Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রঘু ডাকাত : সংঘর্ষ—পুণ্য ও পাপে (প্ৰথম খণ্ড) || Panchkari Dey » Page 4

রঘু ডাকাত : সংঘর্ষ—পুণ্য ও পাপে (প্ৰথম খণ্ড) || Panchkari Dey

এদিকে তারার কাতরোক্তি শুনিয়া রঘুনাথ কিঞ্চিৎ নম্রভাবে বলিল, “যদি তোমার বাবার এমন মৃতপ্রায় অবস্থা, তবে আর তুমি সেখানে গিয়া কি করবে।”

ব্যথিত হইয়া তারা উত্তর দিল, “ওঃ—রঘুনাথ! তোমার হৃদয় কি কঠিন, তুমি কি মানুষ, না পিশাচ? তোমায় মিনতি ক’রে বলছি, আমায় আজকের মত ছেড়ে দাও! যদি বিশ্বাস না হয়, তুমিও আমার সঙ্গে চল। বাবার মৃত্যু হ’লে তুমি যদি দস্যুদল ছেড়ে দিবে এ কথা স্বীকার কর, তা’ হ’লে আমি প্রতিজ্ঞা ক’রে বলছি, তখন তুমি আমায় যা করতে বলবে, আমি তাই করতে রাজী আছি।”

রঘুনাথ। তারা! আর তোমায় আমার বিশ্বাস হয় না। শৈশবকাল থেকে তোমায় আমি দেখছি, তোমায় কি আমি জানি না? এতদিন যদি তোমার বাবা আমার সঙ্গে তেমার বিবাহ দিতেন, তা’ হলে হয় ত আমি কখনও ডাকাতের দলে মিশতেম না। হয় ত আমরা উভয়ে বেশ সুখে-স্বচ্ছন্দে গৃহস্থের মত হয়ে থাকতেম। তোমায় না পেয়েই ত আমার এ-দুৰ্দ্দশা! তোমায় যদি পত্নীরূপে পেতেম, তবে হয় ত এসব কাজে আমার প্রবৃত্তিও হত না। তুমি আমার সর্বনাশ করেছ, তা’ কি জান না, তারা? পূর্ব্বে আমার ভাল অবস্থাতেও তুমি আমায় ঘৃণা করেছ। আর এখন সেই তুমি আমার উপস্থিত এই ঘৃণ্য অবস্থায় আমায় পূজা করবে, এইটি দেখার আমার সাধ আছে।

কাতর তারা করুণোক্তিসহকারে বলিল, “আমায় আজকের মত বিশ্বাস ক’রে ছেড়ে দাও—”

সমস্ত কথা বলিতে-না বলিতেই রঘুনাথ বিরক্তভাবে উত্তর করিল, “তুমি স্ত্রীলোক! স্ত্রীলোকের কথায় বিশ্বাস কি?”

তারা এতক্ষণে আপনার ভয়ানক অবস্থা প্রকৃতপক্ষে অনুভব করিতে পারিল। তাহার ধৈর্য্য, সাহস সমস্তই এককালে তিরোহিত হইল। অনেক কাকুতি-মিনতি করিল। সে পাষাণ হৃদয় কিছুতেই বিগলিত হইল না। রঘুনাথ অবশেষে বলিল, “অসম্ভব তারা, একান্ত অসম্ভব। তোমায় আমি আর কিছুতেই ছেড়ে দিতে পারি না। আমার এখন অন্য অনেক কাজ আছে। তোমার সঙ্গে বেশি কথা কহিবারও সময় নাই। এখন আমি যা বলি, তা’ শোন। তারপর তোমার বিষয় যা’ ভাল বিবেচনা হয় করব।”

নিরুপায় হইয়া তারা রঘুনাথের সঙ্গে সঙ্গে চলিল। যেখানে আগুন জ্বালিয়া অন্যান্য দস্যুরা তাহার চতুস্পার্শে বসিয়া হাসি ঠাট্টা ও অন্যান্য গল্প-গুজব করিতেছিল, সেইখানে রঘুনাথ তারাকে লইয়া গেল। যে-লোকটী “ভয় নাই—আমি তোমাকে রক্ষা করব—তুমি নির্ভয়ে থাক,” এই কথা বলিয়া তারাকে আশ্বাস প্রদান করিয়াছিল, চঞ্চলচক্ষে তারা তাহারই অনুসন্ধান করিতে লাগিল। তাহাকে চিনিয়া লইতে তারার বড় অধিক সময় লাগিল না। তাহার মাথায় যে লাল কাপড়ের পাগড়ী ছিল, অন্যান্য দস্যু সেরূপ কাপড়ের পাগড়ী পরে নাই। তাহার বেশ সমস্তই দস্যুগণের ন্যায়, মুখে লম্বা গোঁফ, চোখে অপূৰ্ব্ব জ্যোতিঃ। সে জ্যোতিঃ সাহসিকতার পরিচায়ক— সে জ্যোতিঃ বিচক্ষণতার লক্ষণ। তারা ভাবিল, “ইনি নিশ্চয়ই ছদ্মবেশী। আমার অনুমান নিশ্চয়ই সত্য।”

ঠিক সেই সময়ে দূরে কে যেন সজোরে শিস্ দিল। রঘুনাথ চকিত হইয়া সেইদিকে চাহিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “ও কে আসে?”

দস্যুরা সকলেই সেইদিকে চাহিল। একজন বলিল, “এ রাত্রে আজ কই কারও ত আস্বার কথা নাই। “

রঘুনাথ বলিল, “একজন লুকিয়ে দেখে এস, গতিক বড় ভাল বোধ হচ্ছে না।”

তৎক্ষণাৎ একটি লোক অন্ধকারে গুঁড়ি মারিয়া যেদিক হইতে শিসের শব্দ আসিয়াছিল, সেইদিকে গেল। দস্যুগণ সকলেই পিস্তল বাহির করিয়া সেইদিক্ লক্ষ্য করিয়া রহিল। যে লোকটি দেখিতে গিয়াছিল, কিয়ৎক্ষণ পরেই সে আবার একজন লোককে সঙ্গে করিয়া ফিরিয়া আসিল। দস্যুগণ সকলেই তাহাকে দেখিয়া পিস্তল নামাইল।

রঘুনাথ বলিল, “আরে কেও, তুমি? কোথা গেছলে?”

আগন্তুক আগুনের কাছে আসিয়া বলিল, “সে কথা পরে হবে, এখন একটা বড় সংবাদ আছে, শুনবে?”

রঘুনাথ। কি? পথে কাউকে দেখলে না কি? তুমি ত অন্ধকারে গাছের পাতাটি নড়লে, কুটোটি নড়লে ভয় পাও। বল বল, কাউকে এদিকে আসতে দেখেছ, বুঝি?

আগন্তুক। না, তোমরা কাউকে দেখেছ?

রঘুনাথ। না।

আগন্তুক। আজ মস্ত খবর নিয়ে এসেছি। অনেক কষ্টে সে-সন্ধান পেয়েছি।

রঘু। বুঁদী গ্রামের লোকেরা আমাদের ধরিয়ে দেবার ষড়যন্ত্র করেছে—এই কথা ত?

আগন্তুক। না, তার চেয়েও শক্ত খবর।

রঘু। ভাল খবর?

আগন্তুক। ভাল বলতে পার—মন্দও বলতে পার। কিন্তু আর গতিক বড় ভাল নয়।

রঘু। কি বলেই ফেল না, অত ভুমিকা করছ কেন?

আগন্তুক। এবার গোয়েন্দা রায়মল্ল সাহেব নাকি আমাদের পিছু নিয়েছে! কোম্পানী বাহাদুর রায়মল্ল সাহেবকে নিযুক্ত করে একবার শেষ চেষ্টা দেখছেন। শুনেছি, সে লোকটা ভারি ফন্দিবাজ।

আগন্তুকের কথা শুনিবার জন্য এতক্ষণ দস্যুগণ সকলেই বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করিয়াছিল, কিন্তু যেমন তাহারা প্রসিদ্ধ গোয়েন্দা রায়মল্ল সাহেবের নাম শুনিল, অমনিই তাহাদের মুখ শুকাইয়া গেল। ভয়ে যেন তাহাদের প্রাণ অস্থির হইয়া উঠিল—সকলেরই যেন হৃৎকম্প হইতে লাগিল।

ঘটনাক্রমে এই সময়ে তারা সেই আশ্বাসদাতা লালপাগড়ী পরা ব্যক্তির দিকে চাহিয়াছিল। তারা দেখিল, সে লোকটির মুখের ভাব সহসা বদলাইয়া গেল। রঘুনাথ সকলকে এইরূপ ভীত হইতে দেখিয়া আপনার কটিদেশ হইতে একখানি বড় ছোরা বাহির করিয়া সজোরে ধরাতলে বিদ্ধ করিল। মহাদম্ভে আস্ফালন করিয়া রঘুনাথ বলিল, “দেখ, যদি রায়মল্ল সাহেব আমাদের পিছু নিয়ে থাকে, তা’ হলে এই রকম করে তার বুকে ছুরি মারব। দু-শ চার-শ পুলিস-পাহারা মেরে খড়ের ভিতর ফেলে দিলাম, কত গোয়েন্দা আমাদের পিছু নিয়ে ধরার ভার লাঘব করলে; যদি রায়মল্ল সাহেবের মরণ ঘনিয়ে এসে থাকে, তাহলে তারও সেই দশা হবে।”

তারা তখনও সেই লোকটির উপর দৃষ্টি রাখিয়াছিল। দেখিল, তাহার চক্ষুদ্বয়ে যেন আরও জ্যোতি ফুটিয়া উঠিল, বদনে যেন কি এক অপূর্ব্ব ভাবের সমাবেশ হইল।

তারার মনে তখন আর এক ভাবের উদয় হইল। সে ভাবিল, “তবে এই কি সেই প্ৰসিদ্ধ গোয়েন্দা রায়মল্ল সাহেব! যে লোককে খুন করে ফেলবে ব’লে রঘুনাথ এত দম্ভ আস্ফালন করছে, এই কি সেই!”

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress