Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ম্যানহাটানে মুনস্টোন || Sujan Dasgupta » Page 5

ম্যানহাটানে মুনস্টোন || Sujan Dasgupta

আমি ভেবেছিলাম পুলিশ প্রমথর অ্যাপার্টমেন্ট লক করে দিয়ে চলে যাবে ‘সিন অফ ক্রাইম’ বলে। এ রকম সিল করে যাওয়াটাই এখানকার দস্তুর – দরকার হলে যাতে পরে চেক করা যায় নতুন কোনও ক্লুর জন্য। তাই বেশ আশ্চর্য হলাম যখন ডেডবডিটা স্টেচারে তুলে “দ্য প্লেস ইজ অল ইয়োরস,” বলে পুলিশরা বিদায় নিল।
পুলিশ চলে যেতেই আমি আর প্রমথ সাবানজল আর স্পঞ্জ এনে বাইরের ঘর নিয়ে পড়লাম। মিস্টার প্যাটেলের দুটো স্যুটকেস পুলিশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে গেছে। একেনবাবু সেগুলো গুছোতে ভেতরে গেলেন। আমাদের ধোয়া পোঁছার কাজ যখন প্রায় শেষ, তখন একেনবাবু বেডরুম থেকে বেরিয়ে এসে বললেন, “স্যার, আমাকে একটা ক্রেডিট কার্ড দেবেন?”
“ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কি করবেন?”
“দেখব সত্যিই কার্ড দিয়ে দরজাটা খোলা যায় কিনা।”
আমি উচ্চবাচ্য না করে আমার ‘আমেরিকান এক্সপ্রেস’-এর কার্ডটা ওঁর হাতে ধরিয়ে দিলাম। একটু পরেই একেনবাবু বাইরে গিয়ে দরজাটা টেনে লক করে দিলেন।
একেনবাবু বাইরে খুটখাট করছেন, প্রমথ আচমকা প্রশ্ন করল,”আচ্ছা বাপি, ওঁর যদি সুইসাইড করারই প্ল্যান ছিল, তাহ্লে নিজের বাড়িতে না করে এখানে এলেন কেন? সুইসাইড নোটে সইটাই বা করলেন না কেন?”
প্রমথ কি ভাবছে আমি পরিষ্কার বুঝতে পারছিলাম। না, চিঠিটা মিস্টার প্যাটেল নন, ওঁর হত্যাকারীই টাইপ করেছে। এটা আত্মহত্যা হতে পারে না, ইট গট টু বি এ মার্ডার। কিন্তু প্রমথ সেটা শুনে সন্তুষ্ট হল না।
“সামহাউ ইট লুকস টু অবভিয়াস,” এইটুকুই শুধু বলল।
“হোয়াট এলস কুড ইট বি, এনি আদার এক্সপ্লানেশন?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।
“আই ক্যান থিঙ্ক অফ ওয়ান। ধর, এমন একজন লোক, যিনি নিজে বাঁচতে চান না, অথচ যারা ওঁর রোজগারের ওপর নির্ভর করে আছে, তাদেরও জলে ফেলতে চান না। এই অবস্থায় তিনি কি করতে পারেন?”
“আই ডোণ্ট আন্ডারস্ট্যান্ড।” আমি বললাম।
“বুঝতে পারছিস না! আমি বলতে চাচ্ছি যে, উনি সত্যিই সুইসাইড করতে চেয়েছেন, কিন্তু সেটা কেঊ ধরতে পারুক, সেটা উনি চান না। হি রিয়েলি ওয়ান্টেড ইট টু লুক লাইক এ মার্ডার। সেই কারণেই উনি এখানে এসে আত্মহত্যা করেছেন, আর সেই কারণেই উনি সুইসাইড নোট-এ সই করেন নি।”
“তাতে লাভ?”
“লাভ হচ্ছে যে সেক্ষেত্রে ইন্সিওরেন্সের টাকাগুলো যাদের জন্যে রেখে গিয়েছেন তারাই পাবে। সুইসাইড করলে ইন্সিওরেন্স কোম্পানির কাছ থেকে কানাকড়িও জুটতো না। সেটাই হচ্ছে আইন। এবার বুঝতে পারছিস?” (পরে অবশ্য জেনেছি – প্রমথর এই ধারণা সম্পূর্ণ ঠিক নয়, সে কথা থাক।)
“তা পারছি। তবে অবাক লাগছে, ওঁর কথাবার্তা থেকে তুই কোনও ক্লু পাস নি যে উইনি সুইসাইড করার কথা ভাবছেন!”
প্রমথ একটু চুপ করে থেকে বলল, “এখন মনে হচ্ছে হয়তো পেয়েছিলাম। একটা কথা কাল রাত্রে উনি বলেছিলেন, যেটা খুবই খাপছাড়া। উনি হঠাৎ জিজ্ঞেস করেছিলেন, আমার কোনও উইল আছে কিনা। নেই শুনে বলেছিলেন, প্রত্যেকের উইল থাকা উচিত। ওয়ান মাস্ট বি প্রিপেয়ার্ড ফর ডেথ, দড়ির ব্যাপারটা তো ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্টকেই বলেছি। কিন্তু বলার সময় যেটা মনে পড়ে নি, সেটা হল বেরনোর আগে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, আর কিছু লাগবে কিনা। তখন উনি বলেছিলেন, “রাইট নাঊ, দ্যাটস অল আই নিড।” ‘রাইট নাউ’ কথাটাতে বেশ খানিকটা জোর দিয়েছিলেন। বুঝলি, এখন নিজেকে ভীষণ বোকা মনে হচ্ছে।” বিমর্ষ ভাবে প্রমথ বলল।
আমি প্রমথকে আশ্বস্ত করে বললাম, “দ্যাখ, আজ মিস্টার প্যাটেল মারা না গেলে, ওঁর এই কথাবার্তাগুলোতে আমরা কিছুই আবিষ্কার করতাম না। তুই দড়িও কিনিস নি আর সেই দড়িতে ফাঁস লাগিয়ে উনি আত্মহত্যাও করেন নি। উনি ব্যবহার করেছেন রিভলবার। ইন ফ্যাক্ট, উনি দড়ির খোঁজ কেন করছিলেন কে জানে!”
“আমার ধারণা স্যার, উনি দড়ি আনতে বলেছিলেন ওঁর স্যুটকেস দুটো বাঁধার জন্যে।”
আমি আর প্রমথ দুজনেই চমকে উঠলাম একেনবাবুর গলায়। কখন নিঃশব্দে উনি ঘরে ঢুকে পড়েছেন!
“সে কি, আপনি ঢুকতে পারলেন?” আমি বেশ আশ্চর্য হয়েই প্রশ্ন করলাম।
“নট টু ডিফিকাল্ট স্যার। ক্রেডিট কার্ডটা দরজা আর ফ্রেমের মাঝখানে ঢুকিয়ে যেখানে লকের মেটাল রডটা আছে – সেখানে চাপ দিলেই রডটা সরে যায়। আমি নিজেই সারপ্রাইজড স্যার!”
“মাই গুডনেস! দেখি কি করে ঢুকলেন?” প্রমথ উঠে দরজার দিকে গেল। আমি ওদের পেছন পেছন গেলাম। একেনবাবু গর্ব গর্ব মুখে একটা ডেমনস্ট্রেশন সিলেন। সত্যিই ব্যাপারটা খুব একটা শক্ত নয়।
“কি আশ্চর্য! এটা তো যে কেউ খুলতে পারে!” প্রমথ উদবিগ্ন হয়ে বলল।
“ তাই তো বলছিলাম স্যার, আমি নিজেই সারপ্রাইজড। কিন্তু যে-কথাটা বলছিলান স্যার, আমার ধারণা নাইলনের দড়িটা মিস্টার প্যাটেল স্যুটকেসের জন্যেই চেয়েছিলেন।”
“আপনি কি করে সেটা বুঝলেন?”
“আসুন স্যার, স্যুটকেস দুটো আপনাকে দেখাই।”

অবিনাশের বেডরুমে বিছানার ঠিক পাশে মেঝের ওপর পর পর দুটো স্যামসনাইট স্যুটকেস। কোনোটাই পুরোপুরি বন্ধ নয়। একেনবাবু বললেন, “আমি স্যার, অনেক সময় নিয়ে ভেতরে জিনিসগুলো গুছিয়েছি, এভরিথিং ইস জ্যাম প্যাকড। কিন্তু বন্ধ করার চেষ্টা করুন স্যার।”
আমি একটার ডালা ধরে চাপ দিলাম, প্রমথ অন্যটার। বন্ধ হল ঠিকই, কিন্তু তার জন্যে এতো জোরে চাপ দিতে হল যে আমার ভয় হচ্ছিল লকটা ভেঙ্গে খুলে আসবে। প্রমথকেও বার কয়েক চেষ্টা করতে হল ডালাটা বন্ধ করতে।
“আরেকটা জিনিস দেখাই স্যার। এই লেবেলটা দেখুন,” একেনবাবু স্যুটলেসে সাঁটা একটা লেবেল দেখালেন।
লেবেল-এ মিস্টার প্যাটেলের নাম ঠিকানা ইত্যাদি লেখা।
“কি আছে দেখার এর মধ্যে?” প্রমথ বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করল।
“এখানে একটা কালির পোঁচ পড়েছে খেয়াল করেছেন? কিন্তু দেখুন স্যার, মাঝখানে খানিকটা অংশ পরিষ্কার। দেখে মনে হয় না স্যার যে, ওই জায়গাটা দড়ি জাতিয় কিছু দিয়ে ঢাকা ছিল?”
“তারমনে আপনি বলতে চাচ্ছেন, মিস্টার প্যাটেল তাঁর সুইটকেস দড়ি দিয়ে বাঁধতেন এবং সেই জন্যেই দড়ির খোঁজ করছিলেন?”
“আমার তো সেরকমই সন্দেহ হচ্ছে স্যার। এত জিনিস ঢোকাতে হলে, আমি কোনও লককেই ট্রাস্ট করব না – সে যে কোম্পানিরই হোক না কেন স্যার।”
“হোল্ড অন!” প্রমথ বলল, “তাই যদি হবে, তাহলে তো মিস্টার প্যাটেলের মরার কোনও ইচ্ছেই ছিল না। দেশে যাবার জন্যে সত্যিই উনি প্রস্তুত হচ্ছিলেন!”
“আই উইল নট বি সারপ্রাইজিড স্যার।” একেনবাবু ঘাড় চুলকোতে চুলকোতে বললেন।
আমি আর প্রমথ চোখ চাওয়া চায়ি করলাম। কথার কোনও প্রয়োজন নেই। সুইসাইড নয়, ইট ইজ এ কেস অফ পিওর এন্ড সিম্পল মার্ডার!”

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *