রামায়ণ : আদিকাণ্ড – দশরথ কর্ত্তৃক সম্বর-অসুর বধ
রাজ্য কর দশরথ যেন পুরন্দর।
হইল অসুর স্বর্গে নামেতে সম্বর।।
হইল সম্বর দৈত্য দেবতার অরি।
জিনিল অমরাবতী বৈজয়ন্তীপুরী।।
তার ভয়ে স্বর্গে দেব রহিতে না পারে।
মহেন্দ্র বলেন, ব্রহ্মা বাঁচি কি প্রকারে।।
ব্রহ্মা বলিলেন আন রাজা দশরথে।
অসুর সম্বর মরিবেক তাঁর হাতে।।
আপনি আইল ইন্দ্র অযোধ্যা-নগর।
পাদ্য অর্ঘ্যে দশরথ পূজে পুরন্দর।।
ইন্দ্র বলে দশরথ তুমি মোর মিত।
ঠেকেছি সঙ্কটে রক্ষা কর এই হিত।।
অসুর সম্বর নামে তারে আমি হারি।
খেদাড়িয়া দেবগণ নিল স্বর্গপুরী।।
আমার সহায় হৈয়া যদি কর রণ।
তোমার প্রসাদে তবে বাঁচে দেবগণ।।
শুনিয়া ইন্দ্রের কথা দশরথ হাসে।
সম্বরে মারিব আমি তুমি যাহ বাসে।।
এতেক শুনিয়া ইন্দ্র গেলেন স্বর্গেতে।
সম্বরে মারিতে রাজা সাজে দশরথে।।
সাজ সাজ বলিয়া পড়িয়া গেল সাড়া।
রাহুত মাহুত সাজাইল হাতী ঘোড়া।।
মুদগর মুষল কেহ বান্ধিল কামান।
ধানুকী সাজিছে রণে লয়ে ধনুর্ব্বাণ।।
সাজিছে কটক সব নাহি দিশপাশ।
কটকের পদধূলি লাগিল আকাশ।।
গায়েতে পড়িল সানা মাথায় টোপর।
ধনুর্ব্বাণ হাতে রাজা চলিল সত্বর।।
দিব্যরথ যোগাইল রথের সারথি।
রথে চড়ি দশরথ চলে শীঘ্রগতি।।
সম্বরে জিনিতে রাজা করিল গমন।
দশরথে দেখিয়া কাঁপিল ত্রিভুবন।।
চতুর্দ্দোলে চড়ি রাজা চলে কুতূহলে।
রথ রথী পদাতি তুরঙ্গ হাতী চলে।।
উত্তরিল গিয়া রাজা ইন্দ্রের নগরী।
দেখিয়া রাজার সাজ ক্রোধে দেব-অরি।।
রাজার উপরে মারে সে জাঠি ঝকড়া।
স্বর্গপুরী ছাইল রথের ভাঙ্গে চূড়া।।
দশরথে বাণে বিন্ধি করিল জর্জ্জর।
ভঙ্গ দিল সেনা, রাজা রহে একেশ্বর।।
কোপে কাঁটি দশরথ পূরিল সন্ধান।
অস্ত্রাঘাতে দৈত্যসেনা ত্যজিল পরাণ।।
নানা অস্ত্র বর্ষণ করেন দশরথ।
ছাইল অমরাবতী পবনের পথ।।
সম্বরের সেনাগণ সমরে প্রখর।
ভূপতির সেনা বিন্ধি করিল জর্জ্জর।।
লক্ষ লক্ষ বাণ পূরে সম্বরের সেনা।
পড়িলেক স্বর্গপুরী ছাইয়া ঝঞ্ঝনা।।
পড়িল গান্ধর্ব্ব অস্ত্র ভূপতির মনে।
এমন অস্ত্রের শিক্ষা নাহি ত্রিভুবনে।।
এক বাণ প্রসবে গন্ধর্ব্ব তিন কোটি।
আপনা আপনি রিপু করে কাটাকাটি।।
আপনা আপনি করে বাণ বরিষণ।
এক বাণে পড়িল সকল সেনাগণ।।
সম্বরের সেনা দেয় রক্তেতে সাঁতার।
ত্রাহি ত্রাহি করি সবে করে হাহাকার।।
পড়িল সকল সেনা দৈত্য একেশ্বর।
দশরথ-বাণে সেনা পড়িল বিস্তর।।
দুইজন বাণবৃষ্টি করে ঝাঁকে ঝাঁকে।
উভয়ের বাণেতে অমরাবতী ঢাকে।।
হইল অমরাবতী বাণে অন্ধকার।
দৈত্যের রণেতে রাজা না দেখে নিস্তার।।
শব্দভেদী দশরথ শব্দ শুনি হানে।
দেখিতে না পায় দৈত্য থাকে কোন্খানে।।
কালপ্রাপ্ত দানবের নিকট মরণ।
দূরে থাকি দশরথে করিছে তর্জ্জন।।
সম্বরের পেয়ে শব্দ রাজা পূরে বাণ।
ছুটিল রাজার বাণ অগ্নির সমান।।
এড়িলেক বাণ রাজা তার শুন কথা।
কাটে রাজা দশরথ সম্বরের মাথা।।
নর হৈয়া মারিলেন অসুর সম্বর।
দেব সহ সুখে রাজ্য পালে পুরন্দর।।
ইন্দ্র বলে দশরথ রক্ষা কৈলে মোরে।
বর মাগ দিব যাহা প্রার্থনা অন্তরে।।
দশরথ বলে ইন্দ্র দেহ এই বর।
যেন মুনিহত্যা নাহি থাকে মমোপর।।
শুনিয়া রাজার কথা ইন্দ্রদেব হাসে।
সে পাপ তোমাতে নাই যাও তুমি দেশে।।
অন্ধক মুনির কথা অপূর্ব্ব কাহিনী।
ব্রাহ্মণ তাঁহার পিতা শূদ্রাণী জননী।।
এতেক শুনিয়া দশরথ আইল দেশে।
আদিকাণ্ড গাইল পণ্ডিত কৃত্তিবাসে।।