তৃতীয় পরিচ্ছেদ – দস্যুহস্তে
পর্ব্বতের পথ সকল তাহার বিশেষ পরিচিত থাকিলেও বিপদে পড়িয়া সে দিগ্বিদিক্-জ্ঞান-শূন্য হইল। সমস্তই যেন তাহার নূতন ও অজ্ঞাত বলিয়া বোধ হইতে লাগিল। কিছুদূর গিয়াই সে এমন স্থানে উপস্থিত হইল, যেখান হইতে দুই-তিনটী পথ ভিন্ন ভিন্ন দিকে চলিয়া গিয়াছে। অপর সময়ে বোধ হয়, তারা লালপাহাড়ে যাইবার সোজা পথ সহজেই নির্ণয় করিতে পারিত, কিন্তু সুকুমার-মতি তারা ভীষণ দস্যুদলের হস্ত হইতে উদ্ধার-লাভের আশায় প্রাণপণ যত্নে অশ্ব ছুটাইতেছিল, আতঙ্কে তখনও তাহার দেহ কাঁপিতেছিল, উদ্বেগ তখনও মনে, বিলীন হইয়া যায় নাই, বুদ্ধি-বৃত্তি-পরিচালনার সম্যক্ শক্তি তখনও তাহার চিত্তে ফিরিয়া আসে নাই। কাজেই সেইখানে দাঁড়াইয়া কোন্ পথটী ঠিক, তাহা বিচার করিবার অবসর পায় নাই। পশ্চাতে উন্মত্তের ন্যায় দস্যুগণ অনুসরণ করিতেছে জানিয়া, অবলা মুহূৰ্ত্তও অপব্যয়িত করা যুক্তিসঙ্গত বলিয়া বিবেচনা করিল না। সে ইচ্ছানুরূপ অশ্ববল্লা বামদিকে আকর্ষণ করিল। অশ্বও পূর্ব্ববৎ অত্যন্ত দ্রুতবেগে বামদিকের রাস্তা ধরিয়া ছুটিতে লাগিল। পথ-নির্বাচনে এই ভ্রান্তিই তারার কাল হইল। কিয়দ্দূর অগ্রসর হইয়াই সে বুঝিতে পারিল, সে ভ্রমক্রমে বিপথে আসিয়া পড়িয়াছে, আর যাইবার পথ নাই। সম্মুখে এক প্রকাণ্ড অলঙ্ঘনীয় খড়। অশ্বের সাধ্য কি, সে লম্ফপ্রদানে তাহা অতিক্রম করে। আর দুই চারিপদ অগ্রসর হ’লেই একেবারে সহস্র সহস্র হস্ত নিম্নে পতিত হইয়া অশ্ব ও আরোহিণী উভয়েই চূর্ণ-বিচূর্ণ হইয়া যাইত। পশ্চাতে পদধ্বনি শুনিয়া তারা অনুমান করিল, দস্যুগণ শিকার পলাইতেছে ভাবিয়া, মৃগান্বেষী ব্যাঘ্রের ন্যায় পশ্চাদ্ধাবন করিতেছে। সম্মুখে আবার ভয়ানক খড়। তারা বিষম সমস্যায় পড়িল—কি করিবে, কিছুই স্থির করিতে পারিল না। অবশেষে যে পথ দিয়া আসিয়াছিল সে পথে প্রত্যাবর্তন করিবে, স্থির করিল। ঘোর অমানিশার অন্ধকারে আলোক রশ্মির মত এই একমাত্র আশালোক তাহার মনোমধ্যে তখন উদিত হইল। তারা ভাবিল, দস্যুদের পৌঁছিবার পূর্ব্বেই সে আপনার ভ্রম সংশোধন করিয়া লালপাহাড়ে যাইবার সোজা পথে উপস্থিত হইতে পারিবে। নির্ভীকা রাজপুত-দুহিতা আশান্বিত চিত্তে পুনঃপ্রত্যাবর্তন করিল;কিন্তু আশা মরীচিকা! দশ হাত আসিতে-না আসিতেই সে দেখিল, সেই সকল পিশাচ-অবতারগণ তাহার পথ রোধ করিয়া দণ্ডায়মান।
রঘুনাথ চীৎকার করিয়া বলিল, “তারা! এখনও বলছি, ঘোড়া থামাও।” রঘুনাথের স্বর চিনিতে পারিয়া মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় তারা অশ্ববেগ সংযত করিল। পলায়নের সকল আশা নির্মূল হইল। রঘুনাথকে দেখিয়াই তারার হৃদয়ে অধিকতর আতঙ্ক হইল, ভয়ে সৰ্ব্বাঙ্গ অবশ হইয়া পড়িল, হৃদয়ের স্পন্দনের ক্ষমতাও যেন কে অপহরণ করিল। ক্ষণকালের মধ্যেই সশস্ত্র দস্যুবৃন্দ তারার চারিদিক্ বেষ্টন করিয়া ফেলিল। শিকার পুনঃ কবলিত হইতেছে দেখিয়া, তেল-কালী-মাখাবৎ কুৎসিত মুখে তাহাদের অপূৰ্ব্ব আনন্দাবির্ভাব হইতে লাগিল। একবার স্ত্রীবুদ্ধির কাছে পরাজিত হইয়াছে বলিয়া এবার দস্যুগণ পূৰ্ব্ব হইতে সাবধান হইয়া রহিল। তারাকে ভয় দেখাইবার জন্য তাহারা তাহার বক্ষঃস্থল লক্ষ্য করিয়া নিজ নিজ পিস্তল উঠাইয়া ধরিল। অসহায়া অবলাকে এইরূপ ভয় দেখাইতে ও আক্রমণ করিতে দুরাশয়গণ কিছুমাত্র কুণ্ঠিত বা লজ্জিত হইল না।
রঘুনাথ পৈশাচিক হাসি হাসিয়া কর্কশস্বরে কহিল, “আরে ময়না পাখি! বেশ উড়েছিলে— আর যাতে না উড়তে পার, তার বন্দোবস্ত করছি। তারাসুন্দরী! এখন দয়া ক’রে একেবারে ঘোড়টা থেকে নেমে পড় দেখি!” রঘুনাথের সেই বিকট হাসি ও কটু-সম্ভাষণে তারা শিহরিয়া উঠিল। এদিকে নেতার আদেশক্রমে দুইজন ডাকাত, বিশেষ সতর্কতার সহিত তারার ঘোড়ার মুখ ধরিয়া রহিল। অসহায়া তারা তখন আর সুবিধা মত অশ্বচালনা করিয়া পলায়নের চেষ্টা বৃথা বিবেচনা করিল। দস্যুগণ স্থিরনেত্রে তাহার প্রত্যেক অঙ্গ সঞ্চালন লক্ষ্য করিতেছে। তাহার জীবন এখন এই নরঘাতী মহাপাতকীদের অধীন; কিন্তু প্রাণনাশের ভয় তারার হৃদয়ে স্থান পায় নাই। তাহার কেবল এইমাত্র চিন্তা, পাছে রঘুনাথ এই অবসর বুঝিয়া তাহার পাপপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করিবার চেষ্টা করে। পাছে তাহার সযত্নরক্ষিত কৌমার্য্য-রত্ন এইবার এই পাপাচারী দুবৃত্তের হস্তে অপহৃত হয়। তারার মনে এই ভীতি সঞ্চারিত হইতে-না-হইতেই তাহার হস্ত পিস্তলের উপর পড়িল। তারা মনে করিলেই তৎক্ষণাৎ রঘুর মানবলীলা শেষ করিতে পারিত। বোধ-হয়, তাহা হইলে নেতৃত্ববিহীন হইয়া রঘুর নিদয় সহচরগণ তারাকে ধরিয়া রাখিতে বা তাহার প্রতি কোন অত্যাচার করিতে সাহস করিত না।
হউক না কেন তারাবাই বীর রাজপুত্রবংশীয়া, কিন্তু তাহার হৃদয় রমণীর কোমল উপাদানে গঠিত। তাহাই সহসা নরহত্যার কথা মনে উদিত হইতেই তাহার যেন একপ্রকার মোহ উপস্থিত হইল। রক্তস্রোতের কথা হৃদয়ে জাগিয়া উঠিতেই তারা আপনা আপনিই শিহরিয়া উঠিল। সে কি নরঘাতিনী হইতে পারে? কুসুমে কীট প্রবেশ করিবে? সূর্য্যে কলঙ্ক স্পর্শ করিবে? তারা এ কথা ভাবিতে পারিল না। রমণীহৃদয় বিগলিত হইল। যে মনুষ্য তাহার সম্মুখে সাক্ষাৎ পিশাচের ন্যায় বর্ত্তমান থাকিয়া নৃত্য করিতেছে, যাহার মনে ক্ষণকালের জন্যও মৃত্যুচিন্তা স্থান পাইতেছে না, কেমন করিয়া তারা তাহাকে হঠাৎ নরকের জ্বলন্ত ছবি দেখাইয়া দিবে? কেমন করিয়া পাপীকে প্রস্তুত হইবার সময় না দিয়া, তারা তাহাকে সেই সর্ব্বনিয়ন্তা, পাপপুণ্যের দণ্ড পুরস্কার-বিধাতা সৰ্ব্বময়ের বিচারাসনের সন্নিকটে বিচারার্থ উপস্থিত করিবে? কামিনীর কোমল অন্তঃকরণে এ-চিন্তা স্থান পাইল না। যদিও রঘুনাথ তাহার সর্বনাশের জন্য উৎসুক হইয়া রহিয়াছে, যদিও রঘুনাথের পাপজীবন তখন তাহারই হস্তে, তথাপি সহৃদয় রাজপুত কুমারী নরঘাতিনী হইতে সহসা সাহস করিল না। সে ভাবিল, তাহার প্রতি দেবতা রুষ্ট হইবেন। জীবহত্যা রমণীর কার্য্য নয়, তাহাই তারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হইয়া কাষ্ঠ-পুত্তলিকাবৎ তুরঙ্গোপরি বসিয়া রহিল।
রঘুনাথ বলিল, “এস তারা! আমি তোমার হাত ধরে ঘোড়া থেকে নামিয়ে দিচ্ছি।” এই কথা বলিয়া রঘুনাথ তাহার হস্ত ধারণ করিবার জন্য হস্ত প্রসারণ করিল।
ঈষৎচকিত হইয়া তারা নির্ভয়ে উত্তর করিল, “রঘু! কেন তুমি আমার উপর এত অত্যাচার করছ? আমাকে এমন করে ধরে রেখে তোমার কি লাভ হবে? ছেলেবেলার কথা একবার মনে ক’রে আজকের মত আমার উপরে দয়া কর, আজকের মত আমায় ছেড়ে দাও, আমি বড় বিপদে প’ড়ে এক জায়গায় যাচ্ছি।”
রঘু। তারা, কেন নির্ব্বোধের ন্যায় তর্ক করছ? আমি কথায় ভুলি না। এখনও বল্ছি, কথা শোন বুদ্ধিমতীর মত কাজ কর। আমার কথা শুনলে তোমার কোন অনিষ্ট হবে না—কেউ তোমার একগাছা কেশ পর্য্যন্ত স্পর্শ করতে পারবে না।
তারা অনন্যোপায় হইয়া বলিল, “রঘু সিংহ! কেন তুমি আমায় এমন ক’রে পথের মাঝখানে বাধা দিচ্ছ? তুমি যদি আমার ঘোড়াটা নিয়ে সন্তুষ্ট হও, তা’ হ’লে আমার সঙ্গে চল। আমার পিতা মুমূর্ষু, দেরী হ’লে বোধ হয়, আর তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হবে না।”
এই কথা শুনিয়া রঘুনাথের আরও আনন্দ হইল। সে স্বচ্ছন্দে বলিল, “বল কি? তোমার বাবা মর-মর-“
বাধা দিয়া তারা বলিল, “হাঁ, তিনি মৃত্যুমুখে। মৃত্যুর পূর্ব্বে তিনি তাঁর একজন বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন, তাই আমি তাড়াতাড়ি তাঁকে ডাকতে যাচ্ছি। পথের মাঝখানে তুমি আর তোমার অনুচরেরা আমায় বাধা দিলে। যদি আমার ঘোড়াটা নেওয়া তোমার অভিপ্রায় হয়, তা’ হ’লে ঘোড়াটা নিয়ে আমায় ছেড়ে দাও। বাবার সঙ্গে একবার আমার শেষ দেখা করতে দাও।”
রঘু। তারা, তুমি কি মনে করেছ, কেবল আমি তোমার ঘোড়াটা নিয়েই সন্তুষ্ট হ’ব? আমি কি কেবল তোমার ঘোড়াটা চাই? আমি তোমায়ও চাই।
তারা। আচ্ছা, তবে আজ আমায় ফিরে যেতে দাও, এর পরে তোমার মনে যা’ আছে, করো। রঘুনাথ সহাস্যে বলিল, “আজ তোমায় ছেড়ে দিলে আর কি তোমায় পাব? এখন বাজে কথা ছেড়ে ঘোড়া থেকে আস্তে আস্তে ভাল মানুষের মত নেমে পড় দেখি। আর কি তোমায় আমি বিশ্বাস করি?”
তারার সকল আশা-ভরসা উন্মূলিত হইল। তারা বুঝিল, রঘুনাথ আর সহজে ভুলিবার পাত্র নয়। ভয় দেখাইয়া রঘুনাথকে বশ করিতে চেষ্টা করা বাতুলতামাত্র। তাহারা ভদ্রতার সম্মান রাখে না, শিষ্টাচারের ধার ধারে না, রাজনিয়মেরও বশবর্ত্তী নয়। আরাবল্লী পর্ব্বত তাহাদের রাজধানী। তাহারাই তথাকার রাজা। পুলিসের শাসন তথায় লব্ধপ্রবিষ্ট হয় না। অনেকদিন ধরিয়া কোম্পানী বাহাদুর এই সকল দস্যুদমনার্থ চেষ্টা করিতেছেন, কিন্তু সমর্থ হ’ন নাই। তাহারা কোথায় থাকে, কি করে, কেমন করিয়া জীবন ধারণ ক’রে, তাহা কেহই বলিতে পারে না। লোকমুখে কেবল শোনা যায় যে, ঐ সকল পৰ্ব্বতে ভয়ানক দস্যুগণ বাস করে; সেইজন্য সাধ্যসত্তে সে পথে কেহ পদার্পণ করে না; অথচ পর্ব্বতের দুইদিকে বড় বড় সহর। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য অনেক মহাজনকেও দায়ে ঠেকিয়া সে পার্বত্যপথে আগমন করিতে হয়। অন্য পথে যাইতে হইলে যে পরিশ্রম ও অর্থব্যয় হয়, তাহাতে লাভ পোষায় না। কাজেকাজেই সওদাগরগণ অতি সাবধানে দু’দশজন শরীর-রক্ষক ও পুলিসের লোক সমভিব্যাহারে দিনের বেলায় পাৰ্ব্বত্য পথ দিয়া গমনাগমন করিত। অনেক সময়ে এরূপ শ্রুত হওয়া গিয়াছে, সে রকম দলকে ঐ দানব-স্বভাবেরা হত্যা করিয়া খড়ের মধ্যে ফেলিয়া দিয়াছে; কিন্তু কে হত্যা করিল, সে-দস্যুগণ কোথায় থাকে বা কোথা হইতে আসিয়া তাহাদিগকে আক্রমণ করিল, শত চেষ্টাতেও কেহ তাহা নিরাকরণ করিতে পারে নাই। এই কার্য্যের জন্য কতবার কত সুদক্ষ পুলিস-কৰ্ম্মচারী নিয়োজিত হইয়াছে;কিন্তু সকলকেই অকৃতকাৰ্য্য হইতে হইয়াছে। এমন কি, অনেকে আর জীবিত ফিরিয়া আসেন নাই।
রঘুনাথ তারাকে ঘোটক হইতে নামাইবার জন্য হাত বাড়াইল। অশ্বটী সম্মুখের পা তুলিয়া ক্ষেপিয়া উঠিল। অমনি চারি-পাঁচজনে মিলিয়া ‘কুমারকে’ সুস্থির করিবার জন্য বল্গা ধারণ করিল। তারপর রঘুনাথ তারাকে ঘোড়া হইতে নামাইয়া লইল। তারার অশ্বটী লইয়া অন্যান্য দস্যুগণ চলিয়া গেল। ইতিমধ্যে যে চারি-পাঁচজন লোক কুমারকে শান্ত করিতে নিযুক্ত হইয়াছিল, তাহাদের একজন তারাকে ঘোড়ার উপর হইতে নামাইবার পূর্ব্বে কোন অজুহাতে তারার কাছে গিয়া চুপি চুপি বলিয়াছিল, “ভয় নাই—আমি তোমাকে রক্ষা করর্—তুমি নির্ভয়ে থাক।”
মুহূর্তের মধ্যে এই কথা বলিয়া সেই লোকটা একটু সরিয়া দাঁড়াইল। উহা তাদৃশ বিশ্বাস্য কথা নয় বটে; তথাপি এই কথা শুনিয়া তারার হৃদয়ে যেন কি অপূর্ব্ব আশা সমুদিত হইল। দস্যুদলের মধ্যে “ভয় নাই—আমি নিশ্চয়ই রক্ষা করব—তুমি নির্ভয়ে থাক!” এ কথা যে বলে, সে নিশ্চয়ই সামান্য লোক নয়, ইহাই তাহার ধ্রুব জ্ঞান হইল। উত্তমরূপে লক্ষ্য করিয়া তারা দেখিল, যে লোকটী কানের কাছে চুপি চুপি তাহাকে উক্ত কথাগুলি বলিয়া ভরসা দিয়াছিল, তাহার পরিচ্ছদ অবিকল অন্যান্য দস্যুগণের ন্যায়। এমন কি সে কথাও কহিতেছে, সেইরূপ কর্কশ স্বরে;কিন্তু চুপি চুপি তারার কাছে আসিয়া যখন সে বলিয়াছিল, “ভয় নাই, আমি তোমায় রক্ষা করব—তুমি নির্ভয়ে থাক,” সে স্বর যেন দস্যুর মত নয়—সে-স্বরে যেন কি একটা মাধুর্য্য ছিল। তারা বুঝিল, সে-স্বর যাহার কণ্ঠনিঃসৃত, অবশ্যই সে কোন সহৃদয় পরোপকারী ব্যক্তি। তাই সেই-স্বরে তারার হৃদয়ে কথঞ্চিৎ আশার সঞ্চার হইয়াছিল। তারার মনে হইয়াছিল, সে-ব্যক্তি কখনই দস্যুদলের সহকারী নয়, ছদ্মবেশে কোন মহাপুরুষ স্বকার্য্যসাধনোদ্দেশে দস্যুদলস্থ হইয়া রহিয়াছেন, তারা ভাবিল, সে ব্যক্তি যে স্বরে তাহাকে আশ্বাস প্রদান করিয়াছেন, চুপি চুপি কথা কহিলেও সেই স্বরই তাঁহার স্বাভাবিক স্বর— অপর স্বর দস্যুগণের সন্দেহ দূর করিবার জন্য বোধ হয়, তিনি অনুকরণ করিয়াছেন মাত্র। তখন তারা স্থির করিল, এ বিপদে তাহাকে রক্ষা করিবার নিমিত্ত একজন সাহসী বীরপুরুষ ছদ্মবেশে দস্যুগণের মধ্যে আছেন; এবং কার্য্যকালে তিনি তাহাকে সকল বিপদ হইতে রক্ষা করিবেন।