ভাঙ্গিল কি তবে— এতদিন পরে—
ভাঙ্গিল কি ঘুম ভারতমাতা ?
জরাজীর্ণ শীর্ণ শরীরে তোমার
ফিরে কি জীবন দিল বিধাতা ?
উঠ — উঠ মাতঃ ডাকিছে তোমায়
তোমার সন্তান যে যেথা আজ,
কিবা বৃদ্ধ শিশু কিবা গুরুজন
কি দরিদ্র আর কিবা অধিরাজ ||
ডাকিছে তোমায় মহারাষ্ট্রবাসী—
ডাকিছে পারসী – পাঞ্জাবী—শিখ,
ডাকিছে তোমায় বীরপুত্রগণ—
রাজোয়ারাময় যত নির্ভীক ||
তোমার নন্দন মহম্মদীগণ,–
বাহুবলে যার ধরণী টলে,
ডাকিছে তোমায় সবে একস্বর
জাগো মা ভারত—জাগো মা ব’লে ||
একা বঙ্গ নয় হিমালয় হ’তে
কুমারীর প্রান্ত যেখানে শেষ,
আজি এক প্রাণ হিন্দু মুসলমান—
জাগাতে তোমায় জেগেছে দেশ ||
“আর ঘুমাইওনা” ব’লে কতদিন
কেঁদেছি —কেঁদেছি কত সে আর,
আজি জন্মভূমি জীবন সার্থক—
তোমার কন্ঠে এ মিলন হার ||
কতবার মাতঃ উদাসীর মত
দেখেছি তোমায় ভুবনময়
স্থাবর জঙ্গম কত দিকে কত
অরণ্য যেমন ছড়ায়ে রয় ||
দেখেছি তোমার গিরি উপত্যকা,–
শস্যক্ষেত্র ভূমি, নগর, দেশ,
ছায়ামাত্র তায় প্রাণিবৃন্দ যত
কালের কালীতে কালিম বেশ ||
জীবনের বিন্দু না হেরি কোথাই,
সব শূন্যময় – সকলি খালি,
চারিদিকে যত নরাস্থি কঙ্কাল,
চারিদিকে ধূ ধূ করিছে বালি |
উঠ গো জননি দেখো চক্ষু মেলি
সেই অস্থিগুলি নড়িছে ধীরে,
মৃদুল হিল্লোলে দেখো কি নিশ্বাস
সে শব-পঞ্জরে বহিছে ফিরে ||
একমাত্র শ্বাস মিলিত ভারত
নাসিকারন্ধ্রেতে ছাড়িল যেই,
কি মহা উত্সব বহিল উচ্ছ্বাসে —
ভারতে যাহার তুলনা নেই ||
“ আর ঘুমাইও না” ডাকি মা আবার
ভাবী আশাফল ভাবিয়া দেখো,
“রীপণ-উত্সব” সোণার অক্ষরে
হৃদয়ের মাঝে লিখিয়া রেখো |
শূন্যতল হতে নেমেছে পবন
বহিছে তোমার ভুবনময়,
নব-পল্লবিত করিতে তোমারে
ফুটাতে জীবন মঞ্জরীচয় ||
এ ধীর হিল্লোলে, যে বায়ু উঠিছে
কার সাধ্য আর নিবা’রে তারে,
অগ্রসর গতি কেবা রোধে তার—
কেবা আর তারে বাঁধিতে পারে ?
নব শিখাময় নব প্রভারাশি
ভারত ভস্মেতে মিশেছে ফের,
যে অস্থি কোলেতে কাঁদিলে ভারত
সজীব হ’বে সে শিখাতে এর |
জীবন দায়িনী এ দহন শিখা
ভারত অম্বরে ধরেছে ধীরে,
নারায়ণ মুখে হয়েছে উদ্ভব—
ভারতের বুকে থাকিবে স্থিরে ||
জ্বলিবে আরো এ যাবে কত কাল,
জ্ঞানের আলোক—বিদ্যুত্ছটা
দমে না দমনে, দমিলে দ্বিগুণ
ধরে খরতর তেজের ঘটা ||
ভূলো না ভারত “রীপণ-উত্সব”
ছিঁড়ো না যে ডোরে মিলেছ আজ,
এক বাণী ধর ভারত-সন্তান
যেখানে যে থাকো—পরো যে সাজ
মনে করো সবে নিভৃতে—উত্সবে
“রীপণ-বিদায়” নহে এ খালি,
সম আশা ভয় ভারত-অন্তরে
এ মিলন তার প্রকাশ্য ডালি ||
নহে আকস্মিক দৈব সুঘটনা—
বহুদিন হ’তে অঙ্কুর এর
জড়ায়ে জড়ায়ে ভারত-অন্তরে
শিকড়ে শিকড়ে বেঁধেছে ফের ||
আজি প্রষ্ফুতি হ’য়ে দিছে দেখা
তরুমূল যেন পল্লবময়,
ধরণীর গর্ভে ধীরে ধীরে বেড়ে
ফুলে ফুলে শেষে সাজিয়া রয় ||
ভারতের আশা ভারত-প্রত্যাশা—
জীবন উন্নতি ইহারই সার,
সুবারি-সেচক সে সব তলায়
রীপণ কেবলি লক্ষ্য রে তার ||
হবো অগ্রসর সেই আশাপথে
তিলেক তাহাতে নাহি সংশয়,
দিয়াছে দেখায়ে যে পথ উহারা
হ’বে পরিসর ধ্রুব নিশ্চয় ||
দিয়াছে যখন দেখায়ে সে আলো
দিয়াছে যখন দেখায়ে পথ,
আজি আর কালি তাহাতে পশিব
সাধনে পূরাবো স্ব-মনোরথ ||
আজি আর কালি পাবো রে সকলি—
আর এ ভারত নিদ্রিত নয়,
সম তৃষ্ণাতুর সব পুত্র তার
এক ( ই ) পথপানে চাহিয়া রয় ||
এক ( ই ) পথ পানে চাহে মহারাষ্ট্র
চাহে সে পারসী— পঞ্জাবী— শিখ,
চাহে ভারতের বীরপুত্রগণ—
রাজোয়ারাময় যত নির্ভীক ||
ভারতনন্দন মহম্মদীগণ—
তাহারাও আজি — জাগো মা-বলে ;
সেই পথপানে একদৃষ্টে চাহে
সাধনা সাধিতে সে পথে চলে |
উঠ উঠ মাতঃ ডাকিছে তোমায়
তোমার সন্তান যে যেথা আজ,
কিবা বৃদ্ধ শিশু কিবা যুবাদল
কি দরিদ্র আর কিবা অধিরাজ ||
একা বঙ্গ নয়— হিমালয় হ’তে
কুমারীর প্রান্ত যেখানে শেষ,
আজি এক প্রাণ হিন্দু মুসলমান
জাগাতে তোমারে জেগেছে দেশ ||
উঠ উঠ মাতঃ ছাড়ো নিদ্রা ঘোর
পূরিয়া নিশ্বাস ফেল গো মাতঃ,
দেখি কি না হয় অরুণ উদয়–
তরুণ ছটাতে প্রভাত প্রাতঃ ||