রথের ভিড়ে
রথের দিন বৃষ্টি হবেই।গোড়ালি ডোবানো কাদায় আর বৃষ্টিতে মাটির গন্ধ মেখে ইচ্ছা হয়েছিল রথ দেখতে যাওয়ার। যদিও রথটা রাস্তার মাঝখানে রাজার মতো দাঁড়িয়ে থাকে।তবুও এই দিনেই প্রভুর রথ যাত্রা দেখার সাধ।কিছুটা পথ বাসে গিয়ে এবার মাহেশের দিকে হেঁটে এগিয়ে যাচ্ছি।
মাহেশের রথ যাত্রা উপলক্ষ্যে বেলা দুটো থেকে শ্রীরামপুরে রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিকেল হলেই রথ বেরোবে। সেকালের সেই গ্রান্ড ট্যাঙ্ক রোডে যান চলাচল বন্ধ করে সেখানে রথ নামবে পথে। রাজাধিরাজ রথে বসে হাসেন। রথের উপর থেকে তীরের বেগে আসে পেয়ারা আপেল কলা বাতাসা-নকুলদানা। ভিড় ঠেলে প্রসাদ কুড়োতে লেগে যায় কাড়াকাড়ি। উৎসব শুরু থেকে একমাস ধরে মেলা বসে। স্নান পিঁড়ির মাঠে রথের মেলা।
কাঁচের চুড়ি, প্লাস্টিকের খেলনা, মাটির পুতুল রান্নাঘরের সরঞ্জাম হজমি ফুচকা ঘুগনি জিলিপি- পাঁপড় এসব কিছু মেলে সেই মেলায়। এতো ভিড় আর ঠেলা ঠেলি লোকের ধাক্কায় আর হাঁটতে হচ্ছেনা আপনি যেন রথের সামনে এসে দাঁড়ালাম।
সে দাঁড়ানোরও উপায় নেই। পুলিশের লাঠি বলছিল কেউ দাঁড়িয়ে ভিড় বাড়াবেন না,সামনে এগিয়ে যান।
ভিড় ঠেলে শেষে মেলা প্রাঙ্গণে পৌঁছলাম তখন প্রায় সন্ধ্যা।সঙ্গে চার বছরের ছোট ছেলে। এবার সে বায়না ধরলো নাগোর দোলায় চড়বে, ম্যাজিক টয় কিনবে।
নাগোর দোলায় চড়ে সে স্বস্তি পাচ্ছিল না।নিচে নামার সময় তার দম বন্ধ হয়ে আসছিল।সে করুণভাবে বলছিল থামাতে বল এবার।
নাগোরদোলা থেকে নেবে গেলাম ম্যাজিক খেলনার দোকানে। ছেলের বাবা পকেটে হাত ঢুকিয়ে টাকা বের করতে গিয়ে দেখল টাকা ভ্যানিশ।কি সর্বনাশ। বাড়ি ফিরব কিভাবে।ফিরছি হেঁটে কিন্তু এতো পথ তো হেঁটে ফেরা অসম্ভব।সঙ্গে ছোট বাচ্ছা।কিছুদূর এগোতে না এগোতে স্বয়ং প্রভু যেন রথ নিয়ে এসে হাজির হলেন।সে বলল আমি নওগাঁ যাব আপনাকে আমি চিনি।আমরা তো তাকে কোনদিন দেখিওনি।শেষে ওই
রিকশায় চেপে বাড়ি ফিরে নিশ্চিন্ত হলাম। মেলার ভীড়ে একদিকে পকেটমার অপরদিকে পূণ্যার্থীদের পূণ্য অর্জনের আকুতি। সে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছিল মেলার আনন্দ আর পকেটমারীর দুঃখ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছিল।
মনে হয় এই তো সেদিনের কথা। আফসোস হচ্ছে মহামারীর প্রকোপে ৬২৫ বছরের মেলা এবার বন্ধ।