রামায়ণ : আদিকাণ্ড – রাক্ষসের দৌরাত্মে মুনিদের যজ্ঞপূর্ণ না হওয়াতে তাহা নিবারণের উপায়
এইরূপে দশরথ চারি পুত্র লৈয়া।
সাম্রাজ্য করেন ভোগ সাবধান হৈয়া।।
হেথা মিথিলায় যজ্ঞ করে মুনিগণ।
যজ্ঞপূর্ণ নাহি হয় রাক্ষস কারণ।।
যজ্ঞ আরম্ভণ যেই করে মুনিবর।
করে রক্ত বর্ষণ মারীচ নিশাচর।।
যজ্ঞহীন হইলেক মিথিলা-ভুবন।
করেন জনক যুক্তি লয়ে মুনিগণ।।
তার মধ্যে বলিলেন বিশ্বামিত্র মুনি।
অযোধ্যায় গিয়া রামচন্দ্রে আমি আনি।।
রাক্ষস বধের হেতু ধরি রাম-বেশ।
দশরথ গৃহে অবতীর্ণ হৃষীকেশ।।
বলিলেন জনক শুনহ মহাশয়।
তুমি রক্ষা করিলে এ যজ্ঞ রক্ষা হয়।।
বিশ্বামিত্র সকলেরে করিয়া আশ্বাস।
চলিলেন যথা রাম অযোধ্যা নিবাস।।
উপস্থিত হইলেন অযোধ্যার দ্বারে।
দ্বীরী গিয়া জানাইল তখনি রাজারে।।
ভূপতি শুনিবামাত্র বিশ্বামিত্র নাম।
চিন্তিয়া কহেন বুঝি বিধি আজি বাম।।
বিশ্বামিত্র মুনি এই বড়ই বিষম।
প্রমাদ ঘটায় কিম্বা করে কোন ক্রম।।
সূর্য্যবংশে ছিল হরিশ্চন্দ্র মহারাজ।
ভার্য্যা পুত্র বেচাইয়া দিল তারে লাজ।।
আসি বন্দিলেন রাজা মুনির চরণ।
শিষ্টাচার পূর্ব্বক করেন নিবেদন।।
তব আগমনে মম পবিত্র আলয়।
আজ্ঞা কর, কোন কার্য্য করি মহাশয়।।
বিশ্বামিত্র বলেন শুন হে দশরথ।
শ্রীরামেরে দেহ যদি হয় অভিমত।।
মুনিগণ যজ্ঞ করে করিয়া প্রয়াস।
রাক্ষস আসিয়া সদা করে যজ্ঞনাশ।।
এই ভার মহারাজ দিলাম তোমারে।
শ্রীরাম লক্ষ্মণে দেহ যজ্ঞ রাখিবারে।।
যেইমাত্র বিশ্বামিত্র কহেন এ কথা।
ভূপতি ভাবেন মনে হেঁট করি মাথা।।
পুত্রশোকে মৃত্যু মম লিখন- কপালে।
না জানি হইবে মৃত্যু মম কোন্ কালে।।
অন্ধকের শাপ মনে করে ধুক্ ধুক্।
কখন মরিব নাহি দেখে চাঁদমুখ।।
প্রাণ চাহ যদি মুনি প্রাণ দিতে পারি।
একদণ্ড রামচন্দ্রে না দেখিলে মরি।।
অতএব রামচন্দ্র না দিব তোমারে।
এক দণ্ড না দেখিলে হৃদয় বিদরে।।
আদিকাণ্ড গান কৃত্তিবাস বিচক্ষণ।
রাম ধ্যান রাম জ্ঞান রাম সে জীবন।।