রথযাত্রা – শ্রীভগবানের নরলীলা র অপূর্ব প্রকাশ
রথযাত্রার নিয়ে কতই না লোককথা! ওড়িশায় প্রচলিত লোকবিশ্বাস যে– ত্রেতাযুগে শ্রীরামচন্দ্রের বিমাতা কৈকেয়ী রামচন্দ্রের সাথে যে দু্র্ব্যবহার করেছিলেন তাঁর অনুশোচনায় তিনি শ্রী রামের কাছে কান্নাকাটি করেন। তখন শ্রীরামচন্দ্র বলেন যে যখন তিনি জগন্নাথ রূপে পূজিত হবেন তখন তার বিমাতা কে মাসি হিসেবে পাবেন এবং তার কাছে নয়দিন পূজা গ্রহণ করবেন। এই কথা দিয়েছিলেন বলেই রথযাত্রায় তিনি বিমাতা কৈকেয়ীর নবরূপ রানী গুন্ডিচার কাছে নয় দিন পূজা পান ও তার মনোবাসনা পূর্ণ করেন।
ভগবানের মাসির বাড়ি যাওয়া ও ফিরে আসার নরলীলা রথযাত্রাও উল্টোরথ উৎসব। উল্টোরথের এক বিশেষ অনুষ্ঠান হল “অধরপনা”! জগন্নাথ দেবের অধর পর্যন্ত উচ্চতার মাটির পাত্রে এক বিশেষ ধরনের শরবত ভগবান কে উৎসর্গ করা হয়। এরপর ওই পাত্রটি ফাটিয়ে পার্শ্ব দেবতাদেরও ওই শরবত উৎসর্গ করা হয়। এর সাথেই শেষ হয় উল্টো রথ উৎসবের।
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের মূল রথযাত্রার পঞ্চম দিনে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান হয়” হেরা পঞ্চমী”! মূল রথযাত্রা আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে অনুষ্ঠিত হয়। এর পাঁচ দিন পরে সপ্তমীর দিন অনুষ্ঠিত হয়” হেরা পঞ্চমী”! এটি একটি রঙ্গ কৌতুক এর মত! রথযাত্রায় জগন্নাথ দেব দাদা বলরাম ও বোন সুভদ্রা কে নিয়ে চলে গেছেন। শ্রীমন্দিরে একাই রয়েছেন মা লক্ষ্মী। তাঁর মনে উদ্বেগের শেষ নেই। তাই গোপনে তিনি রথের চাকার দাগ অনুসরণ করে পৌঁছে যান রথের কাছে। গিয়ে দেখেন সেটি রাজার বাড়ি ,মাসির বাড়ি ,বা গুন্ডিচা বাড়ি। জগন্নাথ দেবের মাসি হলেন রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের পত্নী মহারানী গুন্ডিচা দেবী। তিনি নিশ্চিন্ত হলেন যে এখানেই আছেন সকলে। এবার লক্ষীদেবী তার অনুচরদের বললেন নন্দীঘোষ রথের কিছু অংশ ভেঙে আসার জন্য যাতে গুন্ডিচা মন্দির এর সাড়া পড়ে যায় যে কে এসে রথ ভাঙলো। জগন্নাথ দেবের ফেরা র দেরি দেখে লক্ষ্মী ঠাকুর রেগে ঠিক সাত দিনের মাথায় আবার গুন্ডিচা মন্দির এ উপস্থিত হন দলবল নিয়ে। এবার ভীষণ ঝামেলা বাধান ঘরে ঢোকার জন্য। ঘরের সামনে থাকা প্রহরীদের সাথে এদের ভীষণ ঝগড়া হয়। উড়িয়া ভাষায় একে বলে “লক্ষী কলি —লক্ষ্মী ঠাকরুনের ঝগড়া”! এই ঝগড়ার মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পায় পরিবারের পুরুষ ও নারীর চরিত্র নিয়ে তরজা! যা লড়াই এর আকার নিয়ে দর্শকদের কাছে মজাও কৌতুকের সৃষ্টি করে।
লোকসংস্কৃতির আঙ্গিকে পরিবেশিত ঝগড়াটি লোক বিনোদনের বড় উদাহরণ। এতে একদল মেসোর বাহিনীর লোক অন্যদল লক্ষ্মী ঠাকরুনের বাহিনীর লোক।মেসোর বাহিনীতে পুরুষ ও লক্ষ্মীর বাহিনীতে থাকেন মহিলারা। তর্ক বিতর্ক চলে সংস্কৃত শ্লোক সহ উড়িয়া ভাষায় ও গানের সুরে কীর্তন এর ঢঙে। উল্টো রথের দিন নিজ মন্দিরে এসে শ্রী জগন্নাথ সরাসরি ঢুকতে পারেন না। এখানেও একপ্রস্থ ঝগড়ার কৌতুক এরপর লক্ষ্মী দেবীকে মিষ্টি জরিমানা দিয়ে তবেই ঢুকতে পারেন স্বগূহে।
এ সবই শ্রীভগবানের নর নীলার অপূর্ব প্রকাশ। কথিত যে রথের ওপর শ্রী জগন্নাথকে দর্শন করলে পুনর্জন্ম হয় না!”
” জয় জগন্নাথ”!
তথ্য সূত্র- লোকভাষ, ও বিভিন্ন পত্রপত্রিকা