Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মেঘের ছায়া (১৯৯৩) || Humayun Ahmed » Page 10

মেঘের ছায়া (১৯৯৩) || Humayun Ahmed

শুভ্ৰ শুয়েছিল

শুভ্ৰ শুয়েছিল। মাঝে মাঝে কিছুই ভাল লাগে না। শুয়ে থাকতে ইচ্ছা করে। আজ মনে হয় সে রকম একটা দিন। আকাশে মেঘলা। বিছানা থেকে আকাশের মেঘ দেখা যায়। এই মেঘ সে আর কতদিন দেখতে পারবো? শুভ্ৰ ছাট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলল। রেহানা ঘরে ঢুকে বললেন, একটা মেয়ে তোকে টেলিফোন করেছে। বলেছে। নীতু আপা। টেলিফোন ধরবি?

হ্যাঁ। শুয়ে আছিস যখন শুয়ে থাক। আমি পরে টেলিফোন করতে বলি। না, আমি যাচ্ছি।

মেয়েটা কে?

তুমি চিনবে না, মা। আমার বন্ধু ছিল সাবের–ওর বড় বোন।

রেহানা বললেন, শুভ্ৰ, আমার শোবার ঘরের টেলিফোন নাম্বার তুই সবাইকে দিয়ে বোড়বি না। অপরিচিত কারোর টেলিফোন ধরতে আমার ভাল লাগে না। কাউকে যদি টেলিফোন দিতেই হয়–একতলারটা দিবি।

আচ্ছা।

আমার কথায় আবার রাগ করলি না তা শুভ্র?

না, রাগ করি নি। তোমার উপর তো আমি কখনো রাগ করি না, মা।

রেহানা বললেন, অন্যায় কিছু বললেও রাগ করবি না?

না।

কেন?

আমি ছাড়া তোমার কেউ নেই, মা। আমি রাগ করলে তুমি যাবে কোথায়?

রেহানার চোখে পানি এসে গেল। তিনি চট করে অন্যদিকে তাকালেন। ছেলেকে তিনি তাঁর চোখের পানি দেখাতে চান না। শুভ্ৰ টেলিফোন ধরল।

হ্যালো, নীতু আপা?

হ্যাঁ।

তুমি কেমন আছ?

ভাল আছি।

তোমাকে কখনো টেলিফোন করে পাওয়া যায় না। যখনই টেলিফোন করি, আমাকে বলা হয়, তুমি বাসায় নেই। কিংবা তুমি ঘুমুছ। বাসায় যখন থাক তখন কি সারাক্ষণ তুমি ঘুমিয়েই থাক?

শুভ্ৰ হাসল।

নীতু বলল, শুভ্ৰ, তোমাকে আমার খুব দরকার। না ঠিক আমার না, আমার বাবার দরকার।

উনার কি শরীর ভাল নেই?

উনার কিছুই ভাল নেই। উনি গত দুদিন ধরে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করেছেন।

কেন?

উনি ঠিক করেছেন–অন্যহারে থেকে আস্তে আস্তে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাবেন। এক চৈনিক কবিও না-কি তাই করেছেন। কবির নাম হল–লিয়াও সিন কিংবা লিয়াও বিনি। তুমি কি আসতে পারবে?

পারব।

বাবা তোমাকে কিছু বলতে চান। তুমি দয়া করে শোন উনি কি বলতে চাচ্ছেন।

আপা, আমি আপনাকে একটা খুব জরুরি কথা বলতে চাই।

আমাকে আবার কি জরুরি কথা?

আপনি চুপ করে শুনুন। দয়া করে রাগ করবেন না।

এমন কি কথা যে রাগ করার প্রশ্ন আসে?

আমি আপনাকে খুব পছন্দ করি।

এটা তো রাগ করার মত কথা না, শুভ্ৰ। খুশি হবার মত কথা। আমি তোমাকে পছন্দ করি। বাবা তোমাকে যতটা পছন্দ করেন ততটা হয়ত না। কিন্তু কমও না।

আমি যে আপনাদের বাসায় প্রায়ই যাই–চাচার সঙ্গে দেখা করতেই যাই। কিন্তু যখন দেখি আপনি বাসায় নেই তখন ভয়ংকর খারাপ লাগে।

ও আচ্ছা। প্রায়ই আমি আপনাকে স্বপ্নে দেখি। কাল রাতেও দেখেছি।

শুভ্ৰ, তুমি কি বলতে চাচ্ছ আমি বুঝতে পারছি না। তোমার শরীর ভাল তো!

হ্যাঁ, শরীর ভাল। নীতু আপা, এখন আমি আপনাকে একটা ভয়াবহ কথা বলব।

ভয়াবহ কথা তুমি বলে ফেলেছ বলে আমার ধারণা।

না, বলিনি। এখন বলব। নীতু আপা, আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই।

নীতু চুপ করে রইল। মনে হচ্ছে হঠাৎ টেলিফোন ডেড হয়ে গেছে। শুভ্র বলল, আপনি কি আমার কথা শুনতে পেয়েছেন?

হ্যাঁ–

আপনি কি রাগ করেছেন?

টেলিফোনে না। মুখোমুখি আমি তোমার সঙ্গে কথা বলব।

আমি কি এখন আসব?

না এখন না। কাল এসো। আমার কোন ভাল শাড়ি নেই। শুভ্ৰ, আমি সুন্দর একটা শাড়ি কিনব। আজই কিনব। কি রঙ তোমার পছন্দ বলতো?

নীতু আপা, আপনি কি আমার সঙ্গে ঠাট্টা করছেন?

বুঝতে পারছি না। তুমি আমার মাথা এলোমেলো করে দিয়েছ। তুমি কাল এসো। কাল আমি তোমার সঙ্গে কথা বলব। রাখি শুভ্ৰ।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress