Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রঘু ডাকাত : সংঘর্ষ—পুণ্য ও পাপে (প্ৰথম খণ্ড) || Panchkari Dey » Page 10

রঘু ডাকাত : সংঘর্ষ—পুণ্য ও পাপে (প্ৰথম খণ্ড) || Panchkari Dey

যে ব্যক্তি তারার বসন ধরিয়া টানিয়াছিল, সে রঘুনাথ। তৎপশ্চাতে ভোজসিংহ দন্ডায়মান।

রঘুনাথ। তারা! তুমি ওদিকে যাচ্ছিলে কেন?

তারা। প্রতাপকে সাবধান করে দিবার জন্য।

রঘুনাথ। কিসের সাবধান?

তারা। তোমরা ওঁকে খুন করবার মতলব করছ তাই।

রঘুনাথ। আশ্চার্যান্বিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “তুমি কেমন ক’রে জানলে?”

তারা। আমি তোমাদের পরামর্শ সব শুনেছি।

রঘুনাথ। আমাদের কথায় তোমার থাকবার কোন দরকার নাই। তুমি নিজের বিপদ্ নিজে ডেকে আন্‌ছ। তুমি এ পর্য্যন্ত বাঁধা ছিলে না, এইবার তোমায় বেঁধে রাখতে হবে।

তারা কাঁদিয়া বলিল, “তোমার হাতে পড়েছি, এখন তোমার যা’ ইচ্ছা করতে পার;কিন্তু জেনো রঘুনাথ উপরে একজন আছেন, তিনি তোমার এই পাপ কাজ সব দেখতে পাচ্ছেন। একদিন-না- একদিন এর প্রতিফল তুমি পাবেই পাবে।”

বালিকার মুখে এরূপ সতেজ কথা শুনিয়া রঘুনাথের বড় রাগ হইল। তারার গলায় হাত দিয়া ধাক্কা দিতে দিতে সে তাহাকে শিবিরের বহিৰ্দ্দেশে লইয়া আসিল। তারপর বলিল, “যাও, তুমি যেখানে ছিলে, সেইখানে যাও। ভাগ্যে আমি ঠিক সময়ে এসে পড়েছিলাম, তাই ত তুমি প্রতাপের সঙ্গে কথা কহিতে পেলে না, নইলে আমাদের গুপ্ত-পরামর্শ প্রতাপ ত সব টের পেত!”

ডাকাতের কড়া হাতের ভয়ানক ধাক্কা খাইয়া তারার কোমল দেহে গুরুতর আঘাত লাগিল। কাঁদিতে কাঁদিতে অভাগিনী শিবিরে প্রবেশ করিল। রঘুনাথ প্রথমে তারাকে প্রতাপের সহিত কথা কহিতে দেখে নাই। তারা যখন দ্বিতীয় বার প্রতাপের কাছে যাইতেছিল, তখন রঘুনাথ তাহাকে দেখিয়াছিল; সুতরাং রঘুনাথের বিশ্বাস হইয়াছিল, তারা প্রতাপকে কোন কথা বলিবার অবকাশ পায় নাই।

রঘুনাথের আদেশে ভোজসিংহ একে একে প্রত্যেক দস্যুকে জাগাইল। কেবল প্রতাপকে কেহ ডাকিয়া উঠাইল না। নিঃশব্দে অন্যান্য দস্যুগণ চলিয়া গেল। কেবল রঘুনাথ, ভোজসিংহ আর তিনজন বিদেশীয় দস্যু প্রতাপকে হত্যা করিবার জন্য রহিল। রঘুনাথের আদেশক্রমে তারাকেও অন্যান্য দস্যুগণের সহিত যাইতে হইল। এতক্ষণে অভাগিনীর আশা-ভরসা একেবারে উন্মুলিত হইবার উপক্রম হইল।

কেমন করিয়া হত্যা করিতে হইবে, কোন্ খড়ের ভিতরে প্রতাপের মৃতদেহ ফেলিয়া দিতে হইবে, এই সমস্ত কথা বিশেষরূপে শিক্ষা দিয়া, অবশেষে সেই তিনজন বিদেশীয় দস্যুকে রাখিয়া ভোজসিংহ ও রঘুনাথ উভয়েই প্রস্থান করিল।

যখন সকলে চলিয়া গেল, তখন হাসিতে হাসিতে প্রতাপ নেত্রপাত করিলেন। তিনি তাহাদের তিনজনের দিকে ফিরিয়া বলিলেন, “বেশ কাজ করেছ! বেশ বোকা ভুলিয়েছ! আমি তোমাদের উপর বড় সন্তুষ্ট হয়েছি। রঘুনাথ যে তোমাদিগকে আমার অনুচর ভাবে নি, এইটিই তার মন ভিজাইতে পেরেছ, আর তোমাদের উপরে বিশ্বাস ক’রে যে সে এত বড় একটা হত্যাকাণ্ডের ভার দিয়েছে, এই তোমাদের কার্য্যদক্ষতার যথেষ্ট প্রমাণ।”

পাঠক! এতক্ষণে বোধ হয়, ব্যাপারটা কি বুঝিতে পারিলেন। এই তিন বিদেশীয় দস্যু রায়মল্লের অনুচর এবং তাঁহারই শিক্ষায় শিক্ষিত। তাহারা অনেক মিথ্যাকথা বলিয়া রঘুনাথের দলে মিশিয়াছিল কিন্তু রঘুনাথ একদিনও ইহা সন্দেহ করে নাই যে, তাহারা রায়মল্লেরই সাহায্যকারী। প্রথমে প্রতাপকে রায়মল্ল ভাবিয়াই রঘুনাথ সন্দেহ করিয়াছিল;কিন্তু অজয়সিংহের বাড়ীতে রায়মল্ল সাহেবকে দেখিয়া তাহার সে বিশ্বাস তিরোহিত হইয়াছিল।

রঘুনাথ প্রতাপকে রায়মল্ল গোয়েন্দার প্রধান অনুচর বলিয়া স্থির করিয়াছিল। পাছে প্রতাপ জীবিত থাকিলে রায়মল্ল তাহাদের গতিবিধির কথা জানিতে পারেন, এইজন্য প্রতাপকে হত্যা করিবার কল্পনা রঘুর মনে উদিত হয়।

প্রতাপ একজন দস্যুকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন, “দুইখানি ছোরায় রক্ত মাখিয়ে রঘুনাথকে দেখাও যে, তোমরা প্রতাপকে হত্যা করেছ। এখন তারা সকলে রাজেশ্বরী উপত্যকায় যাচ্ছে। তোমরাও সেইখানে যাও। লালপাহাড়ের পাশে বনের ভিতর দিয়েও রাজেশ্বরী উপত্যকায় যাওয়া যায়। দস্যুরা সে পথ দিয়ে যাবে না, তাহাদিগকে অনেক ঘুরে যেতে হবে; সেখানে পৌঁছিতে প্রায় বেলা আড়াইটা হবে। আমি ইতিমধ্যে একটা প্রয়োজনীয় কাজ সেরে লালপাহাড়ের পাশে বনের ভিতর দিয়েই রাজেশ্বরী উপত্যকায় উপস্থিত হ’ব। বোধ হয়, সকলের আগে আমি সেখানে পৌঁছিব। আমি যাকে যেমন ভাবে কাজ করতে শিখিয়ে দিয়েছি, ঠিক সেই রকম যেন সকলে করে। তার একটু ব্যাতিক্ৰম হ’লেই ধরা প’ড়ে যাবে। খবরদার—খুব সাবধান।”

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *