মৎস্য রাজ
ঝিলিক গ্রামের মেয়ে। ছোটবেলা থেকে পুকুর, মাঠ, ক্ষেত দেখে বড় হয়েছে। চারিদিকে সবুজ ঘেরা মাঠ, সোনালী ধান লকলক করে আকাশ পানে তাকিয়ে। পুষ্ট হলে মাথা তার নত। চারিদিকে ফসল। লাউ কুমড়ো ঝিঙে পটলে মাচা ভর্তি। মস্ত পুকুরে জাল দেওয়া হয়, নানান রকমের মাছ। শীতের দিনে খেজুর রসে খেজুর গুড়, পাটালিতে বাড়ি ম ম করে। অনেকদিন বিয়ে হয়েছে কলকাতা শহরে। দু কামরার ফ্ল্যাট এর মধ্যে অসহ্য জীবন। হাত পা টা ঠিকমতো ছড়াতে পারে না। ছেলে মেয়ে গুলো এভাবেই বড় হচ্ছে। না আছে মাঠ, না আছে সবুজ ক্ষেত। ঘরের মধ্যে খেলাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। সেই কারণে টিভি মোবাইল এবং কম্পিউটারে আসক্ত জীবন। ওদের দোষ কোথায়। মাঠ তো দিতে পারি নি আমরা। একটুকরো জমি পড়ে থাকলে পাঁচ তলা ফ্ল্যাট। সবুজ ঘাসের উপর পা রাখার কথা ঝিলিক ভুলে গেছে।আজ বাজারে গিয়েছিল যখন পাড়ার ছেলেদের জটলা দেখে মুখটা বাড়িয়ে দেখবার চেষ্টা করেছিল। এত ভিড়, বুঝতে পারছিল না ঘটনাটা কি। একবার চলে গেল তার বাজারের থলে নিয়ে অন্য জায়গায়। ফেরার পথে ওদেরকে জিজ্ঞাসা করে, রাজু কিসের ভিড়? কি হয়েছে খানে? ওরা হইচই করে বলে এগারো কেজি মাছ পড়েছে আমাদের বড় পুকুরে। কৌতূহলবশত দেখল সত্যি মাছটার বিরাট সাইজ। একেবারে মৎস্য রাজ। বেশ কিছুক্ষণ ধরে ঝিলিক মাছটার সাইজ তার চোখেতে মাপলো। বহুদিন বাদে শহরতলীতে এমন মৎস্যরাজ কে দেখে আনন্দে আত্মহারা। সেই ছেলেবেলায় দেখেছিল বাড়ির পাশের পুকুরে বড় বড় মাছ পরত। ভাড়া করা জেলেরা জাল দিয়ে ভোরবেলা মাছ তুলে ওদের বাড়িতে পৌঁছে দিত। মাছ টার দিকে তখনও তাকিয়ে -শৈশবের স্মৃতি রোমন্থন করতে লাগলো। বাড়িতে কোন বিয়ের অনুষ্ঠান হলে এরকম বড় বড় সাইজের মাছ ধরা হতো। জীবনটা কতটা যান্ত্রিক হয়ে গেছে সেটারই তুল্য মূল্য বিচার করছে সে। মৎস্য রাজ কে দেখে আজ আনন্দের সীমা নেই। এগারো কেজির মৎস্যরাজ । শহরে এমন কিছু পুকুরে কিছুটা গ্রাম্য পরিবেশ গড়ে উঠলে মন্দ কি। কিছুক্ষণ তো দেশের বাড়ির স্মৃতিচারণ করল ঝিলিক।