Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মৃত্যু || Sabitri Das

মৃত্যু || Sabitri Das

ঠাকুমার মৃত্যু বার্ষিকী,দেখতে দেখতে তিন বছর হয়ে গেল। মনে হয় যেন এই সেদিনের কথা! সকাল থেকেই সুধার মনটা খুব খারাপ ছিল, ঠাকুমা কদিন ধরে অসুস্থ,বিছানায় পড়েই আছে। ছিয়ানব্বই বছর বয়সের অসুস্থতায় বাঁচার সম্ভাবনা যে বড়োই কম সেকথা আলাদা করে কারোকে বলে দেবার দরকার পড়ে না। কেবল বলে ‘জল দে’ কখনও মাথায় কখনো বুকে আবার কখনো পেটে।
ঠাকুমার জন্যে ছোট খাটো অনেক কাজ করে দিত সুধা আর সেগুলো করতে ওর ভালো লাগত বলেই করতো, কারো বলার দরকার হতো না।
সেদিনের কথা আজও ছবির মতো মনে পড়ে । সন্ধ্যে থেকেই হেঁচকি উঠছিল, সবাই বুঝেছিল আর নয়! সেটা শোনার পর থেকেই চুপটি করে বসে ছিল মাথার পাশটিতে। কত কথাই না মনে পড়ছিল সেদিন। মকর সংক্রান্তির মেলা থেকে ফেরার সময় ঠাকুমার জন্যে জিলিপি নিয়ে এলে কত খুশি হতো মানুষটা!
বড়ো তক্তাপোষে ঠাকুমাকে ঘিরে সবাই মিলে গল্প শুনতো। কতরকম গল্প!
বাড়ীর বাচ্চাগুলোকে সেদিন তাড়াতাড়ি খাইয়ে দেওয়া হয়েছিল। সুধার খাবার ইচ্ছে ছিলনা একটুও, তবুও কিছু না খেলে বকুনি খাবে তাই খেলো।
রাত বাড়ছিল, অবস্থা একই রকম দেখে কেউ কেউ আবার শুয়ে পড়েছিল। সুধা ঠাকুমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ভাবছিল ঠাকুমা ওকে যে কাজের ভার দিয়েছে তার কথা। এককৌটো খুচরো পয়সা দিয়ে রেখেছে ছড়ানোর জন্য। হরেকৃষ্ণ হরেরাম লেখা ব্লক আর গঙ্গামাটি তাও সুধার কাছে রেখে দিয়েছে। নিঃশব্দে উঠে গিয়ে ওগুলো নিয়ে এসে আবার বসেছিল ঠাকুমার পাশটিতে।
রাত দুটো পার হয়ে গেল। প্রত্যাশিত পরিণতির অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ক্লান্ত মানুষ গুলোর কেউ মাটিতে শুয়ে পড়েছে একটু বিশ্রামের আশায়, বাইরে যারা এসে বসে আছে তাদের মধ্যে কেউ জল চাওয়াতে সুধার মা জল দিতে গেল। ঠাকুমার দিকে তাকিয়ে সুধা ঠায় বসে আছে।
হেঁচকি ওঠা বন্ধ হয়ে হঠাৎ করেই কেমন যেন একটা মোচড়ানো ব্যথায় ঠাকুমার শরীরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। কাউকে ডাকবে কিনা ভাবতে ভাবতেই ঠাকুমার শরীরটা যেন যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গিয়ে মুখ দিয়ে ফ্যাস করে বাতাসের মতো কিছু একটা বেরিয়ে গেল। ওটাই কি প্রাণ বায়ু?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *