Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রাত আড়াইটার পঙ্‌ক্তিমালা || Shamsur Rahman

রাত আড়াইটার পঙ্‌ক্তিমালা || Shamsur Rahman

এখন রাত আড়াইটা। টেবিলে ঝুঁকে আমি লিখছি। মৃত্যুশয্যাপ্রতিম গলিতে
হঠাৎ কুকুরের হাসি না কান্না, বোঝা দায়। কান খাড়া করে কিছুক্ষণ বাইরের
অন্ধকারে তাকিয়ে থাকি। আবার একটি বাক্যের খণ্ডাংশকে পুরো সাজিয়ে
তুলতে কলম ধরি। কয়েক মিনিট কাগজ আর কলমের মোহন ঘর্ষণ চলে,
এমন সময় আমার মার কণ্ঠস্বর শুনে চমকে উঠি। এক শ’ পাঁচ ডিগ্রির জ্বরতপ্ত
কপালে ন্যস্ত শীতল পানিপট্রির মতো স্নেহার্দ্রে হাত আমার কাঁধে রেখে মা
বললেন, ‘বাচ্চু, তুই এত রাত জেগে লিখছিস? তোর চোখে না ভয়ঙ্কর অসুখ?
আজকাল তোর বাম ফুসফুস তো ঘন ঘন ভোগাচ্ছে তোকে। ফজর হতে
এখনও অনেক দেরি। যা, সূর্য না ওঠা পর্যন্ত ভালো করে ঘুমিয়ে নে। এভাবে
রাজ জেগে লিখলে তুই তো জলদি সব আন্ধার দেখতে শুরু করবি। চোখ
দুটোই খুইয়ে বসবি। বিমারি আরও বেশি খুবলে খাবে তোকে। আয় বাচ্চু,
তোকে ঘুম পাড়িয়ে দিই যেমন দিতাম তোর সুদূর গোলাপ গাছের সবুজ
কোমল পাতা আর ভোরের কচি, মধুর রোদের মতো ছেলেবেলায়। অনন্তর
মা মিলিয়ে গেল রাতের হাওয়ায়।

মার মৃত্যুর পর দেখতে-দেখতে সাত মাস কেটে গেছে। তাঁর চলে যাওয়ার
পর কয়েকদিন গোরস্তানে গিয়েছি, দাঁড়িয়েছি তাঁর কবরের পাশে বিষণ্ন
হৃদয়ে। এর পর বহুদিন যাওয়া হয়নি। এক সময় এমন ছিল যখন একদিন
তাঁর জ্যোতির্ময়ী মুখ না দেখলে ভালো লাগত না আর আজকাল তাঁকে না
দেখে দিব্যি মেতে আছি নানা কাজে। হায়, তাঁর সমাধিও কেমন ধূসর হয়ে
উঠছে আমার স্মৃতির কবরস্তানে। প্রাণের স্পন্দনই মানুষের চির-কাঙ্ক্ষনীয়,
মৃত্যুর শৈত্য তাকে ক্রমাগত দূরে সরিয়ে দেয়।

লেখার খাতা থেকে চোখ সরিয়ে দেখি, দিগন্তের অন্ধকারকে অধিক
অন্ধকারাচ্ছন্ন করে অ্যাপোকোলিপসের চার ঘোড়সওয়ার ছুটে আসছে। ওদের
ঘোড়ার ক্ষুর থেকে ঠিকরে বেরুচ্ছে সর্বব্যাপী সর্বনাশের হল্‌কা। কবরখানার
সমাধিগুলো ফুঁড়ে বেরিয়ে পড়েছে অগণিত মুর্দা জীবিতদের ঘরবাড়ি
জবরদখল করবার জন্যে। হে স্নেহময়ী মা আমার, এ কী দেখাচ্ছ তুমি
আমাকে! প্রতারক স্মৃতি-স্বপ্ন নিয়ে আর কতকাল থাকতে হবে আমাকে?

আম্মা, হে আমার জন্মদাত্রী, সাত মাস পর তোমাকেই আমি যন্ত্রণাকাতর
স্মৃতিগর্ভ থেকে জন্ম দিয়েছি আজ রাত আড়াইটায়। আর কতবার তোমার
জন্মদাতা হব বাস্তবের কাঁকর আর ধুলোবালিতে দাঁড়িয়ে, কে জানে? মা,
আমার এই পঙ্‌ক্তিমালায় তুমি কি কোনও এতিমের ফোঁপানি শুনতে পাচ্ছ?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *