Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » যখন নামিবে আঁধার – মিসির আলি || Humayun Ahmed » Page 11

যখন নামিবে আঁধার – মিসির আলি || Humayun Ahmed

রাত আটটা। সারা দিন ঝলমলে রোদ ছিল। সন্ধ্যার পর থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। মিসির আলি ছাতা মাথায় মল্লিক সাহেবের বাড়িতে এসে উঠেছেন। দেখে মনে হচ্ছে মল্লিক সাহেবের বাড়ি শশানপুরী। কেউ বাস করে না। বিড়ালের মিউ মিউ শব্দ ছাড়া কোনো শব্দ নেই। মিসির আলি দোতলায় ওঠার সিঁড়ির গোড়ায় দাঁড়িয়ে বললেন, বাড়িতে কেউ আছেন?

কেউ জবাব দিল না। দারোয়ান আক্কাস মিয়াকে এক ঝলক দেখা গেল। সে দ্রুত ঘরে ঢুকে গেল। মিসির আলি দোতলায় উঠে গেলেন। যে ঘরে বন্দি ছিলেন, সেই ঘর খুঁজে বের করতে তার বেগ পেতে হলো না। মূল দরজা পুলিশ ভেঙেছে। দরজা ঠিক করা হয় নি। মিসির আলি ঘরে ঢুকে দেখেন ঘরের ভেতর কাঠের চেয়ারে মল্লিক সাহেব বসে আছেন। তার হাতে সিগারেটের প্যাকেট। মিসির আলি অবাক হলেন না। মল্লিক সাহেব এখানে থাকবেন, মিসির আলি তা ধরেই নিয়েছিলেন।

মল্লিক মিসির আলির দিকে না তাকিয়ে বললেন, ছোটকুত্তির কাছে শুনলাম রাতে আপনি খানা খেতে চেয়েছেন। সে আপনার জন্যে খানা পাকিয়েছে। মোরগপোলাও আর খাসির বটি কাবাব। তবে আমার উপদেশ, ছোটকুত্তির রান্না খাবার খাবেন না। খাবারে বিষ মিশিয়ে দিতে পারে।

মিসির আলিকে দেখে মনে হচ্ছে না। তিনি মল্লিক সাহেবের কথা শুনছেন। তিন খাটে বসলেন। পরিচিত খাট। পরিচিত বিছানা। বালিশ-চাদর কিছুই বদলানো হয় নি। তিনি বালিশ নাকের কাছে নিয়ে গন্ধ শুঁকলেন।

মল্লিক বললেন, আপনার ভাব-ভঙ্গি দেখে মনে হয় কিছু বলতে চান। বলতে চাইলে বলেন। বালিশ শুকাগুকির প্রয়োজন নাই। বালিশের মধ্যে হিসটরি’ লেখা নাই।

মিসির আলি বললেন, আপনার দুই ছেলে যে দু’জন বাবা দেখত সেই রহস্য ভেদ করেছি। তারা আসলেই ছোটবেলা থেকে দু’জন বাবা দেখত।

মল্লিক সাহেব বললেন, আপনাকে অনেকবার বলেছি-আমার কোনো যমজ ভাই নাই।

মিসির আলি বললেন, যমজ ভাই না, সে আপনার সৎ ভাই। আপনার বাবা তারও বাবা। DNA টেস্টে তা-ই পাওয়া গেছে। আপনার এই সৎভাইয়ের কোনো সামাজিক স্বীকৃতি ছিল না। মনে হয় তার জন্ম কাজের মেয়ের গর্ভে। তবে আপনার বাবা তাকে পুরোপুরি বঞ্চিত করেন নি। আগামসি লেনে তাকে একটা বাড়ি কিনে দিয়েছিলেন। আপনার এই ভাই সত্যিকার অর্থেই ভালো মানুষ ছিল। সে আপনার দুই ছেলেকে অসম্ভব পছন্দ করত। এই ছেলে দু’টির টানেই সে মাঝে মাঝে গোপনে আপনার বাড়িতে আসত। সে লুকিয়ে থাকত এই ঘরে। আপনি তাকে খুন করেছেন।

মল্লিক বললেন, এত কিছু বলেছেন, কীভাবে খুন করেছি সেটাও বলেন। গলা টিপে মেরেছি?

