যমদূত সনে
পড়ে আছি নিচতলায় মেঝেতে। যমদূত আছে পাহাড়ায়। তবু সাহসে ভর করে ঘুরি বাড়িটার চারদিকে, বাগানে, ছাদে। কত কি দেখছি। আজ আমি নেই, চলে গেছি মরনের ওপারে। মনের টানে দেখি ঘুরে আমার অবর্তমানে স্ত্রী অনিমার হাল কি হবে!
অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখি অদ্ভুত আয়োজন। বডি পড়ে আছে, সৎকার আয়োজনে ব্যস্ত পাড়ার ছেলে সব। আমার দুই ছেলে বিবাহিত তারা, আর মেয়ে এক। তাকেও বিয়ে দিয়েছি ভালো ঘরে। সব এসেছে মৃত বাপকে শেষ দেখতে।
দোতলা বাড়ি। নিচে গ্যারেজ। তার পাশে বেডরুম তিনটে। উপরেও তাই, শুধু ব্যালকনি ঘিরে রুম হয়েছে চারটে।
দুই ছেলে মিলে আলোচনা করে, এবার বাড়ি ভাগ হবে। ছোট তুমি নিচে থাকবে, বড়ো আমি রইবো উপরে। মা থাকবে ব্যালকনির ছোট ঘরে। বোনকে কিছু টাকা দিয়ে দেবো ঝামেলা চুকিয়ে।
মনে মনে ভাবছি , একই শুনি আমি! মুহূর্তে হয়ে গেলাম পর! দুখি মনে তাই যাই দোতলায় দেখতে স্ত্রী মেয়ের কি হাল। গিয়ে দেখি স্ত্রী কাঁদছে শোকাবহে, খানিক বাদে খাচ্ছে চা , শরবত। সাত্বনা দিচ্ছে পাড়ার লোকে সব, আর কিছু আত্মীয় পরিজন। হঠাৎ মেয়েকে ধমকের সুরে বলে অনিমা চুপ থাক কিছুক্ষণ। আসবে এক্ষুনি ব্যারিস্টার সুনীলবাবু , তারপর নাহয় হবে সৎকার।
আমি মনে ভাবি অনিমা কি বলে, হায়রে ওর কি যে হবে? যদিও আমি করেছি নামিনি আমার যত সম্পত্তি তা ওরই হবে।
এলে সুনীলদা অনিমা ইশারায় কি যে বললো কি জানি! দেখি সুনীলদা কিছু কাগজপত্র বের করে বলেন, যত সম্পত্তি আছে সব, তোমাদের মা’র নামে করা, গেছেন করে তোমাদের বাবা।
বিস্ময়ে হতবাক হই যখন দেখি সুনীলবাবু দেন অনিমার হাতে চেক বই। অনিমা একে একে ছেলে ও মেয়ের নামে লিখে দেয় টাকা সমান ভাগে। এরপরে বলে পাওনা -গন্ডা মিটিয়ে দিলাম। কাজ শেষ হলে তোমরা বাড়ি ছেড়ে হবে বিদায়।
হতবাক ছেলেমেয়ে , বাকরুদ্ধ বোবা।
আমিও হতবাক! তবে মনে শান্তি; অনিমা নয় বোকা। উচিত জবাব দিয়েছে শোকসময়।
ধন্য মনে মানি, স্ত্রীকে নমিনি করে ভুল করিনি আমি।
শান্তিতে চলি যমদূত সনে।