মার
সকাল থেকে প্যাচপ্যাচে বৃষ্টি, তার উপর ঠিক বেরনোর সময়টাতেই রীতার মুন্নিকে বেদম মার সব মিলিয়ে, মুডটা অফ। মেয়েটার শরীর হয়তো সত্যিই ভালো না ,
নাই বা গেল স্কুলে আজ…
রীতা আবার কি যেন বলছিল! টিভিতে কোন রিয়েলিটি শোয়ের ফাইনাল আজ বেলার দিকে, সেটা দেখবে বলে নাকি মুন্নির এই বাহানা। এসব বুঝতে পারা অসাধ্য!
স্কুলের গেটে ঢুকতেই চোখ পড়লো টিচার্স কমনরুমের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে সাজিদা। ওকে ঘিরে আরও তিন চারজন ছাত্রী। পা চালিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করাতে বাঁ- হাতটা আমার চোখের সামনে ধরলো সাজিদা, একি এমন করে কে কামড়ালো তোকে ? অদূরে দাঁড়ানো রাজার দিকে আঙুল তুলে দেখালো সে। রাজার সাথে আর একটি ছেলে(রহমত) ছিল , ও বললো, না স্যার রাজা কামড়ায়নি ও মিথ্যে বলছে। আমি রাজাকে সামনে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম কিরে তুই কামড়েছিস? রাজা মাথা নীচু করে ঘাড় নেড়ে উত্তর দিল…না। মুন্নির কাঁদোকাঁদো মুখটা চোখের সামনে ভেসে ওঠায় মাথায় আগুন জ্বলে উঠল, একচড় কষিয়ে দিলাম রাজাকে। জিজ্ঞেস করলাম, বল কেন কামড়েছিস সাজিদাকে? বল।
রাজা কাঁদতে কাঁদতে বললো , আমি কিছু করিনি স্যার আপনি সাজিদাকেই জিজ্ঞেস করুন।কিছুক্ষন চুপ করে থেকে গম্ভীর গলায় সাজিদাকে কাছে ডাকে জিজ্ঞেস করলাম ….কি রে,তোকে কে কামড়েছে সত্যি করে বল? অনেক সাধ্যসাধনার পরে মুখ খুললো, বলল, সে নিজেই নিজের হাতে কামড়েছে। হতবুদ্ধি হয়ে গেলাম ; বললাম , কিন্তু কেনরে সাজিদা?
সাজিদা বলল…আমার মা, বাবার সাথে রোজ ঝগড়া করতো তাই বাবাটা মরে গেল স্যার। আমাকে কেউ আর ভালোবাসে না। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর খুব খিদে পায়, এখন মা আর খেতে দেয় না, দরজা বন্ধ করে রাজার বাবার সাথে গল্প করে। কাল দরজা ধাক্কা দেওয়ায় মা আমাকে মেরেছিল,আমি বলতে পারিনি, খুব খিদে পেয়েছে খেতে দাও … রাজার বাবা আমাকে তখন আদর করছিল, একদম ভালো লাগেনি স্যার, কাকুটা মোটেই ভালো নয়। কাল রাজার বাবার জন্য আমি মার খেয়েছি। আজ রাজা যাতে মার খায় তাই আমি নিজের হাত কামড়ে ওর নাম বলেছি।
আমি নির্বাক, ক্লাস টু’তে পড়া ফুলের মতো শিশুর মনে…!!!