Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মৃণ্ময়ীর মন ভালো নেই (২০০৬) || Humayun Ahmed » Page 11

মৃণ্ময়ীর মন ভালো নেই (২০০৬) || Humayun Ahmed

জহির ছবি আঁকছে

জহির ছবি আঁকছে। টুনটুনি তার সামনে বসে আছে। সে গভীর আগ্রহে ছবি আঁকার কর্মকাণ্ড দেখছে। শিশুরা যেমন করে এটা-সেটায় হাত দেয়, তা করছে না। একবার শুধু রঙের টিউবের দিকে হাত বাড়িয়েছিল, জহির কঠিনচোখে তাকানোর সঙ্গে সঙ্গে হাত গুটিয়ে নিয়েছে।

মীনা ঘরে ঢুকল। কিছুক্ষণ ছবি আঁকা দেখল। মেয়ের পাশে বসতে বসতে বলল, ভাইয়া কীসের ছবি আঁকছ?

জহির বলল, বিরক্ত করিস না।

বিরক্ত করছি না তো। কীসের ছবি আঁকছ জিজ্ঞেস করলাম।

আঁকা শেষ হোক তখন দেখবি।

ভাইয়া চা খাবে? চা দেব?

না।

মীনা উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, টুনটুনিকে একটু দেখে রেখো। আমি জরুরি একটা চিঠি লিখছি।

জহির জবাব দিল না।

মীনা চিঠি লিখছে জহিরকেই। গত দুদিন ধরে লেখা হচ্ছে। চিঠি আগাচ্ছে। গতকাল যতটুকু লেখা হয়েছে, সেটা ফেলে দিয়ে নতুন করে লিখছে। হাতের লেখা ভালো হয় নি। কাকের ঠ্যাং বগের ঠ্যাং লেখা দেখলে ভাইয়া বিরক্ত হতে পারে। তার প্রধান সমস্যা লাইন সোজা হয় না। রুলটানা কাগজ হলে সুবিধা হতো। স্টেশনারি দোকানে গিয়েছিল রুলটানা কাগজ পাওয়া যায় নি। আজকাল মনে হয় রুলটানা কাগজের চল উঠে গেছে। মীনা চিঠিটা শুরু করেছিল—

ভাইয়া

আমার সালাম নিও।

এইটুক লিখে মনে হয়েছে আমার সালাম নিও বাক্যটার প্রয়োজন নেই। সে যদি খুলনায় থাকতো তা হলে লেখা যেত। তারা দুজন তো একই বাসায় থাকে। আমার সালাম নিও বা তুমি কেমন আছ? এইসব লেখা অর্থহীন। সে চিঠিটা আবার নতুন করে শুরু করেছে।

ভাইয়া,

তুমি আমার মেয়ে টুনটুনিকে দেখতে পার না কেন? সেকি কোনো দোষ করেছে? না-কি সে দেখতে খারাপ? নাক বোচা, গায়ের রঙ কালো। এতদিন তোমার সঙ্গে আছি তুমি একটা দিনও টান দিয়ে মেয়েকে কোলে নাও নি, বা গালে হাত দিয়ে আদর কর নি। ঐ দিন মেয়েটার এমন জ্বর উঠল— মাথায় পানি দিলাম, জলপট্টি দিলাম। তুমি শুধু জিজ্ঞেস করলে, জ্বর কি বেশি? আমি রাগ করে বললাম, জ্বর বেশি না। সামান্য মাত্র একশ তিন। তুমি টুনটুনির কপালে হাত দিয়ে জ্বরটা পর্যন্ত দেখলে না।

প্রতিদিন বাইরে থেকে বাসায় আস। কখনও তোমার ভাগ্নির জন্য একটা কিছু এনেছ? একটা চকলেট কিংবা একটা লজেন্স। চকলেট বা লজেন্স কেনার টাকা তোমার নাই এটা ঠিক না। তোমার যে জিনিসটা নাই তার নাম ভালোবাসা।

তুমি টুনটুনিকে দেখতে পার না এর জন্যে আমার মনে খুব কষ্ট। কারণ টুনটুনিকে আমি তো তোমার হাতেই রেখে যাচ্ছি। বাকি জীবন তুমিই তো তাকে দেখবে। আর কে দেখবে? তোমাকে বিষয়টা পরিষ্কার করে বলি।

ভাইয়া সবুজ পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। খবরের কাগজে উঠেছে। তুমি তো খবরের কাগজ পড় না, তাই জান না। আমি বাড়িওয়ালার বাড়িতে গিয়ে রোজ কাগজ পড়তাম। সবুজের বিষয়ে কাগজে কিছু উঠে কি-না জানার জন্যেই পড়তাম। কাগজে লিখেছে সবুজ তার অপরাধের কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। পুলিশের মার খেয়ে মিথ্যাকে সত্যি বলছে এটা তো বুঝাই যাচেছ। কিন্তু কোর্ট তো এইসব বুঝবে না। জজ সাহেব ফাসির হুকুম দিয়ে বসবেন। তারা তো ফাঁসি দিয়েই খালাস। তখন আমার কী হবে? আমি কীসের আশায় বেঁচে থাকব?

তোমার না হয় ভালোবাসা নাই। কারো জন্য তোমার কিছু যায়-আসে না। কি আমার তো আছে। ভাইয়া, সারারাত আমি জেগে বসে থাকি। আমার ঘুমাতে ভয় লাগে। ঘুমালেই ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন দেখি। সবুজকে ধরাধরি করে কিছু লোক নিয়ে যাচ্ছে ফাসি দেবার জন্যে। আর সে চিৎকার করছে, ময়না আমাকে বাঁচাও! ময়না আমাকে বাঁচাও!

ভাইয়া! আমি তাকে কীভাবে বাচাব? আমার হাতে কি কোনো ক্ষমতা আছে। আমি অতি সামান্য একটা মেয়ে, যার কেউ নাই। যার একমাত্র ভাই পর্যন্ত তাকে দেখতে পারে না।

আমি বারোটা ঘুমের ট্যাবলেট কিনেছি। বারোটাতেই কাজ হবে। এরচে বেশি খেলে সমস্যা হয়। সবুজের সঙ্গে রাগারাগি করে আমি একবার আঠারোটা খেয়ে ছিলাম পরে বমি হয়ে সর্ব বের হয়ে গেছে। খালি পেটে বারোটা খেলে বমি হবে না।

ভাইয়া আমি এই চিঠিটা আমার বিছানার পাশে রেখে যাব। চিঠিতে অনেক বানান ভুল হয়েছে। তুমি কিছু মনে করো না। টুনটুনিকে কখনও তার বাবার মিথ্যা মামলার বিষয়ে কিছু বলবে না। সে হয়ত ভেবে বসবে সত্যি। মনে কষ্ট পাবে। তাকে তার বাবার বিষয়ে ভালো ভালো কথা বলবে। যেমন একবার টুনটুনির রক্ত-আমাশা হয়েছিল, তার বাবা সারারাত তাকে কোলে নিয়ে হাঁটাহাটি করেছে। দু-একটা ভালো ভালো কথা বানিয়ে বানিয়েও বলবে। তুমি তো আবার মিথ্যা কথা বলতে পার না। টুনটুনির মুখের দিকে তাকিয়ে দু-একটা মিথ্যা যদি বল তাতে পাপ হবে না।

টুনটুনিকে তোমার কাছে রেখে যেতে আমার মোটেও খারাপ লাগছে না। কারণ আমি জানি সে খুবই যত্নে বড় হবে। বাবা মারা যাবার পর তুমিই তো আমাকে বড় করেছ। কোনোদিন আমার অযত্ন হতে দাও নি।

ভাইয়া ভালো ছেলে দেখে টুনটুনির বিয়ে দিও। বিয়ের অনুষ্ঠান অবশ্যই ভিডিও করাবে। আজকাল বিয়ের অনুষ্ঠান ভিডিও করার চল উঠে গেছে। আমার মেয়ের বেলায় যেন এ রকম না হয়। ভাইয়া আরেকটা অনুরোধ— বিয়ের দিন সুন্দর একটা শাড়ি কিনে পুরানো ময়লা একটা প্যাকেট করবে।

প্যাকেটর উপর কাউকে দিয়ে লেখাবে—

আমার মা টুনটুনিকে
তার বাবা
সবুজ

এবং টুনটুনিকে বলবে এটা তার বাবা রেখে গিয়েছিলেন।

ইতি
মীনা

চিঠি শেষ করে মীনা ঝামে বন্ধ করল। ঘুমের ওষুধগুলি খেল। জহিরের পেছনে এসে দাঁড়াল। জহির বলল, পেছন থেকে সরে দাঁড়া। আলো আটকাচ্ছিস।

মীনা বলল, ভাইয়া আমার শরীরটা খারাপ লাগছে আমি কিছুক্ষণ শুয়ে থাকব।

জহির জবাব দিল না। মীনার খুব ইচ্ছা করছে মেয়েটাকে কোলে নিয়ে আদর করে। সে ইচ্ছাটা প্রশ্রয় দিল না। আগ্রহ নিয়ে সে মামার ছবি আঁকা দেখছে দেখুক। কে জানে বড় হয়ে হয়ত সেও মামার মতো ছবি আঁকবে।

মীনা বলল, ভাইয়া টুনটুনিকে নিয়ে মাঝে মাঝে আলিমুর রহমান সাহেবের খামারবাড়িতে বেড়াতে যাবে। জায়গাটা তার খুব পছন্দ।

জহির বিরক্ত হয়ে বলল, তুই করিণ ছাড়া এত কথা বলিস কেন?

মীনা চোখ মুছতে মুছতে বলল, আর বলব না ভাইয়া।

জহির বলল, চোখে পানি চলে এসেছে? চোখে পানি আসার মতো কিছু বলেছি? সামনে থেকে যা।

মীনা ঘুমুতে গেল।

সন্ধ্যা মিলাবার আগে পর্যন্ত জহির জানতেও পারল না মীনা মারা গেছে।

আজ টুনটুনির বিয়ে।

তার মামা সকাল থেকেই কাঁদছেন। মামার জন্যে টুনটুনির খুবই মায়া লাগছে। বিয়ে হচ্ছে বলে তো টুনটুনি জন্মের মতো চলে যাচ্ছে না। মামা যখন তাকে ডাকবেন তখনই সে ছুটে আসবে।

বিয়েতে বিপুল আয়োজন করা হয়েছে। ছাদে সানাই বাজানোর আয়োজন করা হয়েছে। সানাই বাদকরা এসেছেন কোলকাতা থেকে। সানাই-এর ব্যবস্থা করেছেন টুনটুনির এক আর্টিস্ট চাচু। তার নাম ফজলু।

টুনটুনির যে কজন বান্ধবী বিয়ে উপলক্ষ্যে এসেছে তাদের প্রত্যেককে টুনটুনির মামী মৃন্ময়ী একটা করে হীরের নাকফুল দিয়েছেন। বান্ধবীরা সবাই হতভম্ব।

টুনটুনি জহিরের হাত ধরে বলল, মামা ছাদে গিয়ে বোস। সানাই বাজনা শুরু হবে। তুমি যাচ্ছ না বলে শুরু হচ্ছে না।

জহির বলল, তোরা যা, আমি যাব না।

টুনটুনি বলল, মামী একা ছাদে বসে আছে। তুমি পাশে নেই বলে তার মন ভালো নেই।

সানাই বেজে উঠেছে। রাগ ভীমপলশ্রী।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11
Pages ( 11 of 11 ): « পূর্ববর্তী1 ... 910 11

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress