রামায়ণ : আদিকাণ্ড – জনক ঋষির চাষে সীতার জন্ম
শ্রীহরি জন্ম-কথা থাকুক এখন।
আগেতে কহিব মাতা লক্ষ্মীর জনম।।
যেখানেতে বেদবতী ছাড়িল জীবন।
সেখানে হইল দিব্য মিথিলা ভুবন।।
তার রাজা হইল জনক নামে ঋষি।
পুত্রের কারণে রাজা যজ্ঞভুমি চষি।।
স্বহস্তে লাঙ্গলে রাজা চাষভূমি চষে।
ঊর্ব্বশী চলিয়া যায় উপর আকাশ।।
তাহাকে দেখিয়া কামে জনক মোহিত।
হঠাৎ ঋষির বীর্য্য হইল স্খলিত।।
দৈবযোগে পৃথিবী আছিল ঋতুমতী।
ঋষিবীর্য্য পড়িল, হইল গর্ভবতী।।
ডিম্বরূপে ভূমিমধ্যে ছিল বহুকালে।
ভাসিয়া উঠিল ডিম্ব-লাঙ্গল সীরালে।।
ডিম্ব ভাঙ্গি জনক করিল খান খান।
কন্যারত্ন দেখে তাহা লক্ষ্মীর সমান।।
উঙা উঙা করি কান্দে যেন সৌদামিনী।
আচম্বিতে আকাশে হইল দৈববাণী।।
চাষভূমি হৈতে এই কন্যার জনম।
তব কন্যা বটে এই করহ পালন।।
শুনিয়া জনক বড় হরিষ অন্তরে।
কন্যা কোলে করিয়া তখন আসে ঘরে।।
দেখি কন্যা রাজরাণী জিজ্ঞাসে তখন।
দুঃখ দিয়া কাহারে আনিলা কন্যাধন।।
জনক বলেন, ক্ষেত্রে কন্যার জনম।
মম কন্যা বটে তুমি করহ পালন।।
অপত্য নাহিক স্নেহ বাড়িল অন্তরে।
দিনে দিনে বাড়ে লক্ষ্মী জনকের ঘরে।।
ঘন কেশপাশ তাঁর যেমন চামর।
পাকা বিম্বফল তুল্য তাঁর ওষ্ঠাধর।।
মুষ্টিতে ধরিতে পরি তাঁহার কাঁকালি।
হিঙ্গুলে মণ্ডিত পাদপদ্মের অঙ্গুলী।।
পরমা সুন্দরী কন্যা যেন হেমলতা।
সীরালে হইল জন্ম নাম থুল সীতা।।
লক্ষ্মীর রূপের কিবা কহিব তুলন।
যাঁর রূপে ভুলিলেন নিজে নারায়ণ।।
যেই জন শুনে এই লক্ষ্মীর জনম।
ধন পুত্র লক্ষ্মী তারে দেন নারায়ণ।।
কৃত্তিবাস পণ্ডিত কবিত্বে বিচক্ষণ।
গাইল এ আদিকাণ্ড লক্ষ্মীর জনম।।