Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ময়ূরাক্ষী (১৯৯০) || Humayun Ahmed » Page 4

ময়ূরাক্ষী (১৯৯০) || Humayun Ahmed

ময়ূরাক্ষী ৪

প্রবল ঝাঁকুনিতে ঘুম ভাঙল। চোখ মেলে দেখি বড়ফুপু। পাশের বিছানা খালি। বাদল নেই। সকালে ঘুম ভাঙতেই প্রথম যে জিনিসটা জানতে ইচ্ছা করে–কটা বাজে?
বড়ফুপুকে এই প্রশ্ন করব না ভাবছি তখন তিনি কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন, কেলেঙ্কারি হয়েছে।
কি কেলেঙ্কারি?
মানুষকে মুখ দেখাতে পারব না রে।
আমি বিছানায় বসতে বসতে বললাম, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার রাতে এসেছিল, তারপর আর রাতে ফিরে যায় নি–তাইতো?
তুই জানলি কী করে?
অনুমান করে।
আমি সকালে একতলায় নেমে দেখি ঐ ছেলে আর রিনকি। ছেলে নাকি রাতে তোর ফুপার অসুখের খবর পেয়ে এসেছিল। ঝড়বৃষ্টি দেখে আর ফিরে যায় নি। আর ঐ বদ মেয়ে সারারাতে ঐ ছেলের সঙ্গে গল্প করেছে।
বল কী?
আমার তো হাত ঘামছে। কীরকম বদ মেয়ে চিন্তা করে দেখ। মেয়ের কতবড় সাহস। ঐ ছেলে এসেছে ভালো কথা। আমাকে তো খবরটা দিবি?
আমি গম্ভিও গলায় বললাম, ঐ ছেলেরই বা কেমন আক্কেল রাত দুপুরে এল কীজন্যে?
হ্যাঁ দেখ না কান্ড। বিয়ে হয় নি কিছু না, শুধু বিয়ের কথা হয়েছে-এর মধ্যে নাকি সারারাত জেগে গল্প করতে হবে। রাত কি চলে গেছে নাকি?
খুবই সত্য কথা।
এখন ধর কোনো কারণে বিয়ে যদি ভেঙ্গে যায় তারপর আমি মুখ দেখাব কী ভাবে?
আমি এক্ষুনি নিচে যাচ্ছি ফুপু, ঐ ফাজিল ছেলের গালে ঠাশ করে একটা চড় মারব। তারপর দ্বিতীয় চড় রিনকির গালে। মেয়ে বলে তাকে ক্ষমা করার কোনো অর্থ হয় না।
তুই সবসময় অদ্ভুদ কথাবার্তা বলিস কেন? ঐ ছেলের গালে তুই চড় মারতে পারবি?
কেন পারব না?
যে ছেলে দুই দিন পর এ বাড়ির জামাই হচ্ছে তার গালে তুই চড় মারতে চাস? তোর কাছে এলাম একটা পরামর্শের জন্যে।
আজই ওদের বিয়ে লাগিয়ে দাও।
আজই বিয়ে লাগিয়ে দেব?
হুঁ। কাজি ডেকে এনে বিয়ে পড়িয়ে দাও–ঝামেলা চুকে যাক। তারপর ওরা যত ইচ্ছা রাত জেগে গল্প করুক। আসল অনুষ্ঠান পরে হবে। বিয়েটা হয়ে যাক।
ফুপু নিশ্বাস ফেললেন। মনে হচ্ছে আমার কথা তাঁর মনে ধরেছে। আমি বললাম, তুমি চাইলে আমি ছেলেকে বলতে পারি।
ওরা আবার ভাববে না তো আমরা চাপ দিচ্ছি?
চাপাচাপির কী আছে? ছেলে এমন কী রসগোল্লা? মার্বেলের মতো সাইজ। বিয়ে যে দিচ্ছি এতেই তো তার ধন্য হওয়া উচিত। তার তিন পুরুষের ভাগ্য যে আমরা…
ফুপু বিরক্তস্বরে বললেন, ছেলে এমন কী খারাপ?
খারাপ তা তো বলছি না–একটু শর্ট। তা পুরুষ মানুষের শর্টে কিছু আসে যায় না। পুরুষ হচ্ছে সোনার চামচ। সোনার চামচ বাঁকাও ভালো।
আজই বিয়ের ব্যাপারে ছেলে কি রাজি হবে?
দেখি কথা বলে। আমার ধারণা হবে।
তোর কথা তো আবার সবসময় মিলে যায়–একটু দেখ কথা বলে।
আমি আমার পাঞ্জাবি খুঁজে পেলাম না। ফুপু বললেন, বাদল ভোর বেলায় ঐ পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে বের হয়েছে।
আমি বাদলের একটা শার্ট গায়ে দিয়ে নিচে নামতেই মেরিন ইঞ্জিনিয়ার সাহেব লাজুক গলায় বললেন, হিমু ভাই আপনাকে একটা কথা বলতে চাই। খুব লজ্জা লাগছে অবশ্যি।
বলে ফেল।
রিনকির খুব শখ পূর্ণিমারাতে সমুদ্র কেমন দেখায় সেটা দেখবে। দুই দিন পরেই পূর্ণিমা।
ও আচ্ছা–দুই দিন পরেই পূর্ণিমা তা তো জানতাম না।
মানে কথার কথা বলছি ধরুন আজ যদি বিয়েটা হয়ে যায়–তাহলে আজ রাতের ট্রেনে রিনকিকে নিয়ে কক্সবাজারের দিকে রওনা হতে পারি। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে রাখা আর কী। পরে একটা রিসিপশানের ব্যবস্থা না হয় হবে।
তোমার দিকের আত্মীয়স্বজনরা…
ওদের আমি ম্যানেজ করব। আপনি শুধ এদের বুঝিয়েসুঝিয়ে একটু রাজি করান–মানে রিনকি বেচারির দীর্ঘদিনের শখ। ওর জন্যেই খারাপ লাগছে।
না না, তা তো বটেই। দীর্ঘদিনের শখ থাকলে তা তো মেটানোই উচিত। রাতের টিকেট পাওয়া যাবে তো? পুরো ফার্স্টক্লাস বার্থ রিজার্ভ করতে হবে।
রেলওয়েতে আমার লোক আছে হিমু ভাই।
তাহলে তুমি বরং ঐটাই আগে দেখ। আমি এ দিকটা ম্যানেজ করছি।
আনন্দে ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের চোখে চকচক করছে।সে গাঢ় গলায় বলল, রিনকি আমাকে বলেছিল–হিমু ভাইকে বললে উনি ম্যানেজ করে দিবেন। আপনি যে সত্যি সত্যি করবেন বুঝিনি।
আমি হাসতে হাসতে বললাম, কী নিয়ে গল্প করলে সারারাত?
গল্প আর কী করব বলুন। রিনকি এমন অভিমানী–কিছু বললেই তার চোখে পানি এসে যায়।সুপার সেনসেটিভ মেয়ে। কথায় কথায় একসময় বলেছিলাম যে ইউনিভাসিটিতে পড়ার সময় হেনা নামের একটা মেয়ের সঙ্গে সামান্য পরিচয় হয়েছিল–এতেই রিনকি কেঁদে অস্থির। আমাকে বলেছে আর কোনোদিন যদি আমি ঐ মেয়ের নাম মূখে আনি সে নাকি সুইসাইড করবে। এ রকম মেয়ে নিয়ে বাস করা কঠিন হবে। খুব দুশ্চিন্তা লাগছে হিমু ভাই।
ইঞ্জিনিয়ার সাহেবকে কিন্তু মোটেও চিন্তিত মনে হলো না। বরং খুবই আনন্দিত মনে হলো। আমার ধারণা প্রায়ই সে হেনার কথা বলে রিনকিকে কাঁদাবে। রিনকিও কেঁদে আনন্দ পাবে। ওদের এখন আনন্দরই সময়।
আমি বললাম, কথা বলে সময় নষ্ট করার কোনো মানে নেই । তুমি তোমার আত্নীয়স্বজনকে বল । তার চেয়ে যা জরুরি তা হচ্ছে টিকিটের ব্যবস্থা । আমি ফুপু-ফুপাকে রাজি করাচ্ছি।
রাজি হয়েছে কি-না জেনে গেলে ভালো হতো না–হিমু ভাই?
আমি ভবিষ্যৎ বলতে পারি তুমি কি এটা জানো না?
জানি।
আমি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি তোমরা দুজন হাত ধরাধরি করে সমুদ্রের পাড়ে হাঁটছ। অসম্ভব জোছনা হয়েছে। সমুদ্রের পানি রুপার মতো চকচক করছে আর তোমরা…
আমরা কী?
থাক সবটা বললে রহস্য শেষ হয়ে যাবে।
আপনি এক অসাধারণ মানুষ হিমু ভাই। অসাধারণ।

আমি এবং বাদল ওদের এগারটার ট্রেনে তুলে দিতে এলাম। ফুপা-ফুপু এলেন না। ফুপার শরীর খারাপ করছে।
ট্রেন ছাড়বার আগমূহুর্তে রিনকি বলল, হিমু ভাই আমার কেমন জানি ভয় ভয় করছে।
কীসের ভয়?
এত আনন্দ লাগছে। আনন্দের পরই তো কষ্ট আসে। যদি খুব কষ্ট আসে?
কষ্ট আসবে না। তোদের জীবন হবে আনন্দময়। তোদের আমি আমার ময়ূরাক্ষী নদী ব্যবহার করতে দিয়েছি। এই নদী যারা ব্যবহার কেও তাদের জীবনে কষ্ট আসে না।
তুমি কী যে পাগলের মত কথা মাঝে মাঝে বল। কিসের নদী?
আছে একটা নদী।। আমি আমার অতিপ্রিয় মানুষদের শুধু সেই নদী ব্যবহার করতে দিই। অন্য কাউকে দিই না, তুই আমার অতি প্রিয় একজন। যদিও খানিকটা বোকা। তবু প্রিয়।
তুমি একটা পাগল। তোমার চিকিৎসা হওয়া দরকার।
ট্রেন নড়ে উঠল। আমি জানালার সঙ্গে সঙ্গে এগুতে লাগলাম। রিনকির আনন্দময় মুখ দেখতে এত ভালো লাগছে। রিনকির চোখে এখন জল। সে কাঁদছে। আমি মনে মনে বললাম–হে ঈশ্বর, এই কান্নাই রিনকি নামের মেয়েটির জীবনের শেষ কান্না হোক।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *