Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রঘু ডাকাত : সংঘর্ষ—পুণ্য ও পাপে (প্ৰথম খণ্ড) || Panchkari Dey » Page 12

রঘু ডাকাত : সংঘর্ষ—পুণ্য ও পাপে (প্ৰথম খণ্ড) || Panchkari Dey

রায়মল্ল বলিলেন, “তার পর তারাকে আপনি কেমন ক’রে পেলেন, আর কেমন ক’রেই বা জানলেন, এই তারাই সেই তারা?”

অজয়সিংহ বৃদ্ধ মঙ্গলকে দেখাইয়া বলিলেন, “তারার যখন জন্ম হয়, তখন এই মঙ্গল আমার ভায়ের ভৃত্য ছিল। যতদিন আমার ভাই জীবিত ছিলেন, ততদিন মঙ্গল তারাকে লালন-পালন করে। তার পর তাঁহার মৃত্যু হইলে, মঙ্গল আসিয়া আমার কাছে থাকে। তারার চিবুকে ছেলেবেলায় দু- একটা কাটাকুটির চিহ্ন ছিল। তাহা মঙ্গল জানিত। সে চিহ্ন দেখিয়াই জীবিত তারাকে মঙ্গল চিনিতে পারিয়াছিল।”

রায়মল্ল। তারাকে কি উদ্দেশ্যে তাহার বিমাতা মেরে ফেলতে চেষ্টা করে?

অজয়। তারাকে মেরে ফেলতে পারলেই আমার ভায়ের অতুল সম্পত্তি তারার বিমাতার ভোগে আসে; একটা নামমাত্র পোষ্যপুত্র নিয়ে আজীবন সুখে-স্বচ্ছন্দে সমস্ত বিষয় ভোগ করতে পারে।

রায়মল্ল। কেন? তারার বিমাতা যে টাকা মাসহারা পাবেন, সেই টাকাতেই ত তাঁর বেশ চলতে পারে?

অজয়। তা’ বললে কি হয়? লোভ বড় ভয়ানক জিনিষ। তা’ ছাড়া এর মধ্যে আর অন্য কোন লোক আছে। তারই ষড়যন্ত্রে এই সব ঘটেছে। তারার বিমাতার চরিত্র ভাল নয়। জগৎসিংহ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে সে দুশ্চরিত্রা—গুপ্ত প্রণয়ে আবদ্ধ। তারই পরামর্শে এই সব হয়েছে। সে লোকটা রাজার হালে আছে। বিষয়-সম্পত্তি এখন যেন সবই তার হয়েছে। পূর্ব্বে সে আমার ভায়ের বিষয়- সম্পত্তির তত্ত্বাবধায়ক ছিল। তাঁর জীবিতাবস্থায়ই তারার বিমাতার সঙ্গে সেই লোকটির গুপ্ত-প্ৰণয় হয়; কিন্তু সে কথা কেহ জানতে পারে নাই। এখন সে নামে বিষয়ের তত্ত্বাবধায়ক, কাজে—সে- ই হৰ্ত্তা-কৰ্ত্তা-বিধাতা।

রায়মল্ল। আপনি এই সব কথা কেমন ক’রে জানতে পারলেন?

অজয়। একে একে সব ব’লে যাচ্ছি। সমস্ত শুনলেই বুঝতে পারবে—ব্যস্ত হ’য়ো না।

রায়মল্ল। আচ্ছা, বলুন।

অজয়। আমার ভ্রাতার মৃত্যুর দিন-কয়েক পরেই তারাকে কে চুরি ক’রে নিয়ে যায়। মঙ্গল একবার ছুটি নিয়ে বাড়ী যায়। দেশে যাবার সময়ে বাঙ্গালা মুল্লুকে এক স্থানে সে তারাকে দেখে চিনতে পারে। বর্দ্ধ মানে একটি গৃহস্থ লোকের বাড়ীতে মঙ্গল রাত্রিবাসের জন্য অতিথি হয়। সেইখানে সে তারাকে প্রথম দেখে, দেখিয়াই তার সন্দেহ হয়। তার পর গৃহস্বামীকে মঙ্গল সে কথা জিজ্ঞাসা করে। গৃহস্বামী একজন বাঙ্গালী বাবু। তাঁর নাম জনাৰ্দ্দন দত্ত—ভদ্র কায়স্থ। তিনি বলেন, “অনেক দিন পূর্ব্বে আমার বাড়ীতে একজন পশ্চিম দেশীয় রাজপুত এই মেয়েটিকে নিয়ে আসেন, আর এক রাত্রি থাকবার জন্য আমার আশ্রয় চান্। ভদ্রলোক বিপদে পড়েছেন দেখে, আমি তাঁকে আশ্রয় দিই। বিশেষতঃ মেয়েটিকে দেখে আমার বড় মায়া হয়। পাছে রাত্রে থাকবার স্থানাভাবে মেয়েটির কষ্টহয়, এই ভেবে আমি আমার বাহিরের একটা ঘর খুলে দিই। আহারাদি শেষে রাত্রিতে সেই রাজপুত ভদ্রলোকটি মেয়েটিকে নিয়ে শয়ন করে। আমিও যেমন প্রতিদিন বাড়ীর ভিতরে শয়ন করি, সেদিনও সেইরূপ করি। পরদিন প্রাতে আমার চাকর আমার নিদ্রাভঙ্গ ক’রে আমায় বলে, ‘বাবু, এই মেয়েটি এক্‌লা বাহিরের ঘরে প’ড়ে কাঁদছে, আর সেই লোকটি কোথায় চলে গেছে।’ ব্যস্ত-সমস্ত হ’য়ে আমি বাহিরে এসে দেখি, বাস্তবিকই রাজপুত ভদ্রলোকটা মেয়েটাকে রেখে পলায়ন করেছেন; তার পর তাঁর অনেক অনুসন্ধান করেও তাঁকে খুঁজে পাই নাই। মঙ্গল গৃহস্বামীর এই কথা শুনে তাঁকে প্রকৃত কথা বলে এবং তারার পরিচয় দেয়। তারাকে অনেক দিন হ’তে প্রতিপালন করে তার উপর গৃহস্বামীর একটু মায়া বসেছিল; সেজন্য সহজে তিনি তাকে ছেড়ে দিতে চাহেন নাই। তার পরে মঙ্গলের পত্র পেয়ে আমি সেখানে উপস্থিত হ’য়ে তারাকে নিয়ে আসি।”

রায়মল্ল। তারাকে পেয়ে, আপনি রাজদ্বারে বিচারপ্রার্থী হ’লেন না কেন?

অজয়। হয়েছিলেম—নালিশ করেছিলেম বারদিন ধ’রে ক্রমাগত মোকদ্দমা ক’রে শেষে আমার হার হয়।

রায়মল্ল। কেন? প্রমাণ করতে পারলেন না?

অজয়। না, তারার বিমাতা বলে, এ মেয়েটিকে সে কখনও দেখে নি। তার ভগিনী, সম্পর্কে তারার মাসী, যার বাড়ীতে ছল ক’রে তারাকে পাঠান হয়েছিল, তিনিও বলেন, এ মেয়েটিকে পূৰ্ব্বে কখনও দেখেছেন ব’লে স্মরণ হয় না। যে জেলে পুষ্করিণী থেকে জালে তারার মৃতদেহ উত্তোলন করেছিলেন, সে-ও হলফ নিয়ে মিথ্যাকথা কইলে। এ ছাড়া ঘুষ খেয়ে প্রতিবাসী দু-চার জন লোকও মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে পাপের মাত্রা বাড়ালো। কাজেই আমি প্রকৃত তারার অস্তিত্ব ও স্বত্ব প্রমাণ করতে পারলেম না। মোকদ্দমায় হার হ’য়ে শেষ-দশায় যা’ কিছু পুঁজিপাটা ছিল, তাও খোয়ালাম। তারপর এতদিন অতি কষ্টে কায়ক্লেশে তারার ভরণপোষণ করেছি। যদি ভগবান্ দিন দেন, তবে একদিন তারা সুখীনী হবে। আমি সেইটুকু দেখে মরতে পারলেই জন্ম সার্থক বলে বিবেচনা করব।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *