মেঘলা
নদীর জলে ছোটো ছোটো ঢেউ খেলে যাচ্ছে। পশ্চিমের আকাশে সূর্যের হালকা আভা দেখা যাচ্ছে।আকাশটার কোথাও কোথাও মেঘ জমে রয়েছে। কখনো মেঘ ভেদ করে পড়ন্ত সূর্যের আলো এসে পড়ছে। তার প্রতিবিম্ব জলে পড়ে এক মোহময়ী রূপ সৃষ্টি করেছে। মেঘলা জলের দিকে শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। এসব কিছুই ওর চোখে পড়ছেনা। শুধু ওর কানের মধ্যে বেজে চলেছে আকাশের বলা কথা গুলো – “মেঘলা পারলে আমাকে ভুলে যেও।আমার পক্ষে বাবার অমতে গিয়ে তোমাকে বিয়ে করা সম্ভব না। বাবা তার বিলেত ফেরত বন্ধুর মেয়ের সাথে আমার বিয়ের ঠিক করেছে।সামনের মাসেই আমাদের বিয়ে। তারপর বিলেত চলে যাচ্ছি। তুমি আমাকে ক্ষমা কোরো।”
কথা কটা বলে আকাশ আর দাঁড়ায়নি।জানতে চায়নি একবারও মেঘলার মতামত। যেনো প্রেমটা এক তরফাই ছিলো। পাঁচ বছরের সম্পর্ক আকাশ এতো সহজে ভেঙে দিতে পারলো? একবারও মনে কোন দাগ কাটলো না! ভালোবাসা কি এত ঠুনকো!
যে কোনো সময় ভেঙে দেওয়া যায়!
মেঘলা নিজের শরীরটা টেনে তুলতে পারছে না। মনে হচ্ছে সমস্ত শক্তি আকাশ নিয়ে চলে গেছে। ওর আর বাঁচতে ইচ্ছে করছে না। মনে হচ্ছে নদীতে ডুবে ওর সমস্ত কষ্ট লাঘব করে। কিন্তু মেঘলা তা পারল না। মনে পড়ল মা’র মুখটা। মা অনেক কষ্ট করে তাকে মানুষ করেছে। বাবা চলে যাওয়ার পর তার মা’র সে ছাড়া তো আর কেউ নেই। সারাদিন মেশিনে সেলাই করে অনেক কষ্ট করে তাকে লেখাপড়া শিখিয়েছে। এম.এ পাস করে ও এখন কয়েকটা টিউশনি করে,তাতে ওদের একটু সাচ্ছন্দ এসেছে। আকাশের সাথে ওর পরিচয় কলেজে পড়ার সময় থেকে। আকাশের বাবা বড় ব্যবসায়ী।ওদের অনেক টাকা। মেঘলা প্রথমে আকাশের সাথে এই সম্পর্কে রাজি হয়নি। কিন্তু আকাশের দিকথেকেই আগ্রহটা বেশি ছিল। মেঘলার মনে আছে আকাশের সেদিনের কথা গুলো। ওর কথাগুলো সেদিন কেমন যেনো কবিতার মতো মনে হয়েছিলো। মেঘলা সেদিন নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ বলে ভাবতে শুরু করেছিল। ওর মা ওকে বলেছিলো – “মেঘলা আমরা গরিব আর ওরা অত বড়লোক। এ সম্পর্ক হয়না। ও যেদিন তোর সামনে দিয়ে বিয়ে করতে যাবে সেদিন তুই সহ্য করতে পারবি?” সেদিন মা’র কথা গুলো মেঘলা মেনে নিতে পারেনি। আজ মা’র কথাগুলো খুব মনে পড়ছে, বুক ভেঙে যাচ্ছে কান্নায়। অনেক কষ্টে মেঘলা উঠে দাঁড়ায়। আকাশটা কেমন গুম মেরে রয়েছে। কালো মেঘে আকাশটা ছেয়ে গেছে।একটু আগে যে আকাশটায় মেঘ-রদ্দুরের লুকোচুরি খেলা চলছিল সেই আকাশটাই কালো মেঘে ঢেকে গেছে। কে যেন আকশের গায়ে কালো কালীর দোয়াত ঢেলে দিয়েছে। গাছের একটা পাতাও নড়ছে না। প্রকৃতিও যেন কোনো এক অশনি সংকেতের আশঙ্কায় নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে।