মালতীর কান্না
মালতী বাবা ও মায়ের একমাত্র মেয়ে।মালতীর জন্মের পর মালতীর মায়ের এত রক্তপাত হয় —বাঁচার আশা ছিল না।ডাক্তার বলে দেন এ যাত্রায় আপনি বেঁচে গেলেন।ভবিষ্যতে আর কোন বাচ্চা হবে না।
মালতীর মা কে শ্বশুর ,শাশুড়ি,ননদের কাছে নানান কটু কথা শুনতে হয়।বংশধর আর আসবে না বাড়িতে কান্নাকাটি শুরু হয়।মালতী পড়াশোনাতে খুব ভালো।দেখতে ফর্সা সুন্দরী,মিষ্টিস্বভাব ।ওদিকে পিসির ছেলে কোনরকমে পাশ করে।মালতী মাধ্যমিকে তৃতীয় হয়।
সেদিন ঠাকমা ও দাদু খুব আদর করেন।নাতনীর দৌলতে রেজাল্টের পর টেলিভিশন চ্যানেল থেকে লোক বাড়িতে আসে।দাদু ও ঠাম্মার ছবি তোলে।
এরপর উচ্চ মাধ্যমিকে দশ জনের মধ্যে নাম হয়।এম এস সি ভর্তির পর জোর করে বিয়ে দেয়।এত সুন্দরী ,গুণবতী বৌমা পেয়ে শাশুড়ি খুব খুশি।
শ্বশুর ও বর পড়াশোনাতে আপত্তি জানায়।মালতী খুবকষ্ট পায়,কাঁদতে ও পারে না।এদিকে সন্তানসম্ভবা ।মালতীর একটি ফুটফুটে মেয়ে হয়।আবার পড়বার জন্য অনুনয় করে,কেউ রাজি হয় না।
বরের হাবভাব ঠিক লাগে না।ট্যুর করে শুধু।সঙ্গে সব সময় থাকে ঐ লেডি সেক্রেটারি।
মেয়েকে ঘুম পাড়ায় আর কাঁদতে থাকে।বিয়ের পর স্টাফ সিলেকশন পরীক্ষা দিয়েছিল।সেটাই পাশ করার অপেক্ষায় থাকে।মাঝে মধ্যে কবিতা বিড়বিড় করে বলার চেষ্টা করে।”তোমার চোখে জমলে মেঘ বৃষ্টি হয়ে পড়ে”তারপর মনে এত কষ্ট কবিতা আর আসে না।
বর ডিভোর্স চাই এবার।
মা রাগ করে বলে ঐ কেল্টির মধ্যে কি দেখলি,তোর মেয়ে আছে,তাছাড়া বৌমা এত সুন্দরী।বৌমাতো তোর গলায় মুক্তোর মালা ছিল।কি করে তোর মতো বাঁদর জন্মালো।ছেলে এই শুনে মা কে মারতে যায়।
মালতী সব ছেড়ে বাপের বাড়ি যায়।দাদু ও ঠাকমা পড়াশোনা শুরু করতে বলে।এর মধ্যে স্কুলের চাকরি হয়ে যায়।
মেয়ের জন্য চিন্তা করে না।ঠাম্মা ও দাদুর নয়নমনি।
এখন মালতী বড়দিদিমনি।
জুনিয়র স্কুলের মেয়েরা পঞ্চম শ্রেণীতে উঠলে হাই স্কুলে আসে।
একদিন এক স্কুলের বাচ্চার অভিভাবক আসে নি।বাচ্চাকে মালতী সন্ধ্যায় খেয়াল করে।
কি ব্যাপার ,তুমি স্কুলে কেন?
ফোন নম্বর বলো।
দিদিমনি আমি ,দাদু আর ঠাম্মা নতুন এসেছি।
কেউ নিতে আসে নি।অফিসঘর থেকে ফোন করে মালতী।কেউ ফোন ধরে না।
তারপর মালতী বাড়িতে নিয়ে যায়।দারোয়ানকে বলে বাড়ি থেকে কেহ আসলে,আমার ফোন নম্বর দিও।
মালতী কথায় কথায় জানতে পারে ওর বাবা ও মা নেই।
মৌসুমী মালতীকে বলে জানো বড়দি আমি মায়ের লেখা কবিতা সব মুখস্হকরে রেখেছি।
দারোয়ান ফোন করে বলে একজন লোক এখন মৌসুমীকে নিতে এসেছে।বলছেন ওর দাদু হাসপাতালে তাই ঠাম্মা সেখানেই ছিল।তারপর মালতী তার কাছে বাড়ির ঠিকানা জিজ্ঞেস করে।আর বলে তিনি পৌঁছে দিয়ে আসবেন রাতের খাবার খেয়ে।
মৌসুমী বলে বড়দি আমার ঠাম্মা খায় নি ,আমি কি করে খাবো।মালতী বলে আমি খাবার নিয়ে তোকে পৌঁছে দিচ্ছি।
তখন মৌসুমী বলতে থাকে
তোমার চোখে জমেছে মেঘ
বৃষ্টি হয়ে পড়ে
মাগো তোমার জন্য আমার
বড্ড মন খারাপ করে।”
কোথায় পেলি এই কবিতা।
মৌসুমী বলে আমার মায়ের লেখা গো বড়দি।
তোর বাবার নাম কি?
স্বর্গীয় মাধব চন্দ্র বসু
মালতী বলে আমি তো মা রে সোনা।
মালতীর এখন শ্বশুর ,শাশুড়ি ও মেয়ে নিয়ে সুখের সংসার।