মামন : পর্ব – ১২ (Mamon)
শতশত কথা ভেবে চলেছে মামন। সবকটাই সমস্যার, সমাধান খুঁজে পাচ্ছে না। যদি মহেশ ওর কোন কথা না মানে, যদি মহেশ ওর সঙ্গে কোন দৈহিক সম্পর্ক না তৈরি করে, যদি যদি যদি যদি। আবার গুলাটিও এসে মাঝেমধ্যেই উঁকি দিয়ে যাচ্ছে। ভদ্রমহিলা মহেশের মতই বাস্তববাদী, তবুও তাকে কতটা ভরসা করা যায় ? কোন মেয়েই স্বেচ্ছাতে বারবরণীতা হতে চায় না কিন্তু মামনের এখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, তার মনে হচ্ছে সে একটা সমুদ্রে ভাসছে সামান্য কিছু রসদ নিয়ে, একটাই কূল নজরে আসছে, অন্য দিকের দিশা নেই। এত কষ্ট করে তার বাবা, মা সে নিজে কলকাতার সেরা কলেজ থেকে পাশ করে দেশের অন্যতম সেরা ইউনিভার্সিটির মাস্টার্সের ডিগ্রি যে পেল তার মূল্যায়ন কি দেহের বিনিময়ে হবে ? এমবিএ ডিগ্রিধারী উচ্চপদস্থ অফিসারের কি একমাত্র ম্যানেজমেন্ট তার প্রেম করে বৌকে ধরে পেঠানো ? সহানুভূতির নাম করে এক অসহায় মহিলাকে বেশ্যাখানাতে বিক্রির নাম মানবতা ? দন্ডমুন্ডের কর্তার কাজ কি রক্ষিতা পালন করা ? পুরো সমাজটা মুখোশ পরে ঘুরছে, একটা মুখও নজরে আসছে না মামনের। যাকেই সে নিজের অসয়হতার কথা বলে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে সেই বলছে চলো তোমাকে বেশ্যা বানিয়ে আসি , এ কোন ভারতবর্ষ ? মামনের আরেক কাঁটা বর্ষা, আজ সে ছোট তার ভবিষ্যত? সেও কি বেশ্যা হবে আগামীতে , বর্ষাও তো এই সমাজের বাইরের কেউ নয় , তার কি হবে ? হাজার হাজার প্রশ্ন, উত্তর অধরা। ভাবতে ভাবতে প্রথমে সিস্টেমের ওপর মাথা গরম তারপর সমাধান না পেয়ে মানসিক অবসন্নতা গ্রাস করল মামনকে। ঘরে আলো জ্বলছে তবুও মামনের মনে হল ঘোর অন্ধকারে সে বসে আছে।
মহেশ এল রাত দুটো নাগাদ, অবসন্ন মনের মামনের তখন দুচোখে ঘুম নেবে এসেছে। মহেশ স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে ভেতরে এসে খাটের একধারে বসে সিগারেট ধরিয়ে জানতে চাইল এমন কি সিরিয়াস ব্যাপার যে আজকেই মামনকে আলোচনা করতে হবে । মহেশকে দেখে মামন ফের উদ্দীপ্ত হয়ে উঠল, এসপার ওসপার আজ সে করবেই। কোন ভনিতা ছাড়াই মামনের প্রশ্ন তাকে নিয়ে মহেশের সঠিক চিন্তা কি , যদি তাকে রাখেল বানাতে চায় সে রাজি, তখন সে এইবাড়িতে থাকবে না, ওই লাক্সারিয়াস ফ্ল্যাট না হলেও তার একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই মহেশকে করে দিতে হবে এবং ওই বাড়িতে সে তখনই যাবে যখন মহেশ ফ্ল্যাটটা ওর নামে করে দেবে, দুই সে যদি মহেশের রক্ষিতা পরিচয়ে বাঁচে তাতে তার আপত্তি নেই তবে বর্ষার ভবিষ্যত মহেশকে সুরক্ষিত করতে হবে, মামনের দরকার নেই মহেশ যেন এখন থেকেই বর্ষার নামে অন্তত পাঁচ লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে দেয় এবং পড়াশোনার সমস্ত দায়িত্ব নেয়, তিন মামন যেহেতু মহেশের রায়পুরের সমস্ত কাজ ও সিডিউল দেখেছে তাতে মহেশ ইচ্ছে মত মামনের কাছে আসবে বাকি সময়টা মামন চুপচাপ ঘরে বসে থাকতে চায় না সে কিছু করতে চায় যার মাধ্যমে মামন যেন নিজেই দিনে একটাকা হলেও রোজগার করতে পারে, মহেশকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এখন মহেশ উত্তর দিক। উত্তর শুনে মামন তার সিদ্ধান্ত শোনাবে।
মামনের এই রূপ মহেশ আগে কখনোই দেখেনি , একটু হকচকিয়ে গেলেও পোড় খাওয়া মহেশ নিজেকে সামলে নিয়ে ফের একটা সিগারেট ধরিয়ে বলতে শুরু করল – সে নিজে অন্ধকার জগতে চলাফেরা করে বলে মামন যেন এইটা ধরে না নেয় জগতের আর পাঁচটা বেশ্যার সঙ্গে মহেশ মামনকে সমদৃষ্টিতে দেখছে। অবশ্যই মামন আর বর্ষাকে নিয়ে তার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে যা মহেশ এখনই বলতে চায় না আর বিশেষ করে বর্ষা বেটির জন্য এইমাত্র মামন যেসব প্রস্তাব দিল সে রাজি আর ওই ফিক্সড ডিপোজিট সে আগামী তিন চার দিনের মধ্যেই করে দেবে মামনের উপস্থিতিতে। আপাতত মামন ওই কালকের দেখান ফ্ল্যাটে থাকবে, মামন কেন বাজে চিন্তা করছে নিজে উপার্জন করার ব্যাপারে, সে তো বলছে মামনকে নিয়ে তার একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে । তার কত টাকা মাসে দরকার মামন বলুক মহেশ দেবে সেই অর্থ। কথাগুলো শুনে মামন ফোঁস করে উঠল, মানে টাকা দিয়ে আমাকে পুষবে! একটা কুকুরও বাড়ি পাহারা দেয়, তাকেও লোকে পোষে পয়সা দিয়ে, আর সে খাবে দাবে ঘুমাবে ও মহেশের চাহিদা মত তার দেহের ক্ষিধে মেটাবে এই তো বলতে চায় মহেশ। কলকাতাতে রূপালী আর এখানে পিঙ্কি আর সে আর মামন জানে না মহেশের কোথায় কোথায় এই ধরনের রক্ষিতা আছে। বলেই মামন কঠিন স্বরে বলল সে নিজের গতর দিয়ে খেটে রোজগার করবে, দরকার পড়লে গুলাটির হাত ধরবে । এতক্ষণ মহেশ চুপ করে মামনের কথাই শুনছিল যেই গুলাটির নাম উঠল মহেশ রেগে গেল , রাগ সংযত করে সাপের মত হিসহিস করে বলল এইবার বুঝেছি ওই রেন্ডি তোমার মাথা খেয়েছে, তুমি কি জান ওই মাগীর আওকত কতটা , বড়া সাব এখান থেকে চলে গেলেই ওর বাজারে আর দর থাকবে না, ও তোমাকে কি কাজ দেবে রেন্ডির কাজ ছাড়া, আমি মহেশ ফের বলছি আমি পৃথিবীর সব মেয়েকে সমান চোখে দেখিনা, ওই হারামি বেশ্যা গুলাটি কিন্তু সব মেয়েকে নিজের মত ভাবে। উত্তেজিত মামন বলল ও ভাবুক, তুমি ভাবছ না কিন্তু একঘন্টা হয়ে গেল আমার প্রশ্নের উত্তর দিলে না কেন ! লোককে গালাগাল দেবার আগে আয়নাতে নিজেকে দেখে নাও। মহেশও উত্তেজিত, ম্যায় তুমহারে লিয়ে যো সোচা ব তুম স্বপ্নামে ভি নেহি দেখগী, আমি তোমাকে…….. বলেই জোরে জোরে দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বলল এখনও সময় আসেনি মামন এখনও সময় আসেনি। মামনের জেদ তখন তুঙ্গে বলল যাও ওসব ফালতু কথা তোমার কাছেই রাখ, আমি কালই গুলাটির সঙ্গে যোগাযোগ করছি, আমার একটা ভবিষ্যত আছে, আমার মেয়ের আছে তোমার দিকে তাকিয়ে কবে বলবে সেই অপেক্ষাতে থেকে তো আমার সময় বরবাদ করতে পারিনা , কালকেই আমি গুলাটির সঙ্গে ফাইনাল কথা বলে নেব। প্রচন্ড রেগে মহেশ খাট থেকে নেবে আঙুল তুলে মামনকে বলল এই বাড়ি থেকে একটা পা তোমার যদি বাইরে পরে জেনে রাখ তোমার দুটো পা-ই মহেশ কেটে নেবে। মামন আজ ছেড়ে কথা বলছে না , বলল মহেশ যেন ভুলে না যায় এখনও বড়া সাব গুলাটির হাত ধরে আছেন আর আমি গুলাটির হাত ধরতে যাচ্ছি , কে কার কি কাটে সময় তার উত্তর দেবে। মহেশ যেন আরও না ভুলে যায় গুলাটির ব্যাপারে বড়া সাবকে ভয় দেখাতে গিয়ে ওর কি হাল হয়েছিল, বলেই একটা তির্যক হাসি ছুঁড়ে বলল মিস্টার মহেশ প্রধান ( মহেশের এটাই নাম) শুধু অর্থ থাকলেই হয় না ক্ষমতার আসনেও বসতে হয়। মহেশের দুচোখ তখন আগুনের গোলার মত লাল। মহেশ বুঝতে পারল মামন তাকে ঠিক জায়গাতে ঘা দিয়েছে, রাগ হলেও দেখান চলবে না। এখন মামনকে ঠান্ডা করতে হবে। কারণ মামন এখন যেরকম মুডে আছে আর যদি গুলাটির হাত ধরে নিয়ে মহেশের পেছনে লাগে তবে তার সমূহ বিপদ। মুক্তি সে পাবেই, মাঝখান থেকে অহেতুক অর্থদন্ড দিতে হবে। মহেশ বলল – ঠিক আছে , তুমি গুলাটির সঙ্গে কথা বলে বড়া সাবকে দিয়ে একটা সুস্থ্য কাজ জোগাড় কর, আমি বাধা দেব না, তবে প্লিজ গুলাটির চক্করে পড়ে আর যাই করো বেশ্যাবৃত্তি কর না। ফের বলছি আমার তোমাদের নিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে। মামন ঝাঁজিয়ে উঠে বলল , তখন থেকে সে ফাটা রেকর্ডের মত এক কথা শুনে যাচ্ছে, মহেশ যদি সাচ্চা মরদ হয় বলে দিক তার পরিকল্পনার কথা, তা কেন বলছে না মহেশ। সময় আসেনি মামন, আমি একটু গুছিয়ে নি ঠিক মত, মহেশ বলল। তুমি তোমার সময় নিয়ে বসে থাক, আমি আমার রাস্তা ঠিক খুঁজে পাব, মামনের উত্তর। মহেশ হেসে বলল – যাও দুনিয়া চিনে এস, দেখে এস, যাই করো আমার দরজা তোমার জন্য সবসময়ই খোলা। কথাগুলো বলে মহেশ ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। সে কি ঠিক কাজ করল, সে’ও তো চেয়েছিল মহেশকে একান্ত করে , না হয় থাকত মহেশের রক্ষিতা হয়ে। হাউহাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে পড়ল মামন। ঘড়ি জানান দিল ভোর ছ’টা।