Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

যীশু

অসময়ের বৃষ্টিতে আকাশটা যেন আজ ভেঙ্গে পড়েছে। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় তলপেটটা খামচে ধ’রে, ঝিমলি কোঁকাচ্ছে।
ভালোবাসার উপহার নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে জঙ্গলে জঙ্গলে। অনেক বাধা, চোখরাঙানি অতিক্রম ক’রেও বুঝি শেষরক্ষা করা গেল না! বীরভূমের রাঙামাটির মেয়ে ঝিমলি। দোষ করে ফেলেছিল শহরের বাবুকে ভালোবেসে। রাস্তা তৈরির কাজ হচ্ছিল ওদের গ্রামে। পি ডাব্লু ডি’র ইন্জনিয়ার কুণালবাবুর বাড়িতে রান্নার কাজ নিয়েছিল ঝিমলি। চৈত্রের এক বিকেলে ঝিমলি কাজে আসছিল বাবুর বাড়িতে।পথে হঠাৎ আসা কালবৈশাখীর ঝড়বৃষ্টি ঝিমলিকে ভিজিয়ে দিয়ে গেলো। কেথাও দাঁড়াবে তেমন কোনো আশ্রয়ও চোখে পড়লো না। অগত্যা বৃষ্টি মাথায় করেই এগতে হয়। মনে মনে বৃষ্টিকে গালাগাল দিয়ে আড়ষ্ট ভাবে ঝিমলি, বাবুর বাড়ির দরজায় বেল বাজালো। দরজা খুলে আপাদমস্তক ভিজে যাওয়া ঝিমলিকে দেখে কুণালের বুকের রক্ত চলকে উঠলো। ঝিমলি পাশ কাটিয়ে ভেতরে যাচ্ছিল ঠিক তখনই কুণাল ঝিমলিকে এক ঝটকায় বুকের মধ্যে টেনে নেয়। ঝিমলিও মোহাচ্ছন্নর মতো আত্মসমর্পণ করে। কুণালের এই একলা জীবনে ঝিমলি কালবৈশাখীর এক পশলা বৃষ্টির মতো ঝরে পড়লো। ঝিমলিও নিজের অজান্তে কখন কুণালের মনের কাছাকাছি চলে এসেছে তা নিজেও বোঝেনি। তবে এটা ঠিক কুণালবাবুর সব কাজ নিজে হাতে গুছিয়ে করতে ওর খুব ভালো লাগে। এটাই হয়তো সহজ সরল মেয়েটার ভালোবাসা। এর থেকে বেশি কিছু ও আশা করেনি। কিন্তু সেই ভালোবাসার দাম চোকাতে তাকে আজ জঙ্গলে জঙ্গলে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। আদিবাসী সমাজের নিয়ম তাদের সমাজের বাইরের কোনো পুরুষ আদিবাসী সমাজের মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে না,তায় ঝিমলি তো অন্তঃসত্ত্বা! ঝিমলির গর্ভবস্তার কথা জানাজানি হতেই সমাজের মাতব্বর নিদান দেয় –
“ওকে আর আমাদের সমাজে রাখা যাবে না।” এই কথা শুনে কুকুরের মতো সবাই তাড়াকরে ওকে মেরে ফেলার পণ করে। গর্ভের সন্তানকে বাঁচাতে ঝিমলি মরণপণ দৌড় লাগায়। জঙ্গলের পথ ধরে ছুটতে ছুটতে বার বার হোটচ খেয়ে পা দুটো ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। তলপেটটা যন্ত্রণায় ফেটে যাচ্ছে। ঝিমলি বুঝলো আর কিছু করার নেই। সামনে মৃত্যু হাতছানি দিয়ে ডাকছে। চোখের সামনে অন্ধকার হয়ে আসছে। ঝিমলি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে জ্ঞান হারায়।
কিন্তু কথায় বলে না! ‘রাখে হরি মারে কে!’ ঝিমলির যখন জ্ঞান ফিরল তখন নিজেকে আবিষ্কার করল একটা শ্বেত শুভ্র বিছানায়। তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে একজন সাদা গাউন পরিহিত বয়ষ্ক ব্যক্তি এবং একই ধরনের পোশাক পরিহিতা একজন মহিলা। ঝিমলি অনেক কষ্টে জিজ্ঞেস করল-
“আমি কোথায়..?”
সাদা পোশাকের ভদ্রলোক বললেন
” তুমি একটা মাতৃসদনে। তোমার বাচ্চাকে আমরা বাঁচাতে পেরেছি। তবে সময়ের আগে প্রসব করানোর ফলে ও খুবই দুর্বল।ওকে এক বিশেষ ঘরে রাখা হয়েছে। এটা একটা খ্রীষ্টান মিশনারী মাতৃসদন। তুমি একটু সুস্থ হলে তোমাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তোমার বাড়ির লোককে খবর দিতে হবে..”
“না না, আমাকে দয়াকরে বাড়ি পাঠাবেন না।আমি নিজের সন্তানকে বাঁচাতেই পালিয়ে এসেছি।ওরা জানতে পারলে আমাকে মেরে ফলবে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি ভয় পেয়ো না। তুমি আমাদের মিশনে থেকেই তোমার ছেলেকে মানুষ করতে পারবে।”
“আমার কি ছেলে হয়েছে?”
“হ্যাঁ, তোমার ছেলে হয়েছে।”
কিছুদিনের মধ্যেই ঝিমলি সুস্থ হয়ে উঠলো।ওর ছেলেও এখন সুস্থ।ঝিমলি আর ওদের সমাজে ফিরতে চায় না। ছেলের নাম গোত্র বংশপরিচয়ও চায় না। ফাদার তার ছেলের নামকরণ করেন যীশু। যীশুকে নিয়ে ঝিমলির নতুন জীবন শুরু হলো দেবদূতের মতো আসা ওই ফাদারের মিশনারীতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *