রসনা বড়ই লোভী
ভোর থেকে রাজের মা ঘর ঝাঁট দিতে দিতে চিৎকার করে চলেছেবেলা দশটা বাজলেও বাপ ছেলের ঘুম ভাঙ্গে না। কুম্ভকর্ণের মত এরা ঘুমিয়ে থাকে। বাসি বিছানা তুলতে পারিনা। চোখ খুললেই তাদের বেড টি। আমি আছি তাই সুখ ভোগ করে নাও।- রাজের বাবা বুঝেছে আজ দিনটা বেজায় খারাপ। আস্তে করে চাদরটা মাথা পর্যন্ত ঢেকে ঘুমোনোর চেষ্টা করল। কিছুক্ষণ অবশ্য কানের মধ্যে হাতটা ঢেকে রেখেছিল। তার ভালোবাসার মানুষ যা যা বলবে তার শোনার ইচ্ছে নেই। আজ ঠিক করেছে রাজের বাবাছেলেকে দিয়ে মাটন চিকেন টা আনিয়ে নেবে।
– রাজ ভয়ে ভয়ে আজ আর বেগ টি চায় নি। মায়ের প্রতিটা কাজ আজ শব্দ করে হচ্ছে। বুঝতে পেরেছে কানের পর্দাতে তুলো দিয়ে ঘুমাতে হবে।
– মা স্নান করে এসে বালতিটা জোরে শব্দ করল। এখনো তোরা ঘুম থেকে উঠবি না। আর কতক্ষণ। ছেলেটা না হয় একটু ঘুমাচ্ছে, তোমার কোনো কান্ডজ্ঞান নেই। আজ রবিবার বাজার যেতে হবে। আমি সারাদিন খেটে মরবো, আর তুমি নাকে সর্ষের তেল দিয়ে ঘুমাও।
রাজের বাবা শুভ্রাংশু এবার বুঝতে পেরেছে একটা রবিবার শেষ হলো। মাটন রান্না করলেও তাতে নুন পড়বে কিনা সন্দেহ আছে। আচ্ছা রবিবার গুলোতেও দীপা চিৎকার করে কেন। ও তো একটু ঘুমাতে পারে। তাহলে আমিও একটু স্বস্তিতে ঘুমাতাম। উফ! কী যন্ত্রনা, নিজেও ঘুমাবে না, আমাদের কেও ঘুমাতে দেবেনা। যত্তসব। রোজ সন্ধ্যায় আমি যখন অফিস থেকে ট্রেনে, উনি তখন সান্ধ্য ঘুম সারেন।
– মায়ের হুংকারে রাজ একটু আড়ষ্ট ভেঙে উঠল । মা অবশ্য বেড টি করে দিয়েছিল দুজনকে। কোনরকমে ব্রাশ করে রান্নাঘর থেকে বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে চলল মাংসের খোঁজে। চিকেনের দোকানে গিয়ে দেখে লম্বা লাইন। চারিদিকে রক্ত ছিটিয়ে আছে। একটার পর একটা জবাই। দু একটা চিৎকার করছে। এমন সময় রাজের মনে হল আচ্ছা মাংস না খেলে অসুবিধা কোথায়। তাহলে প্রাণগুলো যেত না। ওদের এত কষ্ট থাকত না। এরপরে চোখের সামনে ভাসছে চিকেন কষা, চিকেন রেজালা ,চিলি চিকেন। আহা আজকে একটু চিলি চিকেন ফ্রাইড রাইস হলে ভালো হয়। আমার এসব দেখার দরকার নেই মাংস ছাড়া ভাত খাব কি করে। বেচারা মুরগি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে ওর মুখের দিকে। রসনা বড়ই লোভী- তাই মাংস টা বড় দরকার রাজের।