Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রাজবাড়ির রহস্য || Sunil Gangopadhyay » Page 10

রাজবাড়ির রহস্য || Sunil Gangopadhyay

গুরুদেবের আশ্রমের দরজাটা ঠেলে ঢুকলেন কাকাবাবু। ভেতরে মশাল জ্বলছে। বাঘছালটার ওপর গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছেন গুরুদেব। তাঁর সবেমাত্র তন্দ্রা এসেছে। তিনি এখনও ঘুমোননি। কাকাবাবুর পায়ের শব্দ পেয়ে তিনি চোখ না খুলেই বললেন, ওরে ঝমরু, এবার মশালটা নিবিয়ে দিয়ে যা!

কাকাবাবু বললেন, ঝমরু এখানে নেই। আমার নাম রাজা রায়চৌধুরী। সন্ন্যাসী ঠাকুর, আপনার সঙ্গে দুএকটা কথা বলতে এলাম।

গুরুদেব তাড়াতাড়ি উঠে পড়লেন। কাকাবাবুও ক্রাচ দুটো দেওয়ালের গায়ে হেলান দিয়ে রেখে হাঁটু গেড়ে বসলেন গুরুদেবের সামনে!

গুরুদেব বললেন, তুই আবার এখানে এসেছিস? তুই কি এবার মরতে চাস?

কাকাবাবু হেসে বললেন, না, সন্ন্যাসীবাবা, আমার মরার জন্য তাড়াহুড়ো কিছু নেই। কোনও এক সময় মরলেই হবে! এখন আপনার সঙ্গে কিছু বলতে চাই।

গুরুদেব এক হাত উঁচু করে বললেন, তুই যা, তুই যা! তুই ভুলে যা সব কিছু! ভুলে যা, ভুলে যা।

কাকাবাবুও একটা হাত উঁচু করে বললেন, আমি যাব না, আমি যাব না। তুমি সন্ন্যাসী, আমার সব প্রশ্নের উত্তর দেবে। উত্তর দেবে…

দুজনেই হাত তুলে পরস্পরের চোখের দিকে তীব্র দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। দুজনেই সম্পূর্ণ মনের জোর নিয়ে এসেছেন চোখে। কেউ কাউকে টলাতে পারলেন না। এক সময় গুরুদেব বললেন, তুমি কী করতে চাইছ, তা আমি বুঝেছি। শোনো বৎস, দুনিয়ার কারও এমন শক্তি নেই আমাকে সম্মোহিত করতে পারে।

কাকাবাবু হেসে বললেন, আপনিও আজ আমাকে সম্মোহিত করতে পারেননি, সাধুবাবা! কাল রাত্রে আপনি এমনভাবে আমার সামনে এসে হাজির হলেন, যে আমি তৈরি হবার সুযোগ পাইনি।

গুরুদেব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, আমি এখন খুব ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। আমি চম্পাকে জাগাবার জন্য বহু পরিশ্রম করেছি, নিজের আয়ুক্ষয় করেছি। তাই এখন আমি দুর্বল হয়ে আছি। নইলে, তোমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে আমার কয়েক মুহূর্তের বেশি লাগত না! তা বলে তুমি আমাকে অবশ করতে পারবে না। তোমাকে আমি কিছুই বলব না, তুমি দূর হয়ে যাও! ইচ্ছে হয় তো পুলিশের কাছে যাও!

কাকাবাবু বিদ্রুপের সঙ্গে বললেন, আপনি হঠাৎ পুলিশের কথা বললেন কেন? তার মানে আপনি কিছু অন্যায় করেছেন, তা স্বীকার করছেন? আপনি সাধুবেশে এক পাপী?

গুরুদেব জ্বলে উঠে বললেন, অন্যায়! তুমি নিমকহারাম! অকৃতজ্ঞ!

এবার কাকাবাবুর অবাক হবার পালা। তিনি বললেন, আমি নিমকহারাম? আমি অকৃতজ্ঞ? কার কাছে অকৃতজ্ঞ? আপনার কাছে?

কাল রাতে জঙ্গলের মধ্যে তুমি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলে। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বিশ মুহূর্তও স্থির থাকতে পারোনি! সেই অবস্থায় যদি আমি তোমাকে ফেলে রেখে দিতাম, তোমাকে শেয়ালে কুকুরে খেয়ে নিত। আমিই মনোজকে বুঝিয়ে, দুজনে ধরাধরি করে তোমাকে জঙ্গল থেকে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে এসেছিলাম। কাল ওই জঙ্গলে হায়নার ডাক শোনা গিয়েছিল। আমি না বাঁচিয়ে রাখলে তুমি এখন কোথায় থাকতে?

আপনারাই আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে এসেছেন? ধন্যবাদ। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, আপনি মানুষ খুন করেন না!

আমি মানুষকে মারি না, আমি মানুষকে বাঁচাই! আমি চম্পাকে বাঁচিয়ে তুলেছি!

পনেরো বছর বাদে? চম্পার দেহ যখন শুধু একটা কঙ্কাল ছাড়া কিছুই। নয়?

চম্পা অন্য ঘরে জন্মেছে। আমার টানে সে আবার এখানে চলে এসেছে। সে আসতই। আমি সেই মেয়েটির শরীরে চম্পার আত্মাকে ঢুকিয়ে দিয়েছি। এখন সে-ই চম্পা?

একটি মেয়ের সঙ্গে আর-একটি মেয়ের চেহারার মিল একটা নিছক আকস্মিক ব্যাপার। একজন মরে গেছে অনেকদিন আগে, আর-একজন বেঁচে আছে। এই দুজনে মিলে এক কি হতে পারে? অসম্ভব!

মূখ তুমি কিছুই জানো না। দুপাতা ইংরেজি পড়ে তোমরা সবজান্তা হয়ে যাও! তবে শোনো, সব ঘটনা! ছোটরানীর ভাইয়ের সাঙ্গোপাঙ্গরা এক রাত্তিরে বীভৎসভাবে খুন করেছিল চম্পাকে। ওই বাড়ির রাজাদের আর কারও মেয়ে ছিল না, চম্পা একমাত্র মেয়ে। ওই বয়েসেই আমার প্রতি চম্পার খুব ভক্তি ছিল, শ্রদ্ধা ছিল। আমি তার মৃত্যু সহ্য করতে পারিনি। আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, তাকে বাঁচিয়ে তুলবই। তার দেহটা নিয়ে গিয়ে রেখে দিলাম সুড়ঙ্গের মধ্যে গোপন করে। বহুকাল ওই সুড়ঙ্গের পথ বন্ধ। বড় রাজা আর। আমি ছাড়া ওই সুড়ঙ্গের কথা আর কারও জানা ছিল না। যেখানে বসে আমি দিনের পর দিন শবসাধনা করেছি, আমার সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছি। তবু তখন আমি চম্পাকে বাঁচাতে পারিনি। কিন্তু আমি জানতাম, চম্পা একদিন অন্য ঘরে জন্ম নেবেই, আমার টানে সে ঠিকই ছুটে আসবে। সে এসেছে কি না? আমার প্রতিজ্ঞা সার্থক হয়েছে কি না বলো? অস্বীকার করতে পারবে?

যে এসেছে, সে চম্পা নয়, সে দেবলীনা। সে তার বাবার সঙ্গে এখানে বেড়াতে এসেছিল। তার চেহারার সঙ্গে চম্পার চেহারার খানিকটা সাদৃশ্য দেখে ওখানকার কোনও লোক আপনাকে খবর দিয়েছে। তারপর আপনি ওই দেবলীনা নামের মেয়েটিকে সম্মোহিত করেছেন। প্রথমবারই দেবলীনাকে ধরে নিয়ে গেলেন না কেন? দ্বিতীয়বার সে আমার সঙ্গে না-আসতেও পারত?

ধরে নিয়ে আসব কেন? তাকে নিজের থেকে আসতে হবে। ওই মেয়েটিকে তো কেউ জোর করে ধরে আনেনি। সে আগের জন্মের চম্পা। তাই সে নিজের থেকে আমার কাছে এসেছে। প্রথমবার সে ফিরে গেলেও আমি নিশ্চিত জানতাম, তাকে আসতেই হবে!

সাধুবাবা, আমার মতে এটা কাকতালীয় ছাড়া আর কিছুই না! আমি দেবলীনাকে নিয়ে এসেছি এবার। আমি তাকে ফিরিয়েও নিয়ে যাব!

তুমি পারবে না! সে এখন পুরোপুরি চম্পা। সে চিনতেই পারবে না তোমাকে। আমাকে আর তার বাবাকে ছাড়া সে আর কাউকেই মানবে না।

চম্পার বাবা মেজো রাজা একা-একা থাকেন। শুনেছি, তিনি অনেকটা পাগলের মতন হয়ে গেছেন। তাঁর ছেলেমেয়ে নেই! একটি মেয়েকে চম্পা সাজিয়ে তাঁর কাছে পাঠালে তিনি হয়তো তাকেই আঁকড়ে ধরবেন। তারপর সেই বৃদ্ধ রাজার টাকা-পয়সা, সম্পত্তি, সব ওই মেয়েটিকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে আপনারাই গ্রাস করবেন। এই তো মতলব?

গুরুদেব এবারে ঝুঁকে এসে কাকাবাবুর নাকটা চেপে ধরে ক্রুদ্ধ স্বরে বললেন, পামর! তুই এই কথা বললি, তোর এত বড় সাহস? আমি সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী, টাকা-পয়সা ছুঁই না, কোনও কিছু সঞ্চয় করি না, লোকেরা ফল-মিষ্টি দিয়ে গেলে খাই, যেদিন দেয় না, সেদিন কিছুই আহার করি না। তুই আমাকে বললি লোভী? আজ তোকে এমন শাস্তি দেব…।

বৃদ্ধের আঙুলগুলো লোহার মতন শক্ত। এত জোরে নাক টিপে ধরেছেন। যে কাকাবাবু সহজে ছাড়াতে পারলেন না। বাধ্য হয়েই তিনি বৃদ্ধের ঘাড়ে বা হাত দিয়ে জোরে এক কোপ মারলেন।

একটা কাতর শব্দ করে বৃদ্ধ হাত আলগা করে দিলেন।

কাকাবাবু একটু সরে গিয়ে বললেন, আমার পা খোঁড়া তো, সেইজন্য হাতে জোর বেশি। আপনি শারীরিক শক্তিতে আমার সঙ্গে পারবেন না। আমাকে সম্মোহন করেও বশ করতে পারেননি। বরং আমি আপনাকে যা খুশি শাস্তি দিতে পারি। গুলি করে আপনার ভবলীলা সাঙ্গ করে দিতে পারি। মন দিয়ে আমার কথা শুনুন!

গুরুদেব বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে রইলেন কাকাবাবুর দিকে।

কাকাবাবু আবার বললেন, একটা ব্যাপার বোঝা যাচ্ছে, আপনি মানুষ খুন করেন না। আপনি আমাকে জঙ্গলে অজ্ঞান অবস্থায় ফেলে রাখেননি, বাঁচিয়েছেন। এটাও বুঝলুম যে, আপনার টাকা-পয়সার প্রতি লোভও নেই। কিন্তু আপনার চ্যালাদের সে-লোভ থাকতে পারে। সে ঠিক আছে, আপনার আলাদের ধরে গারদে পোরা হবে। তবে আপনিও একটা গভীর অন্যায় করেছেন। রাজার মেয়ে চম্পাকে বাঁচাবার জন্য অন্য একজনের মেয়েকে কেড়ে নিয়েছেন। চম্পা না-হয় বেঁচে উঠল, কিন্তু শৈবাল দত্তের মেয়ে লীনা কোথায় গেল?

গুরুদেব বললেন, পৃথিবীতে কত মেয়ে জন্মায়, কত মেয়ে হারিয়ে যায়, আর আমি কী জানি! সেজন্য আমার কোনও দায়িত্ব নেই। আমার চম্পা ফিরে এসেছে, তাকে আমি পূর্বস্মৃতি ফিরিয়ে দিয়েছি। আমার প্রতিজ্ঞা পূর্ণ হয়েছে!

সাধুবাবা, রাজার কাছে তাঁর মেয়ে যেমন প্রিয়, একজন সাধারণ মানুষের কাছেও তো তার মেয়ে সমান প্রিয়! একজন বাবার কাছ থেকে তার মেয়েকে কেড়ে নিয়ে অন্য একজন বাবাকে ফেরত দেবেন, এ কী রকম কথা? এটা যোর অন্যায় নয়?

তোমার ন্যায়-অন্যায় তোমার কাছে থাক। আমি জানি, চম্পাই আবার জন্মেছে। ও যারই মেয়ে হোক, ও আবার পুরোপুরি চম্পা হয়ে গেছে। আমি তাকে মন্ত্র দিয়েছি, পৃথিবীর আর কোনও শক্তি নেই, ওই মেয়ের দেহ থেকে চম্পাকে বার করে আনতে পারে।

ও এরপর থেকে চম্পাই থেকে যাবে?

অবশ্যই! অবশ্যই! অবশ্যই! তোমার পুলিশ, আদালত, যেখানে ইচ্ছে ওকে নিয়ে যাও, ও বরাবর নিজেকে চম্পাই বলবে। চম্পার সব লক্ষণ ওর চেহারায়, স্বভাবে ফুটে থাকবে।

কাকাবাবুর সারা মুখে এবার হাসি ছড়িয়ে গেল। গুরুদেবের দাড়িতে হাত বুলিয়ে বললেন, সাধুবাবা, বৃদ্ধ হলেই যে মানুষের সব কিছু সম্পর্কে জানা যায়, তা ঠিক নয়। সম্মোহনের শক্তি সারা জীবন তো দূরের কথা, একদিন দুদিনের বেশি থাকে না। চম্পা হারিয়ে গেছে!

গুরুদেব বললেন, তুমি ছাই জানো! ও-মেয়েকে তুমি যত-খুশি। ডাক্তার-বদ্যি দেখাও, ও চম্পাই থাকবে। চম্পা আর কোনও দিন হারিয়ে যাবে না!

কাকাবাবু গলা তুলে ডাকলেন, দেবলীনা, দেবলীনা, একবার ভেতরে আয় তো?

সঙ্গে-সঙ্গে দেবলীনা এসে ভেতরে ঢুকল। তাকে দেখে আবেগকম্পিত গলায় গুরুদেব বললেন, এই যে মা চম্পা, তুই এসেছিস? আয়, আমার পাশে বোস!

দেবলীনা মুচকি হেসে বলল, গুরুদেব, আমি চম্পা নই। আপনার ঘর থেকে বেরোবার সময় একবার যে আমি আছাড় খেয়ে পড়ে গেলুম, তখনই আমার জ্ঞান ফিরে এসেছে। আমি বুঝতে পেরে গেলুম, আপনারা আমাকে চম্পা সাজাচ্ছেন। আমি কিন্তু তখন আর আপনাদের বুঝতে দিইনি যে, আমি সব জেনে গেছি! তখন অভিনয় করতে লাগলুম! চম্পার অভিনয় করে আমি মনোজবাবুকে ভয় দেখিয়েছি। কাকাবাবু, সন্তুদেরও ঠকিয়ে দিয়েছিলাম। কাকাবাবু, আমি কেমন অভিনয় করেছি বলুন?

কাকাবাবু হাসতে-হাসতে বললেন, একেবারে পাকা অভিনেত্রী! প্রথমটায় আমিও বুঝতে পারিনি।

গুরুদেবের কপাল কুঁচকে গেছে। তিনি হুঙ্কার দিয়ে বললেন, তুই চম্পা নোস? এই লোকটা তোকে…চম্পা, চম্পা ফিরে আয় মা…

কাকাবাবু একটা হাত গুরুদেবের চোখের সামনে ধরে দেবলীনাকে আড়াল করে বললেন, আপনি আবার ওকে সম্মোহিত করবার চেষ্টা করবেন না। তাতে কোনও লাভ হবে না। আমার কাছে পিস্তল আছে, তার শব্দ করলে এক মুহূর্তে ওর ঘোর কেটে যাবে! আপনি বরং ওকে আশীর্বাদ করুন।

গুরুদেব আবার জিজ্ঞেস করলেন, তুই সত্যি চম্পা নোস?