মিসির আলি বললেন, ডাব কাটা হয় এমন দা-এর পেছন দিয়ে তার মাথায় বাড়ি দিয়েছেন।

মল্লিক অবাক হয়ে বললেন, এটা কীভাবে বললেন?

মিসির আলি বললেন, আপনার ছেলে বক্কা এই দা নিয়ে আমাকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিল। সে বলেছে—দা খারাপ জিনিস। তার কথা থেকে বুঝেছি।

মল্লিক বললেন, হারামজাদাটা আমাকে ধরায়ে দিয়েছে। দুই হারামজাদা ভাব ধরে থাকে যে এরা কিছুই বুঝে না। তলে তলে বিরাট বুদ্ধি।

মিসির আলি সিগারেট ধরালেন। তৃপ্তির সঙ্গে দুটা টান দিয়ে বললেন, আপনার সম্পর্কে আপনার দুই পুত্ৰবধু যা বলে তা ঠিক না। আপনি এই কাজ কখনো করেন নি। করলে এদের কুত্তি ডাকতেন না। আপনার রুচি নিম্নমুখী কাজের মেয়ে বা আপনার হাসপাতালের নার্সে সীমাবদ্ধ।

মল্লিক সাহেব বললেন, নার্স হারামজাদিও মুখ খুলেছে। আফসোস। বিরাট আফসোস। আপনি এত কিছু বের করে ফেলেছেন। এখন বলেন, আমার স্ত্রী সুরমাকে কে মেরেছে? আমি?

মিসির আলি বললেন, আপনি না। আপনার স্ত্রী নিজেই কুয়াতে ঝাপ দিয়েছেন। আমার ধারণা, আপনার পুত্রবধূরা আপনার বিষয়ে তাঁর কানে কথা তুলেছে। তিনি এই দুঃখ নিতে পারেন নি।

মল্লিক আনন্দিত গলায় বললেন, আপনার বিরাট বুদ্ধি। কিন্তু আপনিও শেষ পর্যন্ত ধরা খেয়েছেন। আমার স্ত্রীকে আমিই মেরেছি। সে স্বেচ্ছায় কুয়াতে ঝাপ দেয় নাই। কেন মেরেছি, সেটা একটা ইতিহাস। আপনাকে বলার প্রয়োজন নাই। খানা কি দিতে বলব? খানা খাবেন?

মিসির আলি হাঁ-সূচক মাথা নাড়লেন। মল্লিক সাহেব বললেন, আপনাকে দেখে কখনো বুঝি নাই। একজন চিকন-চাকান মানুষের পেটে এত বুদ্ধি। জানলে কোনোদিন বাড়ি ভাড়া দিতাম না। লাত্থি দিয়ে বের করতাম।

মল্লিক কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে শান্ত গলায় বললেন, ছোটকুত্তি, আমাদের খানা দাও। পুলিশ আজ রাতেই আমাকে থানায় নিয়ে যাবে। বাড়ির চারদিকে পুলিশ। খালি পেটে থানায় যাওয়া ঠিক না।

বৃষ্টির বেগ বাড়ছে। বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া। চম্পা খাবার নিয়ে ঘরে ঢুকেছে। আজ তার সারা শরীর বোরকায় ঢাকা না। অতি রূপবতী এই মেয়েকে দেখে মিসির আলি মুগ্ধ হলেন। তার কাছে মনে হলো, হেলেন অব ট্রয়, ক্লিওপেট্রা কিংবা কুইন অব সেবা কখনোই দুইবোন চম্পা-পারুলের চেয়ে রূপবতী না। বাঙালি প্রাচীন কবির মতো মিসির আলি মনে মনে আওড়ালেন–

‘কে বলে শারদ শশি সে মুখের তুলা
পদনখে পড়ে আছে তার কতগুলা।”

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11
Pages ( 11 of 11 ): « পূর্ববর্তী1 ... 910 11

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *