুরুজন
কি দরিদ্র আর কিবা অধিরাজ ||
ডাকিছে তোমায় মহারাষ্ট্রবাসী—
ডাকিছে পারসী – পাঞ্জাবী—শিখ,
ডাকিছে তোমায় বীরপুত্রগণ—
রাজোয়ারাময় যত নির্ভীক ||
তোমার নন্দন মহম্মদীগণ,–
বাহুবলে যার ধরণী টলে,
ডাকিছে তোমায় সবে একস্বর
জাগো মা ভারত—জাগো মা ব’লে ||
একা বঙ্গ নয় হিমালয় হ’তে
কুমারীর প্রান্ত যেখানে শেষ,
আজি এক প্রাণ হিন্দু মুসলমান—
জাগাতে তোমায় জেগেছে দেশ ||
“আর ঘুমাইওনা” ব’লে কতদিন
কেঁদেছি —কেঁদেছি কত সে আর,
আজি জন্মভূমি জীবন সার্থক—
তোমার কন্ঠে এ মিলন হার ||
কতবার মাতঃ উদাসীর মত
দেখেছি তোমায় ভুবনময়
স্থাবর জঙ্গম কত দিকে কত
অরণ্য যেমন ছড়ায়ে রয় ||
দেখেছি তোমার গিরি উপত্যকা,–
শস্যক্ষেত্র ভূমি, নগর, দেশ,
ছায়ামাত্র তায় প্রাণিবৃন্দ যত
কালের কালীতে কালিম বেশ ||
জীবনের বিন্দু না হেরি কোথাই,
সব শূন্যময় – সকলি খালি,
চারিদিকে যত নরাস্থি কঙ্কাল,
চারিদিকে ধূ ধূ করিছে বালি |
উঠ গো জননি দেখো চক্ষু মেলি
সেই অস্থিগুলি নড়িছে ধীরে,
মৃদুল হিল্লোলে দেখো কি নিশ্বাস
সে শব-পঞ্জরে বহিছে ফিরে ||
একমাত্র শ্বাস মিলিত ভারত
নাসিকারন্ধ্রেতে ছাড়িল যেই,
কি মহা উত্সব বহিল উচ্ছ্বাসে —
ভারতে যাহার তুলনা নেই ||
“ আর ঘুমাইও না” ডাকি মা আবার
ভাবী আশাফল ভাবিয়া দেখো,
“রীপণ-উত্সব” সোণার অক্ষরে
হৃদয়ের মাঝে লিখিয়া রেখো |
শূন্যতল হতে নেমেছে পবন
বহিছে তোমার ভুবনময়,
নব-পল্লবিত করিতে তোমারে
ফুটাতে জীবন মঞ্জরীচয় ||

এ ধীর হিল্লোলে, যে বায়ু উঠিছে
কার সাধ্য আর নিবা’রে তারে,
অগ্রসর গতি কেবা রোধে তার—
কেবা আর তারে বাঁধিতে পারে ?
নব শিখাময় নব প্রভারাশি
ভারত ভস্মেতে মিশেছে ফের,
যে অস্থি কোলেতে কাঁদিলে ভারত
সজীব হ’বে সে শিখাতে এর |
জীবন দায়িনী এ দহন শিখা
ভারত অম্বরে ধরেছে ধীরে,
নারায়ণ মুখে হয়েছে উদ্ভব—
ভারতের বুকে থাকিবে স্থিরে ||
জ্বলিবে আরো এ যাবে কত কাল,
জ্ঞানের আলোক—বিদ্যুত্ছটা
দমে না দমনে, দমিলে দ্বিগুণ
ধরে খরতর তেজের ঘটা ||
ভূলো না ভারত “রীপণ-উত্সব”
ছিঁড়ো না যে ডোরে মিলেছ আজ,
এক বাণী ধর ভারত-সন্তান
যেখানে যে থাকো—পরো যে সাজ
মনে করো সবে নিভৃতে—উত্সবে
“রীপণ-বিদায়” নহে এ খালি,
সম আশা ভয় ভারত-অন্তরে
এ মিলন তার প্রকাশ্য ডালি ||
নহে আকস্মিক দৈব সুঘটনা—
বহুদিন হ’তে অঙ্কুর এর
জড়ায়ে জড়ায়ে ভারত-অন্তরে
শিকড়ে শিকড়ে বেঁধেছে ফের ||
আজি প্রষ্ফুতি হ’য়ে দিছে দেখা
তরুমূল যেন পল্লবময়,
ধরণীর গর্ভে ধীরে ধীরে বেড়ে
ফুলে ফুলে শেষে সাজিয়া রয় ||
ভারতের আশা ভারত-প্রত্যাশা—
জীবন উন্নতি ইহারই সার,

সুবারি-সেচক সে সব তলায়
রীপণ কেবলি লক্ষ্য রে তার ||
হবো অগ্রসর সেই আশাপথে
তিলেক তাহাতে নাহি সংশয়,
দিয়াছে দেখায়ে যে পথ উহারা
হ’বে পরিসর ধ্রুব নিশ্চয় ||
দিয়াছে যখন দেখায়ে সে আলো
দিয়াছে যখন দেখায়ে পথ,
আজি আর কালি তাহাতে পশিব
সাধনে পূরাবো স্ব-মনোরথ ||
আজি আর কালি পাবো রে সকলি—
আর এ ভারত নিদ্রিত নয়,
সম তৃষ্ণাতুর সব পুত্র তার
এক ( ই ) পথপানে চাহিয়া রয় ||
এক ( ই ) পথ পানে চাহে মহারাষ্ট্র
চাহে সে পারসী— পঞ্জাবী— শিখ,
চাহে ভারতের বীরপুত্রগণ—
রাজোয়ারাময় যত নির্ভীক ||

ভারতনন্দন মহম্মদীগণ—
তাহারাও আজি — জাগো মা-বলে ;
সেই পথপানে একদৃষ্টে চাহে
সাধনা সাধিতে সে পথে চলে |
উঠ উঠ মাতঃ ডাকিছে তোমায়
তোমার সন্তান যে যেথা আজ,
কিবা বৃদ্ধ শিশু কিবা যুবাদল
কি দরিদ্র আর কিবা অধিরাজ ||
একা বঙ্গ নয়— হিমালয় হ’তে
কুমারীর প্রান্ত যেখানে শেষ,
আজি এক প্রাণ হিন্দু মুসলমান
জাগাতে তোমারে জেগেছে দেশ ||
উঠ উঠ মাতঃ ছাড়ো নিদ্রা ঘোর
পূরিয়া নিশ্বাস ফেল গো মাতঃ,
দেখি কি না হয় অরুণ উদয়–
তরুণ ছটাতে প্রভাত প্রাতঃ ||

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *