Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মর্ত্যট্রিপের রিভিউ || Subhra Saha Shelley

মর্ত্যট্রিপের রিভিউ || Subhra Saha Shelley

মর্ত্যট্রিপের রিভিউ

মর্ত্য থেকে ফিরে মিসেস উমা এ্যাণ্ড টিমের এতদিন সময় লাগলো ক্লান্তির রেশ কাটাতে। মিসেস উমা বরাবরই ভীষণ স্মার্ট। কৈলাসে মিষ্টারের দুই বিশ্বস্ত চেলার দায়িত্বে মিষ্টারকে রেখে দিব্যি চার ছেলেময়ে নিয়ে মর্ত্যে আসা যাওয়া করেছেন।এতকাল ধরে মর্ত্য থেকে ফেরার পরে মনটা ওখানেই পরে থাকত।আর চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ত। কৈলাসে এসে নিজের সংসারে মন বসাতে বেশ কিছুটা সময় লাগত। লখুর তো মামাবাড়ি ওরফে মর্ত্যে এমন টান যে কৈলাসে এসেই কয়েকদিনের মধ্যেই আবার সেখানে যাবার জন্য এমন বায়না শুরু করে দিত যে বাধ্য হয়ে মেয়ের আব্দার মেটাবার জন্য লক্ষ্মীপেঁচাকে সবকিছু ভালো করে বুঝিয়ে তার ভরসাতেই মেয়েকে পাঠিয়ে দিতেন।আজও লখুর সেই রুটিনের অন্যথা হয় নি।
তবে আজকাল মর্ত্যে উমা ওরফে দুর্গা বন্দনার আমূল পরিবর্তণ ঘটেছে — সেই পরিবর্তণের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেকেও আপটুডেট করতে হয়েছে।এই যেমন —-

নিজের নামের সামনে মা দুর্গার থেকে আজকাল মিসেস দুর্গা বা মিসেস উমা বলতে বা শুনতে কমফোর্ট ফিল করেন।ছেলেমেয়েদের সেই মান্ধাতা আমলের নামগুলোকেও পরিবর্তণের ছোঁয়ায় কেটে ছেঁটে ছোট করে ফেলেছেন। অবশ্য যা হয়েছে সবকিছুরই ক্রেডিট দিতে হয় কাতু মানে কার্তিককে।ওর বরাবর ফ্যাশনের দিকে টানটান নজর থাকে । ও ফ্যামিলির সবাইকে আপডেট করতে পারলেও ড্যাডকে তেমনভাবে বাগে আনতে পারে নি। তবে দুজনেই “একসে বঢ় কে এক “। ড্যাড যখন হেয়ার স্টাইল চেঞ্জ করা যাবে না বলে সটান জানিয়ে দিয়েছিল তখন কাতু সেটা মেনে বলেছে “ওক্কে , তবে আমারও একটা কণ্ডিশন আছে—তুমিও তোমার টাইগারপ্রিন্ট এর ড্রেসখানা এলেবেলে পরবে না।কোন ভালো ‘ব্রাণ্ড’এর পরো।” অগত্যা মহাদেবও কাতুর কণ্ডিশনে রাজী হলেন।

এ তো গেল মিসেস উমার ফ্যামিলি আপগ্রেডেশনের কিছু কথা। আসল কথা তো হবে মা স্যরি মিসেস উমার এ্যানুয়াল মর্ত্য ট্রিপ নিয়ে।

সেখানে যাবার আগেই নিজেদের ঝাঁ চকচকে করতে অনলাইন বিউটিশিয়ন বুকিং করিয়ে ফেলেন মিসেস উমা।

দুই মেয়েকে নিয়ে নিজেও তৈরী হয়ে নেন মর্ত্যে নিজের পারফরমেন্স পারফেক্টলি করবার জন্য।

আর ট্রায়াল হিসেবে সোস্যাল মিডিয়ায় স্টেটাসও আপলোড করতে থাকেন আর তাতে ফলোয়ার্সদের কমেন্ট দেখে নিজের ডিফেক্টগুলো কিওর করে ফেলেন।

উদাহরণ হিসেবে —

“অসাধারণ পিক– তবে হেয়ার স্টাইলটা আপ টু দ্য মার্ক হলো না। “

বা

“গণু ভাইয়া অনেক ওয়েট গেইন করেছে —এই ক’দিন ডায়েট ফলো করলেই একদম পারফেক্ট হয়ে যাবে।”

ইত্যাদি গোছের কমেন্ট।

মিসেস উমা মেহনত করে ফুল ফ্যামিলিকে ঝাঁ চকচকে করে স্মার্টলি মর্ত্যে এসে হাজির হন।

ওয়েলকাম অনুষ্ঠানের বৈচিত্র্য দেখেই বোঝা যায় বাকি চারদিন কি হতে পারে।

ষষ্ঠীর সন্ধ্যে থেকেই পারফরমেন্স শুরু করার নিয়ম কিন্তু ট্রায়াল হিসেবে চর্তুথী ,পঞ্চমীতেও পারফরমেন্স দিতে হয় আজকাল।

উপচে পরা ফলোয়ার্দের দেখে মিসেস উমা গদগদ হয়ে ওঠেন—ছেলে মেয়েদের সামনে বেশ প্রাউডলি বলেন ” দেখেছ তোমাদের মম এর পপুলারিটি “।

গণুটা মহা বিচ্ছু হঠাৎ করে বলে ” মম সে তো দেখতেই পাচ্ছি —পুরোনো আমলে তোমার ফলোয়ার্সরা যাদের তুমি ভক্ত বলতে তারা এসে ভক্তি ভরে দু’ হাত তুলে প্রণাম করে তোমার রূপ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতো। আর এখন তোমার ফলোয়ার্দের দেখো সেজেগুজে এসেই তোমার মানে আমাদের পশ্চাৎ দর্শন করিয়ে স্মার্ট ফোন বের করেই মুখে একটা চওড়া হাসি দিয়ে খচাৎ করে ফটো তুলেই বেড়িয়ে যায় ফুড স্টলের দিকে।ব্যাটারা আমাদের খাওয়াচ্ছে সেই মান্ধতা আমল থেকে বয়ে আনা চাল কলা , মাছি ভন ভন করা কাটা ফল ,বাতাসা।আর নিজেরা বিরিয়ানী , পোলাও , কোর্মা , চাপ আরো কতকিছু—-“

মিসেস উমা ছেলের রাগটা বুঝতে পেরে থামিয়ে দিয়ে বলেন ” এইভাবে বোল না বেবী দেখো –ওরা যাই করুক আর তাই করুক সেই ফটোগুলো তুলে মুহুর্তের মধ্যেই সোস্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে দিচ্ছে তাতে আলটিমেটলি আমারই তো প্রচার হচ্ছে তাই না?”

গণু মুখ ফুলিয়ে ” হুম, তা না হয় হলো তা ‘বলে খাওয়ার ব্যাপারটা কি হবে ?”

“ওহ্ বেবী এটা গিভ এ্যাণ্ড টেকের যুগ — আমরা ঐ স্যাক্রিফাইস করছি বলেই তো আমাকে নিয়ে ওদের ক্রেজটাও অনেক বেশী বলো। এই যে তেত্রিশ কোটি দেব দেবতা আছে তার মধ্যে আমার বন্দনাই তো পাঁচদিন ধরে চলে — বাকিদের তো”।

এমন সময় ফিচেল অসুর কপালের সিঁদুর মুছতে মুছতে(দশমীর সিঁদুর) হাসতে হাসতে বলে ” ম্যাম , আপনি তো আপনার লাষ্ট পারফরমেন্স মানে আমার বুকে ত্রিশূল বসিয়ে কটমট করে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন হঠাৎ আপনার ঝকঝকে ত্রিশূলে মধ্যে
আমি দেখতে পেলাম কিছু পাবলিক ফটো তুলে আপনাকে প্রণাম না করে আপনার দিকে পেছন করে দাঁড়িয়ে উল্টোদিকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা দর্শকদের প্রণাম করে সেটার ও ছবি তুলে বেড়িয়ে গেল। “

এবার মিসেস উমা ভীষণ আপসেট হয়ে টপিক চেঞ্জ করার জন্য বলেন ” তা তোমার এই বীভৎস্য মুখে আবার কে সিঁদুর দিয়ে সাজালো গো ? “

“কি বলছেন ম্যাম — আপনার কি ভেবেছেন আপনারই শুধু আপগ্রেডেশন হয়েছে? নেগেটিভ ক্যাটাক্টার হিসেবে পুরানা জামানাতে আপনি আমাকে বধ করার পরেও আমার ইমেজ একইরকম ছিল মানে আমি বলতে চাইছি তখনও আপনার ভক্তরা আমাকে ভিলেনই ভাবত। দশমীতে আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতাম আপনার ভক্তরা আপনাদের সকলকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছে ,সিঁদুর পরাচ্ছে।আমার দিকে কেউ ফিরেও তাকাতো না।
আর আজকাল দেখুন আপনার ফলোয়ার্সরা আমাকেও সিঁদুর পরায় আমার পায়ে সিঁদুর ছোঁয়ায় ,আমাকে ঠুসে ঠুসে মিষ্টি খাওয়ায়।আমি মোটা হয়ে যাব বলে আর মিষ্টি খাব না বলেছিলাম এক ঝিঙ্কু মামনি তো এমন রেগে গেল যে আমার মুখটাকে ধূপদানি বানিয়ে গোটা কতক জলন্ত ধূপকাঠি গুঁজে দিয়ে চলে গেল। একজনের দেখাদেখি সকলে এসে জলন্ত ধূপকাঠি গোঁজা শুরু করলো।প্রথমে ভীষণ কষ্টও হচ্ছিল আর রাগ ও হচ্ছিল। পরে হঠাৎ করে টিভির লোকজন আপনার পুরো পরিবারকে ছেড়ে আমার ফটো আর আমার খবরকেই শিরোনামে নিয়ে এলো — হেব্বি চলছিল ব্যাপারটা।হঠাৎ সিংহ ব্যাটা রাগে গজগজ করতে বলেই বসলো ” আপনাদের চোখে কি শুধু অসুরই পড়লো — আমি যে জন্মগত ননভেজ খাওয়া পাবলিক থুড়ি প্রাণী তাকেও যে সারাদিন কেবল গুচ্ছেক মিষ্টি মুখ বন্ধ করে খেয়ে যেতে হলো—-“

বাকিটা মিসেস উমা উপলব্ধি করে অসুরকে কিছুটা সাপোর্ট করেই বলে ” দশমীর সিঁদুর খেলার কথা আর বোল না।এই যে মর্ত্যে যাবার আগে এত কষ্টলি প্যাকেজের ফেশিয়্যাল করে গেলাম তা পুরোটাই ঘেঁটে ঘ হয়ে গেল। দলবেঁধে বেঁধে আসছে আর সিঁথিতে —ঠিক আছে বাবা সিঁথিতে তো দিতেই হবে কিন্তু গালে কেন ? আমি নিজেকে নিয়ে অত ভাবছিলাম না ভাবছিলাম আমার সরু আর লখুকে নিয়ে ওদের যদি আবার এই সিঁদুর খেলার পর পিম্পলস্ বেড়িয়ে যায় ? তাই এবার কমিটির প্রেসিডেন্ডকে প্রথমেই জানিয়ে দিয়েছিলাম প্রতি পনেরো মিনিট পর পর যেন টিস্যু দিয়ে আমাদের গাল পরিস্কার করে দেওয়া হয়। কমিটির পুরোনো বুড়ো ব্যাটা অবশ্য ট্যাঁ ফুঁ শুরু করেছিল বলছিল “কেন দু হাতে পান দিয়ে তো গাল মুছেই দেওয়া হয় আবার টিস্যু কেন ? পনেরো মিনিট পরপর টিস্যু মানে কত টিস্যু লাগবে —সে কি বাজেটে কুলোবে।আবার টিস্যু যে আপনাদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলবো নিজেরাই মুছে নিন তাতেও তো আবার আপনার গোঁসা হবে বলবেন –“উঁহু এটা একদম মানায় না। ” তারমানে টিস্যু দিয়ে গাল মোছার জন্য একজন লোককে ফিট করতে হবে।
নতুন প্রেসিডেন্ড বলেন “ঠিক আছে ,ঠিক আছে –ম্যানেজ হয়ে যাবে। কিন্তু যত সহজে ম্যানেজ করবেন ভেবেছিলেন বাস্তবে কাজটি ততধিক কঠিন হয়ে ওঠে।উনি ভেবেছিলেন কোন মহিলা ফলোয়ার্সকে এই কাজের দায়িত্ব দেবেন। মিসেস উমার এমন সেবা করার জন্য হয়তো মারামারি লেগে যাবে মহিলা মহলে। কিন্তু ঘটনাটি ঘটল একদম অন্যরকম ” অসম্ভব দাদা — এইরকম বোরিং একটা কাজ ?কভি নেহি।দশমীতে লালপাড় সাদা শাড়ি আটপৌড়ে স্টাইলে পড়েছি নানান পোজে ফটো তুলে আপলোড করবো বলে।সেখানে যদি টিস্যু নিয়ে —-পুরোটাই বেকার হয়ে যাবে।”

জনা কুড়ি মহিলার এমনতর কমেন্ট পেয়ে প্রেসিডেন্ড ভাবলেন– ঠিকই আজকের দিনটা তো মহিলাদেরই।তাহলে পুরুষ ভক্তদের বললে নিশ্চয় ই গদগদ হয়ে রাজী হয়ে যাবে।

“কি বলছো দাদা —বৌ ফটোগ্রাফারের কাজ ছেড়ে টিস্যু দিয়ে গাল মোছাবার দায়িত্ব নেব ? আমার ঘাড়ে ক’টা মাথা আছে বলো “—–

জনা পঁচিশ এমন কমেন্ট পেয়ে প্রেসিডেন্ড ধপাস করে চেয়ার বসে পড়তেই ক্লাবের চিরকুমার দা মুস্কিল আসান এসে এই গুরু দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেন।

পনেরো মিনিট পর পর টিস্যু দিয়ে সিঁদুর তো মুছে দিলেন কিন্তু তাতে যা হলো মিসেস উমা সহ আদরের সরু , লখুর ফেসিয়্যালের দফারফা —

যাইহোক হ্যাট্রিক মর্ত্য ট্রিপ শেষ করে কৈলাসে ফিরে হাত পা ছড়িয়ে রেষ্ট করে তবে শান্তি—

মোবাইলটা হাতে নিয়ে নেট অন করতেই মিসেস উমার মোবাইলে টিকটক টিকটক মেসেজ ঢুকতে থাকতে থাকে “আসছে বছর আবার হবে।”

একগাল হাসি হেসে মিসেস উমার রিপ্লাই ” অফকোর্স মাই ডিয়ার ফলোয়ার্স। “

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *