Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মুক্তি || Mukti (Polatak) by Rabindranath Tagore

মুক্তি || Mukti (Polatak) by Rabindranath Tagore

ডাক্তারে যা বলে বলুক নাকো ,
রাখো রাখো খুলে রাখো ,
শিয়রের ওই জানলা দুটো — গায়ে লাগুক হাওয়া ।
ওষুধ ? আমার ফুরিয়ে গেছে ওষুধ খাওয়া ।
তিতো কড়া কত ওষুধ খেলেম এ জীবনে ,
দিনে দিনে ক্ষণে ক্ষণে ।
বেঁচে থাকা , সেই যেন এক রোগ ;
কত রকম কবিরাজি , কতই মুষ্টিযোগ ,
একটুমাত্র অসাবধানেই , বিষম কর্মভোগ ।
এইটে ভালো , ওই টে মন্দ , যে যা বলে সবার কথা মেনে ,
নামিয়ে চক্ষু , মাথায় ঘোমটা টেনে ,
বাইশ বছর কাটিয়ে দিলেম এই তোমাদের ঘরে ।
তাই তো ঘরে পরে ,
সবাই আমায় বললে লক্ষ্মী , সতী ,
ভালোমানুষ অতি!


এ সংসারে এসেছিলেম ন-বছরের মেয়ে ,
তার পরে এই পরিবারের দীর্ঘ গলি বেয়ে
দশের ইচ্ছা বোঝাই-করা এই জীবনটা টেনে টেনে শেষে
পৌঁছিনু আজ পথের প্রান্তে এসে ।
সুখের দুখের কথা
একটুখানি ভাবব এমন সময় ছিল কোথা ।
এই জীবনটা ভালো , কিংবা মন্দ , কিংবা যা-হ ো ক একটা-কিছু
সে-কথাটা বুঝব কখন , দেখব কখন ভেবে আগুপিছু ।
একটানা এক ক্লান্ত সুরে
কাজের চাকা চলছে ঘুরে ঘুরে ।
বাইশ বছর রয়েছি সেই এক-চাকাতেই বাঁধা
পাকের ঘোরে আঁধা ।
জানি নাই তো আমি যে কী , জানি নাই এ বৃহৎ বসুন্ধরা
কী অর্থে যে ভরা ।
শুনি নাই তো মানুষের কী বাণী
মহাকালের বীণায় বাজে । আমি কেবল জানি ,
রাঁধার পরে খাওয়া , আবার খাওয়ার পরে রাঁধা ,
বাইশ বছর এক-চাকাতেই বাঁধা ।
মনে হচ্ছে সেই চাকাটা — ঐ যে থামল যেন ;
থামুক তবে । আবার ওষুধ কেন ।


বসন্তকাল বাইশ বছর এসেছিল বনের আঙিনায় ।
গন্ধে বিভোল দক্ষিণ বায়
দিয়েছিল জলস্থলের মর্ম-দোলায় দোল ;
হেঁকেছিল , “ খোল্‌ রে দুয়ার খোল্‌ । ”
সে যে কখন আসত যেত জানতে পেতেম না যে ।
হয়তো মনের মাঝে
সংগোপনে দিত নাড়া ; হয়তো ঘরের কাজে
আচম্বিতে ভুল ঘটাত ; হয়তো বাজত বুকে
জন্মান্তরের ব্যথা ; কারণ-ভোলা দুঃখে সুখে
হয়তো পরান রইত চেয়ে যেন রে কার পায়ের শব্দ শুনে ,
বিহ্বল ফাল্গুনে ।
তুমি আসতে আপিস থেকে , যেতে সন্ধ্যাবেলায়
পাড়ায় কোথা শতরঞ্জ খেলায় ।
থাক্‌ সে-কথা ।
আজকে কেন মনে আসে প্রাণের যত ক্ষণিক ব্যাকুলতা ।


প্রথম আমার জীবনে এই বাইশ বছর পরে
বসন্তকাল এসেছে মোর ঘরে ।
জানলা দিয়ে চেয়ে আকাশ পানে
আনন্দে আজ ক্ষণে ক্ষণে জেগে উঠছে প্রাণে —
আমি নারী , আমি মহীয়সী ,
আমার সুরে সুর বেঁধেছে জ্যোৎস্না-বীণায় নিদ্রাবিহীন শশী ।
আমি নইলে মিথ্যা হত সন্ধ্যাতারা ওঠা ,
মিথ্যা হত কাননে ফুল-ফোটা ।

বাইশ বছর ধরে
মনে ছিল বন্দী আমি অনন্তকাল তোমাদের এই ঘরে ।
দুঃখ তবু ছিল না তার তরে ,
অসাড় মনে দিন কেটেছে , আরো কাটত আরো বাঁচলে পরে ।
যেথায় যত জ্ঞাতি
লক্ষ্মী ব ‘ লে করে আমার খ্যাতি ;
এই জীবনে সেই যেন মোর পরম সার্থকতা —
ঘরের কোণে পাঁচের মুখের কথা!
আজকে কখন মোর
কাটল বাঁধন-ডোর ।
জনম মরণ এক হয়েছে ওই যে অকূল বিরাট মোহানায় ,
ঐ অতলে কোথায় মিলে যায়
ভাঁড়ার-ঘরের দেয়াল যত
একটু ফেনার মতো ।

এতদিনে প্রথম যেন বাজে
বিয়ের বাঁশি বিশ্ব-আকাশ মাঝে ।
তুচ্ছ বাইশ বছর আমার ঘরের কোণের ধুলায় পড়ে থাক ।
মরণ-বাসর ঘরে আমায় যে দিয়েছে ডাক
দ্বারে আমার প্রার্থী সে যে , নয় সে কেবল প্রভু ,
হেলা আমায় করবে না সে কভু ।
চায় সে আমার কাছে
আমার মাঝে গভীর গোপন যে সুধারস আছে
গ্রহতারার সভার মাঝখানে সে
ঐ যে আমার মুখে চেয়ে দাঁড়িয়ে হোথায় রইল নির্নিমেষে ।
মধুর ভুবন , মধুর আমি নারী ,
মধুর মরণ , ওগো আমার অনন্ত ভিখারি ।
দাও , খুলে দাও দ্বার ,
ব্যর্থ বাইশ বছর হতে পার করে দাও কালের পারাবার ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress