রামায়ণ : আদিকাণ্ড – সগর বংশ উদ্ধার
কাণ্ডারের প্রতি গঙ্গা মুক্তিপদ দিয়া।
গৌড়ের নিকটে গঙ্গা মিলিয়া আসিয়া।।
পদ্ম নামে এক মুনি পূর্ব্বমুখে যায়।
ভগীরথ বলি গঙ্গা পশ্চাৎ গোড়ায়।।
যোড়হাত করিয়া বলেন ভগীরথ।
পূর্ব্বদিক যাইতে আমার নাহি পথ।।
পদ্ম মুনি লয়ে গেল নাম পদ্মবতী।
ভগীরথ সঙ্গেতে চলিল ভাগীরথী।।
শাপবাণী সুরধুনী দিলেন পদ্মারে।
মুক্তপদ যেন নাহি হয তব নীরে।।
একবার গেল গঙ্গা ভৈরব-বাহিনী।
আরবার ফিরিলেন সাগর-গামিনী।।
অজয় গঙ্গার জল হইল দর্শন।
শঙ্খধ্বনি করেন যতেক দেবগণ।।
শঙ্খধ্বনি ঘাটে যেবা নর স্নান করে।
অযুত বৎসর সেই থাকে স্বর্গপুরে।।
নিমেষেতে আইলেন নাম ইন্দ্রেশ্বর।
গঙ্গা লয়ে ভগীরথ চলিল সত্বর।।
গঙ্গাজলে যথা ইন্দ্র করিলেন স্নান।।
ইন্দ্রেশ্বর ঘাটে যেবা নর স্নান করে।
সর্ব্বপাপে মুক্ত হয়ে যায় স্বর্গপুরে।।
চলিলেন গঙ্গামাতা করি বড় ত্বরা।
মেড়াতলা নাম স্থানে যায় সরিদ্বরা।।
মেড়ায় চড়িয়া বৃদ্ধ আইল ব্রাহ্মণ।
মেড়াতলা বলি নাম এই সে কারণ।।
গঙ্গারে লইয়া যান আনন্দিত হৈয়া।
আসিয়া মিলিল গঙ্গা তীর্থ যে নদীয়া।।
সপ্তদ্বীপ মধ্যে আর নবদ্বীপ গ্রাম।
এক রাত্রি গঙ্গা তথা করিল বিশ্রাম।।
রথে চড়ি ভগীরথ যান আগুয়ান।
আসিয়া মিলিলা গঙ্গা সপ্তগ্রাম স্থান।।
সপ্তগ্রাম তীর্থ জান প্রয়াগ সমান।
সেখান হইতে গঙ্গা করেন প্রয়াণ।।
আকনা মহেশ গঙ্গা দক্ষিণ করিয়া।
বিহোরদের ঘাটে গঙ্গা উত্তরিল গিয়া।।
গঙ্গা বলিলেন বাপ শুন ভগীরথ।
কত দূরে তোমার দেশের আছে পথ।।
ভ্রমিতেছি এক বর্ষ তোমার সংহতি।
কোথা আছে ভস্মময় সগর-সন্ততি।।
ভগীরথ বলেন মা এই পড়ে মনে।
পূর্ব্ব ও দক্ষিণ দিক তার মধ্যস্থানে।।
যেইখানে আছিল কপিল মহামুনি।
সেইখানে মম বংশ মাতৃমুখে শুনি।।
এই কথা যেস্থানে গঙ্গারে রাজা বলে।
হইলেন শতমুখী গঙ্গা সেই স্থলে।।
আছিল সগরবংশ ভস্মরাশি হৈয়া।
বৈকুণ্ঠে চলিল সবে গঙ্গাজল পাইয়া।।
হস্ত তুলি গঙ্গা ভগীরথেরে দেখান।
ওই তব বংশ দেখ স্বর্গবাসে যান।।
একজন রহিল জলের অধিকারী।
আর সব চতুর্ভুজে গেল স্বর্গপুরী।।
বংশ মুক্ত হইল দেখিয়া ভগীরথে।
গঙ্গাকে প্রণাম করি লাগিল নাচিতে।।
গঙ্গা বলে, দেশে যাও রাজার নন্দন।
সাগরের সঙ্গে আমি করিগে মিলন।।
মহাতীর্থ হইল সে সাগর-সঙ্গম।
তাহাতে যতেক পুণ্য, কে করে কথন।।
যে গঙ্গাসাগরে নর স্নান দান করে।
সর্ব্ব পাপে মুক্ত হয়ে যান স্বর্গপুরে।।
কৃত্তিবাস পণ্ডিতের কবিত্ব মহৎ।
গঙ্গা আনি লোক মুক্ত কৈল ভগীরথ।।