দেবলীনা বলল, না, গুরুদেব। আমি তো কলকাতায় থাকি, আমি দেবলীনা দত্ত। আমার বাবার নাম শৈবাল দত্ত!

কাকাবাবু বললেন, যারা মরে যায়, তারা আর ফিরে আসে না। যারা বেঁচে থাকে, তাদেরই ভালবাসতে হয়, স্নেহ-প্রেম দিতে হয়। সাধুবাবা, আপনি ভাল মন নিয়ে ওকে আশীর্বাদ করুন।

গুরুদেবের চোখ দিয়ে দরদর করে জল পড়তে লাগল। তিনি কম্পিত ডান হাতখানা তুলে দেবলীনার মাথার ওপর রেখে বললেন, সুখী হও মা! চিরায়ুষ্মতী হও!

তারপরেই গুরুদেব অজ্ঞান হয়ে ঢলে পড়ে গেলেন।

কাকাবাবু উঠে দাঁড়িয়ে একটা বড় নিশ্বাস ফেলে বললেন, যাক! দেবলীনা, তুই সাধুর মাথায় একটু জল ছিটিয়ে দে। বুড়ো মানুষ, এতটা মনের চাপ সহ্য করতে পারেনি। একটু সেবা কর, একটু বাদেই জ্ঞান ফিরে আসবে।

বাইরে বেরিয়ে এলেন কাকাবাবু। সন্তু, জোজো, দারুকেশ্বর সেখানে দাঁড়িয়ে আছে উদগ্রীব হয়ে। কাকাবাবু তাদের বললেন, সব ঠিক হয়ে গেছে। মনোজটা পালিয়েছে, ওকে ঠিক ধরা যাবে। এই সাধুবাবাকে আর এখান থেকে টানাহ্যাঁচড়া করার দরকার নেই!

দারুকেশ্বর বলল, হ্যাঁ, ওঁকে আর কিছু শাস্তি দেবেন না। বুড়ো মানুষ, কদিনই বা আর বাঁচবেন?

কাকাবাবু সামনের দিকে তাকালেন। সুন্দর জ্যোৎস্না উঠেছে আজ। অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে জঙ্গল, পাশের ঝরনাটা নেমে গেছে একটা রুপোর। পাতের মতন।

কাকাবাবু আপনমনে বললেন, এখানে বেড়াতে এসে এ-পর্যন্ত কিছুই দেখা হল না, ভাল করে। এবার দেখতে হবে।

তারপর তিনি সন্তুর কাঁধে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, হ্যাঁ রে, সন্তু, তোরা দুজনে এখানে হঠাৎ চলে এলি! তুই বললি, কী দরকারি কথা আছে না! কী কথা?

সন্তু বলল, কাল রাত্তিরে দিল্লি থেকে নরেন্দ্র ভামার স্ত্রী টেলিফোন করেছিলেন। খুবই কান্নাকাটি করছিলেন ভদ্রমহিলা।

কেন, কী হয়েছে?

নরেন্দ্র ভার্মাকে চার দিন হল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সন্ধেবেলা অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথেই তাকে ধরে নিয়ে গেছে। কোনও সন্ধান নেই। ওঁর স্ত্রী বললেন, আপনাকে একবার দিল্লি যেতেই হবে, আপনি না গেলে উনি ভরসা পাবেন না!

কাকাবাবু ক্লান্তি ও বিরক্তি মিশিয়ে বললেন, আবার দিল্লি? আমার কি কিছুতেই ছুটি পাবার উপায় নেই রে, সন্তু! এখানে এসে দুচারদিন নিশ্চিন্তে বিশ্রাম করব ভেবেছিলাম…

এগিয়ে গিয়ে কাকাবাবু ঝরনাটার পাশে বসে পড়লেন। আঁজলা করে জল তুলে মুখে ছেটাতে ছেটাতে বললেন, আঃ!

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10
Pages ( 10 of 10 ): « পূর্ববর্তী1 ... 89 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress